বেশিরভাগ গরীব দেশের শিক্ষার্থীকেই আমেরিকায় পড়তে এসে প্রথম বেশ কিছুদিন গাড়ি না থাকায় এমন কিছু ভোগান্তিতে পড়তে হয়, পশ্চিম ইউরোপে যেটা ভুগতে হয় না (কারন, পুরো পশ্চিম ইউরোপে পাবলিক ট্র্যান্সপোর্ট সিস্টেম জালের মতো বিস্তৃত)। মুষ্টিমেয় কয়েকটা মেগাপলিস বাদ দিলে এই বিশাল দেশের বেশিরভাগ পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোই ছোট ছোট শহরে, দোকান পাট গুলো সব ক্যাম্পাস থেকে অনেক দুরে দুরে, হাঁটা দুরত্বে নয়। তো এই ' চক্র জাতি'র (nation on wheel) চক্রে পড়ে কয়েকদিনেই বংগসন্তানেরা টের পেয়ে যায় যে শুধু হাত পুড়িয়ে রান্নাই নয়, ফ্রস্ট বাইটের ছোবলে পা পুড়িয়ে হাঁটতেও হবে প্রচুর। তার পর যদি চাকায় হাত রাখা যায়, গাড়ি কেনা যায়। আর হোমসিকনেস জনিত কান্না তো রইলোই বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো।
তো, আমিও যথারীতি 'এগারো নম্বর বাস'এ চেপেই বাসা-ক্যাম্পাস-গ্রোসারী করতে শুরু করলাম, অন্য অনেকের মতো (এখানে বলে রাখা ভালো, হেটে চলাকে এ দেশে অনেকে বাস নম্বর ইলেভেনে চড়া বলেন, কারন, ঠ্যাং দুখানা কে সমান্তরাল রাখলে ইংরেজী এগারো'র(। । ) মতোই দ্যাখায়!)। যা হো'ক, এক স্হানীয় এক তরুন ডাক্তার দম্পতি বাস নং এগারোর এই নিরুপায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন। ছেলেটি সদ্য পাশ করা ডাক্তার, বউটি নার্স।
স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি ক্লিনিক চালান। একটি চার্চেরও ব্যবস্থাপনায় আছেন। তো, মার্ক এবং লরার গাড়ীতে করে আমরা সপ্তাহান্তে বাজার করতে যেতাম। প্রত্যেককে বিভিন্ন বাসা থেকে পিক্ করা, তাদেরকে পছন্দমতো গ্রোসারী এবং অন্যান্য কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন দোকানে নিয়ে যাওয়া, তারপর সবাইকে যার যার বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাওয়া-এসব করতে মার্ক এবং লরা ছিলো অক্লান্ত। একদিন আমি বাসা বদলাবো ।
ব্যাগ গোছানো চলছে, সারা হলে ক্যাব ডেকে চলে যাব। কোথা থেকে খবর পেয়ে মার্ক এসে হাজির। এসেই আমার সাথে মাল-পত্র গোছাতে লেগে গেলো। সে আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার জুতা-মোজাগুলো বাক্সবন্দী করা শুরু করলো। তারপর আমাকে লিফট্ দিলো, আমার মালপত্র ধরাধরি করে নামিয়ে দিলো।
সবজান্তা ভাই হাসি দিয়ে বলবেন, আরে বুঝলেন না, সবঔদার্যের মূলেঔ রবিবাসরীয় ধান্দ্ধা । আমি বলি, খুব ভালো কথা ভাই, কিন্তু একটা কথা বলবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সামনেই ইণ্টারন্যাশনাল হোস্টেল নামের একটা জিনিস আছে। সেখানেও গাড়ীছাড়া, ঘরছাড়া অনেক বিদেশী শিক্ষার্থী বাস নম্বর ইলেভেন আর রিক্সার চক্রে আটক। আপনিও না হয় মাঝে মাঝে আপনার গাড়ীতে ওদের দু'একজন কে নিয়ে একবেলা ইফতার করলেন। না হয় শুক্রবারের ওয়াস্তেই করলেন! দয়া করে এটা বলবেন না যেনো যে আমরা দুনিয়ার সবচে গরীব।
পনেরো কোটির মধ্যে পনেরো হাজার পাজেরো থাকলেও একটাও মার্ক জেসন -লরা জেসন নাই-এইটা আমারে কাইট্যা ফালাইলেও বিশ্বাস করতাম না!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।