আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে ইসলামী দলে অনুপ্রবেশ করছে ইসরাইলের মোসাদ? -- ড. হোসেন খিলজী

আহসান মোহাম্মদ

উৎসঃ Click This Link ১. কৌশলটা নতুন নয়, অনেক পুরনো। সেই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দক্ষিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর অনেক দেশে কমিউনিষ্ট আন্দোলন গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে এই আদর্শিক আন্দোলন ক্ষমতাসীনও হয়। কমিউনিষ্ট আন্দোলন গুলোকে ঠেকানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে পুজিবাদি আমেরিকা ও তার সহয়োগিরা । সাজানো হয় ব্যাপক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনা।

ঢালা হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। সেই আদিম কৌশল। কাটা দিয়ে কাটা তোলা। জনপ্রিয় মূলধারা কমিউনিষ্ট দলগুলোর পাশাপাশি নানা নামে বেনামে গঠন করা হয় বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি। নেপথ্য গুরু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।

নব্য এসব কমিউনিষ্ট আন্দোলনকে বোঝানো হয় জনসমর্থন নয়, বন্ধুকের নলের মাধ্যমেই ক্ষমতা দখল করতে হবে। এর জন্য শুরু হয় চোরাগোপ্তা হামলা, জনগনের সম্পদ নষ্ট সহ নানাবিধ সন্ত্রাসী ও শান্তি শৃংখলা বিনষ্টকারী কর্মকান্ড। সিআইএ এর মাধ্যমে চেয়েছিল, জনগন যাতে কমিউনিষ্ট নামধারী এসব বিপ্লবীদের কর্মকান্ডে বিতশ্রদ্ধ হয়ে মূল কমিউনিষ্ট আন্দোলন বা খোদ সমাজতন্ত্রের প্রতি বিভ্রান্ত হয়। কাট দিয়ে কাটা তোলার এই কৌশল বেশ কাজে দেয়। অনেক দেশে ক্ষমতাশীনরা কমিউনিষ্ট আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করে।

ষাটের দশকে একই কৌশল আমদানী করা হয় মিশর ও সিরিয়াতে। তখন দেশ দুটিতে বেশ জনপ্রিয় অবস্থানে মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলিমুন। ক্ষমতাশীন সমাজতন্ত্রী আরব জাতিয়তাবাদী �বার্থ পার্টি� ইখওয়ানের উপর চালায় ব্যাপক জুলুম নির্যাতন। হত্যা ,গুম সামরিক আদালতে বিচারের নামে ফাসিতে ঝুলানো যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। সারাশি নির্যাতনে ইসলামপন্থীদের কিছু অংশ বিভ্রান্ত হয়, গড়ে তোলে সশস্ত্র সংগ্রাম।

সরকার ও তার আন্তর্জাতিক মুরুব্বীরা পেয়ে যায় মোক্ষম সুযোগ। সিআইএ, কেজিবি ও তাদের স্থানীয় দোসররা এসব জনবিচ্ছিন্ন ইসলামী নামধারী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে ্যোগান ব্যাপক মদদ ও রসদ। তবে এই রসদ যোগানো হতো প্রত্যক্ষ ভাবে নয়, পরোক্ষভাবে। একদিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে মদদ দান অন্যদিকে এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী করে মূলধারার জনপ্রিয় দল ইখওয়ানের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুন। ইখওয়ানকে নিষিদ্ধ করা হয় বারবার।

২. অনেকে বলছেন, গত দুই দশকে বাংলাদেশে গনতন্ত্রে বিশ্বাসী মূলধারার কয়েকটি ইসলামী দলের উত্থান নিয়ে এখন ভারতসহ বিশ্ব মোড়লদের বেশ মাথা ব্যথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশে যেসব সন্ত্রাসী সংগঠন কাজ করছে, তাদের পেছনে ভারতের �র� এবং ইসরাইলের ‘মোসাদ’ ব্যাপকভাবে আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক রসদ যোগান দিয়ে চলেছে। আবার অনেকের মতে এ সবই ভিত্তিহীন তথ্য, অতিরঞ্জিত গুজব। পাঠকদের বিশ্লেষনের জ়ন্য উপস্থাপন করা হল দু-একটি প্রাসংগিক সংবাদ। ক. গত ৪ ফেব্রুযারি ২০০০ বিবিসির প্রখ্যাত সাংবাদিক আসামের অধিবাসি ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের সংবাদদাতা সুবির ভৌমিক �দি উইক� পত্রিকায় aborted mission: did Mossad attempt to infiltrate Islamic radical outfits in south Asia? (ব্যর্থ মিশন: মোসাদ কি দক্ষিন এশিয়ার ইসলামী উগ্রবাদীদের মাঝে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে ? ) শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লিখেছেন, �২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কলকাতায় ঢাকা-অভিমুখী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ১১ বিদেশী নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন।

