ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো খবরটা সকালে দেখসি।
নিউ এজ পত্রিকার দুই সাংবাদিক, ডেভিড বার্গম্যান ও আহমেদ ফয়েজ, একটা দারুন রিপোর্ট করেছেন। তারা ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকার হাসপাতালে মে মাসের হেফাজত সমাবেশে মৃতদের সংখ্যা বের করতে একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছেন। 24 ‘Hefajat rally’ deaths identified
...অন্যান্য কারওয়ানবাজারী পত্রিকা যেখানে হেফাজতকে ভুলে যেতেই সচেষ্ট, সেখানে এমন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা নি:সন্দেহে ব্যাপক সাহসিকতা। যারা হেফাজতকে নিয়ে রিপোর্ট করতো, আমারদেশ, দিগন্ত, ইসলামিক টিভি- তাদের রাতারাতি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
এখন পর্যন্ত কোন মামলা করেছে কিনা জানা যায় নাই। নিউ এজের রিপোর্টে সব মিলিয়ে ২৪জন মৃতের খোজ মিলেছে। এরসাথে যদি আলজাজিরায় প্রচারিত ১৪জন কবর দেয়ার খবর যুক্ত করে ধরি তাহলে দাড়ায় ৩৮জন। এরমধ্যে ৪জন আছে যাদের লাশ ট্রাকে তোলার ছবি পাওয়া গেছে। উনারা আমাদের সরকার দলীয় পান্ডাদের আক্রমনে ৫মে দিনের বেলায় মারা গেছেন।
তাদের লাশ সাদা কাফনে মোড়ানো ছিল। এর উপরে আরো বাড়িয়ে ধরলে মুটামুটি আন্দাজ পাওয়া যায় যে ৪০-৫০জন খুন হয়েছেন। লোকমুখে প্রচারিত সংখ্যাকে খুব দশ দেয়া যায় না। সংবাদ পত্র টিভি বন্ধ করে দিলেও ইমাজিনেশকে পোষ মানানো যায় না। গলায় পাড়া দিলে আজিব আওয়াজ বের হবেই।
প্রশ্ন থাকে, লাশের এই সংখ্যাপাতে বিরোধীদলের তত্পরতা আর সরকারের ঢাকঢাক গুরগুর কেন? উভয়পক্ষের পছন্দের সংখ্যা শুন্য। সরকারের শুধু শুন্য। বিরোধীদলের শুন্য আবার সংখ্যার পেছনে। সাদেক হোসেন খোকার তিন হাজার, আড়াই হাজার, তারেক জিয়ার দের দুই হাজার, আলজাজিরায় বিএনপি নেতার দাবি তিন চার শো।
ঢাকার বুকে ৫০জন আর সাগরের জেলে ৫০জনের মধ্যে শ্রেণীগত কোন পার্থক্য তেমন নাই।
দুই পক্ষই নিম্নবিত্ত। কিন্তু ৫০জন জেলের লাশ পাওয়া গেলে বিরোধীদল বিবৃতি দেয় না, কেউ সংখ্যার মারপ্যাচে শুন্য যুক্ত করে আড়াইশো বা আড়াই হাজার বলে না, ভাড়াটে মানবাধিকার সংস্থা গ্লোরি-গ্লোরি-হেফাজতের মত, গ্লোরি গ্লোরি জেলে সম্প্রদায় মার্কা কলাম লেখে না, পত্রিকায় লাল রংয়ের হেডিং হয় না। নৌবাহিনী জলসীমার নিরাপত্তার ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে সংবাদসম্মেলন করে না, কেউ তাদের দায়ী করে না। কিন্তু তিলোত্তমা ঢাকার বুকে কারো ট্রয়ের ঘোড়া মারা পড়লে তার নানান গপ্পো কিসসা তৈয়ার হয়। যেন রাষ্ট্রকে দায়ী করতেই এত আয়োজন।
রাষ্ট্র কেন এই দায় নিবে? কেন তাকায়ে তাকায়ে ক্ষমতা দখলের খেলা খেলতে দিবে। জিয়া দেয় নাই তাহেরকে, এরশাদ দেয় নাই নুর হোসেনকে, হাসিনা দিবে না আল্লামাকে। রাষ্ট্র তার সমস্ত কুটচাল, কৌশল, সামরিক শক্তি দিয়ে প্রতিহত করেছে। পর্যাপ্ত লাশ না না পরে আয়োজকদের মধ্যে হতাশা আর সরকারপক্ষের আনন্দ এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। লাশের এই থ্রেশোল্ড শহুরে মানুষের মাথায় আমাদের রাজনীতিবিদরাই তৈরী করেছে।
কিন্তু এই লাশের জোগান তারা কখনো নিজের পরিবার বা কর্মীদের দিয়ে দিবে না। তাদের পছন্দ মাদ্রাসা ছাত্র, গার্মেন্টস কর্মী, এনজিও কর্মী। ২২বছরে প্রায় সবগুলো ট্রাম্প কার্ড ব্যর্থ হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত। জলিলি ট্রাম্পকার্ড বা হেফাজতি ট্রাম্পকার্ড ধোপে না টেকায় প্রমাণিত হইলো কেউ মাদ্রাসা এনজিও কিনে এনার্কি তৈরী করে গরিবের রক্তের উপর পাড়়া দিয়ে ক্ষমতায় বসতে পারবে না। আবার লাশের থ্রেশোল্ড শত, হাজার অংকে পৌছায় আগামী দিনের কথা ভেবে শংকিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।