আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হোয়্যার ইজ কোকো?

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় নাকি ভিন্ন কোনো দেশে? কোনো মহলই তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তবে তাকে সপ্তাহে একটি করে ইংজেকশন নিতে হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বুক ও পেশিতে ব্যথাসহ শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। প্যারোলো মুক্তি নিয়ে থাইল্যান্ডে গেলেও বর্তমানে সে দেশটিতে নেই তিনি। যোগাযোগ করা হলে ব্যাংককে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোকো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে শ্রমিক ভিসা নিয়েছেন।

এরপর তিনি কী মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন নাকি থাইল্যান্ডে ফিরেছেন তা আমাদের জানা নেই। দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের কথা থাকলেও কোকো তা করেননি। একই বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান বলেন, আরাফাত রহমান কোকো কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সাধারণ লেবার (শ্রমিক) পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। তবে তিনি এখন মালয়েশিয়ায় নেই। তিনি কোথায় আছেন এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য মালয়েশিয়া দূতাবাসের কাছে নেই।

কোকোর আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, কোকো থাইল্যান্ডে নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য একটি দেশে আছেন। তবে কোন দেশে আছেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। জানা যায়, গত তিন বছরে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন। থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কোকো মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ব্যাংকক ত্যাগ করেন ২০১০ সালের ১৫ অক্টোবর।

থাই ইমিগ্রেশন ব্যুরোর তথ্যানুসারে, আরাফাত রহমান এমএইচ-৭৮৩ বিমানে কুয়ালালামপুর যান। এন্টি মানিলন্ডারিং অফিস (এএমএলও) থেকে ঢাকায় অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানো এক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে গত বছরের আগস্টে থাই সরকারের কাছে কোকোর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। থাই সরকারের পক্ষে এএমএলও এ চিঠি দেয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। অন্যদিকে মালয়েশিয়া দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, কোকো মালয়েশিয়াতেও নেই।

তবে এরপর তিনি কোথায় গিয়েছেন সে সম্পর্কিত তথ্য দূতাবাস জানাতে পারেনি। এএমএলও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আরাফাত রহমান দুই দফায় থাইল্যান্ডের প্রারাম-৯ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রথম দফায় ২০০৮ সালের ২৫ জুলাই বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। ২৬ আগস্ট ২০০৮ হাসপাতাল ছাড়েন। পরে পেশির ব্যথাজনিত কারণে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ২০১০ সালের ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ব্যাংক চেক ব্যবহার করে আরাফাত রহমান বা তার কোনো সহযোগী থাইল্যান্ডে কোনো ধরনের লেনদেন করেননি। কোকো ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন এবং ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান। গত বছর ১৯ আগস্ট শর্ত ভঙ্গের দায়ে তার প্যারোল বাতিল করা হয়। তাকে দেশে ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি দেশে ফেরেননি। ব্যাংকক দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, চীনে যাওয়ার পথে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ব্যাংককের হোটেলে কোকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া ব্যাংকক পৌঁছে তার যাত্রাবিরতির জন্য নির্ধারিত হোটেলে ওঠেন। সেখানেই সেদিন ব্যাংকক সময় রাত ১১টায় স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন কোকো। কোকো ব্যাংককে? আরাফাত রহমান কোকো এখন কোথায়? থাইল্যান্ডের ব্যাংককে, মালয়েশিয়ায় নাকি অন্য কোনো দেশে? তাকে কি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে; নাকি আত্মগোপনেই থেকে যাবেন। অর্থ পাচার মামলার রায়ে কোকোর ৬ বছর সশ্রম কারাদ- ও অর্থ জরিমানার পর থেকেই এ প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কোকো মানি লন্ডারিং মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর আদালত থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হলে সরকার তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেবে।

সে থাইল্যান্ডে থাকলে বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ফেরত আনা যাবে। অন্য দেশে থাকলে ভিন্ন পথে তাকে ফেরত আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোকোর আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, কোকো থাইল্যান্ডেই সপরিবারে অবস্থান করছেন। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। থাইল্যান্ডে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্ত্রী শর্মিলা রহমান, দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন।