বাংলাদেশী বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করছিল সন্দেহে বিমান ওড়ার একটু আগে তাদের আটক করা হয়। তারা কলকাতা থেকে ঢাকা আসছিল। তবে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা যখন বুঝতে পারি তারা তাবলিগের লোক; তাদের ছেড়ে দেই। ’ টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরে ইসরাইলি চাপের মুখে ভারত তাদের নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে তেল-আবিব ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়। দিল্লিতে বাংলাদেশী হাইকমিশনের এক কূটনীতিক তখন জানান, ‘তাদের ঢাকায় অবতরণের অনুমতি ছিল, অথচ ভিসা ছিল না। আমরা তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই, কারণ আমরা এ সুযোগ দিতে পারি না। ’ ওই ১১ জনের কাছে ইসরাইলি পাসপোর্ট ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তারা আফগান নাগরিক।

কিছু সময় ইরানে ছিল। তাদের কাছে ঢাকায় অবতরণের অনুমতি ছিল এবং দিল্লি ভিত্তিক একটি ট্রাভেল এজেন্সি তাদের বাংলাদেশ বিমানের কলকাতা-দিল্লি রুটের ওয়ান ওয়ে টিকিট দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, ‘কারো কাছে বৈধ টিকিট থাকলেও নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ার অধিকার আমাদের আছে। ’ বাংলাদেশ বিমান কর্মকর্তাদের কাছে ওই ১১ জনের সবাইকে ‘বেশ রহস্যজনক’ মনে হয়। ওই ১১ জনের জাতীয়তা তথ্য নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও হতবাক।

সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে তারা মুসলিম। তারা বলেছে, দু’মাস ধরে তারা তাবলিগের কাজে ভারতে আছে। অথচ তারা ইসরাইলি নাগরিক। পশ্চিমতীরে তাদের বাস। ’ তিনি বলেন, তেল-আবিব তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে।

মনে হচ্ছে, তারা ইসরাইলের একটি স্পর্শকাতর সংগঠনের হয়ে কাজ করছে এবং একটি মিশনে তারা বাংলাদেশ যাচ্ছিল। ’ ‘মোসাদ’ নামে এই ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মৌলবাদী নেটওয়ার্কগুলোকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে শিয়া মুসলিমদের ওই ইসলামি নেটওয়ার্কগুলোতে প্রবেশ করায়, এটি সর্বজনবিদিত। ভারতের গোয়েন্দা বিশ্লেষক অশোক দেববর্ম বলেন, বিন লাদেনের মতো একটি নেটওয়ার্ককে ভেঙে দেয়ার জন্য ইরানে ১১ আফগানকে নিয়োগ দিয়ে তাদের ইসরাইলি নাগরিকত্ব দিতে পারে মোসাদ। এটি অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশে একটি ইসলামি সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে মিশন শুরু করত তারা।

তাদের মুক্তির ব্যাপারে ইসরাইল চাপ দেয় এবং ব্যর্থ অভিযান থেকে তাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া হয়। ’ মোসাদের গোয়েন্দারা বলেছে, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের’ কারণে অপারেশনটি নিষ্ফল হয়ে পড়ে এবং তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভারতের ব্যুরো অব সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি (বিসিএএস) ১১ জানুয়ারি একটি অতিগোপনীয় সার্কুলার জারি করে (NO. ER/BCAS/PIC/CIRCULAR/99)। সেখানে ভারত থেকে ছেড়ে যাওয়া বাংলাদেশ বিমানের একটি এয়ারক্রাফটের সম্ভাব্য ছিনতাইয়ের চেষ্টার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়। রিজিওনাল ডেপুটি কমিশনার অব সিকিউরিটি (কলকাতা এয়ারপোর্ট) স্বাক্ষরিত এই সার্কুলারের কপি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট ভারতীয় এজেন্সিগুলোতে এবং কলকাতায় বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজার মোঃ শাহজাহানের কাছে।

এতে বলা হয়, এ উদ্দেশে আটজন পুশতুভাষী মুজাহিদ ভারতে ঢুকে পড়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা কেঁচো খুঁড়তে গিয়েই সাপ বেরিয়ে এসেছিল। তারা চেয়েছিলেন বিমান ছিনতাইকারী ধরতে। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছিল মোসাদের প্রশিক্ষিত লোক। পরে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের�।

