আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম -বিষবৃক্ষের বীজ অংকুরোদগমের অপেক্ষা(৬)

কৃষক blogsaudi@gmail.com

আগের পর্ব পড়ার অনুরোধ Click This Link ইদানিং আমি বন্ধুত্ব নিয়া ভাবি। বন্ধুত্বের যে সংজ্ঞা আমরা জানি তা দিয়ে আমাদের সম্পর্কের তুলনা করি। ভাবি সামথিং ইজ রং, কোথাও কোন একটা কি যেন আছে। কোথায় যেন একটু যেন ছন্দপতন । অবশ্য সম্পর্ক তৈরী হয় তার নিজস্ব আদলে।

প্রতিটি সম্পর্ক তার নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে বিরাজ করে। একটার সঙ্গে আরেকটার কোন মিল নেই, আর মিল থাকলেও নিজস্ব স্বকীয়তার কারণে পরস্পর আলাদা করা যায় নিশ্চিতভাবে। এ যেন এক অংকের বিন্যাস সমাবেশ খেলা। বিধাতা এই খেলার একজন সুদক্ষ খেলোয়াড়। তিনি সম্পর্ক ভাঙ্গেন, গড়েন ও মিলিত করেন পরস্পরকে এক নিবিড় দক্ষতায়।

প্রতিদান দেন তার অদৃশ্য হাতে ভালো মন্দের এক সুক্ষ বিচারে। কিছুদিন আগেও যে ছিল নিতান্ত অপরিচিত নাম না জানা কোন মেয়ে সে এখন আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। আমার ক্লাসমেট, গ্রুপমেট, লাইব্রেরীর পার্টনার, বন্ধু। বন্ধু তাই কি? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি। প্রভাতের সূর্যকিরণের মতো বের হয়ে এসে বিভিন্ন আলোকে আমার ভাবনার জগৎকে প্রভাবিত করছে প্রচন্ডভাবে।

নতুন করে ভাবতে হয়। ভলোলাগা নিজেকে গ্রাস করে। আপাত বন্ধুত্বের সম্পর্ক পরিবর্তনের এক নতুন তাগিদ নিজের ভিতর উপলব্ধি করতে থাকি। বিষবৃক্ষের অংকুরোদগমের ক্ষণ আসিয়া উপস্থিত হয়। দৈনিক রুটিন আগের মতোই চলছে।

ক্লাস, লাইব্রেরী পড়াশুনা। একটা জিনিস অবাক হয়ে লক্ষ করি ঐ দিন পর থেক ইদানিং আমাদের আলাপ চারিতার ধরন যেন পাল্টিয়ে গেছে। আরেকটু যেন উম্মুক্ত, আরেকটু যেন সংকোচহীন। আগে আমরা সাধারনতঃ ফরমাল টাইপের কথাবার্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতাম। কিন্তু এখন দেখি সে যেন একটু বেশী বেশী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনায় মত্ত হয়।

ঐ নাটক, এই গান, ঐ বই বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামতের পাশাপাশি আমার মতামত ও জানতে চায়। যেহেতু আমি গল্পের বই এবং টিভি দুইটারই ভীষন পোকা তাই তার সাথে আলাপ চারিতা চালিয়ে যেতে আমার খুব একটা সমস্যা হয় না। মনে মনে ভাবি বাহ বাহ তার আর আমার মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যাচ্ছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি নতুন সম্পর্কেরে সম্ভাবনা খুজি। পাই কি? অনেক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখন তীর্যকে পরিনত হইতে লাগলো।

অনেকর মনে সন্দেহের বীজ বপিত হতে লাগলো। তাহাদের মধ্যে কি সম্পর্ক? শুধুই বন্ধুত্ব না অন্য কিছু ? নব যৌবনে এই সব তীর্যক দৃষ্টি উপেক্ষা করার যথেষ্ট সাহস নিজের মধ্যে বিদ্যমান। সমাজের বন্ধ তালা গুলি খোলার এক সুপ্তবাসনা নিজের মধ্যে কাজ করে। বিশ্বায়নের যুগের মানুষ আমি এই সব পদদলিত করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই আমার কাজ। কিন্তু মনে মনে ভাবি সে কি করবে? কিন্তু সে আমার মতই এগিয়ে গিয়ে প্রমান করেছিল সে এইসব তোয়াক্কা না করে না।

