আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলিটিক্স অব ল্যাঙ্গুয়েজেস: ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিডিং ক্লাবের ৬৮ তম সেশনে আমার উপস্থাপিত বিষয়

আমি নিজের মাঝে খুজে পেতে চাই আমার আমাকে। যেতে চাই বহুদূর। নানান দেশে নানান ভাষা। বিনে স্বদেশীয় ভাষে পুরে কি আশা। ।

(রামনিধি বাবু) আজকে আমাদের ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিডিং ক্লাবের ৬৮ তম সেশনের আলোচ্য বিষয় মনের আশা পূরণকারী স্বদেশী ভাষা নয় বরং নানান দেশের নানান ভাষা। আলোচনার প্রথমে আমাদের জানা দরকার ভাষা বলতে আমরা কি বুঝি। মুনীর চৌধুরী রচিত “বাংলা ভাষার ব্যাকারণ” এ বলা হয়েছে “বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে। ” বাগযন্ত্র বলতে গলনালী, মুখবিবর, কন্ঠ, জিহ্বা, তালু, দন্ত, নাসিক্য ইত্যাদি বাক প্রত্যঙ্গকে বোঝায়। এখানে যে ব্যাপারটা লক্ষনীয় যে, ভাষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যোগাযোগ বা Communication. Sign Language বা ইশারার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা সম্ভব বলে একেও ভাষা বলে অভিহিত করা যায়।

কিন্তু, কন্ঠধ্বনির সাহায্যে যা প্রকাশ করা সম্ভব, তা ইশারার মাধ্যমে সম্ভব নয়। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এই “কন্ঠ্যভাষা। ” বাংলাদেশের ৯৯% লোকের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাদেশ, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খান্ড, কর্ণাটক, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ, পাকিস্থানের করাচি শহর ও সিয়েরে লিওন সহ সারা বিশ্বের ২৩ কোটি লোক বাংলাভাষায় কথা বলে। উল্লেখ্য যে, করাচি শহরে ১ লক্ষাধিক বাংলা ভাষাভাষী লোক বাস করে।

এটি সপ্তম সর্বোচ্চ কথিত ভাষা। এবং পৃথিবীর এক মাত্র ভাষা যাকে কেন্দ্র করে একটি দেশের আত্মপ্রকাশ। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি। এরই প্রেক্ষাপটে বাংলা পেয়েছিল অবিভক্ত পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই ঘটনাকেই কেন্দ্র করে ভিত্তি লাভ করে।

তবে একটা জিনিস লক্ষ করে দেখবেন যে, তদানীন্তন পাকিস্থানে ভাষা হিসেবে উর্দুর অবস্থান ছিল ৫ম; বাংলা, পাঞ্জাবি, সিন্ধি ও পশ্তুর পরে। কিন্তু পাঞ্জাবঘেষা পাকিস্থান সরকারের উর্দুর পক্ষে অবস্থান নেওয়াতে পশ্চিম দিক থেকে কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ আসে নি, কিন্তু আমরা আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসার পূর্ণ নমুনা রেখেছিলাম। উল্লেখ্য, পাকিস্থানে ১৯৬১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ১৯৫১ সালে বাংলায় ৫৬.৪০% ও পাঞ্জাবিতে ২৮.৫৫% লোক কথা বলত। কিন্তু উর্দুতে ৩.৩৭%। বাংলাদেশের সবাই বাংলাভাষাকে ব্যবহার করে থাকে।

এবং ঔপেনিবেশিক কারণে ইংরেজি ব্যবহার করে থাকি। এখানে উল্লেখ্য যে, যেই দেশ যে দেশের উপনিবেশ ছিল, স্বাধীনতা লাভের পর সেই দেশ ঔ দেশের ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে তাকালে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ঠ হয়ে যায়। বাংলা আর ইংরেজি ভাষায় যাবতীয় কাজ চালানো যায় বলে আমাদের দেশে বহু ভাষা শেখার তেমন প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায় না। আমাদের পাশের দেশ ভারতে মোট ১৮ ভাষা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

