কেএসআমীন ব্লগ
ট্রাফিক আইন মেনে চলুন বলা হয় আমাদের দেশে প্রায়ই। কিন্তু দেশে কোন কার্যকর ট্রাফিক আইন আছে কিনা আমার তা জানা নেই। আমি ৫টি পরীক্ষা দিয়ে মীরপুর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করেছি। আমি জানি না ট্রাফিক আইন কত রকম ও কি কি? দেশের ৮০% ড্রাইভিং লাইসেন্সই নাকি ভূয়া। ঘরে বসেই কোন পরীক্ষা না দিয়েই পাওয়া যায় এই সহজলভ্য লাইসেন্স।
এটা আমার কথা নয়। বিআরটিএ'র রিপোর্টের বরাত দিয়ে পত্রিকায় এমনটি প্রকাশিত হয়েছে। যা হোক, বর্তমানে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ যেভাবে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের শাস্তি দিয়ে থাকেন তা হচ্ছে গাড়ির বিরুদ্ধে মূলত "মামলা" রজু করা। এটা হাস্যকর, কোন কার্যকর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা নয় এটা। ১৯৮৩ সালের ট্রাফিক আইনের কিছু ধারা আছে দাঁতভাঙ্গা ইংরেজীতে।
অনেক ক্ষেত্রে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে যেগুলো ট্রাফিক পুলিশই পালন করতে অপারগ।
ঢাকা সহ দেশের প্রধান শহরগুলি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ক্রমাগত। অথচ এটি দেখার বা বোঝার কেউ নেই এখানে। একটি কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট ট্রাফিক আইন দেশে থাকা অত্যাবশ্যক। ট্রাফিক পুলিশের বদলে যদি একটি প্রফেশনাল বডি দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তবে সবচেয়ে ভাল ফল লাভ সম্ভব হতো।
পাঁচ হাজার ট্রাফিক পুলিশের বদলে মাত্র ৫০০ যোগ্য বাহিনীই এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন।
কারণ, ট্রাফিক পুলিশরা পুলিশ বিভাগ থেকে বদলী হয়ে আসেন। যানবাহন চলাচল সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা থাকে না এবং আগ্রহও থাকে না। কিছুকাল ট্রাফিক বিভাগে চাকরি করার পর তাদের আবার পুলিশ বিভাগে বদলী করা হয়, ফলে তাদের পক্ষে দক্ষতা প্রদর্শনের কোন সুযোগ থাকে না।
দেশের সব যানবাহনের একটি কম্পিউটার ডাটাবেস তৈরী করতে হবে।
দশ লাখ গাড়ি ও চালকের লাইসেন্সের ডাটাবেস তৈরী মোটেই কঠিন কাজ নয়। ৮ কোটি মানুষের ডাটাবেস আমরা তৈরী করতে পেরেছি খুব কম সময়ে। এটা কোন কাজে আসবে কিনা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে যানবাহন ও চালকের ডাটাবেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য ভান্ডার। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এটা অত্যন্ত ভাল ফল বয়ে আনবে।
ল্যাপটপ কম্পিউটারে আঙুলের হালকা স্পর্শেই নির্দিষ্ট চালক ও গাড়ির যাবতীয় তথ্য একজন ট্রাফিক পুলিশ পেতে পারবেন সহজে ও তাতে ট্রাফিক অপরাধগুলো রেকর্ডভূক্ত করতে পারবেন।
ক, খ, গ- এই তিন রকমের অপরাধ হিসেবে ট্রাফিক অপরাধকে শ্রেণীভূক্ত করা যায়। আবার গাড়ির ইঞ্জিনের সিসি'র উপরেও 'এ', 'বি', 'সি'- এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত থাকবে। একই সাথে, প্রত্যেকটি শ্রেণীর অপরাধের আলাদা আলাদা "পয়েন্ট" এর ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, 'ক' শ্রেণীর অপরাধ করলে ১ পয়েন্ট।
'খ' শ্রেণীর পয়েন্ট ২ আর 'গ' শ্রেণীর পয়েন্ট ৩।
গাড়ির ইঞ্জিনের ক্যাপাসিটি/আকার অনুযায়ী এই জরিমানার পরিমানে তারতম্য হবে। ১০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে "ক" শ্রেণীর অপরাধের জন্য ১০০ টাকা, "খ" শ্রেণীর জন্য ২০০ টাকা ও "গ" শ্রেণীর অপরাধের জন্য ৩০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা যায়।