আমার রুমমেট রা এক একজন খুব ভালো ছেলে। তার মধ্যে একজনের সাথে আমার আবার খুব খাতির হয়ে গিয়েছে, মানে সব বিষয় তার সাথে শেয়ার করার মতো সম্পর্ক । সে আমারে কয় আচ্ছা তুই যে তারে নিয়া এত ঘুরাঘুরি করতাছস তুই তো তার প্রেমে পইড়া যাবি। আমি কই কি কস বেটা। মনের মধ্যে ঘন্টি বাইজা উঠলো।

তার এই বাক্য আমার প্রেম রসায়নে প্রভাবক হিসাবে কাজ করা শুরু করলো। নিজের কল্পনায় মাঝে মাঝে তারে প্রেমিকা হিসাবে ভাবতে খারাপ লাগে না। আবার ভাবি কি কইরা তারে বলা যায় ভালবাসি। আবার নিজেরে প্রশ্নকরি আসলে কি তারে ভালোবাস? মন কয় এই কাম করিস না নারী হইল মায়া। এই মায়ার বাধনে নিজেরে জড়াইস না।

আবার নিজেরে প্রশ্ন করি আসলে সে প্রেমিকা হিসাবে কেমন। আমি যা চাই তা কি তার মধ্য আছে। এইবার মন বাবাজি ফেল মারে। চুপ কইরা থাকে । আমি কই কথা কস না কেন? মন আমার চুপ।

আমি কই তাইলে চুপ থাক আমি সামনে আগাই। মন আমার আর্তি কইরা উঠে। আর্তনাদ কইরা কয় আমারে তুমি তার হাতে দিবা, তয় ভালোভাবে চিন্তা কইরা লও। সে কি তোমার এই ভালোবাসা গ্রহন করবো। এইবার আমি চিন্তায় পইড়া যাই।

ভাবি দেখি আর কিছু দিন। অপেক্ষায় থাকি গ্রীন সিগনালের। কয়েকদিন পর ৪ দিনের একটা বন্ধ পড়লো । লাইব্রেরীতে সে কয় আমি এই বন্ধে বাড়ী যামু। এই প্রসঙ্গে কইয়া রাখি তার বাড়ী ছিল ঢাকায়।

বাপ-দাদার ভিটা না। তারে জিগাইলাম কিভাবে যাইবা। সে কইলো বাসে যামু। আমি কইলাম ট্রেনে যাওনা কেন। ট্রেন জার্নি বেশ মজার।

এক যোসের বসে কইলাম আমিও ঢাকা যামু আমার একটু কাজ আছে। মনে মনে কই আগের ফাকা ফাকা লাগার সময়টা একটু কমাইয়া লই। সে কয় চলো তাইলে এক সাথে ট্রেনে যাই। আমি এর আগে ট্রেনে আর ঢাকা যাই নাই। মনে মনে লাফ দিয়া উঠলাম।

তারে কইলাম আমি টিকেট কাইটা রাখবো । সময় তোমারে পরে জানামু । ট্রেন ছিল বিকালে আর সকালে । সবাই দেখি বিকালের টিকেট কাটে আমি মনে মনে কই আমি কাটুম সকালের টা তোগো সাথে যাতে দেখা না হয়। সকালের ট্রেন এর চারখান টিকেট কিইনা তারে জানাইলাম।

কারণ চারটা চারটা করে একসাথে সিট থাকতো তখন। আমাদের সাথে যাতে আর কেউ না বসে এই জন্য এই ব্যবস্থা। খুব ভোরে গিয়া তার হলের সামনে উপস্থিত হইলাম। সে সময় মতো বের হয়ে এলো। ষ্টেশন ৪ কিঃ মিঃ দূর যাইতে লাগবো ৪০ মিনিট এর মতো।