আগে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসে নিয়মিত রিপোর্ট করলেও এখন আর রিপোর্ট করছেন না। আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, আরাফাত রহমান কোকো এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি। চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক কোকোকে আরও কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসকদের কাগজপত্রসহ প্যারোলের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন। তবে সরকারপক্ষ এখনও তাদের আবেদন সম্পর্কে কিছুই জানায়নি।

সূত্র মতে, মা খালেদা জিয়া ও লন্ডনে চিকিৎসাধীন বড় ভাই তারেক রহমানের সঙ্গে মাঝে মাঝে টেলিফোনে মতবিনিময় করেন কোকো। আইনগত প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে আইনজীবীরাও সাক্ষাৎ করেন তার সঙ্গে। ঘনিষ্ঠ দু’চারজন ছাড়া ব্যাংককের কোথায় কোকো অবস্থান করছেন তা কাউকে জানানো হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে একবার শ্রমিক ভিসা নিয়ে কোকো মালয়েশিয়া চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রটেছিল। এ নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বাকবিত-াও হয়।

আওয়ামী লীগ নেতারা কোকো মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, কোকোর শ্রমিক ভিসায় পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। চীনে যাওয়ার পথে ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর ব্যাংককের হোটেলে কোকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ব্যাংকক পৌঁছে তার যাত্রাবিরতির জন্য নির্ধারিত হোটেলে ওঠার পর রাতে স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কোকো। কোকো মালয়েশিয়ায়? আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় পলাতক রয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সূত্রে একটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যম সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট থেকে এমনটা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে গোলাম রহমান ওই সংবাদ মাধ্যমটিকে জানান। কোকোকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মালয়েশিয়ার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। গোলাম রহমান আরও বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে যে, আরাফাত রহমান কোকো মাস কয়েক আগে ব্যাংকক থেকে মালয়েশিয়া গেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় ঠিক কোথায় তার অবস্থান তা নিশ্চিত করা না গেলেও থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে দেশটি ছেড়ে মালয়েশিয়া যান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে জোট সরকারের আমলে কোকো কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে দুটি বিদেশী কোম্পনির কাছ থেকে ২৭ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ আদায় করেন। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে ব্যাংকক যান তিনি। ২০১০ সালে প্যারোলের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। ২৩ জুন ২০১১ অপর একটি অর্থপাচারের মামলায় কোকোকে ৬ বছরের কারাদ- দেয় আদালত।

ঘুষ লেনেদেনের আদ্যোপান্ত যুক্তরাষ্ট্রের মামলার নথির উদ্বৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সিমেন্স ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই টেলিটক মোবাইল ফোন প্রকল্পের কাজ পেতে চেষ্টা চালায়। এ জন্য দু’জন পরামর্শক নিয়োগ দেয় তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা সুবিধা করতে পারেনি। ২০০১ সালের ২৭ মার্চ সিমেন্স ইতালির বাণিজ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা ওই দুই পরামর্শকের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেন। এতে বলা হয়, ওই দুই ব্যক্তির বিভিন্ন প্রকল্পে ১৫ বছরের সফলতার ইতিহাস আছে।

সামগ্রিকভাবে জটিল এ কাজে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিএনপি ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে বিটিটিবির শীর্ষ থেকে নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এ কারণে তারা পরামর্শক ফি সাধারণ কমিশনের তুলনায় বেশি চেয়েছেন। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল সিমেন্স বাংলাদেশ ও সিমেন্স ইতালি ওই দুই পরামর্শকের সঙ্গে ব্যবসা-সংক্রান্ত কাজের ব্যাপারে তাদের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানায়। সে সময় তাদের সঙ্গে মৌখিকভাবে চুক্তি হয়, প্রকল্পের অর্থের ১০ শতাংশ (টেন পারসেন্ট) তাদের দেয়া হবে। বিটিটিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে টেলিটক প্রকল্পের জন্য তিনবার খোলা দরপত্র আহ্বান করা হয়।