হিন্দি ও ইংরেজীকে সেখানে ভাষার মধ্যস্ততাকারী “lingua franca” হিসেবে কাজ করতে হয়। এই জন্য ভারতের অধিকাংশ মানুষ একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ পায়। বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। যদিও বলা হয় যে, বিশ্বায়নের ধারক বাহক ইংরেজি। এক কারনে আমাদের অনেকের ধারণা যে, বাংলার পাশাপাশি ভালো মত করে ইংরেজি শিখলেই হয়।

কিন্তু পৃথিবী কি এতই ছোট। চীনারা একটা কথা বলে “Learn Chinese & Double your world.” উল্লেখ্য যে, চীনারা যে জগতের কথা বলেছে, সেই জগতের খুব নগণ্য মানুষই English জানে। সারা বিশ্বের ৫৪ টি দেশে ইংরেজি, ২৯টি দেশে ফরাসি, ২৭টি দেশে আরবি, ২২টি দেশে স্প্যানিশ, ৯ টি দেশে পর্তুগীজ, ৬টি দেশে জার্মান, ৫ টি দেশে চীনা (চীন; তাইওয়ান; সিঙ্গাপুর; ব্রুনাই; ওয়া প্রদেশ, মিয়ানমার), ৪টি দেশে ইতালিয়ান ভাষা সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। আমার একটা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করি আপনাদের সাথে। ঘটনাটি ভারতের মেঘালয় প্রদেশ এর সীমান্তবর্তী একটি এলাকায়।

আমি আমার আদিবাসী বন্ধুর সাথে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঔ অঞ্চলটি ছিল আছেক ভাষাভাষী গারো অধ্যুষ্যিত। আমার বন্ধু তার ঔপারের কয়েকজন আত্মীয়ের কাছে রেখে যায়। তাদের মধ্যে কেও আচেক বাদে অন্য কোন ভাষা জানত না। ফলে, হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা বুলি আওড়িয়েও আমার বন্ধু কোথায় জানতে পারি নি।

ভাগ্যিস সেখানে গ্রামীনফোনের নেটওয়ার্ক ছিল। আমি যে অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম তা ব্যতক্রম নয়, বরং অহরহই ঘটে থাকে। আর এখান থেকে পরিত্রাণ পেতেই বহু ভাষার প্রয়োজনীয়তা মানুষ উপলব্ধি করে থাকে। মানুষ কেন মাতৃভাষা ব্যাতিরে অন্য ভাষা শেখে? প্রশ্নটা যেমন বিভিন্নভাবে নেওয়া যায় উত্তরও হতে পারে ভিন্ন। ভাষার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু যোগাযোগ, নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্য জাতি-ভাষাভাষীর সাথে যোগাযোগ করাই অন্য ভাষা শেখার প্রধাণ কারণ।

স্বার্থটা হতে পারে কূটনৈতিক, ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, শিল্পসাহিত্যিক... চিন্তা করুনঃ বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে ইউরোপীয়দের ভূমিকা এত বেশি কেন? উত্তরটা খুব কঠিন নয়। কারণ তারা চেয়েছিল যে, স্থানীয়দের ভাষা শিখে তাদের উপর ঔপেনিবেশিক ভিত্তিকে মজবুত করতে বা খ্রিস্টিয় ভাষায় স্থানীয়দের দিক্ষিত করতে। এখানে ইউরোপীয়রা পুরোপুরি স্বার্থক। কারণ তারা বাংলা ভাষাকে রপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে। যেই সব দেশে বহু জাতিগোষ্ঠী বিদ্যমান, সেখানে language politics নামে একধরনের নীতি সরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

উর্দুকে পাকিস্থানের বা হিন্দিকে ভারতের জনগনের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা language politics এরই একটা উদাহারণ। সারা বিশ্বে এই রাজনীতি খুব সচারচরই দেখা যায় কিন্তু ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন বা ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে মাতৃভাষাতে শিক্ষার দাবীতে আন্দোলন খুবই নগণ্য। এরই কারনে পৃথিবীতে ছোট ছোট ভাষাগোষ্ঠী হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর ২০ টি ভাষাভাষী মানুষ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫০% এর বেশি। এই language politics এর জন্য ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট ভাষার(৬০০০-৭০০০) ৫০-৯০% ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

