আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইশকুলের নাম পথচারী।

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
গভমেন্ট বয়েজ স্কুলের মারপিটের ঐতিহ্য অনেকদিনের। মারপিট ছাড়া পোলাপান মানুষ হয়না। আর গভমেন্ট বয়েজ কিংবা জিলা স্কুলের ছাত্ররা মাশাল্লাহ, দেশের সব জায়গায় একই ক্যাটাগরির। অবশ্য কিছু বেকুব লোকজনে বলে অতিরিক্ত মারপিটের কারনে নাকি তারা বদ হয়। বেশির ভাগের মত আমিও এই দলের বিরুদ্ধে।

প্রাইমারী স্কুল শেষ করে যেদিন প্রথম হাইস্কুলে আসলাম কি খুশি। হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট পড়ি, আহা এর চেয়ে আনন্দের কি থাকতে পারে। প্রথম দিন স্কুলের হলরুমে সবাই জমায়েত হলো। আমাদের স্কুলের আবার একটা বেসরকারী প্রাইমারী শাখা ছিল। কি একটা কারনে ক্লাশ ওয়ান কিংবা টু এর একটা ছেলে বাঁদরামী করতে গিয়ে ধরা পড়লো।

ভীষন রকম মোটা গোঁফওয়ালা স্যার চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন। বান্দরগিরী বেশি হয়ে গেছে, বান্দর বেশি লাফাইলে তার লেজ কেটে দিতে হয়। এই তোরা এরে ধর, আজকে এর লেজ কাটা হবে। বান্দরের লেজটা অবশ্য দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু স্যার কে দেখলাম বেত নিয়ে কিভাবে কিভাবে যেন তার অদৃশ্য লেজটার সাথে কুস্তি শুরু করলেন।

বেচারা কত্থক নাচতে লাগলো, কিছুক্ষন পরেই তার অদৃশ্য লেজটাকে খসিয়েও দিলেন স্যার। হাইস্কুল জীবন শুরু হলো বাঁদরের লেজ কাটা দিয়ে। স্কুলের ছেলেদের একটা খুব পছন্দের কাজ ছিল মাঠের পিছের বাউন্ডারী ওয়াল টপকে গেমসের দোকানে ঢুকে যাওয়া (সেভেন থেকে এইট পর্যন্ত)। মোস্তফা আরো কি কি যেন গেমস আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিত। এই ঐতিহ্যে বাধ সাধলেন নতুন হেডস্যার।

লম্বা, ফর্সা, দাড়িওয়ালা সুফি সাধকের মত চেহাড়া কিন্তু আচরন ছিল সাক্ষাত ক্যারিবিয়ান পাইরেটের মত। স্যার এসেই প্রথম যেই কাজ করলেন পুরো স্কুল বিল্ডিংটাকে গ্রিল দিয়ে শঙ্খনীল কারাগার বানীয়ে ফেললেন। স্কুলটাইম শুরু হবার পরেই তালা, কেউ মাঠে যেতে পারবেনা। এমনকি টিফিনের টাইমেও ক্লাশ রুমে বসে থাকতে হবে। টিফিন কিনতে বা অন্য কোন কাজে বাইরে যাওয়া যাবে না।

খেলাধুলা পিরিয়ডে মাঠে যাওয়া? স্যার গেমস পিরিয়ডটাই উঠিয়ে দিলেন, গেমস এর বাহানায় কেউ যদি ভিডিওগেমসের দোকানে চলে যায়, মাথা কেটে ফেললে ব্যাথা হবার চান্স নাই। সব হেড স্যারের মত এই স্যারেরও প্রাথমিক নাম ছিল হেডু, কিন্তু খুব দ্রুত নাম চেঞ্জ হয়ে গেল "জিঙ্গাল দেব"। আমাদের ক্লাসেরই একজন যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেললো আলিফ লায়লা টিভি সিরিজে শাহজাদা হাতিমের সাথে ফাইট দেয় যেই দৈত্য জিঙ্গাল দেব, তার সাথে হেডস্যারের চেহাড়ার ব্যাপক মিল। আবিষ্কারটা যুগান্তকারী কারণ সে শুধু আবিষ্কার করেই থেমে থাকলো না। আলিফ লায়লাতে জংলীরা দৈত্য জিঙ্গাল দেবকে পুজা করার সময় হাত পা তুলে নাচতো আর গান গাইতো,"জিঙ্গালা জিঙ্গালা বল জিঙ্গালা...।