উল্লেখ্য, এ বছর (২০০৮) জানুয়ারীতে বিশ্ব এজতেমায় ইসরাইলী নাগরিকদের অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। দৈনিক নয়া দিগন্ত ২৫ জানুয়ারী ২০০৮ সংখ্যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্টও করে। প্রশ্ন হলো, তারা কি আসলে মুসল্লি, না কি মুসল্লি বেশে এসে কোনো ইসলামি দলে অনুপ্রবেশ করে দেশে নাশকতা চালাতে চায়? খ. গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ জায়নবাদী ইসরাইলের স্বঘোষিত বন্ধু সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে মাঠে নামল নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি বা আইডিপি নাম নিয়ে। মূল খবর নিয়ে আলোচনার আগে পাঠকদের সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী সম্পর্কে কিছু তথ্য না দিলেই নয়। লেখা দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় তার পূর্ব পরিচয় তুলে ধরা থেকে বিরত থাকলাম।

তিনি ২০০৩ সালে ২৯ নভেম্বর ইসরাইল যাওয়ার পথে জিয়া বিমান বন্দরে আটক হন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে কোন নাগরিক ইসরাইল ভ্রমন করতে পারেন না। সেই সময় ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয় । ১ ডিসেম্বর ২০০৩ ডেইলী স্টার লিখে, বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করার সময় তার কাছে একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল পাওয়া যায়, যাতে তিনি ইসরাইলের কাছে তিনটি দৈনিক পত্রিকা যথা দৈনিক সোনালী দিন, দৈনিক রূপান্তর, দৈনিক পরিবর্তন প্রকাশের জন্য ১২ কোটি টাকা সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। তিনি তার আবেদনে ইসরাইলী বন্ধুদের মুসলিম প্রধান দেশে মিডিয়া গড়ে তোলার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, কোটি কোটি ডলার খরচ করে যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চেয়ে মিডিয়া সৃষ্টি করুন, এতে ইসরাইল বেশি লাভবান হবে।

সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। পাঠক, ইন্টারনেটে http://www.reborn-by-design.com এই ওয়েবসাইটটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। আপনি কি ইসরাইলের বন্ধু?(I am a proud friend of Israel, Are you?) শিরোনামের এই সাইটটির ৩য় পেজের ২৭১ নম্বরটিতে দেখবেন সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধূরীর নাম। তিনি ইসরাইল ইন্সাইডার (Israel Insider) নামক একটি ইসরাইলী দৈনিকের অনিয়মিত কলাম লেখক। গত ০৬ জুন ২০০৬ তারিখে Israel Insider পত্রিকায �বাংলাদেশে অগ্রগতির লক্ষন (Bangladesh: signs of progress)� শিরোনামে একটি কলামে তিনি লিখেছেন, �Previously, the people of Bangladesh received only anti-Israeli news, and certainly nothing about the tiny openings of interfaith dialogue between Jews and Muslims. That began to change recently with the appearance of such pieces in the pages of Dhaka daily Amader Shomoy. Amader Shomoy is published in Bangladesh's vernacular language of Bangla, and now to a limited extent in English as well (বাংলাদেশের মানুষ এতদিন শুধুমাত্র ইসরাইল বিরোধী সংবাদগূলোই পেত, ইয়াহুদী-মুসলমানদের আন্তধর্মীয় সংলাপের কোন খবরই পেতনা।

কিন্তু সম্প্রতি এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে ঢাকার দৈনিক আমাদের সময়ে এ সম্পর্কিত কিছু সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে)�। উল্লেখ্য, সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী দৈনিক আমাদের সময়ের বিশেষ সংবাদদাতা। অপরদিকে, এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন সংবাদ উল্লেখ করা যেতে পারে। �গভীর অন্ধকারে ঢাকা (darkness in dhaka)� শীর্ষক ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের ১৫ অক্টোবর ২০০৬ এর কলামে বলা হয় মি. চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয় মূলত ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন এবং পাসপোর্টে অনুমতি না থাকার পরেও ইসরাইল ভ্রমনের চেষ্টা করার জন্য। পত্রিকাটি মি. চৌধুরীর উদ্বৃতি দিয়ে লিখে, "When I began my newspaper [the Weekly Blitz] in 2003 I decided to make an end to the well-orchestrated propaganda campaign against Jews and Christians and especially against Israel. In Bangladesh and especially during Friday prayers, the clerics propagate jihad and encourage the killing of Jews and Christians (আমি যখন প্রথম সাপ্তাহিক ব্লিতস (weekly blitz) প্রকাশ করি তখন সিদ্ধান্ত নেই ইয়াহুদী খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে বিশেষত ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে সংঘবদ্ধ প্রচারনা চলছে তার অবসান ঘটাতে।