তিনবারই অংশ নেয় সিমেন্স বাংলাদেশ। প্রথমবার কারিগরি অযোগ্যতার কারণে বাদ পড়ে কোম্পানিটি। দ্বিতীয়বার ২০০১ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলে তালিকায় নাম ওঠে সিমেন্সের। কিন্তু তা বাতিল করে দেয় সরকার। অর্থের পরিমাণ পরিবর্তন ও সরবরাহকারীর সংখ্যা কমিয়ে ২০০২ সালে তৃতীয় দরপত্র আহ্বান করা হয়।

কিন্তু ওই বছর ১৮ ডিসেম্বর সিমেন্স দরপত্রে যথাযথভাবে সনদ দেখাতে না পারায় অকৃতকার্য হয়। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর সিমেন্স বাংলাদেশের তৎকালীন বাণিজ্য বিভাগের প্রধান খালেদ শামস সিমেন্স ইতালির একজন কর্মকর্তাকে ই-মেইলে জানান, ওই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নিয়োগ দেওয়া দুই পরামর্শকের কোনো ক্ষমতা নেই। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য অবশ্যই শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রণালয় এবং বিটিটিবির (বর্তমানে বিটিআরসি) শীর্ষ ও কারিগরি ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে। ওই দুই পরামর্শকের সঙ্গে চারদলীয় জোট সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ভালো যোগাযোগ নেই। এ সময় আরেক ব্যক্তিকে তৃতীয় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় সিমেন্স বাংলাদেশ।

তিনি তৎকালীন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বেয়াই। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে উঠে আসে, তৃতীয় পরামর্শক ব্যক্তিটিই আরাফাত রহমান কোকোকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিপরীতে সিমেন্সকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। আর আর্থিক বিষয়টি সুরাহার জন্য তারা যোগাযোগ করেন কোকোর এক প্রতিনিধির সঙ্গে। তিনি দরপত্রে অংশ নেওয়া চীনা একটি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতেন। সিমেন্সের সঙ্গে ওই কোম্পানিটিও টেলিটক প্রকল্পের আংশিক কাজ পায়।

মার্কিন আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, সব ধরনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সিমেন্সের দরপত্র পাস হয়। দরপত্র পাস হওয়ার খবরটি কোকোই প্রথম জানান খালেদ শামসকে। ২০০৪ সালের ১৪ জুন বিটিটিবির সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। ২০০৫ সালের মাঝামাঝি কোকো ও খালেদ শামসের মধ্যে কথা হয়। এ সময় কোকো তাকে প্রতিশ্র“ত টাকা দেওয়া হয়নি বলে উষ্মা প্রকাশ করেন।

কোকোর সঙ্গে দেখা করে খালেদ ও সিমেন্সের নতুন প্রধান নির্বাহী রুডল্ফ ক্লিঙ্ক আশ্বস্ত করেন, তারা প্রতিশ্র“ত অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে সিমেন্সের এক পরামর্শক সিঙ্গাপুরে ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক (ইউওবি)-এ কোকোর ব্যাংক হিসাবে এক লাখ ৮০ হাজার ডলার পাঠিয়ে দেন। ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের এক নাগরিকের সহযোগিতায় কোকো ওই দেশে জেডএএসজেড ট্রেডিং অ্যান্ড কনসালটিং প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি নিবন্ধন এবং ইউওবি ব্যাংকে হিসাব খোলেন। ব্যাংক হিসাবটি যৌথ হলেও তা থেকে অর্থ তোলার ক্ষমতা ছিল একমাত্র কোকোর। সিঙ্গাপুরের ওই ব্যাংকে কোনো বিদেশী নাগরিকের হিসাব খোলার নিয়ম নেই।

এ কারণেই ওই নাগরিকের সহযোগিতা নেন কোকো। কোকোর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আসছে ২৩ নভেম্বর ২০১২। দেশের প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে খবর বেরোলো কোকোর পাচার করা টাকা ফেরত এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। খবরের বিবরণে বলা হলো বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো’র সিঙ্গাপুরে পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার ফেরত এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০০৯ সালে দুদকের দায়ের করা এক মামলার প্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখায় এ টাকা ফেরত আসে।

