আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেসুরো বাঁশী

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

বেসুরো বাঁশী তুমি রাধা হতে চেয়েছিলে। আমি কৃষ্ণ হতে পারিনি। বটতলীর মেলা থেকে একটা বাঁশী কিনেছিলাম। বাঁশীওয়ালাকে বলেছিলাম, “সুর উঠবেতো”? বাঁশীওয়ালা হেসে বলেছিল, “বাজাতে পারলেই উঠবে”। এই যে দেখ আমি কেমন বাঁশীতে সুর তুলছি।

আমি বললাম, আমারটা বাজাওতো। সে তখনি বাঁশীটা তার ঠোঁটে ছোঁয়ালো। অমনি বাঁশীটা সুর করে বেজে উঠলো। আমি খুশীতে নাচতে নাচতে বাসায় চলে এলাম। তারপর! প্রতিদিন পুকুর ঘাটে বসে বাঁশী বাজাই।

সেই বাঁশীতে সুর ওঠেনা। পুকুর পাড়ের গাছগুলোতে নিশ্চিন্তে বসে থাকা পাখীগুলো বাঁশীর বেসুরো সুর সহ্য করতে না পেরে অন্য কোথাও উড়ে চলে যায়। বাঁশীর ডাক শুনে তুমি আসোনা। কারণ আমার বাঁশী কৃষ্ণের মতো করে তার রাধাকে ডাকতে পারেনা। বুঝলাম হাতে বাঁশী থাকলেই কৃষ্ণ হওয়া যায়না।

আর মন কাউকে চাইলেই সে রাধা হয়ে যায়না। তখনি মনে হলো বাঁশী বাজাতে জানলেই কৃষ্ণ হওয়া যায়না। তাহলেতো ঐ বাঁশীওয়ালার অনেকগুলো রাধা থাকতো। কিন্তু তাতো নেই! আমি ভাবতেই থাকি, আমার বাঁশীতে সুর ওঠেনা। তোমাকেও মোহনীয় সুরে আর ডাকা হয়না।

শুনেছি ডাকতে জানলে নাকি ঈশ্বরও সাড়া দেন। তুমি কী আমার ডাক শুনতে পাও? তুমিতো মর্ত্যের মানবী। রাধা নাহয় নাইবা হলে। বাঁশীর সুরে সাড়া নাইবা দিলে। আমার অন্তরের ডাকতো তুমি শুনতে পাও।

সেই ডাকে কোন শব্দ নেই। স্তুতি নেই। পর্বতের গুহায় মহামানবেরা ঈশ্ববকে নীরবেই ডেকেছিলেন। ঈশ্বরের দেখা পেয়েছিলেন কিনা জানা নেই, তবে তাঁদের অনুভবে প্রতিক্ষণ ঈশ্বর ছিলেন। যেমন তুমি আছো আমার অনুভবে।

আমার ভেতরে সুর নেই। আমি অসুর নই। দেবতাও নই। সাধারণ এক মানুষ। বাঁশী বাজাতে আমি জানিনা।

সাপুড়েরা বাঁশী বাজায়। বাঁশীর সুরে সুরে নাগিনীরা নৃত্য করে। আমি সাপুরে নই। তোমাকে নাগিনী ভাবার ধৃষ্টতা আমি কোনকালেই দেখাতে পারবোনা। আমি জানি তোমার মাঝে বিষ নেই, আছে প্রেম।

সেই প্রেম অমৃতসম। আমি সেই প্রেম চাই। বেসুরো বাঁশীর সুরে তোমার প্রেম সাড়া দেয়না। কোন সুরে সাড়া দেবে তাও জানা নেই। আমার মন হন্যে হয়ে শুধু সেই সুর খুঁজছে।

কোথায় পাবো সেই সুর? আমি আসলেও বোকা। সবাইকে রাধার মতো ভাবছি কেন? রাধার মতো সবাই কী কৃষ্ণের বাঁশীর জন্য পাগল হবে? বাঁশীর সুর শুনে পুকুর ঘাটে আসবে? এমনটা না’ও হতে পারে। এখনতো আর সেই যুগ নেই। সেই প্রেম নেই। আমার যে রাধা, তার মনে কোন সুর বাজবে সেটা আগে ভাল করে জানা প্রয়োজন।

এখনতো যুগ পাল্টে গেছে। এখন এসএমএস-এর যুগ। ই-মেইলের যুগ। রিং টোনে আজকাল কৃষ্ণের বাঁশী আনায়াসে বাজানো যায়, তাতে অপর প্রান্তের রাধা সাড়া দিক বা না দিক তাতে কিছু আসে যায়না। রাধাতো আর একটা নয়, যে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।

আজকালকার রাধা হয়তো পুকুর ঘাটে আসবে না, তবে বসুন্ধরার ফুড কোর্টে, রাইফেল স্কয়্যারে, নন্দন পার্কে তার সাথে দেখা হবেনা সেটাই বা ভাবি কী করে? তাহলে আর বাঁশী বাজানো শিখে কাজ নেই। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাঁশী অচল। আমার অচল ভাবনায় সচল রাধাদের জন্য বাঁশীতে নয়- অন্য কিছুতে সুর বাঁধতে হবে। তুমি এখন আর রাধা হতে চাওনা। বাঁশীতে তোমার মন বসেনা।

সবকিছুই কেমন বদলে গেছে। আসলে যুগটাই এখন রিমিক্সের। তোমার কোন দোষ নেই। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমাকে আর কষ্ট করে বাঁশী বাজানো শিখতে হবেনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।