সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুখ কোথায়? এ প্রশ্ন জিগাইলে সহজে উত্তর মিলবে না। আপনেরা নানা উত্তর দিবেন। উত্তর আমারও আছে। তাই আপনেদেরটা শুনার আগে আমি বলি, বাঙালি জীবনে শ্রেষ্ঠসুখ মৃত্যুতে।
কেন কইলাম? কেন কইলাম, সেইটা জানতে হইলে, একবার কপট মরণ মইরা দেখেন। আপনে সামান্য কিছু কাম-কাজ কইরা যদি মরতে পারেন। তাইলে, বাঙালি আপনেরে মহামানব বানায়া দিবে। সামান্য কামকাজ না থাকলেও ক্ষতি নাই। আপনে ধোয়াতুলসি পাতা হয়া যাবেন শুধু পরপারে যাইতে পারলে।
আর যদি চোর-বদমাশ, বাটপার, ডাকাত কিছু হন তাইলেও ক্ষতি নাই। আপনে নিদেনপক্ষে ভাল মানুষ অথবা সমাজসেবী উপাধি বিনামূল্যে পাইবেন। আপনে ফ্যাসিস্ট শাসক আছিলেন, অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করছিলেন? ক্ষতি নাই। আপনে স্মরণকালের সেরা জাতীয় নেতা হয়া যাবেন। এই কারণেই কই, বাঙালি জীবনের শ্রেষ্ঠসুখ মরণে।
বাঙালি মরলে তর্কের উর্ধে চইলা যায়। মজিদ মিয়া তো একটা মাজার তৈরি করছিল। শিক্ষিত লোকেরা মাথার ভিতরে হাজারটা মাজার বানায়া রাখছে। কোনোটা ডাকাইতের মাজার, কোনোটা আবার সাধুর মাজার।
ভাগ্যে মরণ না থাকলে অন্তত একটা চিপায় পইড়া দেখেন।
একটু বিপদে পড়লেও দেখবেন, আপনের সুখ অনুভূত হইতেছে। বিপদে পড়া লোকরে বাঙালি খুব পছন্দ করে। এরশাদ জেলে থেকে কীভাবে ভোটে জেতে সেইটা তো সবাই দেখছেন। ভুরি ভুরি চিপায় পড়া লোকের মহাপুরুষ হওয়ার উদাহরণ দেওয়া যাবে। এখন তার দরকার নাই।
এখন চিপায় পড়া একটা সাইট নিয়া আলোচনার মনোবাসনা করি। বিপদের মুহূর্তে সমালোচনা না কইরা লোকেরে বা সংগঠনরে মহাপুরুষ বা মহা সংগঠন বানায়া দেওয়া আমাদের খাসলত। এই খাসলত থিকা বের হওয়া কঠিন। কেউ যদি বের হইতে চায় তাইলে সে ভিলেন হয়া যাবে।
আপনেরা হয়তো জানেন, সচলায়তন সমস্যার একটা সমাধান হইছে।
কেমনে জানবেন? আপনেদের তো কেউ জানায় নাই। বিপদে যখন পড়ছে তখন আইসা ইস্যু জাগায়া গেছে। সমর্থন নিয়া গেছে। কিন্তু বিপদ যখন মুক্ত হইছে তখন আর সামহয়ারের পাবলিকরে খবরটা দিয়া যাওয়ার প্রয়োজন তারা মনে করে নাই। আমি কইতেছি।
সচলায়তনের সদস্যদের কাছে লেখা এক চিঠিতে সচলায়তন কর্তৃপক্ষ জানাইছেন, বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন দেখার ব্যবস্থা হইছে। কর্তৃপক্ষ প্রকারান্তরে বলছেন, এইটা টেকনিকাল সমস্যা আছিলো। যাই হউক, সচলায়তনের বোধোদয় ঘটছে। ওনারা নাকি ব্লগারদের জানাইছেন, আগের মতো, উস্কানি দেওয়া যাবে না। গালাগালি করা যাবে না।
সচল-সংকট মুক্তি উপলক্ষে ওনাদের অভিন্দন জানাই। সচলায়তন যখন চিপায় পড়ছিল, তখন আমরা সচল সংকটের সামাধান কামনা করছি। ব্যানের ঘটনা ঘটলে ব্যানমুক্তি দাবি করছি। টেকনিকাল ত্রুটির ঘটনা ঘটলে, আল্লার দরবারে দোয়া করছি। আমাদের টেকি-বন্ধুরা নানা বিচার-বিশ্লেষণ ও পরামর্শ দিছেন।