১০০০ সিসি'র বেশী ও ১৬০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে "ক" শ্রেণীর অপরাধের জন্য ১৫০ টাকা, "খ" শ্রেণীর জন্য ৩০০ টাকা ও "গ" শ্রেণীর অপরাধের জন্য ৪৫০ টাকা জরিমানা ধার্য করা যায়। ১৬০০ সিসি'র বেশী গাড়ির ক্ষেত্রে "ক" শ্রেণীর অপরাধের জন্য ২০০ টাকা, "খ" শ্রেণীর জন্য ৪০০ টাকা ও "গ" শ্রেণীর অপরাধের জন্য ৬০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা যায়।
কোন এক মাসে চালকের অর্জিত মোট পয়েন্ট "৭" বা বেশী হলে, ঐ সময় থেকে পরবর্তী মাস সেই চালক গাড়ি চালানোর জন্য নিষিদ্ধ হবেন। তৃতীয় মাসে আবার গাড়ি চালানোর জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। দ্বিতীয় মাসে গাড়ি চালানোর যোগ্যতা অর্জন করতে হলে পূর্ববর্তী মাসের মোট জরিমানার দ্বিগুন অর্থ জরিমানা হিসেবে প্রদান করতে হবে।
দুই ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য। এক হচ্ছে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের উপর শাস্তি।
দুই হচ্ছে চালকের লাইসেন্সের উপর শাস্তি। কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় প্রকার শাস্তিও প্রযোজ্য হতে পারে। চালকের দোষে বা ট্রাফিক আইন অমান্য জাতীয় যেসকল অপরাধ হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ধার্য করা হয়।
সরকার বিভিন্ন শ্রেণীর ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অপরাধের জরিমানা বিভিন্ন সময়ে পুননির্ধারণ করবে।
ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়ির আইন ভংগের ঘটনাগুলো রেকর্ড করে রাখা যায়।
ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৫/৬টি ক্যামেরা সক্রিয় থাকলেই যথেষ্ট। ১৫ সেকেন্ডের একটি 'ভিডিও শট'ই একটি গাড়ির আইন ভংগের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে। একটি ভিডিও ক্যামেরার ডিভিডি'তে অন্তত ৩০টি অপরাধের সচিত্র ক্লিপ তুলে রাখা যায় ও সে অনুযায়ী গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের বিরুদ্ধে জরিমানা করা যায়। ভিডিও ক্লিপে তারিখ ও সময় সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ রাখা যাবে। এতে গাড়িতে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সময় কোন্ চালক গাড়িতে ছিলেন তা গাড়ির মালিক সহজের অনুধাবন করতে পারবেন।
খসড়াটির ধারাগুলি নিম্নরূপঃ
১) ট্রাফিক আইনের সর্বশেষ সংস্করনের বই/পুস্তিকা চালকের সংগে থাকতে হবে। চালক সম্পূর্ণ বইটি পড়ে শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করবেন। এই সাক্ষরের অর্থ হচ্ছে এই যে, চালক সবগুলি আইনের ধারা পড়েছেন ও শপথ করছেন যে, তিনি তা মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। এই আইন অমান্য করলে "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে।
২) গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার গাড়ির নাম্বার প্লেটের পাশাপাশি গাড়ির পেছনে গাড়ির বডিতে স্থায়ীভাবে লিখতে হবে।
স্পষ্ট অক্ষরে কমপক্ষে দেড় ইঞ্চি উচ্চতার টাইপ দিয়ে এই রেজিঃ নং লিখতে হবে। আইন অমান্য করলে "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে।