বাংলাদেশে শুক্রবারের খুতবায় মোল্লারা মূলত জিহাদের বানী প্রচার করে এবং ইয়াহুদী খৃষ্টানদের হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে)�। তিনি ইসরাইল ভিত্তিক সংগঠন ইফলাক (IFLAC, international forum for literature and culture for peace) এর সদস্য এবং ইসরাইল-ইসলাম বন্ধুত্বের একজন উপদেষ্টা । তার জেলমুক্তির জন্য জোর লবিং চালাতে এগিয়ে আসেন স্বঘোষিত ইয়াহুদী মানবাধিকার (?)কর্মী ড. রিচার্ড বেনকিন। তিনিও দৈনিক আমাদের সময়ের আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা । ড. বেনকিন ও সালাউদ্দীন শোয়েব চৌধুরী মিলে http://www.interfaithstrength.com এই ওয়েবসাইটটি চালান ।

উক্ত ওয়েবসাইটটির বিষয়বস্তু বিশ্লেষন করলে কথিত ইয়াহুদী মানবাধিকার কর্মীর (?) ও তার এদেশিয় সাগরেদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর সন্দেহের অবকাশ থাকেনা । এখানে বাংলাদেশকে মূলত একটি মৌলবাদি রাষ্ট্র এবং ইসলামী উগ্রপন্থী ও জঙ্গিবাদীদের অভয়ারন্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে বহু মিথ্যা ও আধাসত্য বিকৃত তথ্য। টার্গেট একটাই, বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে সন্ত্রাসী, মৌলবাদী, তালেবানী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানো। ওয়েবসাইটটির কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম এরকম �ইসলামী সন্ত্রাসীদের নতুন আখড়া�, �বাংলাদেশ কি ইসলামী সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে?, �ইসলামী উগ্রবাদীদের কবলে বাংলাদেশ�, �বাংলাদেশ কি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য?, �ইরান বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে�, �বাংলাদেশ কি মৌলবাদি রাস্ট হছে?� ইত্যাদি ।

গ. এবার আমরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ প্রকাশিত একটি সংবাদে নজর দিতে চাই, �ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি-আইডিপি নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-হুজি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করল সাবেক আফগান মুজাহিদদের এই সংগঠন আইডিপি। অবশ্য সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের সংগঠন এ দেশে ১৯৯২ সালেই আত্মপ্রকাশ করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামে। এরপর ১৯৯৮ সালে তা বিলুপ্তি ঘোষণার পর ‘ইসলামী গণ-আন্দোলন’ নামে সংগঠন করেছিলাম। সেই সংগঠন থেকে এখন আইডিপি নামে কাজ করছি।

গতকাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মাওলানা শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আইডিপির ইফতার ও আলোচনা সভায় সংগঠনের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের ভাষায় ‘আন্তসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের স্বার্থে আমন্ত্রিত’ ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিৎজ-এর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশ-এর সহকারী সম্পাদক ও হিউম্যান রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের পি কে বড়ুয়া, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি চিত্ত ফ্রান্সিস রিভেরু বক্তব্য দেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, আইডিপির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন রাজনীতির জন্ম হলো। তিনি বলেন, আইডিপির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের নাম জড়িত। এটা এমন একটি সংগঠন, যার সম্পর্কে নানা আলোচনা রয়েছে। আইডিপিকে যারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে, ওই সব পত্রিকা বিদেশের টাকায় চলে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এবং বালিতে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সত্ত্বেও হিযবুত তাহ্�রীরের মতো সংগঠন যদি এ দেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে আইডিপি কেন পারবে না। যারা বাংলাদেশকে করদ রাজ্য বানাতে চায়, তারা আইডিপিকে হুমকি মনে করে। সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, ‘আফগানফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের মূলধারার সদস্যরা আইডিপি গঠন করেছে। পরিচয়সূত্রে আমি এদের সঙ্গে অনেক কাজ একত্রে করেছি। এ নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি।