একে ভাষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে Language Hegemony। language politics এর দ্বারা কোন একটা ভাষাকে lingua franca হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালানো হয়, হতে পারে এটি ঔপনিবেশিক ভাষা, প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠির ভাষা, সংখ্যাগুরু জাতিগোষ্ঠির ভাষা বা সবার জন্য বোধগম্য একটা ভাষা। একে পরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শক্ত ভিত্তি দেওয়া হয়(উর্দু বা হিন্দিকে এর উদাহারণ বলা যেতে পারে)। আবার বাংলাদেশে সরকারি কোন যথার্থ নীতির অভাবে ও বাংলার একছত্র আধিপত্যের কারণে ক্ষুদ্র ভাষাগোষ্ঠীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিক প্রভুর ভাষাকে lingua franca হিসেবে গ্রহণ করেছে।

আবার আঞ্চলিক lingua franca এর উদ্ভব হয় ব্যসায়িক কারণে। উদাহরণ স্বরূপ Swahili ভাষার কথা বলা যেতে পারে। এটি পূর্ব আফ্রিকার একটি ভাষা। আফ্রিকান ইউনিয়নের দাপ্তরিক ভাষাও এটা। তাঞ্জানিয়া, ডিআর কঙ্গো, কেনিয়া, উগান্ডা ও কমোরোস এর ভাষা।

মজার কথা হচ্ছে, এই ভাষা মাতৃভাষা হিসেবে ৫ কোটি লোক কথা বলে কিন্তু lingua franca হিসেবে ব্যবহার করে ১৪ কোটি। Lingua politics এর ফলে অন্যান্য ভাষা কতটুকু প্রভাবিত হবে তা নির্ভর করে ঐদেশের রাজনৈতিক অবস্থার উপর। গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষুদ্র ভাষাগোষ্ঠি কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যেমনঃ ভারত(১৮ টি রাষ্ট্র ভাষা), দক্ষিণ আফ্রিকা(১১ টি রাষ্ট্রভাষা)। আবার, একনায়কতন্ত্রিক সরকার ক্ষুদ্রভাষাভাষীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে। উধাহারণ স্বরূপ বলা যায় যে, General Franco এর সময় Spain এ স্প্যানিশ বাদে অন্যান্য ভাষা যেমনঃ ক্যাতালান, বাস্ক, গ্যায়েগো’র ব্যবহারের উপর বাঁধা-নিষেধ আরোপ করে হয়েছিল।

পরবর্তিতে গণতান্তিক সরকারের সময় এই বিধিনিষেধ তুনে নেওয়া হয়। বর্তমানে Spain এর রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্পানিশের সাথে সাথে ক্যাতালান, বাস্ক এবং গ্যায়েগো মর্যাদা পেয়েছে। একটা ভাষার গুরুত্ব তার ভাষাভাষীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে না। বরং নির্ভর করে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক গুরুত্বের উপর। এই হিসাব সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

যেমন Cold War এর আগে রুশ ভাষার গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার গুরুত্ব হ্রাস পাবার সাথে সাথে রুশ ভাষার গুরুত্বও হ্রাস পেয়েছে। আবার গত কয়েক দশকে চীনা অর্থনীতির উর্ধ্বগতির সাথে সাথে চীনা ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে যদিও চীনা-ম্যান্ডারিনকে খুবই কঠিন ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার জাপানি ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে এসেছে জাপানের সাম্রতিক রক্ষণশীল বৈদেশিক নীতির কারণে। আবার ফরাসি ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক দিয়ে ১৮ তম হলেও বিশ্বের ২য় গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।

