চোখ মেলে দেখি জানালায় ভোরের পাখি
ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের তারিখটা যথারীতি জ্বলজ্বল করছে অন্য দিনের মতই। ২৬ আগস্ট। এক এক করে দিন চলে যায়, মাস ফুরিয়ে যায়; আস্তে করে হারায় তরঙ্গায়িত সময়ের রেশ। যদিও এখনও চলার পথে কোন পরিবর্তনের ছাপ পাইনা, শুভ্র কাঁশের ছোয়া হিল্লোলিত করতে পারেনি নিরন্ন প্রহর, তবুও নিস্প্রাণ বর্ষপঞ্জিকা নিরবে জানিয়ে দিচ্ছে এখন শরৎ চলছে। অথচ কতদিন ধরে আমি ওর অপেক্ষায় আছি।
গভীর নীলে হালকা সাদা মেঘে
শরৎ আঁকো তুমি
সিক্ত বুকে অঝোর হাসি ঢেলে
সাজাও জলাভুমি।
অনাহুত ব্যস্ততায় বোধ করি আমাদের প্রানের মেলায় নেমে এসেছে সুনসান নিরবতা। শরৎ আসেনি ভেবে বুঝি অবচেতন মন কোন সাড়া দেয়না। কতদিন ধরে ভাবছি কিছু একটা লিখব। লিখতে হবে।
লিখার জন্য বসি আর সবার লেখা পড়তে পড়তে সময় চলে যায়। শূন্য পড়ে থাকে নিজের খাতা। শরৎ আসেনি ভেবে কী বোর্ডে কোন ঢেউ ওঠেনা। এ নিরবতা ভাঙতেই হবে। তাই..
ফজরান্তে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠি।
কিছু একটা লেখার জন্য সকল ইচ্ছ কে একত্রিত করি। হোক যাচ্ছেতাই তবু কিছু একটা হোক। আচ্ছা তার আগে এককাপ চা খেলে কেমন হয়।
যদিও চায়ের অব্যাস নেই। তথাপি এখন একচাপ চা খাওয়া যেতেই পারে।
যদি তাতে খুলে যায় মস্তিস্কের দ্বার। যদি এই ফাকে একবার ভাবের জগতে ঘুরে আসা যায়। সুতরাং এককাপ চা হয়ে যাক, সাথে কিছু টা হয়ে যাক। এবং সেই সাথে চলতে থাকুক সেদিনের গল্প যেদিন আমি এককাপ চা পান করেছিলাম।
......................................
সেদিন হঠাৎই ঝুপ করে একটু বৃস্টি নেমেছিলো।
কতক্ষন থাকল?..বোধহয় পনের মিনিট। তিনটা পিচ্চি মেয়ে এসে বৃস্টিতে ভিজতে লাগল। হায় হায় জ্বর আসবে তো..!
আমি বুঝলেও ওরা বুঝতে চায়না। ওদের অত বোঝার দরকারও নেই। ওদের আম্মুরা এখন কাছে নেই সুতরাং এই তো সুযোগ......স্কুল ব্যাগটা এক কোনায় দাড়ানো রিকশার মধ্যে রেখে ওরা সৃস্টি সুখের উল্লাসে নাচানাচি করছে।
জামা, জুতো, চুলের ফিতা, মোজায় কারুকাজ করা লার ফুল, হাতের মুঠোয় থাকা মুখ মোছার রুমাল সব ভিজে যাচ্ছে। এর মধ্যে আরেকটা এসে যোগ দিয়েছে। বৃস্টিটা জোরসে নামলে হয়তো পিচ্চি পাচ্চাদের মিছিল হয়ে যেতো। বৃস্টিতে ভেজা..এ এক সংক্রামক ব্যাধির মতো। কাউকে ভিজতে দেখলেই মনের মধ্যে উসখুশ করে..
নামব নাকি
না থাক
আচ্ছা নামি
না জ্বর আসবে
আম্মু বকবে
আচ্ছা বকুক না হয়
আম্মু তো দেখবেই না, যেতে যেতে শুকিয়ে যাবে।
যদি না শুকায়
ধ্যাৎ, একটু নামি, কিছু হবেনা।
না থাক
আচ্ছা হাতটা ভিজাই
পায়ে একটু দেই না কেন
ইশ, জুতাই তো ভিজে গেল
আরে ধ্যাৎ মাথায় দেখি কয়েক ফোটা পানি পড়েছে।
যাহ, নেমে যাই...
শেষ পর্যন্ত নেমেই যাই...
হারে রেরে রেরে আমায় ছেড়ে দেরে দে রে ....
এভাবেই হয়তো ওরা নেমে গেল। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম।
পনের মিনিট মাত্র...বৃস্টি হলো সারা।
ভেজা বাতাসের ছোয়ায় শরীরটা আদ্র। আজ যদি সারাদিন বৃস্টি হতো!! যদি সারাদিন পিচ্চিগুলো নেচে গেয়ে বেড়াত জলপরীদের সাথে!! বেশ মজা হতো
লোকজন আবার রাস্তায় নামা শূরু করেছে। পনের মিনিটের স্থবিরতা শেষে আবার চঞ্চল ঢাকার ফুটপাত। দোকানের চায়ের কেটলিতে পানি ফুটছে। হ্যা, চা খাবার একটা মোক্ষন সময়।
চা খাবার ছলে মনোযোগটা একটু সরে যায়। আবার যখন দৃস্টি ফেরাই... ওরে বাবা কতগুলো জমেছে।
এক, দুই, তিন ... সাত পর্যন্ত এসেই আমি অফ হয়ে যাই।
..........................................
