চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
একটা চমৎকার ফুলের বাগানের মালীকে সুন্দর একটি ফুল দেখিয়ে জানতে চাওয়া হল তার অনুভূতি। সে বলল এর জন্য তাকে অনেক খাটুনি দিতে হয়, সময়মত পানি দেওয়া, মাটি নিড়ানো, ঢালপালা ছেটে দেওয়া ইত্যাদি, ইত্যাদি।
একজন কৃষিবিজ্ঞানিকেও দেখানো হল ফুলটিকে।
তিনি শুরু করলেন প্রথমেই ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম দিয়ে। তার ফুল কিভাবে পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে বংশবিস্তার করে, কিভাবে ফলে পরিনত হয় ইত্যাদি ইত্যাদি বয়ান দেয়া শুরু করলেন।
তারপর প্রশ্ন করা হল একজন দার্শনিককে।
তিনি বললেন এরসাথে জড়িয়ে থাকা আবেগ অনুভুতির কথা, বললেন এর সৌন্দর্য্য মাধুরী কিভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে সেই নিগূঢ় রহস্যের কথা।
সবশেষে জিজ্ঞেস করা হল সত্যিকার অর্থের জ্ঞানী এবং বিনয়ী একজন মানুষকে।
তিনি কোন উত্তর না দিয়ে অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন ফুলটির দিকে।
সাথে ডুব দিলেন চিন্তার সাগরে, কোন উত্তর পাওয়া গেল না।
একটি এবস্ট্রাক্ট চিত্র এনে রাখা হল আগের মানুষগুলোর সামনে।
তাদেরকে বলা হল তোমরা কি দেখছ?
প্রথমজনের কাছে সবই দুর্বোধ্য মনে হল, দিত্বীয়জন সক্ষম হল অন্তর্নিহিত ভাব উদ্ধারে। আশ্চর্য্যজনক উত্তর দিল তৃত্বীয়জন। চিত্রকার মানুষটির একটি চিত্র নিজেই সে একে ফেলল। তার মানসিকতা, জীবনযাত্রার ঢং এবং অনেককিছুই।
যার অনেককিছুই মিলে গেল।
আর সেই শেষের মানুষটি কোন উত্তর না দিয়ে নিস্পলক তাকিয়ে রইল চিত্রকর্মটির দিকে। হারিয়ে গেল সেই ছবিটির জগতে।
আর্কিমিডিসকে যখন এক সৈন্য এল ধরে নিয়ে যেতে তখন তিনি গানিতিক একটি সমস্যা সমাধানে গভীর চিন্তায় মগ্ন। ক্রোধান্বিত সেই সৈন্য তার কথায় কর্নপাত না করায় শেষমেষ এই মহান লোকটিকে হত্যা করে বসে।
সক্রেটিসকে এথেন্সবাসী চেপে ধরল যে তাকে স্বীকার করতে হবে যে তিনি সবচাইতে বিদ্যান ব্যক্তি। শেষমেষ তিনি এই বলে রাজী হলেন যে আমি এই অর্থে সবচাইতে জ্ঞানী ব্যক্তি যে আমি আমার মুর্খতার কথা অন্যের চাইতে বেশি জানি।
আমরা মওলানা রুমীর সেই বিখ্যাত গল্পটি সবাই জানি পন্ডিতকে কিভাবে প্রান হারাতে হয়েছিল সাতার না জানার জন্য, যিনি কিনা মাঝির অশিক্ষা নিয়ে ব্যংগ বিদ্রুপ করছিলেন এই বলে তোমার অর্ধেক জীবন বৃথা।
পাবলো নেরুদা তার মৃত্যুর আগে মৃনাল সেনকে এক চিঠিতে দু:খ করে লিখেছিলেন আমি শেষ বয়সে যখন সবকিছু বুঝতে শুরু করেছি, তখন আমার জীবনে এর গুরুতৃ আর বাকী নেই, সবকিছুই দেরী হয়ে গেছে।
আইনস্টাইন মৃত্যুশয্যাতেও খুজে বেরিয়েছেন চতুর্থ একটি শক্তি ক্ষেত্রকে তার জ্ঞানকে পরিপুর্ন করার আশায়।
শেষপর্যন্ত সত্যিকার জ্ঞানী মানুষের যে চেহারাটা ফুটে তা হল, সবসময় জ্ঞানার্জনে ব্যস্ত আর যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার জ্ঞান কদ্দুর তাহলে উত্তর আসে আমি কিছুই জানি না।
আর মুর্খের চেহারাতে সবসময় ফুটে থাকে আমি সব জানি আর আমার জানাটা তুই না জানলে তোর জান বৃথা।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব দৃষ্টি ভংগি রয়েছে। রয়েছে আশেপাশে জিনিষগুলোকে নিজের মত করে দেখার এবং ব্যাখ্যা করার চিন্তাশক্তি। তাই ভুল কিংবা সঠিকের চাইতে এখানে প্রয়োজনীয় সত্য হল এই যে এটা মানুষের জন্মগত অধিকার সে তার জীবনকে নিজের মত করে পরিচালিত করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।