রাজধানীসহ এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে অপহরণ, গুম ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে লাশের মিছিল। নির্জন ও কম মানুষের যাতায়াতের কারণে অপরাধীরা এখন বেছে নিয়েছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জলাধার ও পরিত্যক্তা স্থানগুলো। সাদা পোশাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় ছাড়াও পারিবারিক সহিংসতার এমনকি ব্যক্তিগত হানা-হানিতেও বাড়ছে খুনের ঘটনা বলে অভিমত মানবাধিকার সংগঠন গুলোর। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর প্রশাসন। কিন্তু কোনভাবেই যেন বন্ধ হচ্ছে না হত্যাযজ্ঞের ঘটনা।
দেখা যাচ্ছে ঢাকার মানুষকে খুন করে ফেলে রাখা হচ্ছে ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ কিংবা সাভারের আশুলিয়ায়। ময়মনসিংহের ফুলপুরে খুন করার পর লাশ ফেলা হচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ উদাসীন বলেই এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে, তাছাড়া স্বল্প সময়ে বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি না হওয়ায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আশংঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশেজ্ঞরা।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা সূত্রে দেখা যায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালে মিরপুরে নিজ ফ্লাটে নগদ অর্থ স্বর্ণালাঙ্করের লোভে শ্বাস রোধে হত্যার শিকার হন অ্যাড. রওশন আরা। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী অধ্যাপক মাহবুব-ই সাত্তার বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করলে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নিরাপত্তা কর্মী তাজুল ইসলাম ও রাসেল।
ওই রাতেই পল্লবী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় সন্ত্রাসী শাহ আলম। পুলিশ এ ঘটনায় অস্ত্র আইন ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। একই দিনগত রাতে কদমতলীর নিজ বাসার সামনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।
২ জানুয়ারি আশুলিয়ার জাম গড়া এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক শিশুকে হত্যা করা হয়। যার কোন পরিচয় মেলেনি এখনো।
গত ৩ জানুয়ারি কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়নের পাকুরাইল গ্রাম থেকে সজীব নামে একটি শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয় তার বাড়ি থেকে মাত্র একশো’ গজ দূর থেকে। তার ছেলের খুনিকে শনাক্তের দাবি জানিয়ে নিহত শিশুটির বাবা আবদুল করিম জানান, এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ বের করতে পারেনি কোন ক্লু এই হত্যাকান্ডের।
৪ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মীর হোসেন (২২) নামের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করলেও পুলিশ এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
৫ জানুয়ারি আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় অজ্ঞাতনামা এক যুবতীকে সন্ত্রাসীরা ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়।
পরে হাত-পা বেঁধে রাখা অবস্থায় তার লাশ শিমুলিয়ায় রাস্তার ওপর থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। ওই দিন বিকালে রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী বস্তিতে পাষন্ডরা ধর্ষণের পরে হত্যা করে গলায় ওড়না পেচিঁয়ে ঝুলিয়ে রেখে যায় ১০ বছরের শিশু ফারজানা আক্তার চাঁদনিকে। এ ঘটনায় নিহতের মা নার্গিস আক্তার বাদী হয়ে শাহআলী থানায় রাজু, খোকন ও ইসমাইলকে আসামি করে একটি মামলা করেন। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ ঘটনায় রাজু নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ওই দিন চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মালেককে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই দিন ফুলপুর ভাইটকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা শামীমা ফাতেমা ফুলপুর থেকে বাসে ঢাকায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে শিক্ষিকার মা শেখ সাহিদা ১৩ জানুয়ারি ফুলপুর থানায় একটি জিডি করেন। বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান চালানোর এক পর্যায়ে শিক্ষিকার ভাই সরদার জাকারিয়া মাসুদ মঙ্গলবার ঢাকাস্থ স্যার সলিমুল¬াহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে নিহতদের ছবি দেখে বোন হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হন। পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় গিয়ে জানতে পারেন নিখোঁজের পরদিন দুপুরে পুলিশ উত্তরবাহেরচর গ্রামের বিলের সরিষা ক্ষেত থেকে শামীমার লাশ উদ্ধার করে।
কিন্তু তখন তার কোন পরিচয় মেলেনি।
১০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের রশুনিয়া এলাকা থেকে দু’জন ও শ্রীনগরের বাড়ৈইখালী-শীধরপুর সড়কের পাশ থেকে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ইব্রাহিম, কুদ্দুস মিয়া ও মাসুদ মিয়ার পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে।
