আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুধে মেলামাইন কোথা থেকে আসলো, কেন আসলো!



মেলামাইন একটা ননপ্রোটিন নাইট্রোজেন (NPN) সমৃদ্ধ রাসায়ানিক। প্রোটিন বলে একে চালাতে গিয়েই মানব জাতিকে এর দুর্ভোগে ডেকে আনা হয়েছে। এটা আসলো কোথা থেকে? প্রোটিন বলে চালানোর দরকার কেন পড়লো? কোন ধরণের রাসায়ানিক এই বিচারে মেলামাইন মুলত একটা রেজিন (resin)। যেমন রাবার, গাছের কাণ্ড কেটে চুইয়ে বের করা ঘন রস বা ধুপধোনার ধূপ একধরণের রেজিন; তবে রাসায়ানিক সার বা এ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য ইউরিয়া বা এ্যামোনিয়া উৎপাদন প্লান্ট এর বাই-প্রডাক্ট হিসাবে সহজেই মেলামাইন সহজলভ্য ও সস্তা হয়ে উঠেছে। ।

বাংলাদেশে মেলামাইনের বাসন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠার পেছনের কারণ আমাদের সার কারখানাগুলোর বাই-প্রডাক্ট এই বাসন ফ্যাক্টরির কাঁচামাল ও এর উৎস বটে। মেলামাইন সম্পর্কে আমাদের সমাজের প্রথম পরিচয় ঘটে বাসন ব্যবহার থেকে। আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়ানিক সার, তা থেকে উপজাত বা বাইপ্রডাক্ট মেলামাইন আর তা থেকে বাহারী বাসন। এখন এই মেলামাইন দুধে আসলো কেমন করে? আমাদের স্হানীয় মেলামাইন আমরা দুধ পর্যন্ত আনিনি। তবে আমদানি করা দুধ বা চকলেটে এটা এসেছে, আছে।

দুধে প্রোটিন আছে। দুধের গুণাগুণ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশেষত বাণিজ্যিক বিচারে মান প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রোটিন বা ফ্যাট সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ। প্রোটিন মানে এতে আরও অনেক কিছুর সাথে থাকে মূলত নাইট্রোজেন। ফলে দুধের প্রোটিন মাপার প্রয়োজনে এর মধ্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ মেপে এর ভিত্তিতে প্রোটিন মাপার একটা ইনডাইরেক্ট পদ্ধতি চালু হয়ে যায়। নাইট্রোজেন পরিমাণ মাপার উপর ভিত্তি করে প্রকারন্তরে আনুপাতিক একটা হিসাবের উপর ভরসা করে দুধে প্রোটিন মাপার ল্যাবরেটরি পদ্ধতি ((Kjeldahl method and Dumas method) তাই শুরু থেকেই দাড়িয়েছিল ও কোন সমস্যা ছাড়াই চলছিল।

এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হলো, সামগ্রিকভাবে তা দুধে নাইট্রোজেন (crude protein) মাপতে পারে যেখানে ঐ নাইট্রোজেনের উৎস কি তা জানা ওর বিবেচ্য নয়। ফলে ননপ্রোটিন নাইট্রোজেনও (মেলামাইন) ওখানে সাধারণভাবে নাইট্রোজেন বলে, পরিশেষে প্রোটিন বলে বিবেচিত হয়ে যাবার সুযোগ থাকছে। মুনাফার লোভে যেমন বিষ বেচা হয়, ত্মক ফর্সা করে দেবার মিথ্যা কথা বলা হয় তেমনি দুধ বেচার ক্ষেত্রেও প্রোটিন মাপার এই পদ্ধতিগত ফাঁকের সুযোগে মিথ্যা বলে মুনাফা কামানোর সুযোগ এসে যায়। প্রোটিন মাপার এই পদ্ধতিগত ফাঁকের খবর জানা থাকলেও আগে কাউকে অনৈতিক কাজে আগ্রহী হতে দেখা যায় নাই। অষ্ট্রিলিয়া-নিউজিল্যান্ড দুধের ব্যাবসায়ী কার্টেলের (পৃথিবীর ৬৫% দুধের ব্যবসা এদের নিয়ন্ত্রণে) প্রথম এই অনৈতিক পদক্ষেপে পা বাড়ায়।

যদিও ইতোমধ্যে দুধের প্রোটিন (true protein) মাপার নতুন পদ্ধতি (peptide bonds) যন্ত্রপাতি চালু হয়ে গেছে; অনন্ত আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, হাঙ্গেরীতে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। তবু পুরানো পদ্ধতির সুবিধা নিয়ে আমার দুধে বেশী প্রোটিন আছে বা প্রোটিনের মাত্রা ঠিক আছে -এই ধরণের দাবী করতে পারার সুযোগে মুনাফা করার লোভ ছাড়তে কেউ রাজি না। ফলে আজকের বিপর্যয়। তবে দুধে মেলামাইন মিশানোর ব্যাপারটা ঘটে যে গোখাদ্য ফার্মের গরুকে খাওয়ানো হয় সেই গোখাদ্যের পর্যায়ে। ঐ গোখাদ্যে ননপ্রোটিন নাইট্রোজেন (মেলামাইন) মিশানো হয়ে থাকে সস্তা বলে।

আর এই ননপ্রোটিন নাইট্রোজেনও (মেলামাইন) গরুর পরিপাকতন্ত্রের হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়া ধীরগতির কারণে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফলে দুধে মেলামাইন আকারেই ডিপোজিটেট হয়। মানুষের শরীরে গ্রহণ করতে পারে এমন গ্রহণযোগ্যতা মাপের বেশি মেলামাইন মিশানো থাকার কারণে এই দুধ মানুষ খেলে পরিশেষে মানুষের কিডনিতে গিয়ে মেলামাইন ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে। এক পর্যায়ে শারিরীক অসুস্হতা, কিডনি ফেল করা (কিডনিতে ছেঁকার পর পানি বা প্রসাবের সাথে মিশে গিয়ে বের হতে পারে না), এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। . ওদিকে চীন পৃথিবী মেলামাইনের উৎপাদন একাই ২১% বাড়িয়ে ফেলেছে।

এতে প্রতিযোগিতায় জাপানের মিৎসুবিশি ও কোরিয়ার সামসঙ এর মেলামাইন কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ চীনে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এই শিল্প ইউরিয়া সারের উৎপাদন ও বাজারের হাতে বন্দি কারণ মেলামাইন শিল্পের কাঁচামালের যোগানদাতা সার কোম্পানি। বর্তমানে সারের বাজার দর সবচেয়ে উর্ধগামী। আগামি পাঁচবছরের উৎপাদন রপ্তানির অর্ডার সব বু্কিং হয়ে গেছে। চীনের মেলামাইন শিল্পের এই দানবীয় আবির্ভাবের সাথে পশুখাদ্যেসহ মেলামাইনের বিবিধ ব্যবহারের সম্পর্কটা কী তা জানার ব্যাপার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.