" সেই নাচ আর গানটাও সে নিখুত ভাবে প্রচলন করলো। প্রমান হলো হাতে নাতে। দুপুরে জিঙ্গালদেব নিচতলায় দাঁড়িয়ে কাকে জানি দাবরানি দিচ্ছে, বৃত্তি পরিক্ষার কোচিং এর রুম থেকে আমি একবোতল পানি হেডস্যারের মাথায় ঢেলে দিয়েই আরালে লূকিয়ে গেলাম, অবাক কান্ড হেডস্যর অবিকল জিঙ্গাল দেবের মত দুই হাত উপরে তুলে বিচিত্র ভঙ্গিতে কেরে কেরে কেরে বলে লাফাতে লাগলো। দোতালায় সেই বন্ধুটি হাত তুলে জিঙ্গালা জিঙ্গালা গানটার নাচটা দেখালো, পুরা সিকোয়েন্সটাই অবিকল আলিফ লায়লার। এইটে উঠে সমাজ বিজ্ঞান ক্লাসে একছেলে কে ম্যাডাম ১০০ তে ১০ দিলেন।

সমাজ বিজ্ঞানে খুব গাড়ল ছাড়া ফেল করেনা কেউ, সেই ছেলে খুব ভাল না হলেও ১০ পাবার ছাত্র না। কারন জানতে দেরী হলো না। ম্যাডাম নিজেই ওর কানে ধরে ঝাকি দিতে দিতে পড়ে শুনালেন সে সমাজ বিজ্ঞান খাতায় পরিবারের সংগা আর পরিবারের প্রয়োজনীয়তা কোশ্চেন্টার ৮পাতা উত্তর লিখছে। জৈবিক চাহিদা মেটানো ছাড়া পরিবারের আর কোন উপকারীতা বোধহয় ও জানতো না। এবং সেই একটা উপকারীতাই ৭ পৃষ্ঠা জুরে রসিয়ে রসিয়ে লিখেছে।

অল্প দিনের মধ্যেই আমরা জানলাম এই সুন্দরী ম্যাডামের হাজব্যান্ড বিদেশে থাকে এবং কমন রুমে নাকি আমাদের সদ্য আগত হ্যান্ডসাম ইংলিশ স্যারের সাথে ম্যাডামের খুব দহরম মহরম। ম্যাডামের লাল গাড়িতে স্যারকে প্রায় লিফট নিতে দেখা যায়। ভাগ্যিস স্যার কিংবা ম্যাডাম ছাত্রদের বাথরুমে ঢুকে না। বাথরুমের দেয়ালে বিচিত্র শিল্পকর্ম। অজন্তা ইলোরার কামসুত্র টাইপ চিত্র কর্মের কাছা কাছি পর্যায়ের।

কেউ চিনতে না পারে যদি, এই ভয়ে ছবি গুলোর নিচে ক্যাপশান দিয়ে কোনটা সামাজিক বিজ্ঞানের স্যার আর কোনটা ইংলিশ স্যার চিহ্নিত করা। এছাড়াও বিচিত্র সব ছোটগল্প ম্যাডাম আর স্যারকে নিয়ে লিখা। সেই যুগলের অত্যাচার আরো বারলো। ফরহাদ (এখন জার্মানীতে এম এস করছে, এই ব্লগ পড়বে না আসা করি) স্যারের শিকার হলো। ফরহাদ একদিনও হোমওয়ার্ক করতো না।