১১ জানুয়ারি একই উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকা থেকে অমল চন্দ্র দাস নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই দিনই রাজধানীর বাড্ডায় দুই গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনায় মারা যায় আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, সকালে সাতারকুল নামাপাড়ার বাসা থেকে বাবার জন্য খাবার নিয়ে মাছের খামারে যাচ্ছিল। ওই সময় স্থানীয় আলমগির ও জয়নাল গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় একটি গুলি এসে আমিরের শরীরে লাগে। এতে সে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে কলাবাগান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
১২ জানুয়ারি মাসুম নামে এক ব্যক্তিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে অপহরণের পর আশুলিয়ায় ঘোষবাগ এলাকায় হত্যা করে লাশ মহা সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় ঘাতকরা।
ওই দিনই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ছাত্রী ও কানাডীয়ন নাগরিক মুনজেরিনা আবেদিন জেরিন মীরেরকে (২৩) ট্রেনের নীচে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করে তার কথিত বন্ধু মহিউদ্দিন শ্বরন (২৫)। এ ঘটনায় ১৩ জানুয়ারি নিহতের খালু হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ এই ঘটনায় মহিউদ্দিন শ্বরনকে গ্রেফতার করে। এদিন শনিবার সকালে ঢাকার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকা থেকে মোহাম্মদ মাসুম (৩০) নামের এক ড্রাইভারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের ভাবী ফাতেমা আক্তার জানান, মাসুম গুলশান ১ নম্বর গ্রীন রোডের রোজ হাউজ আবাসিক হোটেলের ড্রাইভার।
শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে গুলশান হোটেল থেকে সে কয়েকজন যাত্রী আনার জন্য বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় গাড়ী সহ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় গত ১৪ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ এ ঘটনার কোন সুরহা করতে পারেনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ নিহতের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
১৫ জানুয়ারি আশুলিয়া কাঁঠালবাগান এলাকা থেকে চান মিয়া নামে আরেক ব্যক্তিকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ঢাকার রামপুরা এলাকায় ওই দিন মঙ্গলবার রাতে খায়রুন নেছাকে (৫০) ছয় তলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে।
তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। একই দিনে রূপগঞ্জে আবুল খায়ের নামে আরেক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় গত মাসের ১৫ তারিখের দিবাগত রাতে সাদিয়া আক্তার রীতা (২৩) নামের গৃহবধূর জবাই করা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের স্বামীর নাম মতিউর রহমান তাকে প্রথমে শ্বসরোধ করে পরে জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
জানা যায়, স্ত্রীকে বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করার কারণে সে ক্ষিপ্ত হয়ে সে স্ত্রী রীতাকে হত্যা করে।
১৬ জানুয়ারি বুধবার যাত্রাবাড়িতে নিজ অফিসে দুর্জয় চৌধুরী দিপু (৩০) নামের এক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করলেও পুলিশ ওই ঘটনার কোন সুরহা করতে পারেনি এখনো। এদিনই রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার খাদুন এলাকার একটি ডোবা থেকে আসাদ মোল¬া ওরফে হাজু নামে এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের শ্রীপুরের আপাদমুক্তার পুরাতন বাড়ির সামনে একই দিন দিবাগত রাতে সন্ত্রাসীদের ধারালো ছুরির আঘাতে কামাল প্রধান (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে।
এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
১৭ জানুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলায় অজ্ঞাত পরিচয় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আধুরিয়া এলাকার একটি পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
১৮ জানুয়ারি শহরের মীনা বাজার এলাকায় মেয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে গিয়েছিল হারাধন। এর পর থেকে হারাধনের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে তার লাশ উদ্ধারে করা হয়।
রাজধানীর মুগদা এলাকায় গত ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাতে কাউছার (২৭) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মুগদা থানায় একটি মামলা হয়। শাহবাগের তোপখানা রোডের ট্রপিকান টাওয়ার থেকে ওই দিন রিতু আক্তার (১১) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহতের মা অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় পুলিশ। একই দিন কালিয়াকৈর উপজেলার বেগুনবাড়ী ব্রিজের নীচ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা যুবককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ওই ব্রিজের নীচে ফেলে যায়। নির্জন এই এলাকায় লাশ ফেলে দেয়ার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