৩) রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি রাস্তায় নামালে চালকের লাইসেন্সের উপর "গ" শ্রেণীর অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন হালনাগাদ না থাকলে, ইন্সুরেন্স না থাকলে বা হালনাগাদ না থাকলে, বা রুট পারমিট বা ফিটনেস না থাকলে বা হালনাগাদ না করা থাকলে 'ক' থেকে 'গ' পর্যন্ত হারে শাস্তি হতে পারে। ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক জরিমানা করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গাড়ির ডকুমেন্ট হালনাগাদ না করলে পরবর্তীতে আবারও ট্রাফিক পুলিশ গাড়িকে জরিমানা করবেন।
চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন - উভয়ের উপরই এই জরিমানা ধার্য হতে পারে।
৪) ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের উপর "গ" শ্রেনীর অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে।
৫) গাড়ি থামাতে হলে বা পার্কিং করতে হলে অবশ্যই রাস্তার সংগে প্যারালাল করে ফুটপাথ থেকে সর্বোচ্চ "এক ফুট" দূরে গাড়ি রাখতে হবে। একফুটের বেশী দূরত্ব হলেই আইন অমান্যকারী হিসেবে "ক" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে। পার্কিং নিষেধ বা থামানো নিষেধ - এমন স্থানের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।
৬) কোন গাড়ি পার্কিং করা অবস্থায় বা থামানো অবস্থায় এর পাশে ডাবল প্যারালাল হিসেবে কোন গাড়ি রাখা যাবে না বা থামানো যাবে না। আইন অমান্য করলে "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে।
৭) পার্কিং বা থামানো নিষেধ, এমন স্থানে পার্কিং করলে বা গাড়ি থামালে 'ক' শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে। গাড়ি থামানো ফলের যদি অন্য গাড়ির চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয় তবে 'খ' শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে। ক্ষেত্র বিশেষে এটা 'গ' শ্রেণীর অপরাধও হতে পারে।
৮) একান্ত প্রয়োজন ছাড়া যেকোন স্থানে হর্ণ বাজানো নিষেধ। সামনের গাড়ি বা পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষন করার একান্ত প্রয়োজন হলে প্রথমে "হেডলাইটের বীম" দ্বারা করা যেতে পারে। অযথা হর্ণ বাজালে ''ক' শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে। অননুমোদিত শক্তিশালী (নিউমেটিক) হর্ণ ব্যবহার করলে 'খ' শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
৯) গাড়ির চালক ও চালকের পাশের যাত্রীকে অবশ্যই সীটবেল্ট পড়া অবস্থায় গাড়ি চালাতে হবে।
অন্যথায় 'ক' শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
১০) গাড়িতে অতিরিক্ত নিরাপত্তার নামে বা সৌন্দর্য বর্ধনের নামে কোন "বাম্পার" লাগানো যাবে না। অনাকাঙ্খিত সংষর্ষে অন্য গাড়ির বেশী ক্ষতি হয় এমন কোন লোহার এংগেল বা ধাতব পাত গাড়ির বডিতে ব্যবহার করা যাবে না। এটা "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
১১) কোন যাত্রীবাহী বাস বা অনুরূপ বাহনের চালকগণ যাত্রী উঠানামার সময় "৫" ও "৬" নং ধারা সতর্কতার সাথে মেনে চলবেন।
যাত্রীগণ যেন ফুটপাত থেকে সরাসরি গাড়িতে উঠতে পারেন সে ব্যবস্থাও করতে হবে। অন্যথায় "গ" শ্রেণীর অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।
