আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাউজিং কোম্পানির ব্যবসার নামে প্রতারণা ও লুণ্ঠন।। ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ।।



হাউজিং কোম্পানির ব্যবসার নামে প্রতারণা ও লুণ্ঠন। । ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষঃ রাজধানীর বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির প্লট কিনে হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জীবনের শেষ সম্বল বিক্রি করে, সঞ্চিত টাকা দিয়ে কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্লটের জন্য নির্ধারিত টাকা দিলেও বিভিন্ন কোম্পানি অনেক গ্রহীতাকে প্লট বুঝিয়ে দেয়নি। প্লট বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলা হলে কোম্পানি থেকে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।

ওয়ান ইলেভেনের পর কয়েক মাস এ সকল হাউজিং কোম্পানির অনেকে গা ঢাকা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিবেশ নেই। মালিকরা নিজেরাই এখন কার্যক্রম সরাসরি পরিচালনা করছেন। অথচ অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, প্রবাসীরাসহ নানা পেশার লোকজন।

এছাড়া জায়গাজমি জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক দফা বিক্রি করে শত শত লোককে নিঃস্ব করে দিয়েছে অনেক কোম্পানি। এই ধরনের শক্তিশালী চক্রের হাতে বাড্ডা, খিলক্ষেত, উত্তরা, দক্ষিণ খান, উত্তরখান, বিমান বন্দর ও তুরাগ থানাসহ ৭টি থানার কয়েক লাখ বাসিন্দা জিম্মি হয়ে আছে। অন্যদিকে হাউজিং ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। যদিও সেখানেও সরকারী তদারকি বা মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। সচেতন মহলের প্রত্যাশা যে, হাউজিং খাত ব্যবসা হিসেবে নয় সেবা খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক আর জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকুক এবং কম লাভ করে সুনাম অর্জন করুক।

এ ক্ষেত্রে সরকার মূল্য নির্ধারণ ও সহায়তা করাসহ সম্পূর্ণ মনিটরিং করতে পারে। এক শ্রেণীর হাউজিং ব্যবসায়ী জালিয়াতি, জবর দখল করেও গ্রহীতাদের নির্ধারিত সময় প্লট না দিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষায় রেখে নানা অজুহাত দেখিয়ে বেশি টাকা আদায় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে সম্প্রতি এ অবস্থা উত্তরণে প্রস্তাবিত বেসরকারি প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০০৮ বর্তমান সরকার অনুমোদন করেছে। মোহাম্মদী হাউজিংয়ের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক গ্রহীতা অভিযোগ করেন যে, ভাল পরিবেশ দেখিয়ে নিচু স্থানে প্লট বরাদ্দ, ১০ কাঠার স্থলে ৫ কাঠা ও একই প্লট একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করা হয়েছে। কোম্পানির নানা প্রলোভনে পড়ে সহজ-সরল বিভিন্ন পেশার মানুষ ও প্রবাসী এখন সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

প্লট চাইতে গেলে বলা হয়, যখন খুশি যেখানে খুশি প্লট দিলে তা গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় প্লট দেয়া হবে না। অভিযোগকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোঃ কাওছার ভুঁইয়া জানান যে, মোহাম্মদী হাউজিংয়ের নবীনগর প্রকল্পে ১২ শতাংশ জমি ২০০০ সালে ২১ লাখ টাকা দিয়ে তিনি ক্রয় করেন। ২ বছরের মধ্যে এই জায়গা মালিক হিসেবে তাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য চুক্তিপত্র করা হয়। ২০০৫ সালে জমির দলিল ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। চলতি বছর জমির নামজারি, পর্চাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ক্রেতাকে মোহাম্মদী হাউজিং কোম্পানি প্রদান করে।

গত ২০ মে ক্রেতাকে কোম্পানি থেকে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র দেয়া হয়। কিন্ত অদ্যাবধি সেই জমি ক্রেতাকে কোম্পানি থেকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। জমি এখনো নিচু স্থানে রয়েছে এবং সেখানে মাটি ভরাটের কাজ হচ্ছে মন্থর গতিতে। বিগত ৮ বছর যাবৎ কাওছার ভুঁইয়াকে প্লট বুঝিয়ে দেয়ার জন্য শতাধিকবার কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ইতিমধ্যে তিনি এই বিষয়ে জানতে মোহাম্মদী হাউজিংয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে যান।

