সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে
বাড়ীটির দিকে চোখ পড়লে পথযাত্রীদের দ্বিতীয়বার কিংবা তারও বেশি তাকাতে ইচ্ছে হয়। সবুজ বৃক্ষশোভিত একটা টিলার উপর বাড়ি। বাড়িতে উঠার জন্য গাড়িপথ আর পায়ে চলা পথ দু'টোরই ব্যবস্থা । বাড়ির উপরে সুরম্য দ্বিতলা ঘর। একটা বিদেশী ইমেজ আছে বাড়ির অবয়বে।
নিচে পাদদেশটা সমতল। পাশ ঘেঁষে নেমে গেছে পিচঢালা রাস্তা। সামনের দিকে একটা মাঠ। এখানে সকাল সন্ধ্যায় শরীরচর্চা,খেলাধুলা আর আড্ডা চলে। যুবক যারা বসে প্রতিদিন বাড়িটির দিকে তাকায় আর কিসের যেনো একটা অভাব বোধ করে।
একদিন বিকেলবেলা। তির্যক আলো ঢলে পড়ছে। সাতাশ আটাশ বছরের একজন মেয়ে বাড়িটির ছাদে খেলা করছে পাঁচ ছ'বছরের একটি শিশুর সাথে। মেয়েটিকে দেখে যুবকদের সেই বাড়ির অপূর্ণ দিকটি যেনো পূর্ণতা পায়। অবশ্য শিশুটিকে দেখে তা কিছুটা কমেও আসে।
কারো চোখে সেটা বেড়েও যায়।
২.
শ্যামা ল্যাপটপের ভিডিও চিত্রটি দেখে কিছুক্ষণ থ' মেরে থাকে । ল্যাপটপের ভিডিও প্লেয়ারটি তখনো বন্ধ হয়নি। খালেদ অনেক ডাকাডাকির পরেও যখন সাড়া পাচ্ছিলো না তখন শ্যামার পেছনে এসে দাঁড়ায়। শ্যামার সামনে ল্যাপটপ খোলা।
খালেদ মুহূর্তে বুঝে নেয় পরিস্থিতি। কিন্ত্ত সে বিচলিত হয় না। কিন্ত্ত কি ভাবে ব্যাপারটা সামাল দেয়া যাবে সে নিয়ে ভাবতে থাকে।
সে কি পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে এই বলে ক্ষমা চেয়ে নেবে? না অন্য কোন অজুহাত দাঁড় করাবে ?ইত্যকার নানা ভাবনা যখন ভাবছে তখন খালেদের উপস্থিতি টের পেয়ে শ্যামা ল্যাপটপ ফেলে উঠে দাঁড়ায়। খালেদ ল্যাপটপটি নিজে লগ-অফ করে বিছানার একপাশে রাখে।
ঘটনাটা যখন ঘটে তখন সকাল । তারপর দুপুর পার হয়ে বিকেল পাঁচটা। শ্যামা সেই যে একটি রূমে ঢুকে ভেতর থেকে লক করেছে আর খুলে না। শ্বশুর -শাশুড়ি ,তার পাঁচ ছ'বছরের ছেলেটি, এমন কি খালেদও বাহির থেকে ডেকে ডেকে ক্লান্ত। দরজা ভাঙার জন্য দরজায় সজোরে দু'ঘা মারতেই শ্যামা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।
-ও বৌমা,বেটি এতক্ষণ দরোজা খোল নি কেনো?
