আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের পরের দিন

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

আমার বাসার সামনে নতুন এপার্টমেন্ট উঠছে। সারাদিন ধুমধাম ইট ভাঙা ম্যাশিন চলছে। রাস্তা ধুলা, কাদা আর কাঁকরে ভরে থাকে সারাদিন। এর ভেতরেই গভীর রাতে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলে, অসহনীয় পরিস্থিতি। প্রতিদিনই দেখা হয় এদের সাথে, বাসা থেকে বের হওয়ার সময়েও দেখা হয়।

বাসায় ফেরার সময়ও দেখা হয়। একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাদের সাথে, বিশেষত পিচ্চির কারণেই, সে যতবার দোকানে যায় ততবারই টাটা বাই বাই আবার দেখা হবে আল্লাহ হাফেজ করে এবং একই ভাবে বাসা ফেরার সময়ও একই ভাবে বিদায়সম্ভাষণ জানিয়ে যায়। ঈদ আসছে, ঈদের কেনাকাটা করবার অনীহা থাকলেও কিছু কিছু কেনাকাটা করতেই হয়। তাদের সামনে দিয়ে হাতভর্তি ব্যগ নিয়ে ঘরে ঢুকতেও লজ্জা লাগে। অবশ্য তারা এইসব সামাজিক অনিয়মকে নিয়তি মেনেই জীবন যাপন করে।

ঈদের কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই নির্মানাধীন এপার্টমেন্টের দারোয়ান হঠাৎ করেই সালাম ঠুকে দাঁড়ালো। স্যার ঈদের বকশিশ দিবেন না? আমি বিব্রত হই, মূলত স্যার সম্বোধনে। এবং পরবর্তী বিষয়টা বকশিশ দেওয়ার পরিমাণ নিয়ে সংশয় থাকবার কারণে। মূলত কত টাকা আদতে বকশিশ হিসেবে প্রাপ্য এটাও আমি জানি না। তাদের ঈদের কাপড় দিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই, ঈদে তাদের দেওয়ার মতো কি আছে আমার? সামান্য কয়েকটা টাকা দিতে পারি, অপর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সহায়তায় নিজের দীনতাই প্রকাশ পাবে শুধু।

পরিমাণ নিয়ে একটা লজ্জা ছিলোই এরপরও কোনো মতে তার হাতে টাকা দিয়েই পালিয়ে আসি লজ্জায়। আসবার সময় মনে হলো এদের ঈদের দিন সামান্য খাওয়ালে খুব একটা খারাপ হতো না। তবে নিজস্ব ভাবনাটা নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখি। বাসায় বললে এর প্রতিক্রিয়া কি হবে ভেবে পাই না। আমরা ঈদের দিন সদলবলে বাইরে যাই, সম্পূর্ণ আপার্টমেন্টের খাঁচায় বসে থাকে ৩জন মানুষ।

১২ ঘন্টা করে ডিউটিতে থাকা দুই দারোয়ান আর একজন বৃদ্ধ মানুষ। তিনি নিয়মিতই রোজা রেখেছেন, এবং যতদিন দেখেছি তিনি কর্তব্যরত শ্রমিকদের ইসলামী জ্ঞান বিতরণ করছেন। তাকে কর্মরত শ্রমিকেরা নিজেদের ইসলামের অনুভুতি প্রকাশ এবং কর্তব্যাদি নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছিলো। ঈদের আগের দিনই সব শ্রমিক চলে গেছে। তারা তিন জনই এখন সেখানে থাকে।

তাকে একটা স্যান্ডো গেঞ্জী পড়ে এদিকে ওদিকে ঘুরতে দেখি। হাতে বড় একটা মেহেদীর গোল্লা এঁকেছেন তিনি। সদ্যধোয়া লুঙ্গী এবং গেঞ্জীতে তাকে দেখে আমি বন্ধুদের বাসায় যাই। আড্ডা দেই সাজানো ড্রইংরুমে। একটা ড্রইংরুম সাজাতেই এই ছেলে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা খরচ করেছে।

নিজের দারিদ্রের হীনমন্যতায় ভুগে চলে আসি। গত রাতে যখন ফিরলাম তখনও তাদের সাথে দেখা হলো, অথচ বলতে পারলাম না, আপনারা একদিন আমাদের বাসায় এসে খাবেন। ঈদের আগে আগে সমর্থ মুসলিমদের ফিতরা দেওয়ার প্রথা আছে। মূলত এমনই এক কারণে যেনো সবার উনুনেই ভাতের গন্ধ পাওয়া যায়। সবাই যেনো অন্তত বছরকার এই দিনটাতে ভালোমন্দ কিছু খেতে পারে।

কিছু উৎসব তাদের জন্যও থাকুক, ইসলামের এই গোত্রীয় উদযাপনের প্রক্রিয়াটি সামাজিক উৎসবে সবার অংশগ্রহন নিশ্চিত করে। ঠান্ডা লেগে কাহিল অবস্থা, তার উপরে গতরাতে অনেকক্ষণ জেগে ছিলাম, দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করবার পরে আবারও ঘুমে মাতাল। বাসায় কোনো অতিথি আসছে না টবে ভালোই রান্না হচ্ছে। আমি কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যায়।

এমন কি সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হলেও ঘরে অতিথির দেখা নেই। আম্মাকে বললাম, মা কেউ আসবে না বাসায়? না। তাহলে এত রান্না করলা? ঐ নীচের দারোয়ানরা একদিন খাইতে চাইলো পোলাও। ওদের জন্যই রান্না করলাম। দুপুরে খাইছে ওরা।

আমি নিজস্ব লজ্জা থেকে মুক্তি পেলাম, অন্তত মুখ ফুটে তারা বলেছে বলেই ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও এমনটা হওয়া উচিত ছিলো না। গৃহস্বামী হিসেবে আমাদেরই তাদের বলবার কথা ছিলো। তবে অনুরোধ যে পক্ষ থেকেই আসুক না কেনো আমার গোপন ইচ্ছাটা পুরণ হয়েছে। এটাই বোধ হয় এবারের ঈদের আনন্দ আমাদের জন্য যারা মফস্বলে না গিয়ে ঢাকার অনাত্মীয় পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.