এর কারণ হলঃ ঔপেনিবেশিক, রাজনৈতি ও কূটনৈতিক। পৃথিবীর সব আন্তর্জাতিক সংস্থার ও ইউরো-আফ্রিকার অধিকাংশ সংস্থার দাপ্তরিক ও কার্যকরী ভাষা হিসেবে ফরাসি মর্যাদা লাভ করেছে। আমরা যারা আরবি শিখি, তার সংখ্যাগুরু অংশই ধর্মের কারণে শেখে। এই ধর্মীয় কারণেই Latin ভাষাকে বাচিয়ে রাখা হয়েছে। আবার Israel নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য Hebrew ভাষাকে পূণর্জাগরিত করা হয়েছে।

এবার আসি এক আশাবাদী ভাষার কথা। নাম এস্পেরান্ত। এটি একটি কৃত্তিম ভাষা। এর অর্থই হচ্ছে “A person who hopes.” জন্ম ১৮৮৭ সালে পোলিশ চক্ষবিশেষজ্ঞ Ludwig Zamenhof এর হাতে। উদ্দেশ্য ছিল সারা বিশ্বে একটি সাধারণ ভাষার তৈরি করা।

এটি Romance Language, Germanic Language ও Slavic Language এর Grammar O Vocabulary এর সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি বিশ্বে ইংরেজির বিকল্প Common Language হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে ১০০০ জন লোক আছে যারা জন্মসূত্রে এস্পেরান্ত বলে থাকে। আর মোট ভাষাভাষীর সংখ্যা ২ লাখ। লক্ষ্য করবেন যে, Google Translator এস্পেরান্ততে Translation Option আছে।

২০১২ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারিতে গুগল ৬৪ তম ভাষা হিসেবে এস্পেরান্ত যোগ করে। ভাষার সাথে সেই দেশের সংস্কৃতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটা দেশের ভাষা শিখতে হলে সেই দেশের সংস্কৃতিকেও ভালোভাবে জানা দরকার। এটা একে অপরের পরিপূরক। প্রভাবশালী ভাষাগুলোর ধারক বাহক দেশগুলো তাদের ভাষার প্রসারের জন্য সারা বিশ্বে তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে।

এর মধ্যে ফরাসি ভাষার জন্য রয়েছে Alliance Francaise, স্পানিশ ভাষা প্রসারের জন্য রয়েছে Instituto Cervantes, ইতালিয়ান ভাষা শেখানোর জন্য আছে Dante Alighieri Society, পর্তুগীজ ভাষা সেখানোর জন্য আছে Instituto Camões, মান্দারিন চীনা ভাষা সেখানোর জন্য আছে Confucius Institute, জার্মান শেখানোর জন্য আছে Goethe Institut. এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা স্বীয় দেশের ভাষা-কৃষ্টি প্রচার ও প্রসারে কাজ করে থাকে। যেমন বলা যায় ভারতের Indira Gandhi Cultural Centre হিন্দি ভাষার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে যে, এই সব যে ভাষা শেখায় তা মূলত সেই ভাষার প্রতিনিধিত্বকারী দেশসমূহের সাংস্কৃতিকে জোর দেওয়া হয়। যেমন ফরাসি ভাষা পৃথিবীর ২৯ টি দেশে প্রচলিত থাকলেও ফরাসি শিখাতে গেলে কিন্তু ফ্রান্সে প্রচলিত উচ্চারণ ও কৃষ্টিকেই গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। কিন্তু ফ্রান্সের ফরাসি ও আফ্রিকার ফরাসির মধ্যে অনেক চোখে পড়ার মত পার্থক্য রয়েছে।

এতে যতটা ফরাসি ভাষার যতটা প্রসার ঘটে, তার চেয়ে ফ্রান্সের বেশি প্রচার ঘটে। এটাও Language Politics এর অংশ। এখন আসি আমাদের কেন অন্য বিদেশি ভাষা শেখা দরকার। আমরা তো আমাদের মাতৃভাষা ও কলোনিয়াল সূত্রে পাওয়া ভাষা দিয়ে তো দিব্যি চলে যেতে পারি। হ্যা, আমরা আসলেই পারি।

