যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং মানুষকে - বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এই দালালরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই প্রশ্নের উত্তর দেবার মতো যথাযথ উপাত্ত না থাকায় সহজেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তাকে মিথ্যাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা যায়।
দ্বিতীয় যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং নির্যাতিত নারীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা তারা হলো প্রথম দলের প্রপাগান্ডার ফলে সৃষ্ট একটা বিভ্রান্ত প্রজস্ম - যাদের জন্ম যুদ্ধের পর। ফলে তারা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা এবং নির্মমতা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পায়নি। এদের জন্ম একটা স্বাধীন দেশে - সুতরাং তাদের জন্যে যুদ্ধটা হলো একটা ইতিহাস।
আর ১৯৭৫ এরপর এই প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে রাখার কারনেই এদের পক্ষে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী এবং দোসর রাজাকার, আলবদর- আলশামস এবং শান্তিকমিটির নির্মম হত্যাকান্ড, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং নারী ধর্ষনের ব্যপকতা উপলদ্ধি করা সম্ভব নয়। আর পরাজিত শক্তির সহজ টার্গেট হিসাবে এরা যা জেনেছে তা হলো - মুক্তিযোদ্ধা মানেই হলো একজন ব্যর্থ মানুষ - যাকে মানুষ সন্মান করবে কিংন্তু প্রকৃত সামাজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতা তাদের হাতে থাকবে না। আবারো টিভি প্রসংগে আসা যাক। ৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত বিটিভিতে যত নাটক স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসে প্রচারিত হয়েছে তার অধিকাংশতেই দেখা যাবে একজন পংগু এবং রাগী মানুষ মুক্তিযোদ্ধার ভুমিকায় অভিনয় করছে। এতে এমন অবস্থা হয়েছে যে, পংগু এবং মুক্তিযোদ্ধা সমার্থক শব্দ হয়ে ুপংগু মুক্তিযুদ্ধাচ্ হিসাবে পরিচিত হয়েছে।
অন্যদিকে দেখানো হচ্ছে রাজাকাররা বেশ ভাল অবস্থানে গিয়ে পৌছেছে। আর নাটকের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতিতো ছিল একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে এই নতুন প্রজন্মের কাছে আদমশুমারী এরং যুদ্ধের নিহত আর নির্যাতিতাদের গননা প্রায় একই রকমের সহজ কাজ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। দেখছি কেহ কেহ স্বাধীনতার পরবর্তী সরকারকে এই বলে দায়ী করছে যে, তারা যুদ্ধে শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারন করতে ব্যর্থ হয়েছে - এটা তাদের করা উচিত ছিল। অনেকে এটা শেখ মুজিবুর রহমানের আবেগী সংখ্যা হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছ।
অনেকে প্রকৃত শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারন করার জন্যে দাবী জানাচ্ছে।
একটা যুদ্ধ - যা শুধু কথামালা নয় - যা শুধু গল্প নয় - যা শুধু ইতিহাস সংগ্রহ নয়। প্রকৃত যুদ্ধ হলো মানুষের জীবন মরনের খেলা - যুদ্ধ হলো ত্রাস - যুদ্ধ হলো পরের দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার আকাংখা - যুদ্ধ হলো একটা স্বাধীন সময়ে মুক্ত শ্বাস প্রশ্বাসের জন্যে আকুলতা - সেই যুদ্ধের সময়ে নিহত বা আহত বা নির্যাতিতার সংখ্যা গননা করা ার আদমশুমারী করা এই পর্যায়ে কর্মকান্ড কিনা যৌক্তিকতা আর বাস্তবতার আলোকে একটি ভেবে দেখা যাক -
২) একটা যুদ্ধে নিহত এবং আহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারন সম্ভব কি না?
৩) একটা যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের নির্ভূল সংখ্যা নির্নয় সম্ভব কি না?
১) বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী, তার দোসর রাজাকার আলবদর এবং আলশামস কতৃক নিহত এবং নির্যাতিত নারীর প্রকৃত সংখ্যাটা কি?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে যদি পৃথিবীর কুখ্যাত কিছু যুদ্ধের দিকে তাকাই তাহলে আমাদের উত্তর পাওয়াটা সহজ হবে বলে মনে করছি। প্রথমত সাম্প্রতিক কালের চলমান ইরাক যুদ্ধের কথাই ধরা যাক। ইরাকে কতজন সাধারন মানুষ মারা গেছে গত চার বছরের? বিশ্বের বিভিন্ন নামীদামী গবেষনা সংস্থার মতে এই সংখ্যা ৬ - ৭ লাখ।
অন্যদিকে মিডিয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ইরাকী বডি কাউন্ট নামক একটা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েব পেজে সংখ্যাটা দিয়েছে ২৬ - ৫৫ হাজার। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিও বুশের মতে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার হবে। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে - বর্তমানে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের যুগেও কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেও একটা সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। এর পিছনে কারন কি? উত্তরটা সহজ - যুদ্ধের সময় যারা মানুষ মারে তারা তো আর গুনে গুনে মানুষ মারে না। এ ছাড়া যুদ্ধের একটা বড় দিক হলো এর ভয়াবহতা।
সেখানে মানুষ জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি একটা সুক্ষ সীমানার কাছাকাছি থাকে - সেখানে মৃত মানুষের চেয়ে জীবিত মানুষ আনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন। তাই মানুষ নিহতদের দ্রুত তাদের দৃষ্টিসীমা থেকে সরিয়ে নিজের বাঁচার প্রক্রিয়াকে বেশী গুরুত্ব দেয়। আর যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশে মৃত মানুষের সংখ্যা নির্ধারনের চেয়ে জীবিত মানুষদের জীবনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াটাই বেশী যৌক্তিক নয়কি?
এটাতো গেল সিভিলিয়ান বা বেসামরিক মানুষ সম্পর্কে - যুদ্ধের সময় তাদের মৃত্যুকে সাধারন ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এটাকে কোলেটারাল ডেমেজ হিসাবে বিবেচনা করে মিডিয়াও মৃতের সংখ্যার থেকে ঘটনার ভয়াবহতা বা বিজয়ের হিসাবেই বেশী প্রচার করে। তাই দেখি ২০০৬ সালে ইসরায়েলী আক্রমনে একটা লেবানিজ গ্রাম যখন মাটিতে মিশে যায় - তখন পশ্চিমা মিডিয়া নিহতদের সংখ্যা ১০ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দেখিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধে নিহত সামরিক ব্যক্তিদের হিসাবতো সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধে কতজন মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে? একটা সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যাবে না। সেখানে আমেরিকান বাহিনী তাদের ইনভেন্টরী ব্যলেন্স করার জন্যে একটা বিশেষ কলাম ব্যবহার করে। সেটাকে বলা হয় - এমআইএ (মিসিং ইন একশন) বা হারিয়ে যাওয়া সৈন্য। একটা যুদ্ধের তিনযুগ পরও কি একজন সৈন্য হারিয়ে থাকতে পারে। এখনতো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ভিয়েতনাম যাচ্ছেন বা ভিয়েতনাম অন্য অর্থে আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্র।
এখন তো এরা হিসাব করে বের করতে পারে এই এমআইএ ৫০ হাজার সৈন্য কোথায়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কঠিন। একটা শরীর পঁচতে লাগে মাত্র এক সপ্তাহ আর পচাঁ-গলা মানবদেহ থেকে কোনটা আমেরিকান আর কোনটা ভিয়েতনামী হিসাবে চিহ্নিত করা কঠিন। এখানে খরচের প্রশ্নটাও জড়িত বটে। একেতো খুঁজে বের করতে খরচ - তার উপরে আবার নিহত সৈন্যদের ক্ষতিপুরনের ব্যয় একটা বিশাল ব্যাপরই বটে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে - সামরিক পোশাকী মানুষেরও যুদ্ধে মারা যাওয়া পর সংখ্যা নির্ধারন করা কঠিন কাজ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।