বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... বাংলাদেশে রাজনীতি একটা অসুখের নাম। এটি সংক্রামক অসুখ। একবার এই রাজনীতি অসুখে আক্রান্ত হলে জীবনে আর মুক্তি পাবার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। বাংলাদেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এই অসুখটি সংক্রামক আকারে ছড়ায় নি।
এদেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এই সংক্রামকে আক্রান্ত। আর এই অসুখ থেকে লাভ ঘরে তুলছে আমাদের কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যাদের মুখে সব সময় শোনা যায় মুখস্থ কিছু সুনির্দিষ্ট কথার প্যাঁচালী। বাংলাদেশকে নিয়ে এদের কারো কোনো স্বপ্ন নেই। এদের সবার একটাই স্বপ্ন ক্ষমতায় যাওয়া।
নিজেদের আখের গোছানো। এদের কারোরই নিজেদের দলের মধ্যে নীতি আদর্শের বালাই নেই। পরিবারতন্ত্র হল এসব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানচরিত্র। রাজার ছেলে রাজা হবে। রাজার মেয়ে রানী হবে।
এমপির ছেলে এমপি হবে। এমপির মেয়ে এমপি হবে। এই হল সমীকরণ।
বাংলাদেশে এখন সতেরো কোটি মানুষ। এই সতেরো কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে তিনশোজন সাংসদ।
এই তিনশোজন সাংসদ কারা? তিনশো পরিবার থেকে এদের আগমন। এই তিনশো পরিবার কারা? নিজ নিজ দল থেকে দলীয়ভাবে মনোনীত তিনশো পরিবার। এই তিনশো পরিবার কিন্তু সতোরো কোটি জনগণ থেকে মনোনয়ন পায়নি। এই তিনশো পরিবার মনোনয়ন পেয়েছে নিজ দলের দলীয় প্রধানের ইসারায় আকারে নানান বাহানায়। তারপর এই তিনশোজন দলীয় প্রতিনিধিকে জনগণের মাথায় কাঁঠাল রেখে ভোট উৎসবের নামে একটা মহড়া করানো হয়।
সেই মহড়ায় বাংলাদেশের সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে যাদের বয়স আঠারো বা আঠারোর বেশি, মানে যারা ভোট দিতে পারবে তারাই কেবল অংশগ্রহন করতে পারবে।
বাংলাদেশে ০ থেকে ১৪ বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ। যাদেরকে সবাই বলেন শিশু। এই শিশুরা এই ভোটযজ্ঞে অংশ নিতে পারে না। সংখ্যার হিসেবে এরা প্রায় ৬ কোটি।
বাকী রইলো ১১ কোটি। ১৪ থেকে ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তারাও এই ভোটযজ্ঞে অংশগ্রহন করতে পারে না। এদের সংখ্যা প্রায় শতকরা ১১ ভাগ। মানে প্রায় ২ কোটি। বাকী থাকল ৯ কোটি।
যাদের বয়স ৬৫ বা তার বেশি তাদের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। মানে প্রায় ১ কোটি। এই ১ কোটি মানুষের মতামত অনেকটা ওই শিশুদের মত। তারা ছেলেমেয়েদর কথায় বুড়ো বয়সে ওঠাবসা করেন। তারাও আসলে তখন বয়সের ভারে নবীন শিশু।
এবার বাকী থাকল ৮ কোটি। এই ৮ কোটি মানুষই কেবল ভোট তামাশায় অংশগ্রহন করতে পারবে। মানে দাড়াল, সতেরো কোটি জনসংখ্যার দেশে ৯ কোটি মানুষ ভোটের আগেই ভোটযজ্ঞ থেকে বাইরে। মানে প্রথমেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই ভোটের তামাশার বাইরে থাকল। তাদের মতামতের কোনোই মূল্য নেই।
প্রত্যেকটি পরিবারে প্রত্যেকটি শিশুর মতামতকে কি তাদের মাবাবা অগ্রাহ্য করতে পারেন? পারেন না। প্রত্যেক মাবাবাকেই পরিবারের সকল সদস্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়। নইলে সেই পরিবারে শান্তি বিনষ্ট হয়। বাংলাদেশকে যদি বিশাল সাইজের রাষ্ট্রপরিবার বলি, তাহলে সেই রাষ্ট্রপরিবারে সকল সদস্যের মতামতের গুরুত্ব বিবেচনায় না নিলে প্রথমেই একটা জবরদস্তি হয়ে গেল। যেটাকে আমরা বলছি গণতন্ত্র।