এই গ্রহীতার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় তার পক্ষ থেকে উক্ত কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে একটি জিডি করা হয়। আমেরিকা প্রবাসী কাইয়ুম খান, সর্দার আলম, জাকারিয়া স্বপন, কচি ও আবুল হাশেম মোহাম্মদী হাউজিং থেকে প্লট ক্রয় করে অনুরূপ প্রতারণার শিকার বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কানাডা প্রবাসী সৈয়দ জালাল আহমেদ ১৯৯৪ সালে প্রতি কাঠা ২০ হাজার টাকা করে ৪৭ কাঠা জমি কেনেন। তাকে মোহাম্মদপুর যে দাগে এই জমি দেয়ার চুক্তিপত্র হয়েছিল তাকে সেখানে জমি না দিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে পানির নিচে মাত্র ১০ কাঠা জমি দেয়া হয়।

বাকি ৩৭ কাঠা এখনও তাকে দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। জমি চাইতে গেলে জালাল আহমেদকে হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগে প্রকাশ। তিনি আত্মরক্ষার জন্য পুনরায় কানাডায় ফিরে যান বলে জানা যায়। ডা. হোসেন আহমেদ, অ্যাডভোকেট আজম, প্রকৌশলী নূরুদ্দিন, আলী আহমেদ এই হাউজিং থেকে প্লট ক্রয় করে একই অবস্থার শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্লট ক্রয় করে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

কাটাসুর ও রামচন্দ্রপুর মৌজায় এবং বচিলা এলাকার পাশে সরকারি দুইটি খাল ও বিপুল পরিমাণ খাস জমি মোহাম্মদী হাউজিং জবর দখল করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এই ব্যাপারে মোহাম্মদী হাউজিং কোম্পানির চেয়ারম্যান হাজী মোঃ সিরাজউদ্দৌলা ওরফে হাজী সিরাজ বলেন, তার কোম্পানির প্লট ক্রয় করে কেউ হয়রানির শিকার হয়নি। অফিসে কোন গ্রহীতার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি। তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে কোন সমস্যা নেই। উক্ত গ্রহীতাদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।

ধানমন্ডি ১২ নম্বর রোডে জেএমসি হাউজিং কোম্পানির মোহাম্মদপুর এলাকায় মনিশা নামক প্রজেক্ট থেকে ১৫টি পরিবার প্লট ক্রয় করে সাত বছর যাবৎ হয়রানির শিকার হচ্ছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী প্লট দেয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও জায়গা ভরাটের মাত্র ৩০ ভাগ কাজ হয়েছে। সাত বছরে ৩০ ভাগ কাজ শেষ হলেও বাকি ৭০ ভাগ কাজ শেষ করে প্লট বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গ্রহীতাদের মধ্যে রওশন জাহান কচি জেএমসি অফিসের প্লট হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে গেলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাকে বের করে দেয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্লট গ্রহীতাদের মধ্যে অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করেছেন।

ব্যাংক থেকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্লট না পেয়ে তারা এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাস্তায় নামার উপক্রম বলে জানান। এ ব্যাপারে জেএমসির চেয়ারম্যান মেজবা উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অফিসে তার সঙ্গে দেখা করতে কোন সমস্যা নেই। কারো সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি। গ্রহীতাদের উক্ত অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।

খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের ১৫৫১ জন প্লট মালিক নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধ করেও তিন বছর যাবৎ প্লট পাচ্ছেন না। প্রকল্পের মালিক পরিবর্তন হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়। চুক্তি অনুযায়ী বর্তমান মালিককে প্লট প্রতি বছরে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি প্লট প্রতি তিন লাখ টাকা করে দাবি করছেন। এই টাকা না দিলে কাউকে প্লট দেয়া হবে না বলে প্রকল্পের মালিক গ্রহীতাদের সাফ জানিয়ে দেন।

এর প্রতিবাদে গ্রহীতারা নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ১৯৯৬ সালে গ্রহীতারা প্লট ক্রয় করেছিলেন। বনরূপা হাউজিং প্রকল্পের মালিক শফিক আহমেদের সঙ্গে তার গুলশানের অফিসে গতকাল বিকেলে ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড্ডা থানা এলাকার জায়গা-জমি জবর দখল ও জাল-জালিয়াতি চক্রের দলনেতা মোবারক দেওয়ান, আকতার হোসেন পাতিরা, শাহীনুর মারফতের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সম্প্রতি কয়েকশ' বাসিন্দা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে বাড্ডাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, নারী নির্যাতন, ডাকাতি, অপহরণসহ ২৩টি মামলা রয়েছে।

সম্প্রতি র‌্যাব তিন নেতা ও তার সহযোগীদের অস্ত্র ও ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করেছে। উত্তরা কাচকুরা সফির নেতৃত্বে রয়েছে আরো একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্র নিরীহ মানুষের জায়গা-জমি জবর দখল এবং সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধে জড়িত। বিমান বন্দর সূত্রে জানা যায়, সফি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ব্যাগ টানা পার্টির সদস্য ছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.