কিন্তু আংশিক। মুদ্রার একপিঠ। প্রথমত, বানিজ্যিক দিকটাই দেখি। আমাদের সাথে চীন ও ল্যাতিন আমেরিকা যোনের বানিজ্যিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যোনে ইংরেজি খুবই কম ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এই ক্ষেত্রে দর কষাকষির জন্য সংস্লিষ্ঠ ভাষাজ্ঞান বেশ জরুরী। যেমনঃ ব্রাজিলের সাথে আমাদের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি ঔষধ রপ্তানি করে থাকে। আবার, বাংলাদেশ থেকে যে কয়টি দেশে বেশি টাকা পাচার করা হয়, তার মধ্যে ব্রাজিলের অবস্থান ৫ম। ব্রাজিলে সম্প্রতি বাংলাদেশের দূতাবাস খোলা এই উপলব্ধিরই প্রতিফলন।

এই বার আসি আমাদের শ্রম বাজারের কথা। আমাদের শ্রমবাজারের অধিকাংশই অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যেখানের ভাষা আরবি ভাষার প্রচলন বেশি। আমাদের শ্রমিকদের আরবি ভাষা জ্ঞানের দক্ষতা না থাকায় নানা ধরণের ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। ভাষা জ্ঞানের প্রসার আমাদের শ্রমবাজারের প্রসারে বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যেই সব ভাষাগুলো প্রতিনিধিত্ব করে থাকে তাদের মধ্যে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলো যেমনঃ ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, স্প্যানিশ, মান্দারিন ও রুশ এদের গুরুত্ব বেশি।

যদিও ইংরেজি দিয়ে মোটামোটি সব আন্তর্জাতিক কাজ করা যায়, অনেক জায়গায় আবার ফরাসির প্রয়োজন হয়। যেমনঃ ইউনেস্কো, ইন্টারপোল। আবার একটা মনস্তাস্বিক ব্যাপারও আছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে। একটা বাস্তব ঘটনার উধাহারণ টানিঃ মিশরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুতরস বুতরস গালি যখন জাতিসংঘের মহাসচিবের পদের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জিম্বাবুয়ের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড চিডজেরো৷ ব্রিটেন সহ ইংরাজিভাষী কমনওয়েলথ দেশগুলি জিম্বাবওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থন করছিল৷ গালি ও চিডজেরো-র সম্পর্ক ছিল মধুর৷ নির্বাচনের ঠিক আগে দুজনের দেখা হতে চিডজেরো হঠাৎ ফরাসি ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন৷ গালি মৃদু হেসে রসিকতা করে বলেন, ‘‘বার্নার্ড, ফ্রান্সের সমর্থন চাইলে শুধু ফরাসি বললে চলবে না, ইংরিজিও বলতে হবে ফরাসি অ্যাকসেন্টে ৷'' আপনার নিজের কথাটায় চিন্তা করেন! কোন ব্রিটিশ যদি আপনার সাথে হটাৎ ইংরেজিতে কথা না বলে বাংলায় বলতে শুরু করে, তখন তার সম্পর্কে কি অনুভব হবে। নিশ্চয় ইতিবাচক।

আর এই ইতিবাচক মনোভাবটা কূটনৈতিক সুবিধা আদায়ে বেশ জরুরী। আর এই জন্যই ঔপেনিবেশিক রাষ্ট্রসমূহ স্থানীয় ভাষা শিখতে এত আগ্রহী ছিল। দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশরা একই ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলো। অবশ্য তারা স্থানীয়দের স্প্যানিশ ভাষা শিখিয়ে তাদেরকে দিয়ে ক্ষমতা দখলের পথ সুগম করেছে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজরা তাদের ভাষাকে স্থানীয় ভাষার উপরে নিয়ে যেতে পারি নায়।

কারণ আমাদের আছে সুপ্রাচীণ রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, নৃতাত্তিক ও ভাষাতাত্তিক ইতিহাসের জন্য। বর্তমানে আমাদের দেশে ফরাসি ভাষা জানা লোকের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশের ভূমিকা ও উপস্থিতি বাড়ার কারণে। আর এই সব মিশনের অধিকাংশই পরিচালিত হয় আফ্রিকান ফ্রাঙ্কোফনি দেশ গুলোতে। মূলত এই ক্ষেত্রে ফরাসি দোভাষীদের প্রয়োজন হয়।