মানে শুরুতেই বিবেচনার বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ।
এবার এই ৮ কোটি মানুষকে নিয়ে ওই দলীয় তিনশো লোক একটা তামাশার ভোটযজ্ঞ করবেন।
চলুন এবার ওই ৮ কোটি ভোটারের ভোটের উপর একটা জরিপ চালানো যাক। ধরা যাক প্রতিটি সংসদ এলাকায় নির্বাচনে অন্তত ৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহন করল। যদি ১০০টি ভোট হয় তাহলে এই ৪ জন থেকে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তিনিই হবেন সাংসদ।
সবচেয়ে কম ভোট পেলেন যিনি, তিনি পেলেন ১০ ভোট। পরের জন পেলেন ২০ ভোট। পরের জন পেলেন ৩০ ভোট। এবং পরের জন পেলেন ৪০ ভোট। এখন ১০০ ভোট থেকে যিনি এই ভোটযজ্ঞে ৪০ ভোট পেলেন তিনিই বিজয়ী হিসেবে হবেন সাংসদ।
এখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট কিন্তু ৬০টি হলেও তাদের মতামতের কোনো বিচার হল না। মানে হল ২ জনের বেশি প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় অংশ নিলেই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মুখ থুবরে পড়বে। মানে গণতন্ত্রের নামে এখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সূত্রটি অকার্যকর।
এবার ৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী লোকগুলো সাংসদ হিসেবে শপথ নিল। তারা আসলে সবাই দলীয় লোক।
জনগণের মতামত আদায় করা হল ভোট তামাশার নামে। যেখানে প্রথমেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোটযজ্ঞের বাইরে ছিল। মানে ৯ কোটি মানুষ ভোট তামাশার বাইরে ছিল। বাকী ৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের ভোটের রায় নিয়ে এরা এখন সাংসদ। মানে হল ১৭ কোটি মানুষের দেশে ক্ষমতা হাতে পেতে ৪ কোটি ভোটই যথেষ্ট।
এবার আপনি জনসভায় দাবী করবেন আপনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। হায়রে গণতন্ত্র। বাকী ১৩ কোটি মানুষের মতামতের কোনোই মূল্য নেই?
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হল দল দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করে জনগণের ঘাড়ে তা চাপিয়ে দেয়। যে দলেই গনতন্ত্র ব্যাপারটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের বাইরে চলে। এই বৈষম্য দল থেকে শুরু হয় পরবর্তীতে তা গোটা দেশের মানুষের ভোগান্তির জন্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত চেপে বসে।
এই অসুখের কোনো অষুধ নেই। কারণ এখানে পরিবার নামে রাজনৈতিক দলগুলোর তামাশা চলছে। বাংলাদেশ থেকে বৃটিশ বিদায় হয়েছে কিন্তু রাজতন্ত্র বিদায় হয়নি। তিনশো পরিবার যারা একবার ক্ষমতার সুখ ভোগ করেছে, আপনি কী জানেন তারা সেই সুখ আর ইহকালে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করবে বাংলাদেশে? কোনোদিনই করবে না। কারণ ক্ষমতা হল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এই সম্পদ বাংলাদেশে একবার লাভ করলে আর হারানোর নিয়ম নেই। যদি ওই তিনশো পরিবার ক্ষমতার বাইরে ভাগ্য দোষে চলেও যায় তাদের সেই দর্প জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চলতেই থাকে। বিভিন্ন পারিতোষিক ব্যাপার স্যাপার থাকে। ভাতা, ভিসাসুবিধা, গ্রিনকার্ড, রেশন, স্বাস্থ্যকার্ড, লাইসেন্স, বাড়ি, গাড়ি, ফ্যাক্টরি, কতো নাড়ি নক্ষত্রের সুবিধা যে এই তিনশো পরিবার রাতের অন্ধকারে নিয়ে থাকে তা আপনি কল। পনাও করতে পারবেন না।
