আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির

কাউকে উপকার করো না, তাহলে সে অপকার করতে পারবে না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় সরকারিভাবে ১১টি সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। আবার দেশের অভ্যন্তরেই স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গঠিত হয় আঞ্চলিক গেরিলা বাহিনী। যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ, যুদ্ধক্ষমতা, রণচাতুর্য, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয় জয় করতে সমর্থ হয়েছিলো। সাধারণত ব্যক্তি নামেই এ সব বাহিনীর পরিচয়।

এসব বাহিনীর মধ্যে টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকী (পরবর্তীতে বীর উত্তম)’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’, ফরিদপুরের হেমায়েত উদ্দিন (পরবর্তীতে বীর বিক্রম)’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘হেমায়েত বাহিনী’, ময়মনসিংহে মেজর আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘আফসার বাহিনী’, যশোরে আকবর হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘আকবর বাহিনী’, মানিকগঞ্জে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘হালিম বাহিনী’, নাগরপুরে আবদুল বাতেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘বাতেন বাহিনী। ’ সিরাজগঞ্জে আবদুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘পলাশডাঙ্গা যুব শিবির’ নামে মুক্তিযুদ্ধের একটি সশস্ত্র সংগঠন। সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে সাধারণ মানুষ পলাশডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘মির্জা বাহিনী’ নামে অভিহিত করে থাকে। ১৯৭১ সালের মে মাসে সিরাজগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কামারখন্দের (বর্তমানে উপজেলা) ভদ্রঘাট গ্রামে এতদাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ, বিদ্রোহী বাঙালি সেনাসদস্য, ইপিআর সদস্য, আনসার সদস্য ও ছাত্র-যুবকদের সমন্বযে গঠিত হয় পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। শহর থেকে দূরে ভদ্রঘাট ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাটি।

পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরেই ছাত্র-যুবকদের রিক্রুট করে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেওয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পলাশডাঙ্গা ক্যাম্পের কার্যক্রম ও অপারেশন এরিয়া সিরাজগঞ্জের সমগ্র দক্ষিণ এলাকা, পাবনার ফরিদপুর, সাথিয়া, বগুড়ার শেরপুর, চলনবিল এলাকাসহ রাজশাহীর গুরুদাসপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। সম্পূর্ণ সামরিক কায়দা-কানুনে পরিচালিত এই ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো ৬ কোম্পানি। কখনো কখনো পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ৫০/৬০টি ভাসমান নৌকায়ও এই ক্যাম্পের কার্যক্রম চলতো। সিরাজগঞ্জের তারাশ থানার অস্ত্র লুট, পাবনার ফরিদপুর থানার অস্ত্র লুট, সাথিয়া থানার অস্ত্র লুট, কালিয়া হরিপুর ব্রিজে রাজাকার অপারেশন, ঝাঐল ব্রিজে রাজাকার অপারেশন, রাজশাহীর গুরুদাসপুর থানার অস্ত্র লুট, ভদ্রঘাটের যুদ্ধ, নওগাঁর যুদ্ধসহ প্রায় অর্ধশতাধিক যুদ্ধে পলাশডাঙ্গা যুব ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন।

পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের সংক্ষিপ্ত সাংগঠনিক কাঠামো উল্লেখ করছি : মহাপরিচালক : আবদুল লতিফ মির্জা। ছদ্মনাম : স্বপন কুমার। তৎকালীন ছাত্রনেতা। পরবর্তীতে এমপি। কমান্ডার-ইন-চিফ : সোহরাব আলী সরকার।

ছদ্মনাম : অশোক বাবু। সিরাজগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি। বর্তমানে জেলা কমান্ডার সিরাজগঞ্জ। অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডার-ইন-চিফ : বিমল কুমার দাস। বর্তমানে এ্যাডভোকেট, জজকোর্ট, সিরাজগঞ্জ।

অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডার-ইন-চিফ : শ.ম আমজাদ হোসেন মিলন। প্রধান অস্ত্র প্রশিক্ষক অপারেশন পরিচালক ও ব্যাটালিয়ন কমান্ডার : লুৎফর রহমান খান। ছদ্মনাম : অরুন। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য। ১ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুস সামাদ সরকার।

তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য। ২ নং কোম্পানি কমান্ডার : মোজাফফর হোসেন মোজাম। তৎকালীন বাঙালি ইপিআর সদস্য। ৩ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুস সালাম। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য।

৪ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুল বাছেদ। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য। ৫ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুর রহমান। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য। ৬ নং কোম্পানি কমান্ডার : খলিলুর রহমান।

তৎকালীন বাঙালি ইপিআর সদস্য। এছাড়াও আবদুল আজিজ মির্জা, আতাউর রহমান, আবদুল হাই তালুকদার, ইফতেখার মবিন চৌধুরী জিল্লু, খোরশেদ আলম, গেদু মিঞা প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে কাজ করেছেন। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য- সোহরাব আলী সরকার, মনিরুল কবির, লুৎফর রহমান মাখন, শফিকুল ইসলাম শফি, আবদুল আজিজ সরকার প্রমুখ। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.