ঢাকার অদূরে সাভারের বাকুরা বিল থেকে গত ২০ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গুলশানে তাইওয়ানের ও চাইনিজ নাগরিক তাদের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। নিহতের নাম আবু জাফর ওরফে রিপন সরকার (৪৩)। ওই দিন শনিবার দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গুলশান থানার পুলিশ নিহতের পরিবারকে মামলা না করে মিমাংশা করার পরামর্শ দেয় বলে জানা গেছে। ঢাকার দোহার এলাকায় এদিন রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আব্দুর রশীদ ব্যাপারী (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে দোহার থানায় একটি মামলা করলেও পুলিশ এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এছাড়া ২১ জানুয়ারি সকালে সিরাজদিখানের তেলিপাড়া গ্রামের নির্জন এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। আজও তার পরিচয় মেলেনি।
মগবাজারের হোটেল আকশার একটি কক্ষ থেকে গত ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার হাত পা বাধা অবস্থায় অপহরণের তিন দিন পরে চান মিয়ার (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। ওই দিন আশুলিয়ার কুরগাও এলাকায় অজ্ঞাত আরও এক যুবতীকে হত্যার ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় পুলিশ প্রশাসনে। একই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম পাইকারি কাঁচাবাজার দিগুবাবুর বাজারে কাঁচামাল আড়তদার ব্যবসায়ী আবুল কালামকে কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা।
রাজধানীর হাজারিবাগে গত ২৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ৭ বছরের শিশুর গলায় ছুরি ঠেকিয়ে তারই সামনে মা জেসমিন আক্তারকে (৪৫) হাত-পা ও মুখ বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের একজন দেড়মাস আগেও ওই বাসায় কাজ করতো বলে জানা যায়। হত্যার পর খুনিরা বাসা থেকে নগদ টাকা ৭০ হাজার ও চার ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে রুমানা আফরোজা শান্তা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছে। মামলায় তাদের সাবেক গৃহকর্মী আশাসহ বাকি চার অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে।
২৫ জানুয়ারি আড়াইহাজার উপজেলার সাত গ্রাম ইউনিয়নের পুরিন্দা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের খাদের পাশ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের প্রচুর আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে পুলিশ জানায়। ওই দিনই নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সড়কে ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বর্ষণ সুপার মার্কেটের সামনের চায়ের দোকানি হরেন্দ্রনাথ দে-এর ছেলে হারাধন নামের নিখোঁজ এক দোকানির লাশ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল¬ায় খান সাহেব ওসমান আলী ৩ নম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামের সামনের ময়লার স্তূপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
২৬ জানুয়ারি কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার গজারি বনের ভেতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা কয়েকদিন আগে তাকে হত্যা করে ওই বনের ভেতর ফেলে যায়।
ওই দিন রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন গোবিন্দ সাহা। নিহত গোবিন্দের পরিবারের অভিযোগ, নিখোঁজ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ শক্তভাবে কোন তদন্ত বা ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণেই গোবিন্দের লাশ পাওয়া গেল। একই দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল রুটের ভাওয়াল গাজীপুর ও সাতখামাইর রেলস্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের পাশ থেকে পুলিশ দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। শ্রীপুর থানাধীন সাতখামাইর স্টেশন সংলগ্ন রেললাইন থেকে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিনই বেলা ৪টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর রেলস্টেশনের আউটার সিগনালের সামনে থেকে অজ্ঞাত পরিচয় অপর এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়।
উভয় ঘটনায় ঢাকা জিআরপি থানায় মামলা হয়েছে। এ সব খুনের ও লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ অজ্ঞাত লাশের ব্যাপারে সেসব মামলার কোন কূলকিনারা খুজে পায়নি।
রাজধানীর কদমতলি এলাকায় ২৭ জানুয়ারি যৌতুকের দাবিতে শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী। ওইদিন সকালে কদমতলী থানার হাজারিবাগ এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মোসাম্মৎ বীথি আক্তার (১৯) নামের ওই নব বিবাহিতার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী আলামিন রয়েছে পলাতক।
২৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজার চারারগোপ খাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার তিনদিনের মাথায় রঙ সুতা ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা ওরফে ভুলুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গোবিন্দ সাহা ওরফে ভুলু শহরের টানবাজার এলাকায় ‘বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ ভবনের নীচতলায় অবস্থিত জয় ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ছিলেন।
রাজধানীর উত্তরায় গত ৩০ জানুয়ারি বুধবার রাতে নয় বছরের শিশু গৃহকর্মী জান্নাতকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে খাদেমুল বাসার রুমন (৩৪), যুবায়ের (১৮), কামরুল হাসান (৩২) ও রফিকুল ইসলাম (৩৪) নামের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
