আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেডিটেশন এবং আমার কথা

"...কোন মানুষকেই তার কাজের জন্য বেশি প্রশংসা বা বেশি নিন্দা করা উচিত নয়। কারণ আমরা সকলেই অবস্থা, পরিবেশ, শিক্ষা, অভ্যাস, বংশগত ধারা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল..." -Lincoln

মেডিটেশন নিয়ে আমার আগ্রহ বরাবরের। ক্লাস নাইন -এ পড়ার সময় বিদ্যুৎ মিত্রের “আত্মসম্মোহন” বইটি হাতে পাই, মনে হল আলাদিনের চেরাগ পেয়েছি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি দিল্লী বহুদূর। নিরলস চর্চা আর সীমাহীন ধৈয্যের বিকল্প নেই।

তারপরও বইটি যথেষ্ট কার্যকরি। এটা নিশ্চিত। “সিলভা মেথড”-এর বই-পুস্তক পড়ে মনে হল সামান্য হেরফের ছাড়া এটাও প্রায় একই জিনিস। “আত্মসম্মোহন” বইটি অনেকটাই সিলভা মেথডের অনুকরনেই লেখা। ইন্ডিয়ান একটা বই দেখলাম।

মূলসুর আসলে একই। “নিজের সাথে নিজের কথা বলা। ” মহাজাতকের “কোয়ান্টাম মেথড” (প্রায় একই জিনিস) বইটি হাতে পেয়ে আরো আহলাদিত হলাম। আগ্রহের অতিশয্যে কোর্সও করে ফেললাম। আমি কিন্তু উপকার পেয়েছি।

পাশাপাশি ইতিবাচক-নেতিবাচক মতামতও পেয়েছি। যারা কোর্সটি করেছেন, শেষ পর্যায়ের ‘মাইন্ড গেম’ নামের মেডিটেশনটি তাদের সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছে। আরো একটা বিষয়, একটা মেডিটেশন আছে যেখানে শিক্ষার্থীদের মেডিটেটেড লেভেলে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০ বছর.. ১০.. বছর.. ৫ বছর... এমনি করে শিশু বানিয়ে মায়ের কোলে চলে যেতে বলা হয়। ..এখানেও মজার ঘটনা ঘটে।

হল ভর্তি শিক্ষনার্থীরা ডুকরে কেঁদে ওঠেন। বড়ই আজব। সেই কান্না তারা সচেতন অবস্থায় ফিরে এসেও থামাতে পারে না। বড়ই হৃদয় বিদারক। মেয়েদের হেঁচকি সামলে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

হলের পরিবেশ থমথম করতে থাকে। আমরা মেডিটেশন সম্পর্কে অনেকেই জানি। অনেকে আছেন খুবই ভাল জানেন। তাদের কাছে লেখাটাকে আজাইরা প্যাঁচাল বা জাবর কাটাকাটি ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। যারা মূলত বিগিনার এবং মেডিটেশন বিশেষতঃ শিথিলায়ন নিয়মিত চর্চা করতে চান বেসিক্যালি তাদের জন্য আমার এই নিবেদন।

তাত্ত্বিক দিক নিয়ে বেশি আলোচনা না করাই ভাল। এতে পারফর্মেন্স কনসাশনেস চলে আসে। 'হল কী হল না। পারলাম কী পারলাম না', এসব। মনের মধ্যে একটা খুঁতখুতানি রয়েই যায়।

তারচেয়ে সরাসরি চর্চায় চলে যাওয়াই ভাল মনে হয়েছে আমার কাছে। মূল লেখাটি ইংরেজিতে যাবে। আমার মনে হয়েছে ইংরেজিতেই লেখাটির অনুধাবন অনেক সহজ হবে। আমার ধারনা ভুলও হতে পারে। আমি রিলাক্সেশন বা শিথিলায়নটাই এখানে আলাপ করলাম।

আমার মজার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমার বস ইঞ্জিনিয়ার মি. রহমান একদিন বললেন আপনার মেডিটেশন ব্যাপারটা কী বলেনতো। আমি তেমন কিছু বলতে পারলাম না। তিনি বললেন আচ্ছা একদিন বাসায় আসেন। গেলাম।

তিনি বললেন, এখন বলুন। আমি বললাম, স্যার আপনি সময় করে একদিন একটা সেশন দিয়ে দেখেন। বুঝিয়ে তেমন কিছু বলতে পারবো না। তিনি বললেন এখনই করি। বলেন কী করতে হবে।