বর্তমানে বাংলাদেশে একজন সাংসদ শুধুমাত্র মাসিক বেতন পান দেড় লাখ টাকা। এর সঙ্গে তার টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বিদেশ থেকে নামে বেনামে শুল্কবিহীন গাড়ি কেনাবেচা, ঘুষ, দুর্নীতি, দখল, বাণিজ্য, চোরাকারবারী, কালোটাকা, সাদাটাকা, নদী দখল, খাসজমি দখল, হাটবাজার ইজারা, খেয়াঘাট ইজারা, বন্দরের খাজনা, চ্যালাচামচার চান্দা, তোরণ নির্মাণের খরচের এদিক সেদিক, মার্কেট দখল, নতুন ব্যবসার ফন্দিফিকির ইত্যাদি মিলিয়ে ওই সাংসদের মাসিক আয় সত্যিকার অর্থে কত তা বের করা পৃথিবীর কারো পক্ষেই আর সম্ভব নয়। তারপর আবার এই সাংসদ সরকারি গাড়িতে চড়বেন। সরকারি বাড়িতে থাকবেন। টেলিফোন বিল দেবেন না।
গ্যাসের বিল দেবেন না। বিদ্যুৎ বিল দেবেন না। পানির বিল দেবেন না। খাবেন দাবেন স্ফূর্তি করবেন। কার বাপের কী? এই হচ্ছে চরিত্র।
আহা কী বিচিত্র এই বাংলাদেশের সাংসদরা।
তারপর একজন সাংসদ নিজের জন্যে পান একটা গাড়ি। তার পরিবার আছে না? তাঁর বউ ছেলেমেয়ে আছে না? তাদের বিদেশ সফর আছে না? তাদের কেনাকাটা আছে না? তাদের বিদেশী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার ব্যাপার স্যাপার আছে না? তাদের বিদেশী ব্যাংকে ব্যাংকব্যালেন্সের ব্যাপার স্যাপার আছে না? শুধুমাত্র বাংলাদেশের গরিব মানুষের চেহারা দেখলে কী তাদের পেট ভরবে? তাদের নিজেদের ভূত ভবিষ্যৎ আছে না? এসব তো এই পাঁচ বছরের মধ্যেই ঠিক করতে হবে নাকি? নইলে পরবর্তী পাঁচ বছরে দলীয় ভাগ্য ঠিকঠাক না আগালে তো ভোট তামাশা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ নেই। এইসব ঝামেলা ট্যাকেল দেয়ার জন্যে একজন বাংলাদেশী সাংসদকে দিনরাত যে কত বাহারি চিন্তাভাবনা করতে হয়, তা গরিব আমজনতা ছিটেফোটাও বোঝে না। একজন বাংলাদেশী সাংসদকে এইসব ঝক্কিঝামেলা ট্যাকেল দেবার পর যখন আখের গোছানোর মত একটা রফা হয়, তখন বছরে ২/১ দিন সংসদে গিয়ে এলাকার জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্যে দুচারটা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেই অন্য সাংসদরা ঘুম তাড়িয়ে টেবিল চাপরে দেবেন।
জাতীয় রেডিও টেলিভিশনে সেই দৃশ্য দেখতে এলাকার মানুষ কাজ ফেলে সাংসদের জ্বালাময়ী কথাবার্তা শুনতে মনযোগী হবে। আরে দেখো দেখো, আমাদের বাপের ব্যাটা সাদ্দাম আজ কেমনে ফাটায়ে দিল। এই ফাটনোর শিহরণ পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত আমজনতার মনে রাখার নিয়ম। বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে ওই সাংসদদের কণ্ঠনালী দিয়ে। আমজনতা সেই ভেসে যাওয়া দেখার জন্যে কাজকাম ফেলে জনসভায় জড়ো হচ্ছে।
আহারে আমজনতা।
এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে কোন ব্যবসা বেশি লাভজনক আপনি বলেন? আপনি যদি কোটি টাকা খরচ করে হলেও একবার মহামান্য সাংসদ হয়ে যেতে পারেন আপনার চৌদ্দ পুরুষের আখরাত সরাসরি দুনিয়ার বেহেস্থে। দলের প্রধান যিনি তাঁর মনটুষ্ঠি করতে আপনার কী কোনোই যোগ্যতা নেই? সেই যোগ্যতা প্রমাণের জন্যে আপনাকে খুন করতে হতে পারে। জেল খাটতে হতে পারে। শত শত মিথ্যা মামলায় জড়ানো লাগতে পারে।