শাশুড়ির প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে শ্যামা দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে।
ছ'বছরের ছেলেটি তার মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। দিনভর ছেলেটি তার মায়ের জন্য একটা অজানা আতংকে থেকেছে।
দুদিন পেরিয়ে যায়। খালেদের কিছুই করা হয়ে উঠে না।
সে কি ক্ষমা চেয়ে নেবে?তা কি করে হয়!পৌরুষে কোথায় যেনো আঘাত লাগে। শিক্ষার সনদগত দিকটা শ্যামার চে কম থাকায়
একটা কেমন কেমন বোধ কাজ করত। খালেদ সেটা তার পৌরুষের জোরে কোনরকমে কাটিয়ে উঠত । পরস্ত্রী'র সাথে যৌনতা ওসব দেশে অহরহ ঘটে। খালেদ কী করবে? ভেবে পায় না।
। পুরুষের একা থাকার কষ্ট অনেক! এমন কিছু বুঝাবে? নাহ!তা কি করে হয়!শ্যামা কি তাহলে এখানে একা নয়!খালেদ সাত পাঁচ ভেবে কিছুই স্থির করতে পারে না। এদিকে শ্যামা সেদিনের পর থেকে একটিও কথা বলেনি। মুখের হাসিটাও একেবারে উধাও।
এভাবে আরো কয়েক দিন পেরিয়ে যায় ।
খালেদের ভাবনার সরুপথে কোন আলোর রেখা দেখা যায় না। একবার ভাবে অন্যায়টা আসলে তারই। ক্ষমা চাইলেই ভালো হয়। ভুল স্বীকার করলে সমাধানের আশা করা যায়। খালেদ প্রস্তুত হয়।
প্রসঙ্গটা তুলতেই শ্যামার ঝাঝালো তির্যক প্রশ্নের বাণ ছুটে যায় খালেদের দিকে। খালেদ নিজেকে আর নমনীয় রাখতে পারেনি। ল্যাপটপের উপর গিয়ে সমস্ত রাগ পড়ে। ছুড়ে মারে ল্যাপটপ।
রাগে যখন হিতাহীত জ্ঞানশূণ্য তখনই তার মনে পড়ে একটা উন্নত দেশের সিটিজেনশিপ তার আছে।
আর সেজন্য তার দামও নেহায়েত কম না।
' তোমার অত দেমাগ কিসের?আজকেও আমি যদি একটা বিয়ার কথা কই বাড়ির গেইটে মেয়েরা লাইন ধরব। দেমাগ বেড়ে গেছে না?'
কথাটি শ্যামা'কে যেনো আরো পাথর করে দেয়। তার ইচ্ছে হয় এখনি বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। কিন্ত্ত শ্যামা অনঢ় বসে থাকে।
খালেদ পাগলের মত মুখে যা আসে তাই বকতে থাকে।
ঝগড়া শুনে শ্বশুড় শাশুড়ি ছুটে আসে। তারা ঝগড়ার কারণ জানতে চায় । কারো মুখ দিয়েই কোন কথা বের হয় না। ছেলে আর ছেলের বউকে উদ্দেশ্য করে শেষে শ্বশুড় শাশুড়ি কিছু উপদেশ দিয়ে চলে যায় ।
সংসারে ঝগড়া ঝাটি ভালো না। ছেলে বড় হচ্ছে ইত্যাদি...
একদিন খালেদ চলে যায়। তার নমনীয়তা আরো দৃঢ়তায় পরিণত হয়। শ্যামাও সেই আগের মত।
একটা অসহ্য ঘৃণা যেনো গলায় এসে আটকে থাকে।
বাবা মায়ের মতে বিয়ে। মেয়ে সুখে থাকবে। এই ছিলো তাদের প্রত্যাশা। ছিলোও সুখেই । কিন্ত্ত স্বামীর বহুগামি চরিত্রটা উন্মোচিত হবার পরেই যেনো সব উলট পালট হয়ে যায়।
খালেদ চলে যাবার জন্য তৈরী হলে শ্যামা নিজের উপর জোর করে বাড়ির গেট পর্যন্ত আসে ছেলের হাত ধরে। তারপর মাস কেটে যায়। শ্যামা একটা সিদ্ধান্তহীনতায় কাটাতে থাকে। খালেদের আচরণ, বর্বরতা তাকে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট দেয়।