অবশেষে সচলায়তন বাংলাদেশ থেকে দেখা যাইতেছে।
কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতেছে ঘটনা এইখানে শেষ না। সচলায়তনের শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ থিকা নতুন ধরনের আক্রমণ শানিত করা হইতেছে। আমার ব্লগে বৃহৎ মুষ্ঠি (http://amarblog.com/thebigfist/3075) নামক এক ব্লগার লোকালটক, জামাল ভাস্কর, সুমন রহমান ও আমার বিরুদ্ধে নিবন্ধ রচনা করছেন। আমার বিরুদ্ধে নিবন্ধ রচনা নতুন ঘটনা না।
আমার জন্য আনন্দের এইকাজটা অনেকেই করছেন। আমিও তাদের উত্তর দিছি। উত্তর দিয়া তর্ক কইরা মজা পাইছি। এক্ষণে বৃহৎমুষ্ঠি নতুন মজার আমদানী ঘটাইলেন। তার পোস্টে সচলায়তনের শুভানুধ্যায়ীদের বাহবা রোল পইড়া গেছে।
সেইটাতেও আমার সমস্যা নাই। সমস্যা হইলো থুথুতে। ভুল বুইঝা বা না বুইঝা থুতু দিছে বৃহৎ। আমার কথা হইলো, আলোচনা করতে গিয়া থুতু ছিটানোর অভ্যাস যাদের তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না আমি। বমি আসে।
ফলে, বৃহৎমুষ্ঠির আপাত সুশীল আলোচনায় অংশ না নিয়া এই পোস্টের অবতারণা করলাম। সেইটা এইখানেই করলাম। কারণ আলোচনার জন্য সামহয়ারের মতো মজা আর কোথাও নাই।
লোকালটক, জামাল ভাস্কর, সুমন রহমান ও আমার মধ্যে মতামতের পার্থক্য বিস্তর। নানা সময়ে আমাদিগের মধ্যে নানা তর্ক-বিতর্ক, মনোমালিন্য হইছে।
কিন্তু বৃহৎ আমাদের মধ্যে একটা ঐক্যের সুর দেখতে পাইছেন। একই দোষে আমাদের দুষছেন। কী দোষ? সচলায়তন সংকটের সময় অনেকেই সচলায়তন ব্যান হইছে মনে কইরা ব্যানমুক্তি দাবি করছেন। কেউ কেউ পাল্টা দুয়ো দিছেন। আর আমরা ব্যানমুক্তি দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে সচলায়তনের কিছু সমালোচনাও করছি।
আমাদের কী করা উচিত আছিল? সচলায়তনকে মুক্তবুদ্ধির একটা প্রশ্নহীন প্লাটফর্মের মর্যাদা দিয়া এর পক্ষে জয়গান গাওয়া? সেইটা কেমনে সম্ভব?
লোকালটকের কথা জানি না। জামাল ভাস্কর ও সুমন রহমান নিজেরাই ভুক্তভোগী। সচলায়তন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না সেইটার প্রমাণ। সচলায়তন কীভাবে তাদের মতো লেখকের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে তা অনেকেই জানেন। বিস্তারিত বলার দরকার নাই।
শুধু এইটুকু বলি, এই দুইজনের কারণে এইটা বলার কোনো জায়গা নাই যে সচলায়তন সবার মতপ্রকাশের অধিকারে বিশ্বাসী। সহব্লগারদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন। আমার যা মনে হয়েছে তাতে তারা দুজনেই সচলায়তন কর্তৃপক্ষের অ্যাবিউজের শিকার। এই তথ্যগুলা মাথায় থাকলে কেমনে এই সাইটারে মুক্তবুদ্ধির মর্যাদা দেওয়া যায়?