এইটুকু ত্যাগ করতে না পারলে তো আর আপনার চৌদ্দ পুরুষের আখেরাত পর্যন্ত বেহেস্থ বানাতে পারবেন না। মুখে আমজনতা বলবেন কিন্তু মন জোগাবেন দলের প্রধানের। দুনিয়ার এই মুখোশটি যদি আপনি রপ্ত করতে পারেন তাহলে জাতীয় সংসদের সোনার হরিণের আসনটি আপনার। তারপর আপনার ছেলেমেয়ে বউ একজনের পর একজন সেই আসনে যাবে বসবে মধু খাবে। আর আমজনতা রেডিওতে তা শুনবে।
টেলিভিশনে তা দেখবে। আর পেপার পত্রিকায় তা পড়ে পড়ে মুখস্থ করবে। আপনি হয়ে যাবেন ইতিহাসের অংশ। ইতিহাসে নাম লেখাতে আপনি সাংসদ হবার স্বপ্ন দেখেন। ব্যাপার না।
একটু চালাক চতুর হলেই আপনাকে দিয়েও ইতিহাস বানানো সম্ভব। বাংলাদেশ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কারণ আপনি আমাদের মহামান্য সাংসদ।
রাজনীতি ব্যবসা যদি আপনার ভাগ্যে একবার লেগে যায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। আর কীসের চিন্তা করেন এতো? আপনি যদি রাজনীতি করতে গিয়ে বিরোধী পক্ষের হাতে শহীদ হয়ে যান আপনার বউ ছেলেমেয়ে তো আছে।
তাদের তখন আর তত ঝুঁকি থাকবে না। তাদের সাংসদ হবার ব্যাপারটি তখন দলীয় বিবেচনায় অগ্রাধীকারই পাবে। তখন আপনার নামে ট্রাস্ট হবে। সেই ট্রাস্টেও অনেক ভোটারের আগমনী ব্যাপার স্যাপার থাকবে। আর যদি আপনি কম ঝুঁকিতে রাজনীতি ব্যবসাটি করতে চান, আগে একটি বাহিনী গঠন করুন।
সেই বাহিনীর পুলাপাইন দিয়ে নানান কেরামতি করে আওয়াজ দেন। দল আপনাকে দুসাহসী খেতাব দিয়ে নমিনেশান দেবে। আর ভোটকেন্দ্র কয়টা? বেশি হলে ৫০টা। ৫০টা ভোটকেন্দ্র সামলানোর মত ক্ষমতা আপনার না থাকলে তো দল থেকে আপনার নমিনেশান চাওয়াটা আসলে উচিত না। দলীয় সিলেকশান কমিটি তখন বলবে পরেরবার চেষ্টা করেন।
আপনার আরো কাজ দেখতে চাই। গেল পাঁচ বছর পিছিয়ে। এই পাঁচ বছর আপনি ঘর গুছান। দলে পুলাপাইন ভেড়ান। দলের প্রধানকে দুচারটা দাওয়াত দেন।
কিছু একটা ক্যারিসমা তো দেখাতে হবে ভাই। এমনি এমনি তো আর দলীয় নমিনেশান পাওয়া যায় না। এতো সুযোগ সুবিধার হাতছানি, এটা তো আর শুধু মুখের কথায় আসবে না। এলাকায় যান। জনগণের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
তাদের মগজ ধোলাই করেন। মিনিমাম একটা গ্রহনযোগ্যতা দেখান। নইলে আপনাকে দলীয় নমিনেশান দিলে তো অনেক দলীয় কোন্দলের ব্যাপার স্যাপার থাকবে। সেইগুলো ট্যাকেল করার কৌশল রপ্ত করেন। দল যতদিন আছে, আমরা যতদিন আছি, আপনাদের সম্মিলিত চেষ্টায় ইনশা আল্লাহ আবার আমরা ক্ষমতায় যাব।
রাজনীতি আমাদের মহান করেছে। আমাদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে। আপনারও একটা ব্যবস্থা হবে ইনশা আল্লাহ। লেগে থাকেন ফল পাবেন। আর যদি মনে করেন সাংসদ হবার খায়েস নাই, তো বলেন কোন দেশে কী হিসেবে যেতে চান? অ্যাম্বাসিডর? দূতাবাসের মিনিস্টার? বিশেষ প্রতিনিধি? নাকি বিদেশে ভালো ব্যবসা? মাথা ঠাণ্ডা করে ঠিক করেন কী চাই? তারপর সেই অনুযায়ী আপনার একটা ব্যবস্থা দল ইনশা আল্লাহ করবে।
আর সব সময় হাসিখুশি থাকবেন। মানুষের পাশে থাকবেন। মানুষের পাশে দাঁবাবেন। দেখবেন এই গণমানুষ একদি আপনার আর্জি নিয়ে আমাদের দরবারে আসবে। তখন আর আমরা তা ফেলতে পারব না।