যাইহোক একটা রিক্সা নিয়া দুইজন রওনা দিলাম। খুব ভোর মানুষের ব্যস্ততা এখনও শুরু হয়নি। নির্জন রাস্তা, চারপাশের চির পরিচিত দৃশ্যগুলি এই সকালে কেমন যেন নতুন নতুন লাগে। মনে মনে গান ধরি ‘পৃথিবী বদলে গেছে যা দেখি নতুন লাগে’ । সে আমারে কয় এই গানটা আমার খুব পছন্দের একটা গান।

আমি পুরা টাশকি। গান গাইলাম মনে মনে সে শুনলো কেমনে? তারে জিগাই কোন গান সে কয়, এই যে তুমি গাইতাছ । আমি থ । তারে কইলাম কি গান গাইছি কও তো ? সে কইলো ‘পৃথিবী বদলে গেছে যা দেখি নতুন লাগে’ বুঝেন আমার অবস্থা। পড়ে অবশ্য তার মুখ থাইকা শুনছিলাম আমি গুনগুন কইরাই গান গাইছিলাম।

তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ বদলাইয়া কই তুমি কি গান গাইতে পাড় গাও একটা। সে শুরু করলো আমি অবাক হইয়া শুনতে লাগলাম। সে খুব সুন্দর গান গাইতে পারে। মনে মনে কই গ্রীন সিগনাল কি পাইলাম ? গানে হঠাৎ বন্ধ হ্ওয়ায় চেয়ে দেখি রিক্সা শহরের মধ্যে ঢুইকা পড়ছে। গান আর পুরাটা শুনা হইলো না।

পড়ে অবশ্য .. ষ্টেশনে পৌছে আমরা একসাথে নাস্তা করে। ট্রেনের অপেক্ষায় রইলাম। আন্তনগর ট্রেন ঠিক সময় মতোই এলো। দুইজন গিয়ে ট্রেনে উঠলাম জানালার ধারে পাশাপাশি সিট। সময় মতো ট্রেন ছাড়লো।

ঝিক ঝিক শব্দে জানালার পিছননে ব্যাকগ্রাউন্ড বাদলাইয়া যাইতে লাগলো । দুইজন আলাপে আলাপে সময় কাটতে লাগলো। বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ চারিতা। এর মধ্যে সবকিছুই বিদ্যমান আবার কিছুই না। আমি তার সঙ্গ উপভোগ করতে লাগলাম।

আগামী কয়েক দিনের আলাপ এইখানে ট্রেনে সারিয়া ফেলতে ব্যাস্ত হলাম। ট্রেন লাইন ঢাকা যেতে একটা জঙ্গলের মধ্য দিয়া যায়। যথারীতি সেই এলাকা আসিয়া গেল আমরা দুইজন জঙ্গল দেখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি জঙ্গলের রাস্তায় একটি ছেলে আর একটি মেয়ে হাত ধরা ধরি করে হাটছে। এই দৃশ্য দেইখা ঝট কইরা আমি তার দিকে চাই দেখি সে আমার দিকে চাইয়া রইছে।

দৃষ্টি বিনিময় হইলো। মনে মনে কই গ্রীন সিগনাল কি পাইলাম? তারপর দেখি সে কেমন যেন একটু চুপচাপ হইয়া গেল। যাইহোক টুকটাক আলাপ করতে করতে সময়টা পার করে দিলাম। ধীরে ধীরে ট্রেন কমলাপুর ষ্টেশন আইসা পৌছইলো, আমি তারে বেবীতে তুইলা দিলাম। এবং আর একটা বেবী নিয়ে সোজ বাসষ্টেশনে পরের বাসে আবার ইউনিভার্সিটিতে ।

হাত তুইলা কই ধন্যবাদ বিধাতা এমন সুন্দর একটা জার্নি উপহার দেওয়ার জন্য। চলবে ... পরের পর্ব Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.