mahbub-sumon.com
প্র: স্বাধীনতার পর কবে দেশে ফিরলেন ?
উ: ১৭ ডিসেম্বর তারিখে একজন ম্যাসেঞ্জার এসে আমাকে একটা চিঠি দিয়ে গেলো। সেটা ছিলো একটা অফিস অর্ডার। সেই অফিস অর্ডারে দেখি আমার এবং আরো কয়েকজনের নাম। আমাদের টিম লিডার সি.এস.পি অফিসার তখনকার চীফ সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুস সাহেব। আমাদেরকে অবিলম্বে ঢাকা গিয়ে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।
আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিভিল অ্যাভিয়েশনের। মহাপরিচালক,সিভিল অ্যাভিয়েশন। ১৮ তারিখ সকালে আমি দমদম এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করি। অন্যরাও যথাসময়ে আসেন। ওখান থেকে আমরা বাগডোগরা আসি।
সেখান থেকে হেলিকপ্টারে বিকেল বেলা ঢাকা এসে পৌঁছি। ঢাকা পৌঁছেই পরদিন থেকেই আমরা নিজ নিজ দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
প্র: ঢাকা এসে আপনি কি দেখলেন ?
উ: তখন ঢাকার অবস্হা সেভাবে দেখার সুযোগ আমার হয়নি। আমি ঢাকা পৌঁছেই বিমান বন্দর সচল করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ঢাকায় সে সময় সিভিল অ্যাভিয়েশনের কোনো সিনিয়র অফিসার ছিলেন না।
সব জুনিয়র অফিসার এবং অল্প কিছুসংখ্যক কর্মী। ঢাকা বিমান বন্দর খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। সেই বিমান বন্দর দ্রুত চলাচল উপযোগী করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আমি তো বিমান বন্দরের সিভিল অ্যাভিয়েশনের বিশ্রামাগারে রাত কাটাতাম। আমাকে সেখানেই থাকতে হতো।
ফলে,এ সময় আমার কোথাও যাওয়া বা কিছু দেখার সুযোগ হয়নি। তবে প্রথম যে দিন আমরা এলাম সে দিনের কথা কিছু মনে আছে। আমরা এয়ারপোর্ট থেকে পূর্বাণী হোটেলে যাওয়ার পথে দেখলাম শহরে তেমন লোকজন নাই। কেমন জানি নিস্তব্ধ সব। সন্ধ্যা হয় হয় সময় আমরা পূর্বাণী হোটেলে পৌঁছলাম।
প্র: সিভিল অ্যাভিয়েশনের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই সংস্হাকে গড়ে তুলতে কি কি পদক্ষেপ নিলেন ?
উ: আমি আগেই বলেছি,১৮ ডিসেম্বর বিকালে আমরা ঢাকা পৌঁছুলাম হেলিকপ্টারযোগে। ঐ দিন রাতে আমাদের পূর্বাণী হোটেলে রাখা হলো। পরদিন সিভিল অ্যাভিয়েশন অফিসে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম যারা বাঙালি সিনিয়র অফিসার তারা সব পাকিস্তানে। তারা ছিলো ৮ জনের মতো।
যারা বাংলাদেশে আছেন তারা সব জুনিয়র অফিসার। এয়ার ফিল্ডগুলো বোম্ববার্ট করা হয়েছিলো বাই ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স টু প্রিভেন্ট আমেরিকান সেভেন-থ্ফ্লিট অ্যান্ড চায়না সোলজার- যাতে তারা এই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে না পারে। সম্পূর্ন এয়ারফিল্ড অকেজো করে দেয়া হয়েছিলো। বিরাট বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো। আমার মনে আছে ১৯টি বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো।
সেভেন-থ্ফ্লিট থেকে বিমান এসে যেন এখানে না নামতে পারে সেটার প্রতি লক্ষ্য রেখেই বেশি বোমা ফেলা হয়েছিলো। আবার যাতে কোনোভাবেই এই এয়ারপোর্ট আমেরিকানরা ব্যবহার করতে না পারে সেদিক লক্ষ্য রেখেও বোমা ফেলা হয়েছিলো। আমার দায়িত্ব হলো ঢাকা এয়ার ফিল্ডকে আগে সচল করা। আমি সে লক্ষ্যেই কাজ শুরু করলাম।
এ দিকে ৮ জন সিনিয়র সিভিল অ্যাভিয়েশন অফিসার যারা পাকিস্তানে আটকা পড়েছিলেন তারা বাংলাদেশে ফিরে আসলেন।
আমি মন্ত্রণালয়কে জানালাম যে,এই ৮ জনের মধ্যে যিনি সবার সিনিয়র অফিসার অর্থাৎ গুলজার হোসেন,তিনিই আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন। কারণ আপনি জানেন যে,অনেক আগেই আমি পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে উইং কমান্ডার হিসাবে অবসর নিয়েছিলাম এবং স্বপ্রণোদিত হয়েই আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমাকে কেউ বলেননি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে। আমার সুপারিশ সত্ত্বেও কর্নেল ওসমানী সিনিয়র অফিসার গুলজার হোসেনকে দায়িত্ব দিলেন না। অথচ তিনি সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিজস্ব অফিসার ছিলেন।
কর্নেল ওসমানী বিমান বাহিনী থেকে একজন অফিসারকে নিয়ে এসে এখানে বসালেন। এই ঘটনায় গুলজার হোসেন খুবই ব্যথিত হলেন। তিনি পদত্যাগ করে চলে গেলেন এবং ‘আকিএও’তে ভালো বেতনের চাকরি পেলেন। আসলে এগুলো পার্ট অব আওয়ার ম্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এটা আমরা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে শিখেছি।
আর্মিতেও এখনো তাই চলছে। জেনারেল এরশাদের আমলে ব্রিগেডিয়ার এনামকে দিয়ে রির্পোট তৈরি করানো হয়--সেখানে সিদ্ধান্ত বদল করে বলা হয় যে,সিভিল অ্যাভিয়েশন এবং বাংলাদেশ বিমানের প্রধান উইল অলওয়েজ বি ফ্রম এয়ারফোর্স। আমি মনে করি,এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। সিভিল অরগানাইজেশন চালাবে সিভিল অফিসার। হোয়াই আর্মি।
এগুলো তো পাকিস্তানিদের করা। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা পাকিস্তানি কাঠামোই অনুসরণ করলাম।
চলবে..........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।