৩
দু'য়েক দিন পর পরই খালেদের ফোন আসে।
বাবা মায়ের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নেয়। খালেদের ইচ্ছে ছিলো তাদের সবাইকে সাথে নিয়ে যাবে। কিন্ত্ত বৃদ্ধ বাবা মা দেশের মাটিতেই শয্যা নিতে চাওয়ায় খালেদের ইচ্ছে টা আর পূরণ হয় না। ফোনে শ্যামার সাথেও কথা বলে কিন্ত্ত শ্যামা হু হা 'র ভতরে সব কথার জবাব দেয়।
সেদিন শ্যামা ছেলেকে স্কুলে দিতে গেলো ।
খালেদের ফোন আসে। মোবাইলটাও শ্যামা ফেলে যায় বাড়িতে। বেজে বেজে মোবাইল একসময় বন্ধ হয়ে যায়। রাতে ফোন দিলে শ্যামা সে কথা খালেদ কে বলে। কিন্ত্ত খালেদ এমন ভাবে কথা বলে যেনো শ্যামা কোন পুরুষের সাথে বিছানায় ঢলাঢলি করছিলো বলেই ফোন ধরতে পারেনি।
কথাগুলো শুনে শ্যামা নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেনি। মুখে যা আসে তাই বলতে থাকে।
কিছুদিন শ্যামা তার ছেলেকে সকালে স্কুলে পাঠাতে পারছে না। ঘুমের কারণে। বেলা করে ঘুম থেকে উঠে।
ব্যাপারটা শ্বাশুড়ির চোখ এড়ায় না।
একদিন শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করে ফেলে বউয়ের শরীর খারাপ করেছে কিনা।
শ্যামা'র চোখ লাল হয়ে থাকে। সে চোখে তাকিয়ে থেকে শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করেন।
- মা ক'দিন থেকে রাতে মাথা ব্যথায় ঘুমাতে পারছি না।
সকাল হলেই রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয়'।
শ্বাশুড়ি আরো কি প্রশ্ন করে জানতে চান আবার নতুন কোন অতিথি আসছে কিনা। শ্যামা সে সম্ভাবনা কথা নাকচ করে দিলে ভালো কোন ডাক্তার দেখাতে পরামর্শ দেয়। কোন অজানা অসুখের কথা চিন্তা করে বৃদ্ধা কুচকে উঠেন।
-'ডাক্তার দেখাও বেটি ।
আবার কোন অসুখ থেকে কোন অসুখ হয়ে যায়'।
আর কয়েকটা দিন যাক । দেখি আর ক'টা দিন। তারপর যদি এমনই চলে তাহলেই ডাক্তারের কাছে যাবো- বলে শ্যামা শ্বাশুড়িকে আশ্বাস দেয়।
একদিন দু'দিন করে মাস শেষ হয়ে যায় ।
শ্যামা'র মাথা ব্যথা কমে না।
সেদিন সকালে খালেদ ফোন করে শ্যামাকে রাতে ফোন দিলে ফোন বিজি থাকে কেনো তার কৈফিয়ৎ চায়। সে ক'দিন থেকে রাতে ঘুমাতে পারছে না- রাতে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয় । তাই ফোন বিজি মোডে রেখে ঘুমাতে যায় । খালেদ কে এসবই বলে।
কিন্ত্ত খালেদ মানতে চায় না।
সে যেনো কিসের আশঙ্কা করে। একসময় সে আশঙ্কার কথা শ্যামাকে বলেও ফেলে। শ্যামা তাৎক্ষণিক যার নিজের চরিত্রই ঠিক নেই তাকে অন্যের সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার নেই বলে জানিয়ে দেয়। সে সাথে ফোনের লাইনটাও কেটে দেয়।
৪.