কাজ করেন। যত বেশি মানুষের পাশে থেকে কাজ করবেন তত বেশি আপনার নেতৃত্বে আসার সুযোগ তৈরি হবে। খামাখা অনুরোধ করবেন না। আপনার পাশে যদি জনগণ না থাকে, বিশেষ কোনো বিহিনী না থাকে, আপনাকে নমিনেশান দিয়ে তো আমরা ওই আসনটি হারাতে পারি না। অন্যায় আবদার নিয়ে কেউ আসবেন না।
প্রয়োজনে পাঁচ বছর পরে আবার আসুন। কিন্তু মাঠ ঠিক করে তারপর খেলতে আসুন। ফাঁকা মাঠের খেলা কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। আর আপনার যদি সেরকম যোগ্যতা থাকে তো দলের জন্য আপনি আশির্বাদ। দলের বোঝা হয়ে কেউ খামাখা ঝামেলা করবেন না।
এতে সময় নষ্ট হয়। সালাম করতে আসছেন, সালাম পাইছি। দলের জন্যে খরচ করেন। দল আপনাকে দেখবে। আরে খামাখা মন খারাপ কেন করেন? আমরা ক্ষমতায় গেলে শুধু কী সাংসদরাই সব পায়? ব্যাংক আছে না? কোনো একটা ব্যাংকের পরিচালক বানিয়ে দেব।
যান বাড়িতে গিয়ে মাল্টিপারপাস কোনো ব্যবসার নতুন আইডিয়া ভাবেন। টাকা নাই তো টাকা আসতে কতক্ষণ? পাঁচ বছর পর আপনি বরং দলের জন্য তখন কোটি টাকা খরচ করবেন নিজের ইচ্ছায়। বোঝাতে পারলাম? গরিব মানুষকে দুচারটাকা দানখয়রাত করবেন। গরিব মানুষের মুখে হাসি দেখলে স্বয়ং আল্লাহ তালাহ খুশি হন। মনে হয় ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে পারছি।
রাজনীতিতে নেমে বলবেন উঠোন বাঁকা আমি নাচতে পারিনা, এটা ঠিক না। নাচ শিখে তারপর আসুন। দল সবসময় আপনাদের জন্যে কাজ করে। এটা মনে রাখবেন। বাংলায় একটা কথা আছে না `ভেলকি'।
ভেলকি কী বোঝেন? আমজনতাকে যতবেশি ভেলকি দেখাতে পারবেন আপনি তাদের কাছে তত বড় নেতা। বুঝছেন এবার? যান বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে লম্বা একটা ঘুম দেন। চিন্তার কিছুই নাই। আপনাদের নিয়েই দল। আপনাদের সমস্যা দেখার দায়িত্বও দলের।
কীভাবে আগাবেন, পাঁচ বছরে আপনার কতোটুকু ভেলকি দলের খাতায় জমা পড়লো তার হিসেব নিকেশ আমাকে করতে হয়। আপনারা তো না বুঝেই অভিমান করেন। আমাকে তো দলের জয় পরাজয়ের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয় নাকি? এলাকায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসা কয়টা করছেন? সেখানে কাদের নিয়োগ দিছেন? তারা সবাই আমাদের দলের কিনা? নাকি আমনা ক্ষমতায় গেলে তারাই আবার স্কুল কলেজ মাদ্রাসা জাতীয়করণের নামে শহীদ মিনারে আন্দোলনে যাবে? কত কিছু হিসেব যে মাথায় রাখতে হয়? আর আপনারা দলের নমিনেশান না পেলে মাথা গরম করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার হুমকি দেন? নইলে অন্য দলে যোগদানের জন্য হুশিয়ার করেন? দলের আদর্শ ত্যাগ করে যারা অন্য দলে যেতে চায় তাদের জন্য আমাদের সকল সুযোগ সুবিধা কঠোরভাবে বন্ধ। যারা এই কাজ করবে তারা দলের শত্রু। তাদের জন্যে দলের কোনো মায়াকান্না নেই।
মাথা ঠাণ্ডা করে অভিমান ভুলে দলের হয়ে কাজ করেন। দল আপনার ব্যাপারে মনে রাখবে। রাজনীতি করেন। মাথা ঠাণ্ডা রাখেন। আর পারলে দুএকটা পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল খুলেন।
তখন তা নিজেদের মুখপাত্র হয়ে কাজ করবে। আপনারা না কি যে করেন? এতো কিছু বলে দেবার আমার সময় আছে নি ভাই। রাজনীতি করেন। বুঝে শুনে করেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করতে না পারলে তো আর আমজনতা তা খাবে না।
যান বাড়িতে যান। আমার এখন রেস্ট নিতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।