১২) গাড়িতে দুইটি লুকিং মিরর, ১টি অভ্যন্তরীন লুকিং মিরর, ৪টি ইন্ডিকেটর লাইট, ২টি হেড লাইট, ২টি ব্রেক লাইট, ব্যাকগিয়ার লাইট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম কার্যকর থাকতে হবে। এর কোন একটি না থাকলে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে। একাধিক সংখ্যক ইন্সট্রুমেন্ট বা উপাদানের অভাব থাকলে জরিমানার পরিমান বাড়বে।
যেমন, "২খ", "৩খ" পরিমান জরিমানা হতে পারে।
১৩) মাত্রাতিরিক্ত কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী গাড়ি "গ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে। বিআটিএ সময়ে সময়ে এই মাত্রা নির্ধারণ করবে।
১৪) ফিটনেস সম্পর্কিত বা সংশোধিত হওয়ার মত অপরাধ ধরা পড়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তা সংশোধন করতে হবে। এক সপ্তাহ অতিক্রম করলে "২খ" পরিমান জরিমানা করা হবে।
এভাবে একমাস অতিক্রম করলে "৩খ" পরিমান জরিমানা হবে। এভাবে প্রতি মাসের জন্য জরিমানার পরিমান বাড়তে থাকবে।
১৫) বেপরোয়া গাড়ি চালালে বা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে "গ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে।
১৬) গাড়ি রাস্তায় বের করার পূর্বে অবশ্যই চালক এর ফিটনেস পরীক্ষা করবেন। যদি রাস্তায় গাড়ি কোন কারণে নষ্ট হয়, চলাচলের অনুপযোগী হয় বা ইঞ্জিন স্টার্ট না নেয় তবে এক্ষেত্রে "গ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে।
গাড়ি দ্রুত রাস্তা থেকে না সরালে বা এর ফলে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হলে জরিমানার পরিমান "২গ" বা "৩গ" পর্যন্ত হতে পারে। প্রাইভেট রেকার সার্ভিস ডেকে গাড়িকে সরিয়ে ট্রাফিক চলাচলের উপযোগী করে দিতে হবে।
১৭) শহরের পাবলিক বাস-এ সামনে ও পেছনে মোট দুটি দরজা থাকবে। এই দরজাগুলি গাড়ির চালক কর্তৃক দূর-নিয়ন্ত্রিত ভাবে কাজ করবে। কেবল চালকের ইচ্ছায় দরজা খুলবে ও বন্ধ হবে।
বাস রাস্তায় চলা অবস্থায় দরজা কোন অবস্থাতেই খোলা যাবে না। কেবলমাত্র পার্কিং করার পরই চালকের ইচ্ছায় দরজা খুলবে। গাড়ি চলার আগ মুহূর্তে চালক দরজা বন্ধ করবেন। সামনের দরজা দিয়ে যাত্রীরা গাড়িতে উঠবেন ও পেছনের দরজা দিয়ে গাড়ি থেকে নামবেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে গন্তব্যস্থলে বা স্টপেজের পার্কিং-এ পৌছানো ছাড়া গাড়ির দরজা খোলা যাবে না।
একই ভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্টপেজ বা গন্তব্য ছাড়া অন্য কোথাও দাড়িয়ে বা চলন্ত অবস্থায় কোন যাত্রী গাড়িতে নেয়া যাবে না। এরকম ক্ষেত্রে "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
১৮) যেখানে 'লেন' মার্ক করা আছে সেখানে অবশ্যই গাড়িগুলি লেন অনুযায়ী চলবে। অপেক্ষাকৃত দ্রুতগামী গাড়িগুলি ডানদিকের লেন দিয়ে চলাচল করবে আর ধীর গতির গাড়িগুলো বামদিক দিয়ে চলবে। লেন পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই ইনডিকেটর বাতি জ্বালাতে হবে।
কারণ ছাড়া বারে বারে লেন পরিবর্তন করা যাবে না। এর ব্যতিক্রম হলে "ক" শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
১৯) কোন একমুখী রাস্তায় যদি বিপরীত দিক থেকে কোন গাড়ী চলাচল করতে চায় তবে ট্রাফিক সিস্টেমের ব্যত্যয় ঘটে থাকে। এরকম ক্ষেত্রে "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গণ্য হবে।
২০) যেখানে ইউ-টার্ন নেয়ার ব্যবস্থা আছে ও সাইন দেয়া আছে, কেবলমাত্র ঐসকল স্থানেই গাড়ির ইউ-টার্ন নেয়া যাবে।