এই জন্য বর্তমানে এই দুই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ফরাসি শেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনা ম্যান্দারিনের কথা আমি আগেই বলেছি। বলেছি বানিজ্যিক কারণ। এখানে বলা অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশে চীনা ভাষা জানাদের জন্য অনেক চাকুরি অপেক্ষা করছে। দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্ক ও পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে দুই দেশের যোগাযোগও অনেক বেড়ে গেছে।

আর এরই প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে ভাষা জানা মানুষদের এই কদর। চীনের বৈশ্বিক বানিজ্যিক সম্পর্কের সাথে সাথে রাজনৈতিক গুরুত্বও বাড়ছে। এই জাল এশিয়া ছাড়িয়ে আফ্রিকা মহাদেশেও প্রসারিত হচ্ছে। চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিংপিং এর গত আফ্রিকা সফরে এই ব্যাপারটা বেশ স্পষ্ট হয়েছে। সারা বিশ্বের নজর এখন চীনের দিকে।

চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক ছাত্রের সংখ্যা চোখে পড়ার মতঃ ৮%-১৩%। আর এই আন্তর্জাতিক ছাত্রের তালিকার প্রথমে আছে দঃ কোরিয়া আর ২য় স্থানে আছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার সংখ্যা ২৩,০০০(২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, Chinese Scholarship Council)। আমাদের যদি আগামী বিশ্বের কূটনৈতিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিতে হয়, তবে মান্দারিন শেখাটা খুব জরুরি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার পান, তখন তিনি ১৩ তম ব্যক্তি হিসেবে ৮ম ভাষায় নোবেল লাভ করে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তিনি বাংলা গীতাঞ্জলী এর জন্য নোবেল পান নি, পেয়েছিলেন English “Songs of Offering” এর জন্য।

এখানে উল্লেখ্য, নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান “Swedish Academy” তে ১৩ টি ভাষার বিশেষজ্ঞ আছে যারা এই নির্বাচন পক্রিয়ায় সাহায্য করে। এর বাইরের কোন ভাষার সাহিত্যকর্ম হলে সেইটাকে Translation এর সাহায্য নিতে হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্য দরবারে বহুভাষা জানার গুরুত্বটা। এখানেই সব নয়। বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা পেতে গেলে বহু ভাষা জানা বেশ আবশ্যক।

বাংলা সাহিত্যের অধিকাংশ দিকপাল বহুভাষাবিদ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মধুসূদন দত্ত, প্রমথ চৌধুরী সবাই একাধিক ভাষা জানতেন। আর এদের এই জ্ঞান যে আমাদের আমাদের ভাষা সাহিত্যকে যে বেশ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা বলা হয়ে থাকে যে, প্রমথ চৌধুরী ফরাসি ভাষার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চলিত ভাষা প্রচলনে আগ্রহী হয়েছিলেন। আসি, জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে বহু ভাষার প্রয়োজনীয়তার দিক টায়।

আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের অধিকাংশ উপকরণ ইংরেজিতে পেয়ে থাকি। কিন্তু পৃথিবীর সব জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা কিন্তু ইংরেজিতে হয় নি। ফরাসি, জার্মান, রুশ ভাষায় পৃথিবীর যুগযুগান্তকারী অনেক জ্ঞানচর্চা হয়েছে। পরবর্তীতে তা ইংরেজিতে ভাষান্তর করা হয়েছে। ভাষান্তর করার ক্ষেত্রে ভাবানুবাদ করা হয়ে থাকে।