ডিআইজির স্ত্রী কি সাতটি সন্তানের জন্ম দিয়ে কোন অপরাধ করে ফেলেছিলো। একসাথে সাত সন্তানের জন্ম দেয়া নতুন ঘটনা নয়।
এইতো সেদিনও পত্রিকায় দেখলাম উন্নত বিশ্বেরই কোন এক মা সাতটি সন্তানের গর্বিত মা হয়েছিলেন। এমনকি বাংলাদেশেও এক মা ছয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন দেখলাম এইতো সেদিন। কথাগুলো অত্তন্ত সহানুভুতির সাথে ভাবতাম কিছু দিন আগ পর্যন্তও। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আসলে এই এখনও আমি পৃথিবীটাকে যতটা সরলভাবে দেখি পৃথিবী আসলে মোটেই ততটা সরল নয়।
ভদ্রতা আর সামাজিকতার মুখোশের আড়ালে পদে পদে হা করে আছে স্বার্থবাদিতা, অসভ্যতা আর ভয়ানক অপরাধের হাতছানি। কেবল আমিই রয়ে গেছি সহজ সরল একদম পল্লী গায়ের সেই গেদু চাচার মত। ডিআইজির স্ত্রীর আবেগঘন কথা তাই আমাকে সহজেই বিভ্রান্ত করে দিয়েছিলো। জানিনা আর কাউকে করেছিলো কিনা।
এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
সাত শিশুর পিতৃত্ব কি মাতৃত্ব এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কেন এই সাতশিশুকে একত্রিত করা হয়েছিলো, কিভাবে একত্রিত করা হয়েছিলো.. জবাব এখনও পর্দার আড়ালে। ওদের কি সত্য সত্যই প্রতিপালনের জন্য আনা হয়েছিলো! যদি তাই হয় তাহলে কেন এত লুকোচুরি, নিয়ম অনুযায়ী পালনের দ্বায়িত্ব নিলে সাত কেন সত্তর শিশু নিলেও আপত্তি থাকার কথা নয়। শিশুদের কি চুরি করে আনা হয়েছিলো !! যদি তাই হতো তাহলে এতদিনে বাংলাদেশের কোন এক প্রান্ত থেকে কেউ একজনও কি ওদের অভিভাবকত্ব দাবি করত না!! নিদেন পক্ষে একটু খোজখবর! ওদের কি পাচার কিংবা ... অন্য কোন দুরভিসন্ধি নিয়ে ,,, নাহ, না জেনে একজন সম্পর্কে এতটা খারাপ ধারণা পোষনের কোন যুক্তি আমার কাছে নেই। আমি বোধহয় এখনও সেই সরলই রয়ে গেছি।
চায়ের কাপ শূন্য হয়ে গেছে সে অনেকক্ষণ। মিলিয়ে গেছে ইষদোষ্ণ তরলের সর্বশেষ গন্ধটুকু। মরমী শিল্পি আব্দুল আলীম একমনে গেয়ে চলছেন কে যাও ভাটির দেশের নাইয়ারে ভাই জারি গান গাইয়া। ফুলদানীর যত্নহীন ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ওদের বড় সৌভাগ্যবান মনে হয়। কৃত্রিম হলেও ওদের একটা অলস অভিভাবক আছে।
অথচ সাতটি মানব শিশুর অভিভাবক কে তাই জানেনা অভাগা পৃথিবী।
শুনেছি আইনের হেফাজতে শিশুগুলি মোটেই স্বাচ্ছন্দে নেই। ওদেরকে কি ডিআইজির দ্বায়িত্বে দিয়ে দেয়া যায়না!! সাত শিশুর প্রতিপালনের মত আর্থিক সামর্থ তার আছে। যদি সত্যিই ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের থেকে থাকে তাহলে ওটাই শিশুদের সবচেয়ে নিরাপদ, নিঝঞ্জাট আশ্রয়স্থল। আর আদতে কোন দুরভিসন্ধি থেকে থাকে তাহলেও এখন নিরাপদ ধরা যায়।
কারণ মিডিয়ার চোখ এখন ওদিকে চলে গেছে, নিয়মিত ফলোআপে থাকবে নিশ্চয়ই।
আমার এই ভাবনাটা কতটুকু পরিপক্ক সেটা যাচাইয়ের কোন সুযোগ নেই। চায়ের কাপ কিংবা আয়েশী শরৎ বড়জোড় ভাবনার খোরাক জোগাতে পারে। একটা সমাধানের জন্য আমরা তাকিয়ে আছি আইন, আদালত, সমাজ, রাস্ট্র.. এবং আরো নানাবিধ মানদন্ডের দিকে।
অলস সময় তর তরে বরে বয়ে চলে।
সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়, রোদের আঁচে খুলতে থাকে পৃথিবীর পর্ণপুট। শরৎ নীলের সীমানায় পেজা তুলোর মেঘ আমাকে বিশেষিত করতে থাকে।
আমি পৃথিবীর সকল শিশুদের জন্য ফুলে ফুলে দুলে ওঠা ঝঞ্জাটমুক্ত কাশবনের প্রত্যাশা করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।