অননুমোদিত স্থানে ইউ-টার্ন নেয়া যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রয়োজনে ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ইউ-টার্ন নিতে হবে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। অমান্য করলে "খ" শ্রেণীর ট্রাফিক অপরাধ বলে গন্য হবে।
২১) ডানদিকে মোড় নিতে হলে গাড়িকে ডানদিক ঘেষে একটি লাইনে ডানদিকে যেতে হবে বা সিগনালে অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বাকি সব গাড়িকে বামদিকে বা সোজা চলাচলের জন্য উপযুক্ত রাখতে হবে।
একাধিক লেন দখল করে এটাকে বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। এরকম ক্ষেত্রে "ক" শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
২২) গাড়ি বামদিকে মোড় নেয়ার ক্ষেত্রে কোন গাড়ি আশেপাশে পার্কিং করতে পারবে না বা ধীরগতি সম্পন্ন হতে পারবে না যাতে গাড়ি চলাচলে বাধাগ্রস্থ হয়। এরকম অপরাধ "খ" শ্রেণীর অপরাধ বলে গন্য হবে।
২৩) দুটো গাড়ির মধ্যে যদি সংঘর্ষ হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এই দুর্ঘটনার জন্য যে গাড়ির চালকই দায়ী হোক না কেন, এ নিয়ে কোন রকম বাকবিতন্ডা করা যাবে না।
প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, দুটো গাড়িকে রাস্তার পাশে এমনভাবে রাখা যাতে অন্য গাড়ির চলাচলে কোন অসুবিধা না হয় বা বাধাগ্রস্থ না হয়। তারপর উভয়ের দায়িত্ব হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ ডাকা। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ উভয় গাড়ির ইন্সুরেন্স পেপারে সাক্ষর করবেন যাতে ইন্সুরেন্স কোম্পানী থেকে ক্ষতিপূরন পাওয়া সহজতর হয়। ট্রাফিক পুলিশ যদি প্রত্যক্ষদর্শীর সহায়তায় প্রকৃত দোষী চালককে সনাক্ত করতে পারেন তবে অপরাধের ধরন অনুযায়ী 'ক' থেকে 'গ' পর্যন্ত যেকোন পরিমান জরিমানাও করতে পারেন।
২৪) গাড়ি চালনার সময় কোন যাত্রী বা পথচারী যদি সামান্য আহত হয় তবে আগের ধারা অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে তা মিটাতে হবে।
তা না হলে ট্রাফিক পুলিশ ডেকে সমাধান করতে হবে। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ চালকের অপরাধ অনুধাবন করতে পারলে জরিমানাও করতে পারেন।
২৫) কোন গাড়ি কর্তৃক যদি দুর্ঘটনার ফলে যদি কোন যাত্রী বা পথচারী আহত/নিহত হয় তবে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে চালককে। অন্যথায় 'গ' পরিমাণ বা তারচেয়ে বেশী পরিমানেও জরিমানা হতে পারে।
২৬) কোন গাড়ি বা চালকের যদি অপরাধের মাত্রা খুব বেশী হয় (যেমন বছরে ১৪ পয়েন্ট বা তারচেয়ে বেশী) তাহলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ চালকের লাইসেন্স সীজ করতে পারেন ও তা বাজেয়াপ্ত করতে পারেন।
একইসাথে গাড়িও সীজ করতে পারেন।
২৭) যদি কোন গাড়ি বিপদ্জ্জনক ভাবে চলাচল করে বা তার কন্ডিশন খুব খারাপ হয় যা জননিরাপত্তা বা যানচলাচলের জন্য হুমকি, তাহলে গাড়ি ও চালককে জরিমানার পাশাপাশি কর্তর্বরত ট্রাফিক পুলিশ গাড়িকে সীজ করতে পারেন।
২৮) প্রতিটি গাড়ি কমপ্রিহেনসিভ ইন্সুরেন্সের আওতায় বৈধ কোম্পানী থেকে বীমাকৃত হতে হবে। দুই গাড়িতে সংঘর্ষ হলে উভয়কেই যার যার রেসপেকটিভ বীমা কোম্পানী থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
২৯) গাড়ি মেরামতের কাজ অনুমোদিত ওয়ার্কশপ বা গ্যারেজ থেকে করতে হবে।
