হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে আমি দুটো কথা বলতে চাই। তার আগে বলে নিই, মানুষ হিসেব আমি অনেকটা তেলাপোকার মতো। তেলাপোকা যেমন সর্বভূক, তেমনি আমিও সর্ববিশ্বাসী। কোন কিছুকেই চট করে খারিজ করে দেয়ার পক্ষপাতী আমি না, কিছুই না, আমার মায়া লাগে।
আমার কাছে মনে হোমিওপ্যাথি কোন বিজ্ঞাননির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়।
আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোন ছাত্র না, আবার বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব বেশি খোঁজ খবর রাখি _এমনও না। তাহলে কীভাবে আমি বুঝলাম যে, হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান নয়। এর কারণ খুবই সহজ। যারা হোমিওপ্যাথির প্রচারণা চালান, তারা কথায় কথায় বলেন, এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্যারাসিটামলের গায়ে লেখা থাকেনা, এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বানানো ওষুধ, টিভির গায়ে লেখা নাই , এটি বিজ্ঞান, কম্পিউটার একবারও বলে না, আমি সায়েন্স।
বিজ্ঞান নিয়ে তারাই মাতামাতি করে, যাদের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। যেমন হোমিওপ্যাথি, হস্তরেখা- ইত্যাদি। তারা বলে ব্যাপারটা বিজ্ঞানসম্মত , কিন্তু কেন ও কীভাবে বিজ্ঞানসম্মত সেটার কোন ব্যাখা আমি আজ অবধি কোথাও শুনিনি, কোন বিজ্ঞাপনে তার ব্যাখাও পড়েনি। আর বিজ্ঞান হচ্ছে ক্রমচলমান এবং বিকাশমান- একটি ব্যাপার। হোমিওপ্যাথির ছোট ছোট সুস্বাদু বলগুলো জন্ম ইস্তক আজ অবধি স্বাদে, বর্ণে , গন্ধে ও সাইজে একই আছে ।
এটি আর যাই হোক বিজ্ঞান হতে পারে না।
হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান নয়, এটি বিশ্বাস।
বিজ্ঞান এবং বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য (??)। হিলারী যদি বলেন চেলসির বাবা বিল কিনটন, তাহলে এটি বিজ্ঞান। আর বিল কিনটন যদি বলেন, চেলসি আমার মেয়ে- এটি বিজ্ঞান নয়, এটি বিশ্বাস।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, বিশ্বাস ব্যাপারটি কম গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার নয়। কাজেই হোমিওপ্যাথিকে আমি বিজ্ঞান নয় বলে উড়িয়ে দিতে চাই না।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমার যা মনে হয়, আমাদের অনেক রোগের মূল হচ্ছে আমাদের মন। হোমিওপ্যাথির ডাক্তারদের অফুরন্ত সময়। অনেকে শেষ বয়সে এসে তেমন কোথাও সুবিধা করতে না পেরে- ছোট ছোট শিশি জোগাড় করে চেম্বার খুলে বসেন।
( আমি নিজেও শেষ বয়সে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি করার ইচ্ছা পোষণ করি। ) কাজেই ডাক্কারদের হাতে অফুরন্ত সময়। তাছাড়া চিকিৎসা চালানোর জন্য অন্যান্য অনুষঙ্গের কোন ব্যাপার তাদের হাতে নেই, যেমন রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, এমআরআই, এক্সরে ইত্যাদি। কাজেই তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে , রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। রোগীর জন্য এটি একটি আনন্দদায়ক ব্যাপার।
তারা মন খুলে কথা বলেন। এতে মন চাপমুক্ত হয়। আর মনের সাথে শরীরের একটা সম্পর্কও তো আছেই। কাজেই ...
আর তাছাড়া আমাদের কথা বলার মানুষের খুব অভাব। আমি একটা কথা বলছি, সেটা কথাটা মনোযোগ দিয়ে কেউ শুনছে, এটা অসামান্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়- এই আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতাটি ঘটে।
আর পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যাপার না থাকায়, চিকিৎসার ঝামেলাও খুব কম। কাগজ দেখে শিশি থেকে ছোট ছোট বল কায়দা করে বের করে মুখে পুরে দেওয়া আর এটা বিশ্বাস করা- রোগ মুল থেকে সাফ হয়ে যাবে।
এজন্য এই চিকিৎসা অনেক সময় কাজে দেয়।
একটা ছোট উদাহরণ দেই।
গলায় কাঁটা বিধলে- দুই ধরণের চিকিৎসা আছে। এলোপ্যাথির কাছে গিয়ে চিমটা দিয়ে কাটা বের করা । এটি খুবই কষ্টদায়ক একটি অভিজ্ঞতা।
আর আছে হোমিওপ্যাথের কাছে যাওয়া। তারা একটা ওষুধ দেন।
ওই ওষুধ খেলে, কাঁটা ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গলে যাবে । বিশ্বাস করে যদি এই ওষুধ সেবন করা যায়, তাতে খুবই ভাল ফল দেয়। আপনি ওষুধ খাবেন, ভাবা শুরু করবেন কাটা গলতে শুরু করেছে, আপনি রিল্যাক্সড হবেন, আপনার অস্বস্তি কমবে। আর ডাক্তার তো বলেছেনই কাটা গলে যাবে ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে, কাজেই চিন্তা কি। গলার কাটা গলুক আর নাই গলুক, মাথায় যে চিন্তার কাঁটা বির্ধে ছিল- তা তো দূর হলে- বাকী টুকু তো এমনি এমনি হয়ে যাবে।
গলায় কাঁটা বিঁধলে বিশ্বাস করে হোমিওপ্যাথি খান, কাজে দেবে।
আর যদি কূট তর্ক তোলেন , যে ওষুধের এতো তেজ .... যে কাটা গলিয়ে ফেলে, সেই ওষুধ খেলে তো গলা , পেট, নাড়িভুড়ি সব গলে যেতে পারে - তাহলে গলার কাটার যন্ত্রণা তো বাড়বেই, পেট, বুক পর্যন্ত জ্বলে যেতে পারে ...
একজন হোমিওপ্যাথি নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন দেখলাম, তাকে ধন্যবাদ।
জয়তু হোমিওপ্যাথি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।