ফেরত আসা টাকা দুর্নীতিবিরোধী কাজে ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। বিদেশে পাচার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এভাবে কোনো টাকা দেশে ফেরত এলো বলে জানান তিনি। আরও ৯ লাখ ৩২ হাজার ডলার ফেরত আনা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, তারেক রহমান এবং তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মানি লন্ডারিং এর একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। কোকো ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী প্রয়াত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকবর হোসেন (অব.)’র ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন একটি বহুজাতিক কোম্পানি থেকে ঘুষ হিসেবে এ টাকা গ্রহণ করে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিস ব্যাংকে (ইউওবি) পাঠান।

এর আগে পাচার হওয়া টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্টে রাখার দায়ে এক সিঙ্গাপুরি নাগরিককে সে দেশের আদালত গত বছরের জানুয়ারি মাসে নয় হাজার ডলার জরিমানা করে। জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকো এবং আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক। মামলার বাদী হন উপ-পরিচালক মো. আবু সাঈদ। মামলার এজাহারে অভিযোগ ছিল, ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে আরাফাত রহমান কোকো ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯-এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলার চার্জশিট দেয়া হয় ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর।

বিচার শুরু হয় ২০১০ সালের ৩০ আগস্ট। রায় দেয়া হয় ২০১১ সালের ২৩ জুন। রায়ে দু’জনকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদ- ও ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর বাজেয়াপ্ত করা হয় সিঙ্গাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার ১৪৩ দশমিক ৫৯ সিঙ্গাপুর ডলার এবং ৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ দশমিক ৮১ মার্কিন ডলার। দুদকের তদন্তে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের নাগরিক লিম সিউ চাং সিঙ্গাপুরে একটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করে সেখানকার ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক (ইউওবি) লি.-এ একটি একাউন্ট খোলেন।

একাউন্টের শর্ত ছিল আরাফাত রহমানের স্বাক্ষর বা লিম সিউ চাং ও আরাফাত রহমানের যৌথ স্বাক্ষরেই শুধুমাত্র সেখান থেকে টাকা ওঠানো যাবে। চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি., ঢাকা এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি., চট্টগ্রাম-এর মাধ্যমে সিটি ব্যাংক এনএ, নিউইয়র্ক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক, ইউএসএ থেকে সিঙ্গাপুরের ইউওবি লি.-এর ওই একাউন্টে এ অর্থ জমা করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ঘুষ হিসেবে এই অর্থ কোকো’র একাউন্টে জমা করা হয়। এছাড়া, সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সার্ভিসের জন্য সিমেন্স কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ আদায় করেন কোকো। সিমেন্সের বাংলাদেশ এজেন্ট মো. জুলফিকার আলী সিঙ্গাপুরস্থ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে কোকো’র ইউওবি লি.-এর একাউন্টে ৩ লাখ ৩২৫৪ সিঙ্গাপুর ডলার বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে জমা দেন।

এছাড়া, বিভিন্ন একাউন্ট থেকে তার ওই একাউন্টে আরও বেশ কিছু অর্থ জমা হয়। কোকো’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণ সম্পর্কে দুদক থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ নিবাসী কোনো ব্যক্তির বৈদেশিক সূত্র হতে আয়ও আয়করযোগ্য। কিন্তু কোকো তার বিদেশী ব্যাংকের আয় আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি। তার সম্পদ বিবরণীতে এর উল্লেখ নেই। আবার যেসব সূত্রে কোকো’র একাউন্টে অর্থ জমা হয়েছে, তার সঙ্গে কোকো’র কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্কও ছিল না।

