https://www.facebook.com/tanvir.mh সিগারেটটা ধরছেনা। এতো গরম বাইরে তবু ম্যাচের আগুন থেকে সিগারেট জ্বলছেনা। ম্যাচ ছাড়াই ধরে যাওয়া উচিত ছিল। রাশার এই জন্য মেজাজ একটু খারাপ। বাসা থেকে এই সাজ সকালে নিচে নামা একটু নিকোটিন শরীরে ঢুকাতে,তবু যদি না পারা যায় তবে মেজাজ স্বাভাবিকভাবেই খারাপ হবে।
সামনের মোড়ে মেরাজ ভাই কে দেখা যাচ্ছে হাতে সিগারেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার কাছে যেতেই এক গাড়ির আগমন। গাড়ির ভেতর ৩ জন মানুষ। ২জন মেয়ে একজন ছেলে। রাশার সমবয়সী মেয়েটি ড্রাইভ করছে।
রাশার মেজাজ খারাপ হল। একটা সিগারেট ধরাতে পারিনা আমি,আর এই মেয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে। বাল আজ বাসায় গিয়ে জীবনের প্ল্যান নতুন করে সাজাতে হবে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না।
-এই যে ভাইয়া শুনছেন!!!
মেয়েটির ডাকে মেরাজ দৌড়ে গেলো।
-জী ক ক কন আফা। (একটু তোতলা এই মেরাজ)
-(একটু মুচকি হেসে) আচ্ছা ব ব বলেন তো ৪৫ নাম্বার বাড়িটা কোথায়?
-হি হি আফা। জানিনা আফা।
-জানেন না তো এভাবে হা হাসেন কেন?
(সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো)
রাশার একটু মেজাজ খারাপ হল মেরাজ কে নিয়ে হাসাহাসি করার জন্য।
গাড়ির সামনে যেতেই মেয়েটি আবার রাশাকে বলল
-এই যে ভাইয়া ৪৫ নাম্বার বাসাটা কোথায় বলতে পারবেন?
-বলতে পারবো কিন্তু আগে বলেন আপনি কি ৪৫ নাম্বার বাসা খুজতে আসছেন নাকি বেয়াদপি করতে আসছেন?
-মানে কি?
-আপনি ঐ লোকটির দুর্বলতা নিয়ে রসিকতা করতে পারেন না।
-কি পারি কি না পারি তার জবাব আপনাকে দিতে হবেনা।
-দিতে হবে। অবশ্যই দিতে হবে। না দিলে গাড়ির গ্লাস গুলি একটাও থাকবেনা। সব গুলি খুলে রেখে দিবো।
৩ দিন পর নিয়ে যাবেন।
-হোয়াট দ্যা ফাক?
- যা বলছেন বাংলায় বলেন তো।
-আপনি চেনেন আমি কে?
-যে মেয়ে ৪৫ নাম্বার বাসা খুঁজে বের করতে পারেনা সে নিশ্চয়ই আহামরি তেমন কিছু হবেনা।
গাড়ি থেকে সিনিয়র একজন নেমে এলো। মেয়েটির বড় বোন হবে মেবি।
রাশাকে সরি বলে বলল মেয়েটি অনেক রাগী,আপনি রাগ করবেন না। আমরা আসলে রাস্তা হারিয়ে একটু বিপদে আছি।
-আপু গাড়িতে উঠো তো।
রাশা বলে দিল কিভাবে যেতে হবে ৪৫ নাম্বার বাসা। কিন্তু সে ইচ্ছে করেই বাম ডান করে অনেক দূর ঘুরিয়ে বলল ঐটা ৪৫ নাম্বার।
যাতে মেয়ে ড্রাইভারটির ভালো কষ্ট হয়।
মেয়েটির বড় বোন বলল আপনি একটু চলেন না।
-এতো কিছুর পর আমাকে যেতে বলছেন?
-একটু চলুন। আমরা আসলে বিপদে পড়েছি।
রাশা সিগারেটে কয়েকটা বড় বড় টান দিল।
এতো কষ্ট করে ধরানো সিগারেট এতো সহজে ফেলে দেয়া যায়না। নিজের কাপড় বলতে সেই ময়লা টিশার্ট আর একটি থ্রি কোয়ার্টার। রাশা সামনের দরজা খুলে গাড়ির ভেতরে ঢুকতেই মেয়েটি একটু রাগ দেখিয়ে “হু” করলো।
সবাই তাদের নাম বলে পরিচয় দিল। মেয়ে ড্রাইভারটির নাম “মিনি”।
কি নামরে বাবা মিনি। এতো বড় হইছে তবু নাম মিনি ই। তার ছোট ভাইয়ের নাম ছোটন আর আপুর নাম রানী।
৩ ভাই বোন কি ৩ বংশোদ্ভূত নাকি!!!
-সোজা রাস্তায় যেতে থাকুন। আমি বামে যেতে বললে আপনি বামে যাবেন।
তার আগে বামে মোড় নিয়ে গেলে যদি হারিয়ে যান তবে আমি দায়ি নই। আর আপনি একটু জোরে চালাতে পারেন। এখানকার সবাই আমার পরিচিত। পেছন দিয়ে মেরে দিলে কেউ কিছু বলবেনা।
মিনি দাত কিড়মিড় করে তার বড় বোনের দিকে তাকালো।
এ কোন বেয়াদপ টাকে গাড়িতে তুলল সে।
রাশা হেলান দিয়ে একটু চোখ বুঝল। লাস্ট কবে গাড়িতে উঠেছে সেটা মনে করার চেস্তা করছে কিন্তু মাথায় আসছেনা। না আশাটাই স্বাভাবিক। রাতে ঘুম হয়নি।
কিছুদিন ধরে রাতে তার ঘুম হচ্ছেনা। দুশ্চিন্তা গুলি অনেক দেরি করে ঘুমাতে যায় তাই রাশাও তেমন সময় পায়না ঘুমানোর। তার চোখ বুঝে এলো। মিনি হটাত হার্ড ব্রেক করলো।
রাশা চোখটা সামান্য খুলে একটু বিব্রত হয়ে বলল
-আপনি কি কাল সন্ধ্যায় ড্রাইভিং শিখেছেন?
-নামুন আপনি গাড়ি থেকে।
-আরে আপনি তো আমার সমালোচনা নিতে পারছেন না।
-আরে একটু হলেই বাচ্চা ছেলেটি আমার সাইকেলের নিচে পড়তো। আর আপনি এখানে মজা করছেন। গেট আউট।
-দাঁড়ান আমি দেখছি।
সবাই আমার পরিচিত।
চারিদিকে অনেক মানুষ চলে এলো। কাউকেই রাশা চিনেনা। একটি ছেলে রাস্তায় পড়ে আছে ছোট একটি সাইকেল নিয়ে। তেমন কিছু হয়নি।
তবে মানুষের চাহনি বলে দিচ্ছে সবাই আজ মানবিকতা কাকে বলে তা ঠিক ভাবেই পড়ে আসছে। নিজের একটু মন খারাপ হল। ১ ঘণ্টা গাড়িতে ঘুরবে বলে এই মেয়ে ড্রাইভারকে এতো দূর পর্যন্ত ভুল পথে নিয়ে এলো। কিন্তু ও যে এমন কাহিনী করবে তা বুঝতে পারেনি।
চলবে………….
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।