তিনি আমার কথায় টানটান হয়ে শুয়ে পরলেন। মিনিট পাঁচেক পরে আমি বললাম, স্যার আমাকে শুনতে পাচ্ছেন। কোন সাড়াশব্দ নেই। স্যার আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? কোন সাড়াশব্দ নেই। ইতোমধ্যে ভাবী, তার দু'মেয়ে হাজির।

আমাদের ফিসফিসানিতে স্যার নড়েচড়ে উঠলেন। ঘোর লাগা চোখে চারদিক তাকালেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললেন, আপনি বড় বেশি বকবক করেন। ভাবী চা দিতে দিতে বললেন, লিংকন, আপনি জাদু-ফাদু জানেন নাকি। এই কঠিন চিজ আপনার এক কথায় একেবারে চিৎপটাং! আমার রাশভারী বস হো হো করে হেসে দিলেন।

মূল বিষয়টা দম গণনা। শুয়ে পরুন। বসেও করতে পারেন। তবে সটান শুয়ে পরলে ভাল হবে। চোখ বন্ধ করুন।

দম গণনা করুন। আর কিছুই না। সত্যি! আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না। তারাহুরা করবেন না, অস্থির হবেন না। স্নায়ু আপনি শান্ত হয়ে আসবে।

মনের বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলি এমনি বশে আসবে। বাড়তি কিছু করতে হবে না। আমার প্রথম সেশনে আমি আটচল্লিশ বার দম গণনা করতে পেরেছিলাম। আমি অন্যদের কাউকে কাউকে করিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউই অষ্টাশিবারের বেশি গুনতে পারেননি।

আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি আর কেন দম গণনা করেননি। তাদের জবাব মোটামুটি একই। "আর গুনতে ইচ্ছে করে না"। "আর কিছুই করতে ভাল্লাগে না"। "ঐ অবস্থায় থাকতেই ভালো লাগে।

" কেউ কেউ দিব্বি আরামে নাম ডেকে ঘুমিয়েছেন। প্যাঁচাল অনেক হয়েছে। এবার শুরু করি। বলে রাখি এটা কিন্ত কোয়ান্টাম মেথড, সিলভা মেথড বা আত্মসম্মোহন বই থেকে নেয়া নয়। তবে ঐ যে বললাম, মূলসুর কিন্তু একই।

আপনি বিশ্বাস করুন চাই নাই করুন; এখনই একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। “If it is just to reduce stress and help with hypertension and not for self realization, nirvana, or other spiritual quest, all that you need is to sit quietly in any comfortable posture, close the eyes and just be aware of your breath going in and out. Do not attempt to control it, hold it in or any such practice. Just be aware. Curiously, after a few days the breathing becomes longer, and gentler. Do not attempt to control your thoughts either. They will themselves slow down. Five minutes at a sitting twice a day is ample. If you feel extravagant raise to eight minutes. Do not feel guilty missing a few sessions if it happens so.” (মূল বিষয়টা দম গণনা। নিরিবিলি একটা পরিবেশ বেছে নিন। শুয়ে পরুন। বসেও করতে পারেন।

তবে সটান শুয়ে করলে ভাল হবে। চোখ বন্ধ করুন। দম গণনা করুন। আর কিছুই না। সত্যি! আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না।

তারাহুরা করবেন না, অস্থির হবেন না। স্নায়ু নিজে নিজেই শান্ত হয়ে আসবে। মনের বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলি এমনি এমনি দূর হয়ে যাবে। মনে প্রশান্তিভাব আসবে। বাড়তি কিছু করতে হবে না।

কোন কিছুই নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করবেন না। না দম, না চিন্তা। শুধু দমের আসা যাওয়া খেয়াল করুন বা অনুভব করুন। মনের চোখটা নাকের ডগায় রাখুন। দম স্বাভাবিক আসা-যাওয়া করবে।

যদি আপনার শ্বাস-প্রঃশ্বাস দ্রুত হয় হোক। যদি ধীর হয় হোক। কোন ক্ষতি নেই। এ নিয়ে চিন্তিত হবেন না। আপনি চোখ বুজে দম গণনা করতে থাকুন।

আর একটা কথা -হবে কি হবে না, পারবো কি পারবো না বা হচ্ছে কি হচ্ছে না, পারলাম কি পারলাম না -এসব চিন্তা একদম করবেন না। পাঁচ মিনিটের সেশন, প্রতিদিন দু'বার করবেন। বেশিও করতে পারেন। পড়া মাত্রই একবার পরীক্ষা করে দেখুন)। এবার শুয়ে পড়ুন।

সটান (ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে দোষারোপ করবেন না) হেপি মেডিটেশন। (ইংরেজিতে লেখাটুকু ইউনুস খানের একটা পোস্টে মন্তব্য আকারে দিয়েছিলাম)।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।