বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !
রবীন্দ্র বুড়োর গান আর এই পোস্ট
রবীন্দ্র বুড়ো প্রায় সব পরিস্থিতির জন্য গান লিখে গেছেন । খুঁজে পেতে এই পোস্টের জন্যও রেখে যাওয়া তাঁর গানটি পেয়ে আমি বর্তে গেলাম ! গানটি হলো - 'পুরানো সেই দিনের কথা বলবি কে রে আয়--ও সে চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায় !' বলা বাহুল্য বুড়ো জটিল জিনিস । গান লিখেছেন আর চামে হেসেছেন । হেসেছেন এজন্যে যে, এই গানে তিনি আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন একটি পরীক্ষার সামনে । পরীক্ষাটি হলো, গানটিকে নিজের মতন করে সাজিয়ে নেয়া ।
খুব কঠিন কোন কাজ না । স্থান কাল ভেদে দু'একটা শব্দের এদিক-সেদিক শুধু (কপিরাইট বিষয়ে এ-অধম দায়ী নহে । পুরানো সেই দিনের কথা বলবি কে রে আয়... 'বলবি কে রে' --এ জায়গায় বসাতে হবে 'শুনবি কে রে ' ! রূপপরিগ্রহ করে গানটি তখন হবে এরকম--পুরানো সেই দিনের কথা শুনবি কে রে আয়-- ও সে চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায় ! ভোলা যায়নাতো আসলে । পুরানো স্মৃতির পাতা ধূলোয় ধূসরীত হয় । ধূলো ঝেরে সযতনে স্মৃতির পাতা উল্টে -পাল্টে দেখলে উজ্জ্বল অক্ষরের মতন কিছু উজ্জ্বল স্মৃতির সন্ধান মেলে ।
নানারঙ্গা স্মৃতিরা প্রোথিত থাকে হৃদয়ে ।
প্রসঙ্গ: ২০০তম পোস্টের পথে পথে
শিরোনামে পথে শব্দটা দু'বার এসেছে । শব্দটা এভাবে একবারেও লেখা যেতো-- ২০০তম পোস্টের পথে ! সেক্ষেত্রে শিরোনামটি অসুম্পূর্ণ থেকে যেতে পারতো । পথ এখানে একটাতো নয় আসলে । পথ থেকে শাখা পথে গেছি ।
আবার পথে হেঁটেছি । জীবন বাবুর ভাষায়-- হাজার বছর ধরে পথ আমি হাঁটিয়াছি পৃথিবীর পথে... ভদ্রলোক রসিক মানুষ । কি মনে করে , হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে হেঁটেছেন বলে জানিয়েছেন,তিনিই ভালো বলতে পারবেন ! আমি অধম । হাজার বছর ধারে হাঁটার সাধ বা সাধ্য কোনোটাই আমার নেই । তবে, বছর দুই ধরে এই ব্লগের পথে হাঁটছি এটুক বলতে পারি ।
দু'বছরের প্রাপ্তি অম্ল-মধুর (তড়িৎ মনে পড়া) কিছু অভিজ্ঞতা এখন আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার খায়েশ করছি , আপনাদের বিরক্তির উদ্রেক করে ।
প্রথম পোস্ট এবং আরো কিছু...
সুবাসিত ফুলের কাননপাশ ! প্রথম এই পোস্টটি দেই ৯আগষ্ট ২০০৬ । সেদিনই রেজিঃ করে ছিলাম মনে পড়ে । এখানে একটা মজার বিষয় আছে । দ্বিতীয় পোস্টটিও আমি দিয়েছিলাম সেদিনই মাত্র দুই ঘন্টার ব্যবধানে ! পোস্টটি ছিল এই-- ভালবাসা প্রেম নয় ! এখানে মজার বিষয়টা কি ,--ধরার চেষ্টায় যারা আছেন, তাদের জন্য বলি, একদিনে এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি পোস্ট আমি আর দেইনি; ফ্লাডিং-এর দিনটিতে ছাড়া (ফ্লাডিং বিষয়ে বিস্তারিত পরে আসছে )! তো এই দু'টি পোস্টের পর ব্লগ থেকে আমি হাপিস হয়ে গেলাম ! হাপিস অবস্থায় ছিলাম পুরা দুই মাস ! নভেম্বরের শুরুতে আবার দু'টি পোস্ট দিলাম ।
দুই পোস্ট দিয়ে আবার দুই মাসের ছুটিতে (ব্লগ থেকে ছুটি গেলাম ! মার্চের শেষ সপ্তাহে এসে এইবার নিয়মিত হলাম ! সেই থেকে আছি । মাঝের এ'কয়মাস যদি নিয়মিত থাকতাম আরো কিছু অখাদ্য পোস্টের ভারে বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ ভরাক্রান্ত হতে পারতো । হয় নাই , সেজন্যে আসেন সবাই বলি , আলহামদুলিল্লাহ ।
