আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নময় বিকেল স্বপ্নময় অতীত

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক

প্রবাস জীবনে সময় যেন সোনার হরিন। সারাক্ষন এটা ওটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাচ্চাদের দৌড়ঝাপ, সংসারের টুকিটাকি কাজে সময় কোন ফাক দিয়ে পেরিয়ে যায় টেরও পাই না। মাঝে মাঝে সামারে বিকেলটা কিছুটা ফুরফুরে মুডে থাকি। বাচ্চাদেরকে নিয়ে তাদের বাবা পার্কে যায়।

শুধু তখনই আমি একা নিজের মত কিছু অবসর পাই। সে সময়টা হয়ে পড়ে একান্ত আমার। রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে আবেশে সময়টা পার করে দেই। কত যে দুষ্প্রাপ্য আমার এই অবসর!!! ফোন জিনিসটা আমার খুব পছন্দের নয়। খুব একটা ফোন ধরিনা।

আনসারিং মেশিনে বেজে উঠে নানা মেসেজ। খুব কাছের কেউ করলে পরে ফোন করি। মানুষ উপেক্ষা পছন্দ করে না। তাই আমাকে ফোন করার মত খুব বেশী কেউ নেই। খুতখুতে স্বভাবের এই আমি দূরত্ব রেখে চলি বলে অন্যরাও আমাকে বিরক্ত করে না।

কিছু কিছু মানুষ সমালোচনা করে তবে আমার নির্লিপ্ততায় এক সময় উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। সেদিন কি মনে করে ফোনের শব্দে ঘাড় ঘুরালাম। "হ্যালো" "কেমন আছিস?" "চিনতে পারছি না। নাম বলুন। " "রুনিয়া।

" "কোন রুনিয়া?" "কয়টা রুনিয়াকে চিনিস তুই? তোর স্কুলের ক্লাশমেট। " "ওহ রুনিয়া। কতদিন পরে। কেমন আছিস? কোথায় আছিস?" "আছি অষ্ট্রেলিয়াতে। " "আমার নম্বর পেলি কোথায়?" "কালামদের কাছ থেকে।

কালাম আমার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে। তোদের ওখানেই তো থাকে। " "হ্যা। ওকে চিনেছি। এক বাসায় দেখা হয়েছে।

যাক কষ্ট করে ফোন করলি। এবার বল কি করছিস। " "চাকুরি। পার্মানেন্ট হয়েছে। " "গুড নিউজ।

নিশ্চয়ই হোয়াইট কালার। " "অফ কোর্স। কি মনে করিস আমাকে? অড জব করব?" "না তা মনে করিনি। আমি কি বেকুব নাকি। তোর একাডেমিক পারফরমেন্স কি আমি ভুলে গেছি না কিরে?" "তোর খবর কি? তুই কি এখনও স্কার্ফ পড়িস?" আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল।

"হ্যা, ওটা এখনও আছে। আগে তোর কথাটা শেষ কর। তোর কয় বাচ্চা?" "বাচ্চা নেই। " "নেই মানে? খোলাসা করে বল। কি সমস্যা, কবে সমস্যা টের পেলি - এইসব।

" "তুই জানিস না? কালাম বলে নি?" "কি জানব? কি বলবে? আর কালামদের সাথে আমাদের ততটা দেখা হয় না। ওরা একটু দূরে থাকে। " "অপুর সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। " আমি হতভম্ব। একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।

কি বলব বুঝে উঠতে না পেরে জানতে চাইলাম, "কবে? রিসেন্টলি?" "না অনেক আগে। বাদ দে ওসব। তোর কথা বল। " শুরু করলাম আমার কথা। কিন্তু কোথায় যেন ছন্দপতন হয়ে গেল।

আমি কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। রুনিয়ার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল বৌভাতের আসরে। আমি ফাজলামি করছিলাম, "তোর বর তো মনে হচ্ছে খুব রোমান্টিক। আমারটার মত গবেট না। " "চুপ কর।

আমার সামনে এসব মিথ্যা চলবে না। " কত সে স্মৃতি। পিকনিকে গিয়ে একসাথে মাঠের উপরে দৌড়ানো, ক্লাসে প্রক্সি দেয়া। সব কিছু যেন প্লে ব্যাক হতে লাগল। আবারও বিষন্নতা আমায় ছেয়ে গেল।

মনে পড়ল রুনিয়ার অনার্স ক্লাশমেট হাবিবের কথা। একবার ভাবলাম হাবিবের কথাটা বলি, "হাবিবকে ফিরিয়ে দিয়ে তুই খুব ভুল করেছিস। " পরে চুপ করে গেলাম। ষোল বছর আগের একটি প্রসংগ কবর থেকে তুলে আনার মানে হয় না। সেদিন তো আমরাই মাথা নেড়ে বলেছিলাম, "প্রশ্নই আসে না রুনিয়া।

ওটা এক নাম্বারের একটা ফ্লার্ট। এইসব হ্যাংলা রোমিও টাইপের ছেলেদের কখনও গুরুত্ব দিতে নেই। " শুধু তাই নয়, হাবিবের জন্য রুনিয়ার কোন অনুভূতি কোন কালেই ছিল না। আজকে হয়ত হাবিবের কথা তুললে সে চিনতেই পারবে না। তারপরেও হাবিবের আপসেট মুখটা মনে পড়ল।

চরম ইরিটেটিং টাইপের হতে পারে কিন্তু রুনিয়াকে কখনই অসম্মান করত না। খুব বেশী দূর কথা এগোল না। আমি শুধু হ্যা হ্যা করে গেলাম। তানপুরার তার যেন ছিড়ে গেছে। শত চেষ্টাতেও সে তারকে বাজানো গেল না।

ফোন রেখে আমি মূর্তির মত বসে রইলাম। কে জানত জীবন এরকম উল্টে যাবে। মনে হল এই তো সেদিন। খালাম্মাকে বলছি, "খালাম্মা, বিয়ে কি রুনিয়াকে দিয়েছেন? না গয়নাগাটিকে? আপাদ মস্তক গহনায় আবৃত রুনিয়াকে দেখে তো জুয়েলারী দোকানের শো পিস মনে হচ্ছে। " খালম্মা হাসছেন।

বৌভাতে রুনিয়ার লাজুক হাসি দেখে বলেছিলাম, "শুধু মানুষটিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না। আমাদের কথাও মনে রাখতে হবে। আমি কিন্তু তোদের মনে রেখেছি। " সব কিছুই তাহলে মিথ্যা। মরিচীকা।

ভাবনার গহীন অতলে হারিয়ে গেলাম। আবারো সেই পুকুর নদী সব ভেসে উঠল আমার সামনে যেখানে আমাদের নিত্য বিকেল কেটে যেত হাস্য ক্রীড়ায়। বেশী ক্ষন ভাবনায় ডুবে থাকতে পারলাম না। আম্মূ বলে চিৎকার দিয়ে ঘরে ঢুকল আমার দুই সন্তান। আমি জেগে উঠে তাদের জড়িয়ে ধরলাম।

এক মুহুর্তে ভুলে গেলাম রুনিয়ার কথা। কিন্তু ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না। আজ ব্লগের পাতায় সেই কাহিনী ধরে রাখলাম। লেখাটির লিংক Click This Link (বলা ভাল নামধাম সব কাল্পনিক। ) ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।