আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউরোপের পথে (প্রথমা)



পড়ার ব্যাপারটা যতটা সহজ লেখালেখির বিষয়টা ততটা সহজ নয় তা বুঝেতে পাড়লাম এই প্রথমবারের মত ব্লগ লিখেতে এসে। লন্ডনে আছি তা প্রায় এক বছর হলো। ইউরোপ যাবার ইচ্ছে ছিল সেই ছোট বেলা থেকেই কিন্তু হয়ে ওঠেনি সাধ আর সাধ্যের চিরন্তন যে দ্বন্দ আমাদের বাঙালীদের জীবনে তাই। এখানে আসার পর সব সময় ভেবেছি ইউরোপ যাবো, কিন্তু কাকে নিয়ে যাব কিভাবে যাব, থাকবই বা কোথায় ? শরীরে আমার অভিযাত্রীর রক্ত টগবগ করে ফুটলেও দেশে নারায়ণগঞ্জ এ থাকতে ২৩ বছরের জীবনে কেবল একবারই মাত্র ঢাকা বিভাগের বাইরে গেছি। তাই নিজের ইচ্ছেকে মনে হচ্ছে ডিঙ্গী নৌকায় আটলান্টিক পাড়ি দেবার চেষ্টা এক ঘরকুনো পুচকের।

টিভি দেখছিলাম, হঠাৎ করেই দেখি টিভিতে বেলজিয়ামে বাঙ্গালী বৈশাখী মেলার বিজ্ঞাপন হচ্ছে, এবং তা সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই। দেখামাত্রই সিদ্ধান্ত নিলাম বেলজিয়াম যাব এবারেই। কয়েকজনকে ফোন করলাম যাবার জন্য, সবার একই উত্তর ব্যাস্ত। পরিচিত আদনান একবার বলেছিল ইউরোপে যাবার জন্যে কেউ কারো জন্যে বসে থাকলে নাকি কখনো ইউরোপ যাওয়া হবে না লন্ডন থেকে। কথাটা এক কানে শুনে কোনো সময় ব্যায় না করে অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলাম।

এবার বুঝলাম বেচারার কথা বাসি হয়েই তবে ফলল। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে এই নীতি অনুসরন করে একাই যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওয়েব সাইট দেখে বেলজিয়াম এ্যম্বেসীর খোজখবর নিয়ে কাজগপত্র নিয়ে সাবমিট করলাম। জানয়ে দিল ২৪ ঘন্টা পর খোজ নিতে। সবকিছুর গোছগাছ করতে করতে দেখলাম ভিসাও রেডী।

শনিবার বিকেল ৪:৩০ এ ট্রেন সপ্নের ইউরোষ্টার। শনিবার খুব সকালে উঠেই কাজে দৌড়, একটার মধ্যে কাজ শেষ করে বাসায় এসে রান্না বান্না করতে করতে দেখি ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে তোমাকে ছুটতে হবে বাপু যদি ট্রেন ধরতে চাও। ছুটলাম রুদ্ধশ্বাসে, ১৫ মিনিট আগে পৌছে গেলাম ষ্টেশনে। বিশাল কিংস্ ক্রস সেন্ট পানক্রাস ষ্টেশন গত বছর উদ্বোধন হয়েছে মাত্র। বিশাল একটা ভাস্কর্য স্বাগত জানাচ্ছে যাত্রীদের।

১০ মিনিট বাকী আছে এমন সময় খেয়াল হলো ইউরো করা হয়নি, ছুটলাম আবারো। সবসময় এমন হয় যখন সময় কম থাকে তখন যেন সবকিছু ভূলে যাই। সবকিছু ঠিকঠাক করে ইমিগ্রেশনে লাইনে দাড়িয়েছি। মাঝারি ধরনের লাইন, সামনের জনকে জিজ্ঞাসা করলাম এটা বেলজিয়াম যাওয়ার লাইন কিনা ? লোকটা আবার এককাঠি সরস '' ভদ্রলোক কুনু একখান ট্রেনের তো বেলজিয়াম যাওন লাগবো, লাইনে খাড়াও সময় হইলে জানতে পারবা'' বলে গম্ভীর হেয় গেল। যা হবার হবে তাকে প্রান খুলে অভিশাপ দিয়ে ইমিগ্রেশনের সামনে দাড়ালাম।

একটা তথ্য দিয়ে রাখি যে কোথাও পাসপোর্টে এন্ট্রি সিল মারে সেই দেশের মাটিতে, কিন্তু ব্যাতিক্রম কেবল এখানেই, ফ্রান্স এর ইমিগ্রেশন একবারে লন্ডনের মাটিতে। ব্যাটা পাসপোর্ট দেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিশ্চিত হলো ওটার ভেতরে যে ছবিখানা আছে তা আমারই, হিমালয় ফেরত শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন কারী কোন বস্তুর নয়। ভিসা দেখে এন্ট্রি সিল মেরে দিল। প্লাটফরমে উঠতেই সদা হাস্যউজ্জল ট্রেন হোস্টেস টিকেট দেখে বলল '' বাবা দৌড়ের উপর টেম্পু ধরো, মাঝখানে বইবা ঝাক্কি কম লাগবো। যথা আজ্ঞা বলে লেজ দু পায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে বিনা বাক্য ব্যায়ে নিজের সিটখানা খুজে নিয়ে বসে পরলাম।

পাশের সিট খালি মনে হচ্ছে যাত্রাটা একাই করতে হবে। নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে বিষয়টা না থাকায় কাটায় কাটায় ট্রেন হুসহুস করে ছাড়ল। বাকি অংশটা আরেকদিনের জন্যে তুলে রাখলাম.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।