অসম্ভব ক্লান্ত ছিলাম, সকাল ৮:৪৫ ঘুম ভাঙ্গতেই মনে হল সকাল ৯ টা পর্যন্ত ব্রেকফাস্ট ফ্রি এরপর গেলে পে করতে হবে। বাঙ্গালী নাকি পেলে আলকাতরাও খায় তাই মেগানকে উঠিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি পোলাপানে জায়গাটা গিজগিজ করছে।
অদ্ভুদ অভিজ্ঞতা হলো। আমেরিকান, জার্মান, অসি কে নেই ডাইনিং এ। অবাক হলেও দেখলাম অনেক মেয়ে মেয়ে টুরিস্ট্য, দেশি চিন্তাভাবনা এখনো মনের মধ্যে ভাবলাম এদের বাবা মা কি করে এদের একা ছেড়ে দেয়।
টিপিক্যাল কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্ট, উপায় নেই, তার উপরে ফ্রি, সো সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। টেবিল শেয়ার করতে হলো আরেক আমেরিকান ছেলের সঙ্গে। পরিচিত হতে বেশী সময় লাগল না তার ঘটনা মোটামুটি এ রকম
'' হাতে ১০,০০০ ডলার নিয়ে বেরিয়েছি চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে, তিনমাসের জন্যা থাকা যাবে এখানে ভিসা ছাড়া কিন্তু আমি যাচ্ছিনা যতক্ষন না এখানকার পুলিশ আমাকে কিক আউট করে''
বেচারার চিন্তাভাবনা দেখে ঠিক মুগ্ধ হলামনা, আরও অবাক হলাম ওদের কথা বলার ষ্টাইল দেখে। কথাই শুরু করেই নিজের এক্স গালফেন্ড্রের সাথে কবে ব্রেকআপ করেছে তা দিয়ে আর কোথায় কোথায় গার্লফ্রেন্ড য়ুগিয়েছে তা দিয়ে। আমর সঙ্গী মেগান ও কম যায়না নিজ দেশের সঙ্গী পেয়ে সেও গল্প করার মানুষ পেল বলে মনে হলো।
ভাবলাম আমাদের কথা আমরা সুন্দরী কাউকে পেলে নিজেকে জাহির করি কখনো ভাজা মাছটি উল্টে খাইনি এমনভাবে, আর এখানে সবাই অন্তত একডজন ছেলের সাথে ডেট করে, পরীক্ষা করে দেখে জীবনধারনের জন্যে তার কেমন সঙ্গী দরকার তারপর ঝুলে পরে একজনের সাথে।
আমাদের প্লান করাই ছিল যাবো লিটল ইউরোপ দেখতে সাথে অটোমিয়াম। লিটল ইউরোপ হলো ইউরোপের সমস্ত আকর্ষনগুলো ছোট করে তৈরী করা স্বল্প জায়গায়। যেন ১ ঘন্টায় ইউরোপ দেখা। দেশে থাকতে ইত্যাদিতে একটা পর্ব দেখেছিলাম এর উপর।
তো বাক্স পেটরা নিয়ে রওনা হলাম।
গোড়ায় গলদ স্বরুপ মেগান ওর টিকেট হারিয়ে ফেলল সো গচ্চা গেল চার ইউরো। আমি প্রথমবারের মত ট্রামে উঠলাম এখানে। বেশ ভালই লাগে চড়তে। তো এখানকার রাজপ্রাসাদ এর সামনে নেমে কিছু ছবি নেয়া হল সাথে ঢু মারলাম শহরের একমাত্র পার্কে।
অন্যকিছুর সাথে মিল রেখে যথারীতি ছোট সাইজের। মেগানের পীরাপিরীতে যাদুঘরে ঢু মারা হল বেশ কয়েকটাকা গচ্চা দিয়ে। এখানে একটা একজিবিশন হচ্ছে লন্ডন থেকে আনা ছবি দিয়ে, আমি ও পথে পা বাড়ালাম না কারন লন্ডনে সব মিউজিয়াম ফ্রি কেন বাবা টাকা দিয়ে দেখতে যাব।
জানিনা কেন যেন মিউজিয়াম আমাকে টানে। কিন্তু ভেতরে যাবার পর বেশ বিরক্তই হই।
ছবি দেখতে দেখতে যখন বোর হয়ে গেছি তখন ভাবছি ব্যাটাদের আর কোন কাজ ছিলনা যে বুগিঝুগি একটা রুমের মধ্যে এই ছবি ঝুলিয়ে উচ্চহারে মাসেহারা আদায় করছে। এ প্রসঙ্গে একটা কৌতুক মনে পড়ল।
'' একবার বিমূর্ত শিল্পকর্মের একটা প্রদর্শনী হচ্ছে, তো একটা দূর্বোধ্য আকিবুকির সামনে দাড়িয়ে এক ভদ্রলোকের মেজাজ খারাপ। সে শিল্পিকে কাছে পেয়ে শুধাল '' সবেধন নীলমনি এটা কি একেছ, আমাকে শিশু পাওনি যে এসব দেখিয়ে ক্রেডিট নিবে''
''আমি এখানে একটি শিশু ও তার মায়ের মধ্যের ভালবাসা দেখাতে চেয়েছি'' শিল্পীর উত্তর
তাতো বুঝলাম কিন্তু পারেননি কেন?