আমরা এই অনুষ্ঠান আরও আগে করতাম, কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে। তাতে একদিকে ভালোই হলো। আজ পবিত্র জুমাতুল বিদার দিন আইডিপির প্রথম প্রকাশ্য মাহফিল হচ্ছে। ’ আইডিপির উপদেষ্টা ও খেলাফত আন্দোলনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী আজীজুল হক বলেন, তথ্য ও যোগাযোগের ঘাটতির কারণে আইডিপি সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। হরকাতুল জিহাদ বিলুপ্ত করার পর প্রথমে ইসলামী দাওয়াতি কাফেলা, তারপর ইসলামী গণ-আন্দোলন এবং এখন আইডিপি নামে সংগঠন হয়েছে।

সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এটা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইডিপির সদস্যসচিব মাওলানা রুহুল আমিন, তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কারি হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবুল কাশেম রহমানী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং মাওলানা মুফতি কামাল, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মুফতি ফজলে এলাহি, মাওলানা মুফতি নোমান, খেলাফত মজলিসের (ইসহাক) নায়েবে আমির এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির ছফর উল্লাহ খান, জৈনপুরী পীর মাওলানা এহছানুল্লাহ আব্বাসী প্রমুখ। এ ছাড়া মরহুম হাফেজ্জী হুজুরের মেজ ছেলে হাফেজ মাওলানা হামিদুল্লাহ ও মাওলানা আতাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। ইফতার অনুষ্ঠানে সংগঠনের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপসহ নানা কারণে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নাম পাল্টালেও এর নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, মজলিশে শুুরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া প্রায় একই ছিল।

২০০৬ সালের আগস্ট মাসে প্রথম গোপন এই সংগঠনটি ইসলামী গণ-আন্দোলন নামে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে। এই লক্ষ্যে ওই বছরের ১৮ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সচেতন ইসলামী জনতার ব্যানারে বড় একটি সমাবেশ করেছিল। তখন সচেতন ইসলামী জনতার আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের। এই তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

আবু তাহের হুজির ঢাকা মহানগর সভাপতি ও মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর হুজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে (প্রথম আলো, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৮)। ঘ. ইসরাইলের প্রভাবশালী পত্রিকা হারেজ ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত ১৬ এপ্রিল ২০০৮ একটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য পরিবেশন করে। লিকুড পার্টির দলনেতা বেঞ্জামিন নেতানিইয়াহু ১৬ এপ্রিল ইসরাইলের বার-ইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবেশে বলেন ৯/১১ সন্ত্রাসী ঘটনা ইসরাইলের জন্য বেশ ভাল হয়েছে "We are benefiting from one thing, and that is the attack on the Twin Towers and Pentagon, and the American struggle in Iraq�.swung American public opinion in our favor(আমরা একটা ঘটনা থেকে বেশ সুফল পাচ্ছি আর সেটা হচ্ছে টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলা। এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ইরাকীদের উপর মার্কিন অভিযান।

ঘটনাটি আমেরিকার জনমত আমাদের পক্ষেই এনেছে)�। ৩. �যেকোন সন্ত্রাসী দল বা সংগঠন যদি সন্ত্রাসের পথ পরিত্যাগ করে তাওবা বা অনুশোচনার মাধ্যমে গনতান্ত্রিক ভাবে দল গঠন করে এবং জনগনের সমর্থন নিয়ে সরকার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন তাহলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়, আমাদেরও নেই। এক্ষেত্রে হুজির আইডিপি নামে রাজনৈতিক ময়দানে আবির্ভূত হওয়াকে সাধুবাদ জানাই। কিন্ত প্রশ্নটি অন্যখানে। ইসলামী দলের উদ্বোধনে করছে ওরা কারা? কি তাদের পরিচয়? যারা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মৌলবাদী, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের আখড়া বলে প্রচার চালাচ্ছে,যারা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলছে বাংলাদেশের মসজিদ গুলোতে প্রতি শুক্রবার ইয়াহুদী খৃষ্টানদের নির্বিচারে হত্যার তালিম দেওয়া হয়,তারা?যারা মানবতার দুশমন ইসরাইলের পক্ষে ওকালতি করছে, তারা? যাদের স্বপ্নের দেশ ইসরাইলে ইসলামী দল তো দূরের কথা, মানবতার সামান্য নৈতিকতা বোধও অবশিষ্ট নেই, তাদের সাগরেদরা ঢাকায় বসে ইসলামী দল উদ্বোধন করছে, এটাকে কি সচেতন বিবেক স্বাভাভিক ভাবে নিতে পারে? লেখকঃ গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, ই-মেইল,


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.