আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপকথার গল্পঃ টোনা টুনির গল্প (ফেসবুক ভার্শন)

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

এক জঙ্গলে থাকতো টোনা আর তার গার্লফ্রেন্ড টুনি ! প্রতিদিন টুনি প্রেমময় স্টাটাস দিতো আর সবার আগে টোনা তাকে লাইক দিতো । কমান্ট দিতো ! বনের অনেকেই টুনির পোষ্টে কমান্ট দিতো ! এটা টোনার পছন্দ হত না ! সে ইনবক্সে টুনির সাথে রাগা রাগি করতো ! একদিন টোনা রাগের মাথায় স্টাটাস দিল ! "ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না ! যায় তার সাথে চ্যাটিং করে আমায় চিনে না !" এই স্টাটাসে একটা লাইকও পড়লো না ! কিন্তু টুনির খুব মন খারাপ হল ! সে স্টাটাস দিল "মন খারাপ --ফিলিং ডাউন !" লাইক কমান্টের বন্যা বয়ে গেল ! টোনা দেখলো এভাবে আর না ! সঙ্গে সঙ্গেই ম্যারেজ ইনভাইটেশন পাঠালো টুনিকে ! দেখতে দেখতে একদিন তাদের রিলেশনশীপ স্টাটাস চেইঞ্জ হয়ে ইন এ রিলেশনশীপ উইথ থেকে ম্যারেড হয়ে গেল ! তাদের অবস্থান হল টোনাস হাউজে । এই ভাবে সুখে দিন কাটতে লাগলো ! একদিন সকাল বেলা টোনা তার ফেসবুক ওপেন করে স্টাটাস দিল "আজকে খুব পিঠা খেতে ইচ্ছা করছে" টুনি রান্না ঘরেই ছিল ! সে সঙ্গে সঙ্গে কমান্ট দিল "পিঠা যে খাবে ঘরে তো কিছু নাই ! আটা লাগবে ! গুড় লাগবে ! তেল লাগবে ! এসব কে আনবে শুনি ?" টোনার স্টাটাসে লাইক পড়লো সাতটা আর টুনির কমান্টে লাইক পড়লো ২১ টা ! টোনা কমান্টের উত্তর না দিয়ে বাথরুমে ঢুকলো ! হাত মুখ ধুয়ে যখন বাইরে এসে আবার স্টাটাস দেখলো তখন তো সে একেবারে হা ! টুনি নতুন স্টাটাস দিয়েছে ! "টোনা কে বাজারে পাঠিয়েছি ! আজকে পিঠা বানানো হবে ! কেঊ কি ভাঁপা পিঠা বানানোর রেসিপিটা বলতে পারেন?" সেই স্টাটাসে এক হাজার লাইক ! পাঁচশ কমান্ট ! তিনশ শেয়ার ! টোনা কমান্ট পড়তে লাগলো ! বনের রাজা বাঘ কমান্ট দিয়েছে "কি ব্যাপার ! পিঠা কি একলা একলাই খাবা ? হালুম !" হাতি কমান্ট দিছে "তোমার বাড়ির নিচ দিয়ে প্রতিদিন যাই । একবারও দাওয়াত দিলা না !" শিয়াল কমান্ট দিছে "এইটা তো ঠিক না ! আমারে দাওয়াত না দেও ঠিক আছে । তাই বলে বাঘ মামারে দিলা না ?" ভাল্লুকের কমান্ট "আমি কালো বলে আমাকে কি চোখে পড়ে না ? এক মধু আর কত খামু !" বানর কামন্ট দিল "আমরা ছোট বলে আমাদের অবহেলা করা ঠিক না" টোনা টুনি তো বেশ চিন্তায় পরে গেল ! বনের গন্যমান্য ব্যক্তিত্বরা পিঠা খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে । তাদের কে দাওয়াত না দিলে কি বলে মান সম্মান নিয়ে থাকা যাবে ! শেষ পর্যন্ত পিঠা খাওয়া নিয়ে একটা ইভেন্ট খুলেই ফেলল ! তারপর সবাইকে ইনভাইট করলো ! ইভেন্টের প্লেস ঠিক হল টোনাস হাউজ ! সময় বিকাল তিনটা ! এবার টোনা বাজার করতে গেল ! যেতে যেতেই মোবাইল থেকে স্টাটাস দিল ! "বাজারে যাচ্ছি !" সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ লাইক এসে হাজির ! দুইশ বার শেয়ার হয়ে গেল স্টাটাস ! বাজার করে আসার সময় যার যার সাথে দেখা হল সবাই নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে লাইফ ইভেন্ট যোগ করলো ! বনমোরগ তার ওয়ালে লাইফ ইভেন্ট যোগ করলো ! "বনমোরগ মেট উইথ টোনা এট বাজার !" খরগোসের সাথেও দেখা হল টোনার ! "খরগোস মেট উইথ টোনা এট র‌্যাবিট হাউজ !" যখন টোনা বাজার নিয়ে হাজির তখন টুনি রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ! এক ফাঁকে ফেসবুক খুলে স্টাটাস দিল "টুনি ইজ ভেরি বিজি এট টুনিস রান্না ঘর !" আবারও সেই হাজার খানেক লাইক । শ পাঁচেক কমান্ট ! তিনশর মত শেয়ার ! বাঘ মামা নিজে স্বয়ং সেই স্টাটাস শেয়ার দিল নিজের ওয়ালে ! আর লিখলো "গোয়িং টু টুনিস হাউজ ! ফিলিং ভেরি হ্যাপি !" এদিকে টুনি পিঠা বানায় আর টোনা একটা একটা করে পিঠা খেতে থাকে ! এদিকে টুনি রাগের ইমো দেয় আর টোনা হাসির ইমো দেয় ! মাঝ খানে টোনা নিজেই স্টাটাস দিল ! "টুনিস পিঠা ! অসাম !" --ইটিং পিঠা ! এবার টোনার স্টাটাসের লাইকের পর লাইক আসতে লাগলো ! আর টোনা পিঠার পর পিঠা খেয়ে চলল ! একটা করে কমান্ট আসে আর টোনা একটা করে পিঠা খায় ! এই ভাবে খেতে খেতে সব পিঠা শেষ হয়ে গেল ! এখন উপায় ! টোনা আর টুনি বেশ চিন্তায় পরে গেল ! এদিকে তিনটা বাজতে গেল ! সবাই আসছে ! কি করবে এখন ! আর কোন উপায় না দেখে দুজনেই নিজেদের একাউন্ট ডিএকটিভেট করে দিল ! তারপর দুজনেই টোনাস হাউজ থেকে গায়েব হয়ে গেল ! এদিকে সবায় যখন ইভেন্ট হাজির, দেখে কোথাও কেউ নাই ! সব খাঁ খাঁ করছে ! তাড়াতাড়ি সবাই ফেসবুক খুলল ! কিন্তু টোনা টুনির আইডি খুজে পেল না ! তাদের ইভেন্টেরও কোন নাম নিশানা পেল না ! বাঘমামা নিজ ওয়ালে লিখলো ! "ফিলিং হতাশ উইথ শিয়াল, বানর এবং ১৩৩ আদারস পিপল" ওদিকে টোনা টুনি ফেসবুকে নতুন জয়েন্ট একাউন্ট খুলে মনের সুখে ইউটিউব থেকে সালমান শাহ এর গান শেয়ার দিতে লাগলো !! "এখন তো সময় ভালবাসার ! এ দুটি হৃদয় কাছে আসার ! তুমি ও একা ! আমিও একা লাগে ভাল ! ও প্রিয় !!"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।