শ্যামা এক সকালে ডাক্তার দেখাতে শহরে যাবে বলে ঠিক করে। শ্বশুড় শাশুড়ি বৃদ্ধ সারাদিনের জার্নির ধকল তাদের সহ্য হবে না। শ্যামা ছেলেকে সাথে নিয়ে বের হয়। ডাক্তার দেখিয়ে দিনে দিনে ফিরতে না পারলে জেলা শহরে শ্যামার চাচার বাসায় থেকে যেতে বলে শাশুড়ি। শ্যামা শাশুড়ি কে সে রকমই আশ্বাস দেয়।
শহরে আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসে। একটি রেষ্টুরেন্টে ঢুকে ছেলেকে নিয়ে খাবার দাবার খেয়ে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ফোন দেয়। ডাক্তারের কম্পাউন্ডার সেদিনের সিরিয়াল দেয়া রোগীদের পরদিন সকালে দেখবেন বলে জানায়। তার কিসের এক জরুরী মিটিং এর কারণে বিকেলের শিফটের রোগী দেখবেন না। শ্যামার চোখে কোন দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায় না।
সে ছেলেকে নিয়ে তার চেনা শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে। কলেজ ক্যাম্পাসে এসে দাঁড়ায়। ছেলেকে আঙ্গুল দিয়ে তার হোস্টেল দেখিয়ে দেয়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছেলেকে তার ছাত্র জীবনের সাথে জড়িত জায়গাগুলির বর্ণনা দেয় । সে মনোযোগ দিয়ে সেসব কথা শোনে আর কি যেনো কল্পনা করে।
মায়ে ছেলেতে মিলে ঠিক করে তারা কোন আত্বীয়ের বাসায় যাবে না। তারা একটি রাত হোটেলে থেকে পরদিন ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি চলে যাবে।
ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা পার করে রাত আট-ন'টায় এক হোটেলে এসে উঠে।
একটা ফোন আসলে শ্যামা উঠে দাঁড়ায় ছেলের বিছানার পাশ থেকে। এখনো পুরোপুরি ঘুমায় নি ছেলে।
সে বারান্দায় চলে যায়। কি সব কথা বলে । এসে দেখে ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার কোমল মুখ । কেমন মায়া ।
শ্যামা যেনো কিছুক্ষণের জন্য কেমন হযে যায়।
ছেলে ঘুমিয়ে পড়ে । শ্যামা হোটেল কক্ষে পায়চারি করে । একবার বারান্দা। একবার ওয়াশরুম ।
একবার বিছানা । জানলার পাশে দাঁড়িয়ে নানা রংয়ের বাতি জ্বলা দেখে। হালকা শহুরে বাতাস আর রূপসী রাত্রী তাকে প্রশান্তি দিতে পারে না। একসময় তার দরোজায় নক হতে থাকে । শ্যামা'র সারা শরীর কেঁপে উঠে।
ভীত কম্পমান হাতে সে দরোজা খুলে। দরোজা খুলতেই একটি পুরুষ কণ্ঠ-ফিসফিসিয়ে বলে-
'আমরা কিন্ত্ত তিন জন!'
বলেই কেমন যেনো একটা কাচুমাচু ভাব দেখায়।
শ্যামা কিছুক্ষণ দরোজায় থমকে দাড়িয়ে থাকে। মূহুর্তে কি যেনো ভাবে। তারপর দরোজা থেকে সরে দাঁড়ায়।
একজোড় নারী-পুরুষ পৃথিবীর আদিম লীলা নৃত্যে উত্তাল হয়ে উঠে। কোমল নিয়ন বাতির আলো তাদের শরীরের ঘামে প্রতিফলিত হয়। তাদের সে ক্রিয়াকর্মে কোন ভালবাসা নেই । নেই দায়ও।
আরো দু'জন প্রতীক্ষায় থাকে।
তারা নিজেদেরকে নানাবিধ যৌনব্যাধির হাত থেকে রক্ষার জন্য জন্ম বিরতিকরণ মোজার প্যাকেট হাতে নিয়ে অপেক্ষা করে।
অপেক্ষা করে..
অপেক্ষা করে...
তাদের সময় কাটে না। প্রথম পর্ব তাদের নিকট অসীম হয়ে আসে।
'আঙ্কেল আমাকে একটা কনডম দেবেন বেলুন ফুলাইতাম!'
একটা শিশু কণ্ঠ আচমকা ধ্বনিত হয়। অপ্রত্যাশিত।
আর তখনই জগতের সকল বর্তমান যেনো স্থির হয়ে যায়। তারা আর সামনে কিংবা পেছনে যাবে না। যে যেভাবে আছে সে ঠিক সেভাবেই থাকবে । কত দিন? কত সময় ?
সময় ফুরোয় না।
(পরিমার্জন আবশ্যক)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।