সচলায়তন আমার সাথে কী করছে সেইটা আর কইতে চাই না। আপনেরা আমার পোস্ট পইড়া নিয়েন।
সে সময় আমি দেখেছি, আমাকে নিয়ে ওই সাইটে আলোচনা চলছে, আপত্তিকর কথা হচ্ছে, কিন্তু আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো উপায় নাই। কারণ ওইখানে প্রবেশাধিকার রুদ্ধ। অনেকের ক্ষেত্রেই এরকম ঘটনা ঘটেছে। সামহয়ারে ব্লগারদের বাইরের কাউকে নিয়ে কথা হলে, তিনি হয়তো কোনো একদিন এসে জবাব দিতে পারবেন। কিন্তু সচলায়তনের লৌহযবানিকা ভেদ করে সেটা সম্ভব না।
ওইখানে চলে এক ধরনের ফ্যাসিস্ট চর্চা। এই ফ্যাসিস্ট চর্চার মধ্যে কিন্তু গালাগালি বৈধ, আক্রমণ বৈধ। এমনকি টাকা তুলে খুনি ভাড়া করার ঘটনাও বৈধ। এখন হাজি সাইবের দোষ কী?
দোষ হইলো খারাপ বহু প্র্রবণতা থাকা সত্ত্বেও হাজি সাইব শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বার্থে সচলায়তনের ব্যানমুক্তি দাবি করছেন।
সচলায়তন খারাপ।
তাদের আমি ভাল কোনো সাইট মনে করি না। তারপরও আমি তাদের পক্ষে দাঁড়াইছি শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বার্থে। আর আমি এমন কোনো বিশিষ্ট অন্ধ না যে, তাদের দোষ চাপা দিয়া আমার তাদের পক্ষে দাঁড়াইতে হবে।
বৃহৎ মুষ্ঠি কইছেন, আমাদের এই সমালোচনার কারণে বাংলা ব্লগের ভবিষ্যত নাকি অন্ধকার হয়া গেছে।
আরে ভাই, আমি বলি আমাদের এই সমালোচনা মূলক ভুমিকার কারণে বাংলা ব্লগের জগৎ আলোকিত হইছে।
যে ফ্যাসিস্ট ও অসিহিষ্ণু প্রবণতা সচলায়তনে ভিতরে ভিতরে গইড়া উঠতেছিল সেইটার সমালোচনা দরকার আছিল। আমরা বাংলাদেশে থাকি, কিছু আইন কানুন মাইনা জীবন ধারণ করি। সেইখানে কোনে ফ্যাসিজমের উস্কানিকে আমরা দেশবাসীর স্বার্থে কোনো ক্ষুদ্র পরিসরেও উৎসাহিত করতে পারি না। বাংলা ব্লগেও সমঝদার লোক আছে, যারা আত্মসমালোচনা করতে পারে। যারা খারাপ প্রবণতা থেকে ব্লগকে রক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগী।
খারাপ প্রবণতাগুলার সমালোচনায় মুখর। এই মেসেজটা আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো দরকার।
বৃহৎ সাহেব সুকৌশলে আমাদের জঙ্গি গোষ্ঠী ও রাজাকারদের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। যারা অযথা এই কাজটি করেন তাদের আমি ছাগমাতার তৃতীয় সন্তান বলি। কারণ যখন আপনার সামনে যুক্তি নাই, তখনই আপনি প্রতিপক্ষকে ভিক্টিমাইজ করার জন্য অবাস্তব ও অসার অভিযোগ হানেন।
বৃহৎ ও সহব্লগারদের কাছে আমার প্রশ্ন, সচলায়তন ব্যান হইছে/ তাদের টেকনিকাল অসুবিধা হইছে। আমরা তাদের ব্যান/ টেকিনিক্যাল অসুবিধা মুক্তি দাবি করছি। সঙ্গে তাদের খারাপ প্রবণতার সমালোচনা করছি। এই কারণে আমাদের জঙ্গি-রাজাকারদের সমর্থক কেমনে বললো বৃহৎ মুষ্ঠি?
যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতা বিরোধিদের বিচার চাই বইলা কি আমাদের এখন তাদের মারার জন্য খুনি ভাড়ার করার টাকা তোলার আয়োজনেও সমর্থন দিতে হবে?
আজব!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।