আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
এই গল্পটি লিখেছিলাম অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে, যেহেতু অখণ্ড অবসর পাচ্ছি হলছেড়ে বাসায় যাওয়ার আগে, ব্লগে সেগুলো তুলে রাখতে চাই
পর্ব-১ এর পর থেকে
পরিচালক: আমরা সিনেমা বানাতাম তাতে দেশ, কাল, সমাজের চিত্র ফুটে উঠত। কিন্তু তোমাদের সিনেমায় এসব কিছুই নেই, অহেতুক সময় নষ্ট।
প্রযোজক: আপনার কথা পুরো মানতে পারছিনা ভাই। শিক্ষণিয় বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা সর্বজনীন নীতি অনুসরণ করি। যেমন ধরুন শিশুদের কথা।
বর্তমান জমানায় গালি হচ্ছে আভিজাত্যের লক্ষণ। দেখুননা সংসদে সাংসদরা কেমন free style এ গালিগালাজ করে। সেজন্য সিনেমার মাধ্যমে আমরা গালিকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌছে দেয়ার পরিকল্পনা করেছি।
এরপর আমরা নজর দিয়েছি যুবসমাজের দিকে। তারই পদক্ষেপ হিসেবে আমরা তাদের বেকারত্বের অবসান ঘটাতে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণের নিত্যনতুন স্টাইল নিয়ে আসছি।
তাছাড়া তাদের শরীর-মন চাঙ্গা রাখার জন্য সিনেমায় শালীনভাবে যত অশালীন দৃশ্য সেট করা যায় তারও চেষ্টা চলছে। আমরা স্মাগলার গডফাদারদের প্রতিও অবিচার করিনা। যেকারণে শত অপরাধ করেও কিভাবে ভালো থাকার মুখোশ পরা যায় তার দৃষ্টান্ত দেখাই।
এখন আপনাকে আমাদের বর্তমান সমাজের চালচিত্রটা বলি। এখানে এখন প্রতিদিন অন্তত ২জোড়া খুন,৫-৬টি অপহরণ, ৬-৭টি গড়ে ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপসহ নানাবিধ ঘটনা ঘটবেই।
তাইতো কিছুদিন আগে আমাদের এক পরিচালক সিনেমায় ৪৬টি খুন আর ২০টি ধর্ষণ দৃশ্য রেখে রেকর্ড গড়েছেন। । আপনাদের শুভকামনা থাকলে আমি তাকে টপকে যাব ইনশাল্লাহ! এতকিছুর পরও বলবেন আমাদের সিনেমায় শিক্ষণীয় কিছু নেই?
পরিচালক: না, তা আর বলার সুযোগ কোথায়? আচ্ছা , তোমার সিনেমার নাম কী দিলে?
প্রযোজক: "চুপ কর্ হারামজাদা। "
পরিচালক: (রেগেমেগে) দেখ, আমি তোমার বাড়ির চাকর নই যে যা মুখে আসবে তাই বলেই গালিগালাজ করবে!
প্রযোজক: আরে ভাই, রেগে যাচ্ছেন কেন? এটা তো আমার সিনেমার নাম!
পরিচালক: ( হাসতে হাসতে ভীমড়ি খাওয়ার যোগাড়) সিনেমার নাম?
প্রযোজক: আমি মোটেই হাসির কোন কথা বলিনি। আমরা সিনেমার নামের ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে এসেছি।
আপনি যে কোন প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথাই বলেননা কেন, সে নামে বাংলা সিনেমা আছে। যেমন ধরুন, "গরীবের প্রাসাদ", "খাইছি কামরাঙ্গা", "গাধার ডিম", "মুগুরের ডাল", "আলুর চর্চরি", পান্তা কেন ঠাণ্ডা, "আমার কেন বউ নাই", ...এমনি কত নাম আছে কি বলব!
যে সিনেমার নাম যত উদ্ভট বুঝা যাবে সে সিনেমায় তত অন্য জিনিস আছে। তাইতো সবকিছু ভেবে সিনেমার নাম রেখে দিলাম "চুপ কর্ হারামজাদা। " ভাল হয়েছে না?দেখবেন মুক্তি পাওয়ামাত্রই দর্শক কেমন হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
পরিচালক: তাহলে টাকা কামানোটাই মূখ্য?
প্রযোজক: অবশ্যই ।
নিজে খেয়ে পড়ে বাঁচবো , তারপর তো অন্যচিন্তা।
পরিচালক: জাহান্নামে রেডিওতে শুনলাম, তোমাদের এখানে "মাটির ময়না" নামের কি এক সিনেমা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমাদৃত হলেও সেন্সরবোর্ড সেটিকে ছাড়পত্র দেয়নি।
প্রযোজক: দেবেই বা কেন?বিশ্ববাসী তো হুজুগের বশেই পুরস্কার দিয়ে দেয়। এই সিনেমার প্রধান ত্রুটি হল অশ্লীল সিনেমার রাজ্যে সে সুস্থ হবার চেষ্টা করেছে। এখন বিশ্ববাসী এর মাধ্যমে যদি বাংলা সিনেমার প্রতি আগ্রহী হয়, আমরা ওদের কী দেখাবো?সবচেয়ে মারাত্মক কারণ হচ্ছে,এ সিনেমায় ধর্ম নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি দেখানো হয়েছে।
এতে যেসব ঘটনা দেখানো হয়েছে তার মাধ্যমে ধর্মের নামে অতি অধর্মের ব্যাপারগুলো জসসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে যাবে। । । এটা কি মেনে নেয়া যায়???
পরিচালক: আচ্ছা, শুনলাম "ফায়ার" নামের কি একটা সিনেমা নাকি স্মরণকালের ভয়াবহ অশ্লীল। সেন্সরবোর্ড কি করে?
প্রযোজক: আমি শুরু থেকেই খেয়াল করছি,আপনি একটি শব্দ বারবার ভুল বলছেন।
। শব্দটি সেন্সরবোর্ড নয়, "ত্যান্দর বোর্ড। " দেখুন , ফায়ারের সনদপত্র লাভ আমাদের মত তরুণ প্রযোজকদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। । মুক্তবাজার অর্থনীতির মত আমরা চলচ্চিত্রেও মুক্তশরীর চর্চায় বিশ্বাসী।
পরিচালক:কিন্তু এভাবে কি বেশিদিন চালাতে পারবে তোমরা চলচ্চিত্র জগতকে?দশৃক একসময় বিরক্ত হয়ে যাবে। তখন??
প্রযোজক: আমিও জানি, সিনেমাজগত এভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেশিদূর যেতে পারবেনা। কিন্তু আমরাও নিরূপায়। যে দেশে আটটাার মিটিং দুপুর বারোটায় শুরু হয়, সেখানে আর যাই হোক সংস্কৃতির উন্নয়ন হতে পারেনা। ।
আমরা এভাবেই চলতে থাকব, যতদূর পারি।
( এদিকে কথা বলতে বলতে রাত প্রায় শেষ হয়ে এল, আর পরিচালকেরও জাহান্নামে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে এল। তাই আস্তে আস্তে তিনি হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে লাগলেন, কিন্তু প্রযোজক সেদিকে লক্ষ্য না করেই কথা বলে যেতে লাগল.......)
প্রযোজক: বুঝলেন ভাই, ব্যাপারটা হল গিয়ে......। আরে আপনি আবার কই গেলেন?....বুঝেছি, আমার কাহিনী চুরি করে আপনিও জাহান্নামে........হায় জাহান্নাম!!!
( সমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।