৮ জানুয়ারি ২০১৩। এবার জাতীয় দৈনিকগুলো খবর প্রকাশ করলোÑ কোকোর পাচার করা টাকার সুদ এলো দেশে। খবরে লেখা হলোÑ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থের লভ্যাংশ বাবদ প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকে দুর্নীতি দমন কমিশনÑ দুদক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লভ্যাংশের এই টাকা জমা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একজন কমিশনার। দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জানান, লভ্যাংশের প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকা দুদকের অ্যাকাউন্টে এসেছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর কোকোর পাচার করা অর্থের লভ্যাংশের ওই টাকা দুদকের অ্যাকাউন্টে আসে। দুদক জানায়, কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার সিঙ্গাপুরের যে ব্যাংকে জমা রাখা ছিল, সেই ব্যাংক থেকে ওই অর্থের লভ্যাংশ ২৩ হাজার ৮০০ সিঙ্গাপুরি ডলার (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭৮) সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় দুদকের অ্যাকাউন্টে আসে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে কোকোর অবৈধভাবে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন। মুদ্রা পাচারের ওই মামলায় কোকোর ছয় বছরের কারাদ-ের পাশাপাশি ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। দুদকের তদন্ত টিম জানায়, ২০০৮ সালে প্রথম কোকোর অর্থপাচারের অনুসন্ধান শুরু হয়।

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের উপপরিচালক আবু সাঈদ এ বিষয়ে তদন্ত করেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হয়। কোকোকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে? বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে এ বছরের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। কোকোর অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে নানা রকম খবর প্রকাশিত হয়েছে। তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে, মালয়েশিয়ায় নাকি অন্য কোনো দেশে? অর্থ পাচার মামলায় ছয় বছর সশ্রম কারাদ- ও অর্থ জরিমানার পর এ প্রশ্ন ওঠে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি থাইল্যান্ডে থাকলে বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ফেরত আনা যাবে। অন্য দেশে থাকলে আইনানুগভাবে ফেরত আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকারি সূত্রের বরাতে একটি দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী, কোকো থাইল্যান্ডেই সপরিবারে অবস্থান করছেন। ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্ত্রী শর্মিলা রহমান, দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে অবস্থান করছেন। আগে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসে নিয়মিত রিপোর্ট করলেও এখন আর করছেন না।

তবে মা খালেদা জিয়া ও লন্ডনে চিকিৎসাধীন বড় ভাই তারেক রহমানের সঙ্গে মাঝে মাঝে টেলিফোনে মতবিনিময় করেন। আইনগত প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঘনিষ্ঠরা ছাড়া ব্যাংককের কোথায় কোকো অবস্থান করছেন তা কাউকে জানানো হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে একবার শ্রমিক ভিসা নিয়ে কোকো মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রটে। থাই অভিবাসন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, আরাফাত রহমান এমএইচ-৭৮৩ বিমানে কুয়ালালামপুর যান।

এন্টি মানিলন্ডারিং অফিস এএমএলও থেকে ঢাকায় অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে থাই সরকারের কাছে কোকোর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে মালয়েশিয়া দূতাবাস সূত্রের দাবি, কোকো মালয়েশিয়াতেও নেই। তবে থাই রাষ্ট্রদূত এক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘কোকো থাইল্যান্ডে নেই, তিনি আছেন মালয়েশিয়ায়। এ বিষয়ে আপনারা মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

’ এএমএলও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আরাফাত রহমান দুই দফায় থাইল্যান্ডের প্রারাম-৯ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রথম দফায় ২০০৮ সালের ২৫ জুলাই বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। ২৬ আগস্ট ২০০৮ হাসপাতাল ছাড়েন। পরে পেশির ব্যথাজনিত কারণে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ২০১০ সালের ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর। চিঠিতে জানানো হয়, ব্যাংক চেক ব্যবহার করে আরাফাত রহমান বা তার কোনো সহযোগী থাইল্যান্ডে কোনো ধরনের লেনদেন করেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতির দায়ে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আরাফাত রহমান কোকো বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন। অথচ বিএনপি নেতারা বলছেন, তিনি নির্দোষ। এমতাবস্থায়, জনগণ মনে করে বিএনপির বক্তব্য সত্য হলে তাদের উচিত কোকোকে আদালতে উপস্থাপন করে আইনি প্রক্রিয়ায় নির্দোষ প্রমাণ করা। আর সরকারের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা প্রমাণের লক্ষ্যে আরাফাত রহমান কোকোকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তবে সরকারের শীর্ষ মহল যথাসময়ে কোকোর শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলেই আশ্বস্ত করছে।

পরস্পরবিরোধী অবস্থানে এ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তৃতার মঞ্চ মাঝে মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।