ওয়ার্কশপে সামনে ও রাস্তার উপর কোন ধরনের মেরামতের কাজ করা "খ" ধরনের অপরাধ। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ এ ধরনের ওয়ার্কশপকেও জরিমানা করতে পারেন।
৩০) সামরিক বাহিনী, দূতাবাস বা অনুরূপ বিশেষায়িত কোন বিভাগের যানবাহনের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য থাকবে এবং অপরাধকারী গাড়ির নাম্বার ও চালকের তথ্য বিআরটিএ কর্তৃক যথাযথ বিভাগে পাঠিয়ে দেবেন।
৩১) দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি ছাড়া বাকি সকলপ্রকার যানবাহন (রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ছাড়া) "যানবাহনের চালক ও অপরাধের ডাটাবেস"-এর আওতায় আসবে ও উপরোক্ত আইনের আওতায় পড়বে।
উপরের প্রতিটি আইনের ধারা আমি ভালভাবে পড়েছি ও বুঝতে পেরেছি।
আমি এই আইন মেনে চলতে বাধ্য থাকবো। আইন অমান্য করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের শাস্তিও গ্রহন করতে রাজি আছি।
চালকের নাম : ************************
চালকের স্বাক্ষর : **********************
ড্রাইভিং লাইসেন্স নং : *********************
জাতীয় আইডি নং : ***********************
গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নং : **********************
তারিখ : **************
একটি গাড়ি মালিক ছাড়াও একাধিক চালক গাড়িটি চালাতে পারেন। সেক্ষেত্রে মালিকের অনুমতিক্রমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সাথে চালকের লাইসেন্সকে "সংযুক্ত" করতে হবে। এর জন্য গাড়ির মালিক নির্ধারিত "চালক সংযুক্তি ও বাতিল " ফরমে নির্দিষ্ট ফী প্রদান সাপেক্ষে বিআরটিএ-তে আবেদন করবেন।
যদি কোন চালককে গাড়ির মালিক বাদ দিতে চান তাহলেও একই পদ্ধতিতে "চালক সংযুক্তি ও বাতিল" ফরমে আবেদন করতে হবে।
নির্ধারিত অনলাইন ব্যাংকে জরিমানার টাকা জমা দিতে হবে। বাৎসরিক ফিটনেস, রুট-পারমিট, ট্যাক্স-টোকেন সংগ্রহের সময় সমুদয় বকেয়া জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। গাড়ির সাথে সংযুক্ত চালকদের উপর ধার্য জরিমানাও (যদি থাকে) একই সময়ে পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় বাৎসরিক ট্যাক্স-টোকেন প্রদান করা হবে না।
গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপ স্থাপন করতে হলে বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
বিআরটিএ'র গাইডলাইন অনুযায়ী এই ওয়ার্কশপ বা গ্যারেজ স্থাপন করতে হবে। ওয়ার্কশপ লাইসেন্স নিয়মিত রিনিউ করতে হবে। গাড়ি মেরামতের দক্ষ লোকবল, যন্ত্রপাতি, পর্যাপ্ত জায়গা ইত্যাদি দেখে বিআরটিএ ওয়র্কশপকে লাইসেন্স প্রদান করবে।
গাড়ির চালক নিয়োগের সময় নিয়োগকর্তা চালকের "অপরাধ রেকর্ড" সহজেই বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। চালক এর আগে কোন কোন গাড়ি চালিয়েছেন এবং কী কী অপরাধ সংগঠিত করেছেন, তা সহজেই নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন।
এটি এড়ানোর জন্য চালকের সচেতনতা বাড়বে ও অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে।
(এটি একটি খসড়া রূপ মাত্র (প্রায় ৯০% সমাপ্ত বলা যেতে পারে)। বাকি ধারাগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তীতে সংযোজিত করা যেতে পারে। পাঠকের মতামত চাই)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।