স্যার ঘোষনা দিলেন আগামীতে হোমওয়ার্ক না আনলে ফরহাদকে ক্লাশের মধ্যে নেংটো করে দিয়ে স্কুল মাঠে ছেড়ে দেওয়া হবে। অবিশ্বাস করে ফরহাদ গা করলো না। পড়ের দিন যথারীতি হোমওয়ার্ক ছাড়াই ক্লাসে আসলো। স্যার তাকে আদর করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো এখন তোকে দিগম্বর করবো। শার্ট খোল।

ফরহাদ কিছুক্ষন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকলো। স্যার সত্যি সত্যি যখন ওর শার্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি খুলে ফেললেন ফরহাদ ভয়ে হেচকি তুলে কান্না শুরু করলেন। স্যার মনে হয় এপর্যন্তই যেতেন প্যান্টের দিকে হাত বাড়াতেন না। কিন্তু ফরহাদের কান্না দেখে ভয় পেয়ে বললেন যা তোরে মাফ করলাম আর এমন করিস না। ফরহাদের কান্না আর থামেনা।

যাই হোক পরে আর কোনদিন স্যারের ক্লাশে হোমওয়ার্ক ছাড়া সে আসেনি। ক্লাশ ৮এর শেষ দিকে শুরু হলো হটকেক রসময় গুপ্তের আগমন। টিফিন টাইমে আজহার স্যার (শুধু উনিই এটা করতেন) সারপ্রাইজ ইন্সপেকশানের মাধ্যমে সবার ব্যাগ থেকে রাশি রাশি চটি বই উদ্ধার করতেন। শুধু মাত্র একজনের ব্যাগ থেকেই কোনদিন চটি পাওয়া যায়নাই। সেটা ছিল শাহনেওয়াজ।

আদর্শ ছেলে বলতে যা বোঝায়। টিফিন টাইম হলেই দৌড় দিত জোহরের নামায পড়তে। কেউ কোনদিন তাকে চটি দেখাতেও সাহস পায়নাই। একদিন ক্লাসে পাশাপাশি আমরা ৩ জন বসেছি। একপাশে দেবাশীষ (স্কুলের মিলাদের দিন প্রথমে সবসময় গরুর বিরানী নিত, পড়ে স্যারকে গিয়ে বলতো স্যার আমি হিন্দু, স্যার ওর হাতে মুর্গির আরেক প্যাকেট ধরিয়ে দিত) মাঝখানে আমি আরেক পাশে শাহনেওয়াজ।

দেবাশীষ অসীম সাহসীর মত গাজীবাবা র(স্যারের চেহাড়া টিপু সুলতানের গাজীবাবার মত) ক্লাসে ব্যাগের ভিতরে একটা পর্ন ম্যাগাজিন একটু ফাক করে শাহনেওয়াজকে দেখালো, দোস্ত দেখতো এটা কি? শাহনেওয়াজ অনেকক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। আমি তো অবাক। ভেবচছিলাম চটি দেখালে শাহনেওয়াজ রেগে মেগে উঠবে, এ তো দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকালাম। একটা এফোর সাইজের ম্যাগাজিন।

কাভারে বিশাল বক্ষা এক ব্লন্ড মেয়ে নগ্ন বুকে পোজ দিচ্ছে। শাহনেওয়াজ এত অবাক হয়ে কি দেখে? শাহনেওয়াজ বল তো এটা কি? শাহনেওয়াজ মাথা চুলকে বললো, এখান থেকে দেখতে পাচ্ছি না। এটা ব্যাং এর হৃদপিন্ড তাই না। উপরের গোল গোল দুইটা বাম অলিন্দ আর ডান অলিন্দ আর নিচে ত্রিভুজ আকারের বাম নিলয়। ঠিক আছে না?
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।