স্বপ্নগুলো শুধু স্বপ্ন হিসেবে রেখে দিতে চাই না , বাস্তবতার আলোয় স্বপ্নগুলো আরো রঙ্গিন করতে চাই ।
টিভি বিজ্ঞাপনের নানা বাহারী বিজ্ঞাপনে আমরা সবাই এখন কম বেশি এনার্জি ড্রিঙ্কস পান করি । কিন্তু এই এনার্জি ড্রিঙ্কসের উপাদান সমূহ কি কি ??? এবং এগুলো কি পরিমানে আছে আছে তার খবর কি আমরা রাখি !!!
‘দেশী পণ্য খেয়ে হও ধন্য বা দেশের টাকা দেশে রাখতে, দেশের তৈরি পণ্য ব্যবহার করি। ’ এমন নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তুলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা এই এনার্জি ড্রিঙ্কসের মাধ্যমেই । অথচ এই এনার্জি ড্রিঙ্কসের উপাদানের কোন সঠিক তথ্য ড্রিঙ্কসের বোতলের লেবেলে লেখা থাকে না ।
এমনকি অনেক সময় লেখা থাকে না উৎপাদন ও বাজারজাতের সঠিক তারিখ ।
কিছুদিন আগে , শিশুদের জন্য তৈরি অনেক কোমল পানীয়তে ভায়াগ্রা উৎপাদনকারী পদার্থের অস্তিত্বের মিলেছে। এ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এনার্জি ড্রিংকসের পাশাপাশি শিশুদের জন্য তৈরি কোমল পানীয়রও পরীক্ষা শুরু করে। আর তাতেই মেলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য !!!
সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি প্রতিবেদনে প্রমান মিলেছে , দেশের ৭ টি শীর্ষস্থানীয় এনার্জি ড্রিঙ্কসের মধ্যেও রয়েছে মানবদেহের জন্য মারাত্বক কিছু ক্ষতিকর পদার্থের উপাদান ।
এই এনার্জি ড্রিঙ্কসগুলো হল ম্যানপাওয়ার, হর্স ফিলিংস, রয়েল টাইগার, ব্ল্যাক হর্স , স্পিড ও ভিগো-বি সহ ৭টি । এই ৭ টি এনার্জি ড্রিঙ্কসে মারাত্বক পরিমাণে ক্যাফেইন পাওয়া গেছে যা মানব দেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক । আন্তর্জাতিকমান অনুযায়ী প্রতি মিলিলিটারে যদি ২৫ ভাগ ক্যাফেইন থাকে তাও উচ্চ মাত্রার। কিন্ত যে ৭টি এনার্জি ড্রিংকস সম্পর্কে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে তাতে শতকরা ৮০ ভাগের মতো ক্যাফেইন আছে। যা মানবদেহের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ।
সম্প্রতি ক্ষতিকর পদার্থ থাকায় যে সাতটি কোমল এনার্জি ড্রিঙ্কসের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেগুলো দিব্যি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ৬ মাস পর পর বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্যের মনিটরিং করার কথা থাকলেও তা মানা হয় না। অনেক সময় টাকার জোরে নিয়মকানুন না মেনেই অনেক কোম্পানি কোমল পানীয় উৎপাদনের লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। আর অনুমোদন পাওয়ার পরই ইচ্ছেমতো মাদকজাতীয় দ্রব্য দিয়ে এনর্জি ড্রিংকস তৈরি করছে। এমন বিশটি এনার্জি ড্রিংকস বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের নিয়মানুযায়ী, পণ্য উৎপাদনের মেয়াদ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, মূল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা, সর্বোচ খুচরা মূল্য, পণ্যের গুণগতমানের চিহ্ন বা উৎপাদক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা অবশ্যই পণ্যের গায়ে থাকতে হবে। খাদ্য ও পানীয়র ক্ষেত্রে পণ্যের লেবেল বা মোড়ক থাকতে হবে। মোড়কে পানীয়র রং, ফ্লেভার, প্রিজারভেটিভ ও আর্টিফিশিয়াল সুইটনার লিপিবদ্ধ থাকা বাধ্যতামূলক। পানীয়তে কোন তেজস্ক্রিয় আছে কিনা তাও লিখতে হবে। পানীয় সঠিক পরিবেশে উৎপাদিত হচ্ছে কি-না এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কি-না তা মনিটরিং করবে বিএসটিআই।
সরাসরি কারখানা থেকে কোমল পানীয় সংগ্রহ করে বিএসটিআই তা তাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করবে। প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবলমাত্র বিএসটিআই ওই পানীয় বা পণ্যের লাইসেন্স দিতে পারবে। অন্যথায় দেয়ার ন্যূনতম কোন সুযোগ নেই।
কোমল পানীয়র ক্ষেত্রে বাৎসরিক ন্যূনতম লাইসেন্স ফি ১৮৭৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ লাইসেন্স ফি ১৫ লাখ টাকা।
বিএসটিআইর লাইসেন্স পাওয়ার আগে কোনক্রমেই কোন কোমল পানীয় বা অন্য কোন পণ্য বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের বিষয়ে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। এমনকি পণ্যের উৎপাদনসহ পুরো কোম্পানি সিলগালা করে দেয়ার বিধান আছে। প্রতি ৩ বছর পর পণ্যের মান যাচাইপূর্বক লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, বাজারে কি পরিমাণ কোমল পানীয় ও শিশুদের কোমল পানীয় আছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই তাদের কাছে।
এর কোন সঠিক মনিটরিং হয় না। শুধু মনিটরিংয়ের নামে বিএসটিআইয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের পকেট ভারি হয়। ৩ বছর পর পর রীতিমতো লাইসেন্স নবায়ন করার কথা। লাইসেন্স নবায়নের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের বিষয়েও মনিটরিং হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।
দীর্ঘ বছর পরেও অনেক পণ্যের মনিটরিং হয় না। প্রয়োজনও হয় না। কারণ নির্ধারিত সময়ের আগেই বিএসটিআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কাছে চলে যায় মোটা অঙ্কের নজরানা। ফলে মনিটরিংয়ের আর প্রয়োজন পড়ে না।
