...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
-সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। মানুষ তখন সবে মাত্র বিভিন্ন গ্রহে যাওয়া শুরু করেছে। গ্রীন হাউস গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দুই মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে।
-মেরু কি মা?
-মেরু হলো পৃথিবীর উত্তর আর দক্ষিনে যে প্রান্ত। তখন সেখানে অনেক অনেক বরফ জমে ছিলো।
আস্ত মহাদেশের সমান।
-মা,গ্রীন হাউস গ্যাসে বরফ গলে যাচ্ছিলো কেন?
-পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাচ্ছিলো। মানুষ যথেচ্ছো ভাবে গাছ কাটছিলো, ওজন স্তুরে ফাঁটল ধরছিলো।
-গাছ? মানে মিউজিয়ামে রাখা ঐ সবুজ জিনিস গুলো?
- হ্যাঁ, তখন পৃথিবীতে ওরকম অনেক অনেক গাছ ছিলো। বসন্তে সেগুলোতে ফুল ফুটতো।
গাছ গুলো রঙিন হয়ে উঠতো।
-ইস্, মা আমার ফুলে ঢাকা গাছ দেখতে ইচ্ছে করছে।
-সে তো এখন দেখা যাবে না বাবা, গাছ জিনিসটাই যে এই গ্রহে নেই।
-আচ্ছা মা, পৃথিবীরও তো আমাদের মতো চাঁদ ছিলো, তাই না?
-হ্যা, তবে মঙ্গলে যেমন দু’টো চাঁদ, পৃথিবীতে তেমন না। একটা মাত্র চাঁদ ছিলো।
রাতের আকাশে সেই চাঁদ এতো দারুন লাগতো, এতো দারুন। মায়েরা তাদের সন্তানদের সেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে চাঁদের চড়কা কাটা বুড়ির গল্প বলতো।
-চড়কা বুড়ি? মা, আমাদের চাঁদে কি চড়কা বুড়ি আছে?
-না বাবা, আমাদের চাঁদে চড়কা বুড়ি নেই।
-আমাদের চাঁদ দুটো দেখতে একদম ভালো না মা। আমার খুব ইচ্ছে করে পৃথিবীতে যেতে।
সেখান থেকে চাঁদ দেখতে। চাঁদের বুকে চড়কা বুড়িকে খুঁজতে।
-সেখানে তো এখন যাওয়া যাবে না বাবা। পৃথিবীতে এখন মানুষ গেলে এক মূহুর্তও টিকে থাকতে পারবে না। ভয়াবহ রেডিয়েশন সেখানে।
যাবার সাথে সাথে মারা পড়তে হবে। আর পৃথিবীর আকাশ এখন ধুলোয় ঢেকে গেছে, সূর্য বা চাঁদ কোনটাই এখন দেখা যায় না পৃথিবীর মাটি থেকে।
-কেন এমন হলো মা? কেন সবাই মিলে পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে ফেললো?
-জানি না বাবা। জানি না। কিছু সংখ্যক একগুয়ে খারাপ মানুষ নিজেদের মাঝে পারমানবিক যুদ্ধ বাজিয়ে পুরো পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
তাইতো আমাদের এসে বাস করতে হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে।
-মা, মানুষগুলো এতো খারাপ কেন? কেন নিজেদের এতো সুন্দর গ্রহটাকে ধ্বংস করে ফেললো?
-কিছু কিছু মানুষ খারাপ হয়, তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সব পারে।
-ওরা তো এখন মঙ্গলে এসেও এক কমিউনিটির সাথে অন্য কমিউনিটির যুদ্ধ বাজাচ্ছে তাই না মা?
-হ্যা, গত সপ্তাহেই আমাদের পাশের কমিউনিটিতে আক্রমন করলো। ওদের সিলভার ডোমে একটা বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। শুনেছি সেখান দিয়ে খুব দ্রুত অক্সিজেন সব বের হয়ে যাচ্ছে।
ওদের পাম্পগুলো অক্সিজেন তৈরী করে কুলোতে পারছে না।
-মা,
-হ্যা বাবা বল?
-ওরা যদি আমাদের এই মঙ্গল গ্রহটাকেও পৃথিবীর মতো ধ্বংস করে ফেলে। তাহলে আমরা কোথায় যাবো?
ছোট্ট শিশুটির কন্ঠে আশংকা আর ভয় দু’টোই ফুটে উঠে। নিজের ছোট্ট ছেলেটিকে গল্প বলতে বসলে কেবল প্রশ্ন করে। এটা কেন? ওটা কেন? প্রশ্ন করে তিরিনকে অস্থির করে ফেলে আট বছরের ছেলেটি।
তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা ছোট্ট ছেলেটির মাথার চুলে হাত বুলোতে বুলোতে সে তার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। দূরে আকাশে মঙ্গলের একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে। কি বিশ্রী দেখতে। লালচে আকাশে সেটাকে আরো জঘন্য মনে হয় তিরিনের।
-ওরা যদি আমাদের এই গ্রহটাকেও ধ্বংস করে ফেলে, তাহলে আমরা কোথায় যাবো মা?
বাচ্চাটি আবার সেই একই প্রশ্ন করে।
বাচ্চাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় না এটা তিরিন জানে। আর উত্তর কিই বা দিবে। উত্তরটা যে তারই জানা নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।