৩১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার রোশওয়্যার গার্মেন্টের শ্রমিক সবুজকে (২৬) কুপিয়ে হত্যার পর মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়েছে সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের ফতুল্লার খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে তাকে খুন করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর দাসেরগাঁও এলাকা থেকে অজ্ঞাত (৩৫) এক মহিলার অ্যাসিডে ঝলসানো পচন ধরা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন বিকালে দাসেরগাঁও এলাকার একটি বালুর মাঠের পাশের জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের মুখমণ্ডল অ্যাসিডে ঝলসানো ছিল।
পুলিশের ধারণা দু-তিন দিন আগে ধর্ষণ শেষে হত্যার পর ওই মহিলার লাশ ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। একই দিন সাভারে নাঈম (১৭)নামের এক কিশোর মুদি দোকানির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নাঈমের মা নাছিমা বেগম জানায়, ১২ দিন আগে নাঈম দুই বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। শুক্রুবার বিকালে নাঈমের লাশ চাপাইন ব্রিজের ঢালে দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী থানার উত্তর মকামিয়ায়।
২ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে পৌর এলাকার চাপাইন মহল্লার ব্রিজের পাশে খালে কাপড় দিয়ে পেঁচানো যুবকের গলিত লাশ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারনা অন্য কোথাও হত্যা করে দুর্বৃত্তরা লাশ এখানে ফেলে গেছে।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় ৩ ফেব্রুয়ারি রোববার সকালে ডাকাতের গুলিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি’র উপ-পরিদর্শক গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম খান নিহত হন। এ ঘটনায় শিপন নামে এক ‘ডাকাত সদস্যকে’ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আইনশৃংখলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলাপ কালে তারা জানান, সম্প্রতি একটু বেড়েই গেছে খুনের ঘটনা।
তবে এসব হত্যাকান্ডের পেছনে ব্যক্তিগত হানাহানিকে দায়ী করছেন তারা। অপরাধ দমনের বিষয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে এবং অভিযানও চলছে নিয়মিত। কয়েকটি ঘটনা ছাড়া আসামিরাও ধরা পড়ছে অল্প সময়ে। তারপরও সকলের সহযোগিতা ছাড়া অপরাধ শুধু মাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর একক প্রচেষ্টায় দমন করা সম্ভব নয় বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
অপরাধ বিশে¬জ্ঞদের মতে, এক স্থানে খুন করে নির্জন এলাকায় ফেলে রেখে অপরাধীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
নির্জন এলাকা থেকে পাওয়া অজ্ঞাত লাশ বা দু’একদিন পর যাদের পরিচয় মিলছে তাদের লাশ অধিকাংশ সময় বহন করা হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও সাদা মাইক্রোবাসে। অপরাধীরা লাশ বহনকারী গাড়িকেই নিরাপদে নির্বিঘেœ ব্যবহার করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নামে যেসব ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে দামি গাড়িও ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে ঢাকার মানুষকে খুন করে ফেলে রাখা হচ্ছে ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ কিংবা সাভারের আশুলিয়ায়। ময়মনসিংহের ফুলপুরে খুন করার পর লাশ ফেলা হচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ উদাসীন বলেই এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
ঢাকা ও এর আশপাশে জানুয়ারি মাসে এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক লাশ উদ্ধার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এর মধ্যে ২০টি লাশের কোন পরিচয় নেই। খোদ রাজধানী হাতির ঝিল থেকে মানুষের একটি পা উদ্ধার করা হয়েছে। তার বাকি শরীর কোথায় আছে লাশটির পরিচয়ই বা কি তা নিয়ে কোন তৎপরতা নেই পুলিশ প্রশাসনের। তবে পুলিশ বলছে পা টি ছিল রোগাক্রান্ত পা।
বিষয়টি তদন্তধীন রয়েছে। ২৫ মাসে মুন্সীগঞ্জের সীমানায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশ এবং পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে ২০১১ সালে ২২টি, ২০১২ সালে ৮টি ও চলতি বছরে ৪ টি লাশ নিয়ে গত ২৫ মাসে মোট ৩৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এসব হত্যাকা-ের ঘটনায় সংশি¬ষ্ট থানাগুলোতে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও বেশিরভাগ ঘটনারই রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। একদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী থাকায় লাশ ফেলে যেতে নিরাপদ মনে করছে দূবৃত্বরা। অনেক সময় মহাসড়ক ব্যবহার না করে ঘাতকরা হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
পরে তা ভাসতে ভাসতে চলে আসে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে। এভাবে একের পর এক লাশ উদ্ধার হওয়ায় মুন্সীগঞ্জকে ডাম্পিং স্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলার পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া উদ্ধার হওয়া কিছু লাশের ঘটনায় হত্যা মামলার পরিবর্তে সংশি¬ষ্ট থানাগুলোতে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় হতভাগ্য বেশ কয়েকজনের স্থান হয়েছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে। তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।