তোমার সাথে আমার মতের অমিল হতে পারে কিন্তু তোমার মতের সম্মানার্থে আমি আমার জীবন দিতে পারি -ভলতেয়ার গেল বছর ত্রিদেশীয় সিরিজের সময় আমার এক ক্লাশ সেভেন পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সাথে ভারত-পাকিস্তানের খেলা নিয়ে আলাপের সময় হঠাৎ সে আফ্রিদির প্রসঙ্গ নিয়ে বলে 'রেজওয়ান ভাই আফ্রিদির খেলা আমার হেভি লাগে কিন্তু । '' আজ আমি আফ্রিদিকে সমর্থন দেব । ভাই আমার আফ্রিদির জন্য দোয়া করবেন । অনিচ্ছা সত্ত্বেও বললাম করব ।
যাক সেদিন আমার সেই ছোট ভাইয়ের আফ্রিদি ভাল করলেন কি না আমার এখন তেমন আর মনে পড়ছে না ।
কিন্তু কোন অবাক-টবাক না হয়ে আমি মুগ্ধ হই যখন ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলার দিন আবার সেই ভাইটির মুখে শুনি আফ্রিদির গুষ্ঠি মারেন আমার দেশের খেলা নিয়ে ,দল নিয়ে কিছু বলার থাকলে বলেন । শুনে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করি,যে ছেলেটি দুদিন আগে আফ্রিদির জন্য দোয়া চাইল সেই ছেলেটি আজ পাকিস্তান দল দূরের কথা ,আফ্রিদির নামই মুখে আনতে চায় না । আমি নিশ্চিত কাল যদি আবার পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দলের খেলা হয় ,তবে সে নির্ঘাত আফ্রিদির জন্য দোয়া চাইবে । কিন্তু আজ কেন তার এই উষ্মা পাকিস্তান দলের প্রতি ,আফ্রিদির প্রতি । কিছুক্ষণ ভাবনার পর নিজের প্রতি নিজের একরাশ ঘৃণা জন্ম উঠে কেন আমার প্রশ্ন জাগবে।
একটা ছেলের অন্যকোন খেলয়াড়ের খেলা ভাল লাগতেই পারে । তাই বলে নিজ দেশের খেলার সময় সে দেশের প্রতি সমর্থন দেবে নাতো কি করবে ?যার জন্ম এই দেশে ,এই দেশের ধূলামাটিতে গড়া দেহ নিয়ে সে অন্যদেশকে কেন সমর্থন দেবে?মরল হলেও সে এমনটি করবে না । দেশপ্রেম এমনই জিনিষ যার জন্য মানুষ অনেক কিছুই বির্সজন দিতে পারে । দেশে প্রেমের কাছে অন্য সব তুচ্ছ ।
দেশের কোন ক্রিকেটার চার-ছক্কা মারলে ,ক্যাচ ধরলে ,উইকেট পেলে যখন আমরা দেশবাসি কনুই ভাজঁ করে খেলয়াড়দের মতো শক্তি ,সাহস,সামর্থ প্রকাশ করি; তা-কি লোক দেখানো বা বডি দেখানো যে দেখেন আমার পেশি।
না!তা চিন্তা করাই আমার জন্য ভুল হচ্ছে । সেই কনুইয়ের ভাজেঁ ,হাতের ঝাকুনিতে কিন্তু দেশেপ্রেমের প্ররিস্ফুটন দেখা যায় । জানিয়ে দেওয়া হয় শাবাশ ক্রিকেটার ভায়েরা চালিয়ে যাও আমরা পাশে থাকবো সমর্থন যোগাব ,সাহস দেব সর্বোপরি বিজয় নিয়ে খেলার মাঠ থেকে মিছিল সহকারে বের হব ।
আবার যখন দেখি ক্রিকেটাররা একটু খারাপ খেললে বা বেশিরভাগ দেখা যায় কোন ক্রিকেটার আউট হলে সমর্থকরা দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরে বা অনেকেই সেই দৃশ্য না দেখার জন্য মুখ চেপে ধরে । তাও কিন্তু দেশপ্রেম ।
প্রিয় কবি শামসুর রাহমান ‘’স্বাধীনতা তুমি’ কবিতায় ‘’বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার’-এ স্বাধীনতা দেখেছেন আর আমি বলারের আউটসুইং- ইনসুইং,প্রতিপক্ষের খেলয়াড় LBW,কট-বিহাইন্ড হলে ,নিজ দলের খেলয়াড়ের লাফ,রাজিবের বোলিংয়ের সময় জোরেশোর শ্বাস নেওয়া,সব যায়গায় দেখি দেশপ্রেমের বিস্ফুরণ ।
এই যে আমরা অনেকেই ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনার এতো পাড় ভক্ত বা এদের খেলা পছন্দ করি । মেসি ,নেইমারকে ভালাবাসি ঠিক কিন্তু আমার বিশ্বাস নয় পরিস্কার বিশ্বাস আর্জেন্টিনা বনাম বাংলাদেশের খেলা হলে চিরুনি অভিযান করেও মেসি-নেইমারের কোন সমর্থক পাওয়া যাবে না । প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে আর বাংলাদেশ বিশেষ করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকায় সয়লাব হয়ে যায় । অনেকেই সেখানে দেশপ্রেম নিয়ে উচ্চ্য-বাচ্চ্য করতে দেখি ।
কিন্তু আমার বিশ্বাসের যায়গা থেকে হলফ খেয়ে বলে দিতে পারি যদি কখনও বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে খেলে তবে সেদিন বাংলার ঘরে ঘরে ,মাটে-ঘাটে,সর্বত্র বাংলার লাল সবুজের পতাকা পথপথ করে আকাশে উড়বে । এবং যদি কোন একজন ভুল করে (ভুল বললাম কারণ আমি বিশ্বাস করি না কোন বাংলা মায়ের সন্তান সেদিন অন্যদেশের পতাকা উড়াবে )ভিন দেশের পতাকা উড়ায় তবে তার চৌদ্দ গোষ্ঠীর কপালে দঃখ আছে ।
কিন্তু মন্দ কপাল বলতে হবে এমন একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে আমাদের বিষাক্ত রাজনীতি সঠিক ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারল না । যে জাতি খেলা-দোলায় জাতি-ধর্ম-গোত্র ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে সে জাতি সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে দেশকে এগিয়ে নিতে কেন এগিয়ে আসবে না ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।