আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভয়ানক একা চাঁদটার সাথে.....

আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়

এরকম আগে কখনো হয়নি,বুঝতেই পারছিলাম কেউ যেন আমার নাক মুখ চেপে ধরেছে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া আর আতংকিত এক ভয়ে ঘুম থেকে উঠেই চারপাশে তাকালাম। অন্ধকার রুম একেবারেই কবরের অন্ধকার। এত নিস্তব্ধ রুমটা, মনে হচ্ছিল নিজের শারিরিক অবস্থাটাও বুঝতে পারবো না। হঠাত এক অজানা ভয়ে মনটা একবারে গুটিয়ে গেল।

পাশের ঘরে যাবো বলে খাট থেকে নামতে গিয়ে হতছাড়া কম্পিউটার টেবিলেন পায়ার সাথে সংঘর্ষ,ব্যথা পাবার সাথে সাথে হঠাত ক্রোধের জন্ম আর মনে হচ্ছিল আজ শালা কম্পিউটারই ভেঙ্গে ফেলবো। এক ব্যথায় জান শেষ। পাশের রুমে যেতে না যেতেই মনে পড়লো আজ ঘরে কেউ নেই সবাই গিয়েছে বড় খালার মেয়ের গায়ে হলুদে। ছুটি পাইনি বলে আমার যাওয়া হয়নি। এই বিশ্রী অন্ধকারে হঠাতই অজানা ভয়ে শরীর কেপে উঠলো,শরীর হিম হয়ে গেছে,এক পাও নড়তে পারছিনা।

মনে হচ্ছে আমার পাশে অসংখ্য মুদ্দা শুয়ে আছে। চোখে পানি চলে আসলো,বুঝতে পারছিনা কি করবো। অনেক কষ্টে এক পা দুপা করে শরীর কে ঘুরিয়ে নিজের ঘরে এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। পুরা দুনিয়া আমার মাথার উপর ঘুরছিলো। কোন কিছুই চিন্তা করতে পারছিলাম না।

দশ মিনিট নিজের মধ্যই নীরবতা,কোন কিছুই উপলব্ধি করতে পারছিলাম না। হঠাত একটা শব্দে চোখ খুলে গেল,এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছুই খুজে পাচ্ছিলাম না,হঠাত আলো দেখে হাত বাড়িয়ে জিনিসটা নিলাম আরে এত আমার মোবাইল,কাজ থেকে আসার পর থেকেই পাচ্ছিলাম না,একটা ম্যাসেজ আসছে,খালাত বোনের ম্যাসেজ। তার গায়ে হলুদে যাইনি বলে রাগ করেই একটা ম্যাসেজ দিয়েছে,লিখেছে "আপনি অনেক খারাপ একটা লোক,যদি বিয়েতে আপনাকে আসতে দেখি তাহলে আপনাকে আমি খুন করবো". হুমম বুঝতে পারলাম ওর রাগ,কি করবো ছুটি পাইনি। ভাবলাম ফোন করি,নাহ ইচ্ছা করছে না। মাথা ধরা অনেকটা ছেড়েছে।

এখন ভালো লাগছে। কিন্তু এই অন্ধকার মনে হচ্ছে আজ আমাকে ঘ্রাস করবে। পানির পিপাসা লেগেছে,কিন্তু ভয়ে নিচে যেতে পারছিনা। পুরা ঘরটাই অন্ধকার। মোবাইলে তেমন আলো হয়না।

মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল আমার কতগুলো প্রতিবিম্ব আমার পাশে ঘুরছে,আর আমায় প্রশ্নকরছে। কিন্তু কোন উওর নেই আমার কাছে। কাটলো অনেক সময়। ঘামে শরীরটা ভিজে গেছে। জানালাটা খোলা দরকার।

কিন্তু জানালা খুজে পাচ্ছিনা,অনেক কষ্টে হাতড়ে জানালা খুজে পেলাম। খুলতেই এক ঝটিকা হাওয়ায় পুরা শরীরটা একেবারেই ভিজে গেল। ভালো করে আকাশে তাকাতেই দেখি কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। পুরা পৃথিবীকে আলোকিত করে রেখেছে। আসলেই জানালা খোলা উচিত ছিল আগে।