ধরা যাক, কার্ল মার্কসের একটা লেখা যেটি জার্মান ভাষায় Article হয়েছিল এবং পরে ইংরেজিতে ভাষান্তর করা হয়েছিল; যদি সেটা ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয় তার থেকে সরাসরি জার্মান থেকে বাংলায় অনূদিত Article অনেক উচ্চ মানের হবে এবং কার্যকরি অনুবাদ হবে। অনেকে বলে থাকে, জাপানিজ, চাইনিজরা নিজ ভাষায় জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে আসছে, আমরা কেন পারব না। আমি নিজেও বিশ্বাস করি যে না পারার কোন কারণ নেই। কিন্তু সেই বিশ্বাস কে বাস্তবে রূপান্তর করার কোন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় না। লক্ষ্য করে দেখবেন, Molecule এর অর্থ অনু, Atom অর্থ পরমানু; কিন্তু ক্রিপটন, জেনন এর বাংলা নেই।

কারণটা নানাবিধ হতে পারে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, আগে যে আমরা জ্ঞান চর্চা করতাম, এখন তা আমরা করি না। তবে, আমাদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার বেশ বেড়েছে। কিন্তু, ইন্টারনেটে রোমান হরফে বাংলা লেখার হার যেই হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে।

আর বাংলিশের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠী যখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে পারল না, তখন তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে পারসো-আরাবিক লিপিতে বাংলা প্রচলনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিল। এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা তা ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। আমাদের বাংলাভাষার প্রতি যে টান আছে, তা রক্ষা করার জন্য সামান্যতম প্রচেষ্টা নেই। নেই কোন সুনিদির্ষ্ট ভাষা আইন বা নীতি।

এখানে কোন বিদেশি শব্দ সরাসরি ইংরেজিতে বাংলায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, মান্দারিন, জাপানিজ, আরবি প্রভিতি ভাষার রয়েছে নির্দিষ্ট ভাষা আইন। এখানে কোন নতুন শব্দকে সংস্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমতিক্রমে সংস্লিষ্ঠ ভাষার সাথে সামাঞ্জস্য রেখে আলাদা প্রতিশব্দ তৈরি করা হয়ে থাকে। উধাহারন হিসেবে ধরা যাক “Mobile Phone” কে French এ “Portable”, Spanish এ “Móvil’, Mandarin এ “DianHua”, Japanese এ “KeiTai” Arabic এ “Jawal” বলা হচ্ছে। এটা তাদের ভাষানীতির জন্য।

বাংলাভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে দাবি করছে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের ভাষার প্রতি যত্নবান না হই, তবে আমাদের দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করাতে অসুবিধা হতে পারে। সর্বশেষে আসি বাংলাদেশে বিদেশি ভাষাশিক্ষার সুবিধা নিয়ে। বাংলাদেশে দুইটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও দুইটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট আছে। সরকারির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারির মধ্যে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বাংলা সহ ১৪ টি ভাষা শেখানো হয়। বাংলা মূলত বিদেশি শিক্ষাত্রীদের জন্য। এছাড়া এখানে আরবি, ইংরেজি, ফারসি, ফরাসি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, তুর্কি, হিন্দি, জার্মান, জাপানিজ, চাইনিজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান শেখানো হয়। তাছাড়া, Alliance Francais এ ফরাসি, Goethe Institut এ জার্মান, Russian Cultural Centre এ রাশিয়ান, Confucius Institute এ মান্দারিন, Indira Gandhi Cultural Centre এ হিন্দি শেখানো হয়ে থাকে।

কিন্তু সুবিধাগুলো ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে চট্টগ্রামে AFD এর একটা শাখা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ যেমনঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক বানিজ্য, ভাষাবিজ্ঞানে একটি ভাষার কোর্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি ভাষা শিক্ষার কোর্স খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই আগ্রহের ঢেউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আছড়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে পড়েছে।

বর্তমানে BIT সহ অনেক স্কুলে ফরাসি, মান্দারিন সহ বিভিন্ন ভাষা Stv III-IV থেকেই শেখানো হচ্ছে। কতটুকু শিখছে, সেটা বিষয় না, বিষয় হচ্ছে একটা ভাল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর এই রকম আর কিছু ভাল পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আমি আমার সেশনের ইতি টানছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।