বৃথা হয়রানি
আমি একটা হোস্টেলে থাকি। সেখানে বারোভাজরা মানুষের বাস। বেশির ভাগই ছাত্র। এবং সবাই মোটামুটি শিক্ষিত।
মুম্বাই ট্র্যাজেডির পরের দিনের কথা।
রাতে ডাইনিঙে আমরা অধীর আগ্রহে নিউজ দেখছি। জানতে চাইছি মুম্বাইতে কি ঘটতে যাচ্ছে।
কিছু স্টিল ছবি দেখানো হলো সংবাদের মধ্যে। ছত্রপতি শিবাজি স্টেশনের ছবি। ছড়ানো ছিটানো লাশ আর চাক চাক রক্ত।
হাতটা ছিল ভাতের পাতে। কখন জানি না চোখের ওপর এসে বসল।
হায়, মানুষ এতো বর্বর হয়ে গেছে!
চারদিকে পিন পতন নীরবতা। দর্শকরা সবাই হতবিহ্বল। ক্রিকেটে ভারত মার খেলে ভালো লাগে।
উইকেট পড়লেও ভালো লাগে। তালি পড়ে। কিন্তু লাশ তো লাশই। মানুষের লাশ। লাশ মানে উইকেট নয়।
লাশ মানে একটা জীবন্ত মানুষ, যে একটু আগেও হেসে-খেলে বেরিয়েছে, সে অার েকানদিন ফিরবে না। তাই লাশ যে পক্ষেরই পড়ুক আমাদের ভালো লাগে না।
সবাই রদ্ধশ্বাসে ব্যাপারগুলো দেখছি। ওরা শিবাজি ছত্রপতি স্টেশন থেকে গিয়েছিল মাদাম কামা হাসপাতালে। সেখানে প্রসূতি মা আর নবজাতকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে... এতো খবর আমার জানার দরকার নাই।
বন্ধ কর টিভি। চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সবার অখণ্ড মনাযোগ দেখে কিছু বলবার সাহস হয় না। এমনই সময় বলা হলো ১১ টি হামলার স্থানের একটি হলো 'নরিম্যান হাউস'। এটি ইহুদি অধ্যুষিত একটি এলাকা।
সাধারণত ইসারাইল থেকে লোকজন মুম্বাই বেড়াতে এলে এখানে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে অনেক ইসরাইলের নাগরিক আছেন ওখানে।
এই খবরটা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে উঠল। কারো কারো মুখে হাসির একটা মৃদূ আভা দেখা দিল। কে যেন স্বগতস্বরে বলে উঠল, 'ভালো হইছে ক’টা ইহুদি মরব।
'
আমি ভাবতে পারছি না মানুষ হয়ে মানুষের মৃত্যুকে কেউ ‘ভালো’ বলতে পারে। মুসলিম জাহানের সঙ্গে ইসরাইলের বিরোধ থাকতে পারে। তাই বলে সাধারণ ইহুদিরা কেন সেই আক্রোশের শিকার হবে? রাষ্ট্র কিংবা ধর্মের জন্য ব্যক্তি মানুষকে কেন ঘৃণা করা?
এ কোন ধ্যান-ধারণায় বেড়ে উঠছি অামরা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।