তা নাহলে আমার জানালার পাশের পৃথিবীর সাথে অনেক আগেই পরিচিত হয়ে যেতাম। এখন আর একা লাগছেনা। সুন্দর চাঁদের আলোয় আর মনের সব অজানা প্রশ্নে ভালোই লাগছে। পুরান স্মৃতি মনে পড়লো,কখনো প্রিয়ার হাত ধরে কাটিয়েছি আকাশ দেখে,কখনো আকাশের নীলে ভেসে যাবার ইচ্ছে ছিল। থাকনা এসব কথা ,যে নেই তাকে এই সুন্দরের সাথে মিলিয়ে কি লাভ,স্বর্গে থেকে সে আরো সুন্দরের সাথে খেলছে।

আজ না হয় চাঁদের সাথে একাকী সময় কাটানোর পালা। হঠাত কিছু কিছু গাড়ীর শব্দে ফিরে আসছিলাম বাস্তব ভূবনে। নবনীকে চাঁদ দেখানোর কথা ছিল আমার প্রায় বছর দুয়েক আগে। নাহ তা আর হলো না। হঠাত শরীরটা হিম হয়ে আসলো।

কেউ যেন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,কপালে জমা ঘাম মুছে দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল আমার পাশে কেউ বসে আছে। তাকাতেই দেখি ধবধবে সাদা শাড়ী পড়া এক যুবতী। আবারো ভয়ে শরীর হিম হয়ে যাচ্ছিল। সাহস নিয়ে তাকাতেই দেখি নবনী,আমার নবনী,ঠিক আমার পাশে বসে আছে।

কেমন আছে নবনী? নবনী কিছু বলে না। আবারো বললাম তুমি কেমন আছে? শুধু একটু মুচকি হেসে বললো তুমি যেমন রেখেছ। ঠিক আগের মত যখন ও জীবিত ছিল। আচ্ছা তুমি কিভাবে এলে? নবনী: কেন তুমিই যে আমাকে ডাকলে । আচ্ছা তুমি কি আবার চলে যাবে? নবনী: কেন তুমি কি তাই চাও? না তা বলছিনা,তুমিতো মৃত।

থাকবে কি আমার সাথে সারাটাজীবন যেমন থাকতে চেয়েছিলে। নবনী: অশ্রু নয়নে,পারবে কি আমাকে রাখতে? আচ্ছা তুমি এত ভয় পাও কেন? ভীতু কোথাকার। হুমম তুমি একটু ও বদলাওনি। নবনী: আচ্ছা তুমি কি আমাকে আগের মত এখন ও ভালবাস? আমি চুপ। যেমনটি ওকে কখনো বোঝাতে পারিনি কতটুকু ভালবাসেছিলাম তাকে।

নবনী: হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবেনা। ভীতু কোথাকার আচ্ছা তুমি থাকবে আজ সারারাত আমার সাথে? নবনী: থাকবো আজ আমার অপূর্ণ চাঁদ দেখা দেখব। নবনীকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। অনেকটা সময় দুজনেই চুপ।

হঠাত নবনী বললো: নবনী: আচ্ছা আমি যদি আবারো চলে যাই তুমি কি আবারো অগোছালো হয়ে যাবে? বললাম আমি জানি তুমি আর যাবে না। ও কিছু বললো না। কান্না করতে লাগলো। বললো তুমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। আমি যাবো না।

রাজ্যের ঘুমে আমি ডুবে গেলাম। নিশ্চুপ এই পৃথীবি। সব কিছুই। একেবারেই চুপ। আবারো শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো,চোখ মেলে দেখি মোবাইল বাজে,রিসিভ করতেই আমার বস বললো "এখনো ঘুমাচ্ছেন? আমি আপনার বাসার বাইরে " হু মনে পড়েছে আজ তার পুরানো বাড়ী দেখতে যাবার কথা ছিল আমার।

তাড়াহুড়ো করে নামতে দেখি পায়ে ব্যথা পাচ্ছি,কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হঠাত মনে পড়লো নবনীর কথা। গাড়ীতে বসে মনে পড়লো কালরাত কি এমন হয়েছিল। অজানা এক ভালো লাগা অনুভব করলাম, নবনীকে মনে পড়তেই। যাক শেষ পর্যন্ত চাঁদ দেখা হলো তার সাথে।

পায়ের ব্যথাটা এখন যায়নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।