অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে
ভালবাসার অভ্র
যে জিনিসটা প্রতিদিনের ব্যবহারের, তা যে অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ, এই কথাটা দিনের অন্যান্য কথার সাথে মিশে থাকে বলে আলাদা করে আর চোখে পড়ে না। কী খেয়ালে আজ কথাটা আলাদা করে যেন চোখে পড়ছে।
২০০৭ সালে আমি যখন শিক্ষার্থীবেলায়, অতি আদরের এক ছোট ভাই গালিবদের বাসায় বেড়াতে যাই। কথায় কথায় ফাঁস হয়ে গেল যে আমি টাইপিং স্পিড বাড়ানোর জন্য কোমর বেঁধে লেগেছি। তেমন কোন কারণ ছিল না।
একবার এক অ্যাসাইনমেন্ট টাইপ করতে দোকানে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছোট্ট একটা ছেলে টাইপ করছিল। তার স্পিড দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন আমি ‘আর্ট অফ টাইপিং’ এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ঠিক করে ফেলি আমিও দ্রুত টাইপ করা শিখব। প্রসঙ্গক্রমে বাংলা টাইপ শেখার পরিশ্রমটুকুর প্রতি আমতা আমতা ভাবটাও গোপন রইল না।
সেই শুভ মুহূর্তে গালিব অভ্র’র কথা বলল। আমি শুনে তো যারপর নাই খুশি। ওর পিসিতে বসে দেখিয়ে দিল, আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল। আমার আনন্দ আর ধরে না। সাথে পেনড্রাইভ ছিল।
সফটওয়্যারটা নিয়ে এলাম।
সেই থেকে অভ্র আমার লেখনী। শিক্ষার্থীকাল সমাপ্তির পর যখন কাজের খোঁজ পেলাম, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বার বাংলা লিখতে হত না বলে সে বিষয়ে ভাবতে হয়নি। চতুর্থ কর্মস্থলে মাঝে মধ্যে বাংলা লিখতে হত এবং সেটা আমার লেখনী দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান কর্মস্থলে বাংলাতেই বেশি লিখতে হয় এবং অফিস থেকে বলে দেওয়া হয়েছে অবশ্যই সুতোনি ফন্টে লিখতে হবে।
মহা বিপদে পড়লাম। ইউনিকোড থেকে বিজয়ে কনভার্ট করে চালাবো ভাবছিলাম। দেখলাম মাঝে মধ্যেই ফন্ট ভেঙে যাচ্ছে। কী করা যায় উপায় না দেখে বিজয় কীবোর্ড শিখেই নিলাম। এতেও সম্পূর্ণ সমাধান হল না।
আমার যে ধরণের কাজ, তাতে যথেষ্ট স্পিড না হলেই নয়। বিজয় কিবোর্ড চিনেছি মাত্র, স্পিড তো নাই। এমন এক দিনে এক ছোটভাই এবং বর্তমান সহকর্মী জানাল অভ্র’র গ্লোবাল আউটপুট দুই ধরণেরই হতে পারে; ইউনিকোড এবং এএনএসআই। এবং এর এএনএসআই আউটপুট বিজয়ের সঙ্গে কম্পেটিবল। হায় হায়, এই জিনিস এতদিন জানলাম না কেন।
অভ্র’র এই মোড অন করে সুতোনি ফন্টে দিব্যি লিখে যাচ্ছি।
এই সফটওয়্যারের পেছনের মূল মানুষটির নাম জানলাম মাত্র গত বছর। এই অমূল্য জিনিস ফ্রি ব্যবহার করতে দিয়ে নিজে ঠিক আড়ালটাই বেছে নিয়ে বসে আছেন মেহেদী হাসান খান। ২০১০ সালে বিজয়ের তরফে অভ্র’র লোকজনকে যে অপবাদ দেওয়া হয় তার পেছনে একট বিষয়ই উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে- ব্যবসার ক্ষতি। যে মানুষটিকে শ্রদ্ধায় ভালবাসায় মাথায় করে রাখার কথা, তাকে বলা হল চোর।
হায়রে জব্বার আংকেল।
একজন বলেছিল ‘অভ্র’ হল একটি খনিজ। আমার জানা নেই। আমি শুধু জানি অভ্র মানে মেঘ; সাদা সাদা মেঘ; ভালবাসার মেঘ।
“আমার সকল পাপ ক্ষমা করে দিও তুমি মেঘ/ ভালবাসা হয়ো তুমি পরজনমে”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।