সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...
পর্ব ১: Click This Link
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলে কী সুবিধে পাওয়া যেতো? একটা নিম্নভাড়ার বাসা, যা হাউসটিউটরশিপের বরাতে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ছাড়া সেটা পাওয়া সম্ভব নয়। এই রাজনীতি না করা বা তার বিরোধিতা করাও আমার এক্টিভিজমের লক্ষ্য। যদি একটু দ্রুত প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হওয়া যেত, বেতন বাড়তো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমার অস্থায়ী প্রভাষকের পদটা স্থায়ী হতেই পাক্কা তিন বছর লেগে গেল (এটা একটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি, তিন বছর সেবা দিলে অস্থায়ী পদ এমনিতেই স্থায়ী হয়ে যায়।
বিভাগ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সত্যি হলো, একটা উদ্যোগকে ঝুলিয়ে/ফেলে রাখা হয়েছে)।
অগত্যা কী আর করা? সম্ভাব্য অপশন থেকে বিশ্বব্যাংকের অনুবাদকর্ম ও লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বাদ দিলাম। বিবিধ মানসিক পীড়নের মধ্য দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও এনজিওকে বরণ করলাম। টুকটাক কাজ করলাম, তাও নিয়মিত কিছু না।
বড়ো ডিগ্রি বা পদ না-থাকায় এসবের পেমেন্টও কম হয়ে থাকে। আর মতিউর রহমানের আহ্বানে প্রথম আলোয় কনসাল্টেন্সিগোছের একটা কাজ করলাম কিছুদিন; অথচ আমার মিডিয়া-এক্টিভিজমের লক্ষ্যই ছিল প্রথম আলো-ডেইলি স্টার। এভাবে বেঁচে রইলাম, স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখলাম। কিন্তু মর্যাদাকর বেঁচে থাকা তা নয়। কেবলই গ্রাসাচ্ছাদন -- গৃহে বৈভব নেই, আত্মীয় পরিমণ্ডলে সম্মান নেই (ঢাবির শিক্ষক হবার কারণে সম্মান আছে বটে, কিন্তু দীর্ঘদিন তাদের জন্য কিছুই করতে না-পারাটা তাকে ম্লান করে দেয়), বন্ধুমহলে আছে সহানুভূতিশীল করুণা।
কিন্তু এই আপস আমার এক্টিভিজমের লক্ষ্যের তালিকা ছোট করে দিল। এনজিওর সুবিধাভোগী হয়ে তো আর এনজিওর বিরুদ্ধে কথা বলা যায়না। আর সবচেয়ে ক্ষতি হলো প্রতিবাদের যে তেজ ছিল আমার, তা অনেকটা মিইয়ে এলো। যে একবার আপস করা শুরু করে, তার সামগ্রিক তেজের তীব্রতাই কমে আসে। তবে এর মধ্য দিয়েই চেষ্টা চললো তালিকায় আর যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার।
কিন্তু আগের সেই উদ্যম আর খুঁজে পাইনা।
পাশাপাশি কয়েক জায়গায় আপসের কারণে সৃষ্ট মানসিক পীড়ন আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। অবশ্য বাংলাদেশে অনেককেই দেখা যায় জলে ও ডাঙায় সমান সক্রিয়, তারা এক্টিভিস্ট হিসেবে সৎ নয় বলে মনে করি। অনেক নামজাদা ও শ্রদ্ধেয় সাংবাদিককে দেখি মিডিয়ার হঠকারিতার সমর্থন গাইতে, সবচেয়ে বড়ো বিজ্ঞাপননির্মাতা হলেন সবচেয়ে বিপ্লবী চলচ্চিত্রকার বা থিয়েটারকর্মী। জানিনা মানসিক পীড়ন বা অন্তর্দ্বন্দ্ব তাদের মধ্যে আদৌ কাজ করে কিনা।
আমাকে এই আপস করতে হলো কেবল খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু খোদ পুঁজিবাদী বা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে এক্টিভিস্টদের কেবল খাওয়া পরার জন্য এই আপস করতে হয়না। তাদের নানা ধরনের সোশ্যাল সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে, ভাতা আছে। একটা ধনবাদী দেশে একজন বেকারভাতা পেয়ে দিব্যি এক্টিভিজম চালিয়ে যেতে পারে। সিয়াটাল হোক আর হংকং হোক, প্লেনে উড়ে গিয়ে পশ্চিমা এক্টিভিস্টরা ডব্লিউটিওবিরোধী এক্টিভিজম করেন।
কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশে রাষ্ট্র কিছুই দেয়না। নাগরিকদের নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হয়। বেতন এত কম যে টিকে থাকতে হয় বাড়তি কাজ করে, নয়তো ঘুষ খেয়ে। আর সম্মানজনক বাড়তি কাজ সবসময় জোটেও না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।