যাইহোক আমরা মিউজিয়ামে আর সময় নষ্ট না করে রওনা হলাম গন্তব্যে। লিটল ইউরোপ দেখে আঁশ মিটল না,মনে হলো ওভার প্রাইসি।
তো অটোমিয়াম এর পাদদেশে অনেক লোক দেখলাম কিসের যেন সেলিব্রেশন হচ্ছে। কাছে যেতেই বুঝলাম লোকাল টিম লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাই একই হৈ হল্লা। বিকেল হয়ে গেছে তাই আমি বৈশাখী মেলার পানে রওনা হলাম। মেগান অনেক ক্লান্ত তাই হোস্টলে রেস্ট নেবার সিন্ধান্ত নিল। আমিও আর জোরাজুরি করলাম না।
খুজেপেতে একটু সমস্যা হলেও মেলার জায়গাটা খুজে পেলাম, দু:খ পেলাম টিকেট কেটে ঢুকতে হল দেখে। ভিতরে অনেক ভাবী ও দেশী ভাইদের দেশীয় জিনিসের ছোট ছোট পসরা। কিছু মিস্টি কিনলাম । খুব বেশী দেরী হলনা অনুষ্ঠান শুরু হল আধাঘন্টা লেটে। ওখানকার বাচ্চাদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হলাম।
ফ্যাশন শো হল চমৎকার। এখানকার বাঙ্গালী কমিউনিটি বেশ ছোট, সবাই সবাইকে চেনে। অনুষ্ঠানে ক্যুইজে পুরস্কার জিতে বেশ ভালই লাগল। অনেকক্ষন পরে যেই বের হব অনুষ্ঠান থেকে নারায়নগঞ্জের একজনকে পেলাম। অনেক দিন ধরেই আছে ব্রুসেলসে মার্টিন নামে পরিচিত সবার কাছে।
আমাকে পেয়ে খাইয়ে দিল বেশ করে আরও ক্ষমা চাইল প্রথকে মিষ্টির দাম রেখেছে দেখে। ইংল্যান্ড এসেছি শুনে বাসায় আমন্ত্রন করল। নষ্ট করার মত সময় নেই তাই দ্রুত প্রস্থান।
শহরে গিয়ে দেখে এলাম বিখ্যাত মানিকান পিস। সেই ছোট্ট শিশু যে সর্বদা হিসু দিচ্ছে।
এটা এখানে খুবই জনপ্রিয়। এটাই মনে হয় পৃথীবির একমাত্র ভাস্কর্য যার স্যুভেনির কপি কিনা আসলটার থেকেও সাইজে বড়।
রাতে বাসায় ফিরে দেখি আমার রুমে আরও দুটো আপাদমস্তক মেয়ে। এরা বেশ ইয়াং, আমাকে দেখে অবাক হলেও ভয় পেলনা। সবকিছুর সাথেই এরা মানিয়ে নিতে পারে বলে মনে হল।
এরাও আমেরিকান। তো ওদের সাথে কিছুক্ষন প্যাচাল পেরে সোজা ঘুম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মেগান এর সাথে দেখা হলো শুনলাম অনেক রাতে ফিরেছে সারারাত পান করে নাকি কাটিয়েছে। আমরা ব্রেকফাস্ট করে বিদায় নিলাম ও চলে যাবে অন্য এক শহরে । আমরা ইমেইল এড্রেস আদানপ্রদান করে যার যার পথে চলে গেলাম।
আমি বাক্সপেটরা নিয়ে বের হলাম কারন রাতে ট্রেন। তো পার্কে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করলাম, ওখানে ওপেন এয়ার কনসার্ট এর স্বাদ নেয়া হলো। ট্রামে চরে পুরো শহরটা একবার চক্কর দিলাম পথে দেখে নিলাম ঐতিহ্যবাহী হোটেল দ্যুভিল এবং আর্মি মিউজিয়াম। কিছু চকোলেট কিনলাম বাসার জন্যে।
অনেক্ষন বসে রইলাম ষ্টেশনে কারন ট্রেন অনেক পরে।
এট ছোট শহর যে দেখা হয়ে গেছে দু দিনেই। শেষে মনে হলো নেপেলিয়নের ওয়াটারলু যেতে পারতাম। সময় নেই সো আরেকদিন হবে। ষ্টেশনে শুনলাম ষ্ট্রাইক রাত দশটা থেকে,ভয় লাগল আমার ট্রেন ছাড়বে কিনা কারন ভিসার মেয়াদ আজই শেষ।
ভাগ্য ভালই মনে হলো আমার ট্রেন রাত নয়টায় সো এটা সময় মতই ছাড়ল।
সময় মতই লন্ডনে চলে আসলাম। প্রথম ইউরোপ ভ্রমন বেশ ভালই লাগল। এবারের গন্তব্য প্যারিস কি যাবেন নাকি জানুয়ারির ৪ তারিখে ২০০৯........
বি: দ্র: রাতে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি তাই লেখাটা যেন কেমন হলো। বানান ভুল হলে স্বীয় গুনে ক্ষমা করবেন।
ছবি দেখতে চাইলে: http://www.flickr.com/photos/m2monir
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।