I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself. এই তো দেখা যাচ্ছে আমাদের seasonal দেশপ্রেম। আমি নিজের কথাই বলছি, ডিসেম্বর আসলেই বিজয়ের মাসে, মনে পড়ে আমাদের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা। সকালের খবরের কাগজে কোনও একটা কলামে দিনপঞ্জীর মত করে ডিসেম্বর মাসের বিজয়গাঁথা ছাপানো হয়। আমার বড়মেয়ে খবরের কাগজের লেখা ইতিহাস পড়ে আমার আব্বু অথবা আম্মুকে জিজ্ঞেস করে যুদ্ধের কথা। আমাকে জিজ্ঞেস করে, আম্মু যুদ্ধের সময় তুমি কোথায় ছিলে? ১৯৭১ মানে তার কাছে যুদ্ধ।
আমার আব্বু এবং পরিবারের অনেকেই সেসময় সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন, তাই আমার মেয়ে আমার আব্বুর মুখ থেকেই যুদ্ধের গল্প শুনতে আগ্রহী। আমার যে ফুপাতো ভাইকে ১৪ বছর বয়সে হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল, তার নাম ও মৃত্যুর ঘটনা আমার মেয়ে জানে। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানের কারণেই আমার এই ফুপাতো ভাই আমার মেয়ের চোখে ব্রেইভ-হার্টের মেল গিবসনের মতই অনেক বড় একজন। জানিনা বেঁচে থাকলে ওনার সাথে আমাদের কতটুকু যোগাযোগ থাকতো, আমার মেয়ের প্রজন্ম পর্যন্ত ওনার পরিচিতি এতটা ব্যাপক হতো কীনা। জানিনা যেসব বাচ্চার পরিবারে ১৯৭১ এর সাথে এমন সরাসরি সংযোগ নেই তারা এতটা আবেগ এবং আগ্রহ নিয়ে ইতিহাস জানার জন্যে আকুল হয় কীনা।
তবে এটা আমি নিশ্চিত, এখন আমার মেয়ে যা শুনছে আমার আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে, ততটুকু অন্ততঃ আমি তাকে বলতে পারতামনা। আমার জ্ঞান তো বইয়ের পাতায়। সেখান থেকে পড়ে বোঝালে সে কতটুকু আগ্রহী হতো কে জানে। গল্প বলার ঢং-ও আমার খুব একটা ভাল নয়।
যাহোক, ডিসেম্বর চলে গেলে শুরু হবে ফেব্রুয়ারীর তোড়জোর।
ভাষা দিবস, শহীদ দিবসকে সামনে রেখে অনেক লেখালেখি, স্ম্বতিচারণ, বাংলা একাডেমী ঘুরে আসা, লাল-সাদা কম্বিনেশনে জামা কেনা, বাংলা বইপড়া এবং আলোচনা সমালোচনা। জাতি হিসেবে আমরা কী করছি, কোথায় ছিলাম, কিভাবে এই অর্জন আমাদের---নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যারা পুরোনো প্রজন্ম হয়েও ভুলে যাচ্ছে, তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে। আমাদের ভাষা আসলে ইংরেজী কিংবা হিন্দি নয়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা।
হুম, এটা মনে করিয়ে দেওয়া লাগছে, ইদানিং দেখতে পাই এই মনে করিয়ে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন।
তারপর মার্চ। স্বাধীনতা দিবস। টিভিতে বিশেষ নাটক, স্বাধীনতা প্যারেড এর সরাসরি সম্প্রচার, ইত্যাদি দেখতে পাই। হয়তো টিভি চ্যানেলের এককোণায় তাদের লোগোর সাথে সাথে লাগানো থাকে আমাদের দেশের পতাকা।
এইই তো? ও হ্যাঁ, মাঝে মাঝে কিছু মুক্তিযোদ্ধার জীবনযুদ্ধের খবর দেখা যায় পত্রিকার পাতায়, টিভিতেও। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর মেয়ের অপমানের প্রতিবাদ করার ফলশ্রুতিতে জীবন দিয়েছেন সন্ত্রাসীর হাতে- এমন খবর কিছুদিন পাতায়, স্ক্রীনে আলোড়ন তুলে বৈ কি। এমন কিছুদিন-কিছুদিন করে বহু খবরই একেকবছরে, একেকমাসে আলোড়ন তুলে, তারপর কী হয় জানিনা।
ভাগ্যিস এই দিবসগুলো ছিল!! মনে করিয়ে না-দিলে তো আমাদের কিছুই মনে পড়েনা! আমি খুব আবেগী একজন মানুষ। ঝোঁকের মাথায় অনেক কিছু করে বসি বলে অনেক সমালোচনাও শুনতে হয় প্রতিদিন।
এই মাসগুলো আসলেই আমি খুব আবেগী হয়ে পড়ি। খবরের কাগজ পড়লেই আমার দেশের জন্যে “কিছু” করতে ইচ্ছে করে। কী করবো, কী করবো ভেবে ভেবে অনলাইন পত্রিকার বিভিন্ন কলামে ঘুরতে থাকি। বিভিন্ন উদ্যোগের আহ্বানে সাড়া দেই। একসময় দেখি খবরের সেই পাতাটা এক্সপায়ার করেছে, উদ্যোগগুলোও হারিয়ে গিয়েছে।
আমার আবেগ নিয়ে আমিই বা কেন বসে থাকি? ফিরে যাই আবার প্রতিদিনকার ধান্দায়।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলার সাপোর্ট-কে ইস্যু করে আবার আমাদের দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে। প্রচন্ড আবেগী হয়ে পাকিস্তান-সাপোর্টারদের “পাকিস্তানী” বলে গালি দেই, এদের বিপক্ষে ফেইসবুকে খোলা পেইজ়ে লাইক দেই, দেখি সেখানে চলতে থাকে তুমুল গালাগালির গোলাগুলি। বয়স হয়েছে, এমন ঝড়-ঝাপ্টা থেকে আবার নিজেকে সরিয়ে নেই, কী হবে এসব করে?
গতকাল আমার স্কুলের এক বন্ধু আমাকে বলেছিলো, কী যে করোনা, এইসব লিখে সময় নষ্ট করে লাভ কী? আসলেই তো, লাভ কী? লাভ হচ্ছে সেসময়্টা প্রিয়জনের পেছনে দেওয়া, উপার্জনের পেছনে দৌড়ানো। একেকটা সরকারী ছুটির সাথে শুক্র-শনি কে ট্যাগ করে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করা, অফিস থেকে আগাম ছুটি নিয়ে হোটেলে রাশ হওয়ার আগেই আগাম বুকিং দিয়ে ফেলা।
খামাখা এইসব দিবস মনে রেখে seasonal আবেগী হয়ে কী ফায়দা? আমার বাবা যে আবেগ নিয়ে পরিবারের স্বার্থ, উপার্জনের ফায়দা পেছনে ফেলে রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেটা এখন অতীত। ইতিহাসের জীর্ণ পাতায় সে কাহিনী অলরেডী ঘোলা হয়ে গেছে। তবে আমি কেন অযথা লিখছি?
আবেগটা সাময়িক থাকাই ভালো, তাইনা? দেশপ্রেম থেকে অনেক কিছুই তো হচ্ছে দেখি চারপাশে। কিন্তু আমি এখন বুঝে গিয়েছি, এই সবই একটা সাময়িক প্যাটার্ণে চলে। আমার স্কুলের বন্ধু ব্যাপারটা আগে বুঝেছে, আমি বুঝলাম দেরীতে।
তবুও, বেটার লেইট দ্যান নেভার! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।