বিএসটিআইয়ের কিছু সূত্রে জানা গেছে, বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ পণ্যের গায়ে বিএসটিআই অনুমোদিত লেখা যে সিল দেয়া থাকে তা নকল।
এসব নকল সিলও আসল সিলের মতো তৈরি করে বিএসটিআইয়ের কোন কোন অসাধু কর্মকর্তা তা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। আবার অনেক অখ্যাত কোমল পানীয়র মালিক নিজেরাই বিএসটিআইয়ের সিল লাগিয়ে দেয়। যতদিন বিষয়টি বিএসটিআইয়ের নজরে আসে ততদিনে ওই কোম্পানি হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
সবচেয়ে অবাক বিষয় কোন কোন শিশু খাদ্যের গায়ে যে বিএসটিআইয়ের হলোগ্রাম লাগানো থাকে তা নকল। বাজারে কম করে হলেও অন্তত ৫শ’ প্রকার শিশুখাদ্য রয়েছে যাদের কোন লাইসেন্সই নেই।
অনেক পণ্যের উৎপাদনের মেয়াদ ও উত্তীর্ণ মেয়াদও লেখা থাকে না। অধিকাংশ পণ্যের গায়ে থাকা বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সের ছাপ এতই দুর্বল যে দেখেই বোঝা যায় এটি নকল বিএসটিআইয়ের সিল।
অথচ প্রতিটি শিশু খাদ্যের গায়েই ‘বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত’ লেখা আছে। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিএসটিআইয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং ফিল্ড অফিসারদের যোগসাজশ রয়েছে। কারণ মাঠ পর্যায়ে বিক্রীত পণ্য বিএসটিআইর অনুমোদিত কি-না তা দেখভালের দায়িত্ব থাকে ফিল্ড অফিসারের।
কোন কোন পণ্য বাজারে ব্যাপকহারে চালু হলে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাই হয় না। কারণ ফিল্ড অফিসার কোম্পানিতে যাওয়া মাত্র তার সব পকেট টাকায় ভরে যায়! আবার পকেটে টাকা ধরার মতো জায়গা না থাকলে চেক ইস্যু হয়ে যায় !!!
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে আরও দেখা যায় , কোমল পানীয়র ক্ষেত্রে এ চিত্র আরও ভয়াবহ। বাজারে এমন অনেক কোমল পানীয় আছে যা যৌনশক্তি বর্ধক বৃদ্ধি পায়। অথচ এসব কোমল পানীয়র গায়ে বিএসটিআইয়ের সিল আছে, যা রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। এসব কোমল পানীয় দীর্ঘ দিন সেবন করলে সেবনকারী মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হতে বাধ্য।
যদিও নিয়মানুযায়ী বিএসটিআই অনুমোদিত প্রতিটি পণ্যের প্রতি ৬ মাস পর মান মনিটরিং করার কথা। কিন্তু মনিটরিং এর কিছুই বাজারে তেমন দেখা যায় না ।
বিএসটিআই মহাপরিচালকের দৃষ্টি এ বিষয়ে আকর্ষণ করা হলে তিনি একটি মন্তব্য করেন , যা অনেকটা হাস্যকর বটে । তিনে বলেন যে , '' এ ধরনের পানীয় যে বাজারে আছে, তা আমার জানা নেই। অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রাণের জুস সম্পর্কে অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিএসটিআইয়ের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সারাদেশে প্রাণের ম্যাংগো জুসসহ সব ধরনের কোমল পানীয় দেদার বিক্রি হচ্ছে। মহাপরিচালক আরও বলেন , অনেক সময় কোমল পানীয় বা অন্যান্য দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম মেনেই বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়। কিন্তু অনুমোদন নেয়ার পর তারা নিজেদের মতো ভেজাল পণ্য উৎপাদন শুরু করে। বিষয়টি বিএসটিআইয়ের জানা।
কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সব সময়ই তা ভালভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে ভবিষ্যতে মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যে ল্যাবরেটরিতে কোমল পানীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে সেই ল্যাবরেটরির মান নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিজেই পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। আর রিপোর্টটি অন্তত ৭ থেকে ৮ মাস আগে তৈরি। "
সবশেষে , বাজারে প্রচলিত কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস সম্পর্কে আন্তর্জাতিকমানের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেনঃ , কোমলপানীয় বেশি পরিমাণে পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে।
শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের কোমলপানীয় সেবন না করাই ভাল। এতে তারা দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা থেকে রক্ষা পাবে। যেসব কোমলপানীয়তে মাদক বা মাদক জাতীয় দ্রব্যাদি থাকে সেসব মাদকে অতিমাত্রায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। যেসব কোমলপানীয়তে মাদক জাতীয় বা নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি থাকে সেসব মাদকে এসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এছাড়া আরও জটিলরোগে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে এ ধরনের পানীয়তে লিভার ও কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাক
তাই এইসব এনার্জি ড্রিঙ্কস পান থেকে নিজে সাবধান থাকুন , অন্যকেও সাবধান করুন । শিশুদেরকে এসব এনার্জি ড্রিঙ্কস পান থেকে দূরে রাখুন ।
মূল খবরঃ নিউজ পেপার নিউজ জানতে এইখানে প্রবেশ করুন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।