এখন থেকে আমি 'মুক্ত মানব' -এই নিক-এ লিখবো। আপনি আমন্ত্রিত।
লকার রুমের শ্রদ্ধেয় দিগম্বর...
এ দেশের প্রায় সব স্কুল-কলেজেই জিমনেশিয়াম-সুইমিংপুল ইত্যাদি থাকে। আর, দাড়ির ব্যাপারে দুনিয়াব্যাপী রয়েছে মিশ্র ধারণা। কেউ পুজনীয় দাড়িঅলা , কারো পোড়ানো হয় কুশপুতুল।
যাহো'ক, মোটামুটি সবাই একমত যে কোনো কোনো শশ্রুমন্ডিত চেহারা দেখলে মনে একটা স্টেরিওটিপিক্যাল সমীহভাব জাগে। কেমন হুজুর হুজুর কিম্বা ঠাকুর ঠাকুর লাগে। তো সেরকম একটা সৌম্য দাড়িঅলা প্রফেসর , যাঁকে এতোদিন ক্যাম্পাসে দেখে ভাবতাম এই লোক বাংলায় জন্মালে নির্ঘাত হতেন প্রেমের ঠাকুর, রাশিয়ায় জন্মালে টলস্টয়, আর আমাদের বাংলাদেশে জন্মালে কোন মানত-কাড়া পীর-ফকির, সেই তাঁকে পেলাম লকাররুমে। সুইমিংপুলে কিম্বা ব্যায়াম করতে বা খেলতে এসে সবাই আগে লকাররুমে ঢোকে পোশাক বদলাতে। আমি জিমে যাই মুলত: সাঁতার, ভলিবল আর ব্যাডমিন্টনের লোভে।
আমার বহু অনুমিত সৌম্য বাবাজি সদ্য স্নানসেরে এসেছেন। এখন নিজের লকার খুলে ভালো পোশাক পরছেন। কি আশ্চর্য, আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের ছেলেপুলেদের মতোই তিনিও আপার-আন্ডার সবরকমের অয়্যার বিসর্জন দিয়েই ধীরে সুস্থে আরেক কুতুবের সাথে গল্প করছেন আর নতুন পোশাক পরিধান করছেন। গল্প শেযে ধীরে সুস্থে বাড়ি যাবেন আর কি। এহেন রোল মডেলের সাথে এভাবে দ্যাখা হো'ক এতটা হয়তো আমি চাইনি।
টাশকি খেলাম তাই। পালাই পালাই..। ঠিক তখুনি: আরে তুমি যে? কেমন আছো....? লোকে দেখি ঠিকই বলে, যেখানে বাঘের ভয়, ..। একবার ভাবি এটা কি? আবার ভাবি, এ ব্যাটাও আমাদের দেশে জন্মালে ওয়াসার একটু পানির জন্য হাপিত্যেস করে শেযে ছিটকিনি লাগানো বাথরুমেই কাপড় পাল্টাতো। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে, শ্রদ্ধার কোন বস্তুনিস্ঠ কারন থেকে থাকলে তার সাথে দাড়ি থাকা -না থাকা কিম্বা লকাররুমে দিগম্বর হয়ে পোষাক পাল্টানোর তেমন জরুরী সম্পর্ক থাকার কথা না , তাইনা? গোলটা বাধে তখনি যখন আমাদের শ্রদ্ধার মুল কারণ হয় দাড়ি কিম্বা পোশাকের দৈর্ঘ্য, আরো গভীর কোন মানবিক গুনাবলী নয়।
মধ্যরাতের অ্যাডাম-টিজার
শীতের এক রাতে নির্জন রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগন্যালের লাল বাতিতে দাঁড়িয়ে আছি। স্টিয়ারিং-এ হাত, বাতি সবুজ হলে আবার পথ চলতে হবে। ঘরে ফিরছি। আনমনা। হর্নের শব্দে সচকিত হলাম।
পাশ ফিরে চেয়ে দেখি এক কার বোঝাই টিন-এজ বালিকারা, আমার মনযোগ আকর্ষনের চেস্টা করছে, আর সবাই উড়ণ্ত চুম্মা ছুঁড়ছে আমার দিকে। আমি কি আর করবো, মাথার বেসবল ক্যাপটার কার্নিশে একটু তর্জনী ছুঁয়ে, মৃদু হেসে, লাইট সবুজ হ'লে গাড়ী চালিয়ে চলে গেলাম। ফেরার পথে ভাবছিলাম, যত দোষ, ইভটিজার ঘোষ? নাকি সেটাও একটা স্টেরিওটাইপ?!
[উৎসর্গ: বাংলার সেই প্রিয় প্রজন্মকে, যার টি-শার্টের বুকে এস.এম. সুলতান আর পিঠে মাশরাফি মুর্তাজা। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।