আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুম্বাই ম্যাসাকার:নৃশংসতা, মানবিকতারবোধ এবং ঘৃনার বাইরে আরো কিছু

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস

আমি স্রোতের অনুকূলেই সাতার কাটা মানুষ। স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার মতো সাহস কিংবা যুক্তির ধার কোনটাই নেই। তবুও মাঝে মাঝে স্রোটের বিপরীতে নিজের ভাবনাকে তুলে ধরার ধৃষ্ঠতা দেখিয়ে থাকি। কৌশিক ভাইয়ের পোষ্টোর কিছু প্রতিক্রিয়া দেখে আমার দুইধরনের উপলব্ধির অনুসন্ধান পাই। আমরা দেশ জাতি নির্বিশেষে অনেক বেশি মানবিক, সন্ত্রাসবিরোধি ,প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধকামী তবে সব ক্ষেত্রেই বহুবিধ দৃষ্টিসম্পন্ন নই বোধকরি।

আমরা শুধু সন্ত্রাস কিংবা সন্ত্রাসীর কুকর্ম হত্যাযজ্ঞ দেখি শিউরে উঠি, তার কঠোর শাস্তির দাবী করি, সন্ত্রাসবাদের নির্মুল চাই কিন্তু সন্ত্রাসীর বেড়ে উঠা কিংবা তার যে নিজস্ব দৃষ্টিভংগী, সেটার অনুসন্ধান করিনা। সামরিক কায়দায় হয়তোবা সন্ত্রাসবাদকে সাময়িকভাবে কিছুদিনের জনয় দাবিয়ে রাখা যায় কিন্তু "সন্ত্রাসবাদের নির্মুল" ঐ রাজনীতির রাস্তা ছাড়া অর্জিত হবেনা। সমসাময়িক প্রক্ষাপটে খুবই বিতর্কিত মনে হতে পারে তবু কিছু কথা বলতে চাই। যে কোন আন্দোলনের সাথে সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র আজকের নয় অনেক পুরনো। এর প্রথম তত্ত্বগত ভিত্তিদেন ফ্রানজ ফাঁনো ।

ফানো ছিলেন আলজেরিয় খ্রীষ্টান, তখনকার আলজেরিয়ার ঔপনিবেশিক প্রভু ফ্রান্সে পড়াশোনা করা মনোচিকিৎসক। ফাঁনো ছিলেন প্রবলভাবে স্বাধীনতাকামী। এবং স্বাধীনতা প্রশ্নে তিনি ছিলেন চরমভাবে উগ্রপন্থি। তিনি আলজেরিয়ার স্বাধীনতাকামিদের তখন বেসামরিক আলজেরিয়ায় অবস্থানরত বেসামরিক ফরাসি অধিবাসী, ফরাশি কাফে, রেস্টুরেন্ট বারে হামলা চালানোর তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রদান করেন। তাঁর বিখ্যাত les damnes de la terre(জগতের অভিশপ্ত) বইয়ে তিনি বেসামরিক স্থাপনায় হামলার বৈধতা দেন এই বলে যে উপনিবেশের বেসামরিক লোকদের পরোক্ষ সমর্থনে উপনিবেশ টিকে থাকে।

তাই তাদের অস্তিত্বে প্রবল ভাবে আঘাত করতে না পারলে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসবেনা। সুতরাং উপনিবেশের ভিত্তিকে দূর্বল করতে বেসামরিক লোকদের হামলা দোষের কিছু নয়। অত্যাচারিত মানুষের প্রধান অস্ত্র সন্ত্রাস। ফরাশি দার্শনিক জঁ পল সাত্র ফাঁনোর অ্যাডভোকেসি অফ ভায়োলেন্স তত্বকে সমর্থন দিয়ে তার বইয়ের মুখবন্ধ লিখে দেন। আলজেরিয়া স্বাধীনয়া ফাঁনো কিংবা ফাঁনোর তত্ব কতাটা সত্যিকারের প্রভাব রেখেছিলো বলা মুশকিল তবে আলজেরিয়া ,তিউনিশিয়া সহ অনেক দেশের স্বাধীনতাকামীদের অনুপ্রেরণা ছিলো ফাঁনো।

দ্যা ব্যাটল অফ আলজিয়ার্স ছবিতে ফাঁনো তত্বে বিশ্বাসী বিদ্রোহীদের নাশকতামুলক কাজের প্রমাণ মেলে। ফানো অনেক আগেই মরে ভুত হয়ে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর তত্বে আমার আস্থা নাই। তবে অনেকেই যে করে(হয়তোবা ফানোর বই পাঠ না করেই!) সেটার উদাহরণ অহরহ। তাই ফাঁনোর তত্বকে দুরে সরিয়ে রাখতে হলে, শুধু সন্ত্রাসবাদকে নির্মমভাবে দমন করলেই চলবেনা, সেগুলো পিছনের কারণ খুঁজে বের করাটাও জরুরী।

গৌতম ঘোষের একটা কথা কানে বাজে টেরোরিজম ইজ দ্যা আউটবার্স্ট অফ লং অপ্রেশন। প্রাসংগিক মনে হওয়ায় তারিক আলির লেখার লিংক দিলাম কারো যদি মনে হয়, লেখাটি নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভংগি অনুপস্থিত; ধর্মীয় দৃষ্টিভংগির উপস্থিতি আছে,তাইলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।