mahbub-sumon.com
প্র: ক্যাম্পের ছেলেদের কি পরিমাণ অর্থ দেয়া হতো ?
উ: অর্থ আসতো ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। একজন ছেলের জন্য প্রতিদিন খাওয়ার পেছনে ন্যুনতম কতো টাকা লাগে এটা দেখে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মাথাপিছু অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করতেন। খাওয়ার অবস্হা খুব ভালো ছিলো না। প্রধানত ভাত,আলু ভাজি,কুমড়া ভাজি এ সবই ছিলো খাবার। ডাল দেয়া হতো।
কোনো কোনো দিন শুধু ডাল ভাত। ছেলেরা খুবই কষ্ট করতো। এ অবস্হায় খাবারের মান উন্নত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার যুবকদের জন্য মাথাপিছু ১ টাকা ২৫ পয়সা বরাদ্দ করে। তবে এই অর্থ সব জায়গায়,সব ক্যাম্পে ঠিক মতো পৌঁছতো কি না সে সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবো না। সব এম. পি. ক্যাম্পে যেতেন না।
অন্যদিকে অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী বা ধনী ব্যক্তি শরণার্থী শিবিরে সাহায্য করতেন। যুব শিবিরে সবার মধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের নীতি ও কৌশল’নামে একটি পুস্তিকা বিতরণ করা হয়েছিলো। এই পুস্তিকায় এ ব্যাপারে একটা গাইড লাইন দেয়া ছিলো।
প্র: যুব শিবিরে যে অর্থ ও সাহায্য সামগ্রী বিতরণ করা হতো- এটা কিভাবে করা হতো এবং কারা করতেন ?
উ: এ বিষয়ে কিছু কথা আমি ইতোপূর্বেই বলেছি। যুব শিবিরের টাকা বিতরণ করতেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ আলী নিজে।
যারা ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন বা ক্যাম্প চালাতেন আসলে তাদের কাছেই তিনি টাকাটা দিতেন। আমি বা আমার ডেপুটি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অব.) রেজা কখনোই টাকা হ্যান্ডল করিনি। আমি আগেই বলেছি যে,এ সব ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন আওয়ামী লীগ এম.এন.এ.,এম.পি.এ. অথবা আওয়ামী লীগ অ্যাক্টিভিস্ট। অন্য কোনো ব্যক্তিকে ক্যাম্প ইনচার্জ করা হয়নি। ভারত সরকার টাকা দিতেন থ্রু মিনিস্ট্রি অব রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু টাকা দেওয়া হতো প্রফেসর ইউসুফ আলীর মাধ্যমে। তারপরও এ অর্থ পর্যাপ্ত ছিলো না। বেশিরভাগ সময়ই আমাদের ছেলেরা কুমড়োর ঘন্টো আর ডাল ভাত খেতো,মাংস পেতো কদাচিৎ। মাসে একবার কিংবা দু’বার বি এস এফ ছাগল এনে দিলেই তারা মাংস পেতো। মাছ তো পেতোই না।
কাপড় চোপড়ও বেশি দেয়া সম্ভব হয়নি। লুঙ্গি,শার্ট আর একটা গামছা দেওয়া হয়েছিলো। গেরিলারা গামছা মাথায় বেঁধে চলতো। এটাই ওদের চিম ছিলো, যে ওরা মুক্তিযোদ্ধা।
আমি এখানে আরো দু’একটি কথা যোগ করতে চাই।
আমার একটি অবজারভেশন হলো মুক্তিযুদ্ধে যারা যোগ দিয়েছিলো তাদের বেশিরভাগকেই তাদের মায়েরা পাঠিয়েছিলেন যুদ্ধ করার জন্য। এ প্রসঙ্গে আমি একটি ঘটনার উল্লেখ করবো যুদ্ধের শেষের দিকে যখন পাকিস্তানিরা পিছু হটছে,আর সে সব জায়গা দখলে নিচ্ছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। এমন এক পর্যায়ে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জামান এলেন এক মুক্ত গ্রামে,আশ্রয় নিলেন এক মোড়লের বাড়িতে। কর্নেল জামান তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,মুক্তিযুদ্ধে তুমি কি কাজ করেছো। মোড়ল জানালো যে,সে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সাহায্য করেছে,অনেক কাজ করেছে।
ইত্যবসরে সেই মোড়ল কি কাজে যেন বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে মোড়লের স্ত্রী কর্নেল জামানের কাছে এসে জানালো যে,স্যার,ওর একটা কথাও বিশ্বাস করবেন না। ও রাজাকার ছিলো এবং পাকসেনাদের সব সময় সাহায্য করতো। এ ঘটনা শুনেছিলাম কর্নেল জামান-এর কাছ থেকেই। এই ঘটনা থেকে আমি বলবো,আমাদের মায়েরা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কমিটেড। চরম বিপদের মধ্য দিয়েও কিছু করার চেষ্টা করেছেন।
অতি প্রিয়জনকেও অর্থাৎ নিজের ছেলেকে মুক্তিবাহিনীতে যেমন পাঠিয়েছে তেমনি স্বামী বা এমন কাউকে তার অপরাধের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি।
চলবে ......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।