কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
ছোটবেলায় আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কবে ঈদ আসবো...বছরের কোটাভূক্ত দুইটা নতুন জামাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা তো এই ঈদের দিন দুইটাতেই। ঈদের দিনের স্বাধীনতার কথা আজো মনে পড়ে। সকালবেলা ঘুম থেইকা উইঠা ঠান্ডা পানিতে গোসল করনের লেইগা মায়ের ঝাড়িময় তাগীদ বাদে আর বাকী পুরাটা সময়ই একান্ত নিজের হইতো...ঈদের নামাজ অন্তঃপ্রাণ ছিলাম ঐ সময়টায়। বছরের এই সময়টাতেই বয়সের ভিন্নতা থাকলেও মুরুব্বী বাপ-চাচাগো লগে এক কাতারে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়তে পড়তে নিজেরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হইতো। এই একটা দিনেই আমার বস্তিবাসী বন্ধু রহমতের লগে কোলাকুলি কইরা চটপটির দোকানে যাওনে কোন বাধা ছিলো না।
রহমত তার স্বভাবজাত গালাগালি কইরাই লগে থাকবো এইটা জাইনাও মায়ের মনটা ঈদের দিনে কোমল থাকতো।
সারাবছর অভাবের জ্বালা যেমনেই থাকুক না ক্যান ঈদের দিনে বাড়িতে আয়-ব্যয়ের হিসাব না কইরা য্যান পোলাও কোরমা রান্ধা হইতো লিটারেলি...মায়ের হাতের সেমাই খাইয়া যখন রহমত আপনাসেই প্রশস্তি গাইতো,"আব্বে হালায় তর মায়ে পুরা বিশ্বকাপ!" শুইনা আমি ভয়ে থাকলেও, এই দিনে মায়ের মুখের হাসি আমারে বিভ্রান্ত করছে আজীবন...বাড়িতে ধর্মকর্মের অনেক চাপাচাপি না থাকলেও সংস্কৃতির চাপটা ছিলো নিয়মমতোন...ঈদের দিনে আমরা অজান্তেই অনেক ধার্মিক হইতাম...আর সংস্কৃতির মায়রে বাপ!
আমার বাপে পুরান ঢাকার কুট্টি হওনে একটা ডিসিপ্লিন মাইনা চলতো তখন। এক ঈদের পরেই টাকা জমাইতো পরের ঈদের আতিশয্য মেইনটেইন করনের তাগীদে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ধর্মবোধ আর পারিবারিক আবেগের যেই মন্থন ছিলো তার হৃদয়ে...কষ্টের নীলকন্ঠ নিয়া তার নিরাবেগ চোখে অভিনয়টারে আমরা ঐ বয়সে একদম বুঝি নাই। ঈদের দিনের যেই আবশ্যিক অভিনয়ের খেলা তারে এখন জীবনের এই মধ্যগগনে আইসা উপলব্ধ করি।
এতো কিছু মাথায় আইসা ভীড় করে যখন খবরের কাগজে গারমেন্ট শ্রমিকগো সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সুশীল শহুইরা মধ্যবিত্তরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকরনে রত হন বিভিন্ন মাধ্যমে। গারমেন্ট্স শ্রমিকরা ঈদের আগে বেতনভাতা পরিষোধের দাবীতে শহরের রাস্তায় গাড়ি ভাঙচূড় করনের কালে স্বচ্ছল মধ্যবিত্তরা আক্রান্ত হইছেন তাগো রোষের...আমি এই রোষের মধ্যে যৌক্তিকতা খুঁজতে চাই...কিন্তু কোন যুক্তিতেই তার সঠিকতা মানতে পারি না। কেবল আবেগ দেখি. একদল ভাগ্যাহত মানুষের...যারা তার সন্তানের লগে অভিনয় করতে চায় না, যারা অন্য সকলের মতোন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে চায়...স্বচ্ছল মধ্যবিত্তগো শংকায় ফালানো ছাড়া তাগো কবে কি পাওনা আদায় হইছে!?
মুসলমানি সংস্কৃতিতে ঈদের গুরুত্ব অপরিসীম। ধর্মীয় অনেক নিয়ম-নীতি, বিধিনিষেধের মধ্য দিয়া ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানেরা ঈদের দিনে আনন্দময়তায় মাতে। কিন্তু এইসব মুসলিম শ্রমিকেরা নীরবে বেতন ভাতা না পাইয়া দুঃখী মুখটারে আনন্দের মুখোশে ঢাইকা ঈদের দিন ঘুইরা বেড়াইবো...আমরা কথিত উপরতলার মানুষেরা তাগো সাময়িক প্রশ্রয় দিয়া কমু এই দিন আনন্দের দিন! এই দিন সহমর্মিতার দিন! আমাগো চাওয়াটারেও যৌক্তিক ঠেকতেছে কি না সেই dillemaতে আছি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।