আমার প্রথম বান খাওয়া আর প্রথম বান মারা
আশ্চর্যজনকভাবে আমার খুব প্রিয় একজন ব্লগারের পোস্টে আমি প্রথম ব্যান খায় । আমার সেই প্রিয় ব্লগার আরিফ জেবতিক ভাই ।
সামহ্যোয়ারইনের প্রথম পাঁচজন সেরা লেখকের মধ্যে অবশ্যই আরিফ ভাইয়ের নাম থাকবে এটা আমার বিশ্বাস । আরিফ ভাইকে আমার পছন্দ তাঁর অসামান্য লেখনী শক্তির জন্য । তো, সেই ঘটনাটি ছিল ভুলবুঝাবুঝির । গোলাম আযমের ছবি অশ্লীল লাগে, তাই এ-ছবি যেন ব্লগে প্রকাশ করা না হয়-আরিলের প্রতি এই দাবী নিয়ে ছিলো সেই পোস্ট । আরিফ ভাইয়ের দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে মন্তব্যের ঘরে আমি বলেছিলাম,' ব্লগের অশ্লীল ভাষার ব্যাপারে যদি কিছু বলতেন ।
' আমার এই মন্তব্যে অনেকের গায়ে জ্বালা ধরে । আরিফ ভাইকে ওনারা উস্কে দেন আমাকে ব্যান করার জন্য । কাজটা করতে ওনাদের সুবিধা হয় কারণ, ওই পোস্টে প্রথম মন্তব্যটিই ছিল ত্রিভুজের । ত্রিভুজের মন্তব্য নিয়ে এমনিতেই পোস্টটি তখন উত্তপ্ত ছিল । আরিফ ভাই একসময় আরাশির মানসিক পরিপক্কতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে তাকে বান মারেন ।
সেই সন্দেহ ওনার একদিন পরই কেটে যায় এটা ভাবলে এখনও আমার ভালো লাগে । সম্ভবত একদিন পরই ওনার ব্লগে তিনি আমার শেকল খুলে দিয়েছিলেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তারও অনেক অনেকদিনপর দ্বিতীয় বানটি আমি খেয়েছিলাম আমাদের বিখ্যাত নূরে আলম ইরানী ভাইয়ের ব্লগে । আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনিও আমাকে প্রায় এক বছরের মাথায় মুক্ত করিয়া দেন !
আরিফ ভাইয়ের ব্লগে আমার বান খাওয়ার সেই তারিখটি ছিল ২৬ এপ্রিল ২০০৭ । এর মাত্র ১৯ দিন পরই আমি প্রথম বান মারতে সমর্থ হই ! আমার প্রথম বান খাওয়া সেই মহা সৌভাগ্যবান লোকটি আর কেউ নন, আমাদের বিখ্যাত ডাক্তার আইজুদ্দিন ! রূপার পালকি শিরোনামে আমার একটা গল্পের পোস্টে গিয়ে এই ভদ্রলোক আর শমশের আমাকে ত্যাক্ত করতেছিলেন ।
আইজুদা তখন ব্লগাইতেন আইজুদ্দিন চৌধূরী নিকে । আমি দেখতাম সবার ব্লগে গিয়ে এই লোক খোঁচাতে থাকে । ওনাকে বিরক্তিকর হিসেবেই নিছিলাম তখন । এই জন্যেই বিসমিল্লাহ বইলা বান মারছিলাম । যদিও তার ক্ষণিক পরেই এই প্রতিভাবান ব্যক্তি উটুল নিক নিয়ে সেই পোস্টে পুনাঃগমন করে পোস্টের সৌন্দর্য বর্ধন করেন !
কতো বিনিদ্র রাত আমি করে গেছি পার
লেখালেখির একদম শুরুতে রাত জাগার ভূতটা আমাকে দখল করে নেয় ।
রাত না জাগলে লেখতে পারিনা । দিনে লেখার সময় পাই না । রাতে ঘুমুতে গেলে লেখার বিষয় মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে । ঘুমের বিরানী পাক হয় তখন । ওঠে গিয়ে কাগজ - কলম নিয়ে বাধ্য হয়ে আমার বাসার সামনে খোলা জায়গাটাই বসতে হয় ।
আমি জাগি রাত, আর জাগে চাঁদ । সে অনেক আগের কথা । ব্লগে আসারও ছয় বছর আগের রাতগুলো এরকম কাটতো । পত্রিকার স্যাটায়ার ম্যগাজিন, ফান পাতা বা প্রবাস পাতায় নিজের একটা লেখা দেখার জন্য তখন তীর্থের কাকের মতন কতোইনা অপেক্ষা । মাঝে-সাঝে ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ানোর মতো অবস্থা ।
তো আমার সেই অপেক্ষাকে একদম প্রথম যিনি সত্যে রূপান্তরিত করলেন তিনি আমার প্রিয় সম্পাদক শফিক রেহমান । অনেককেই যখন দেখি শফিক রেহমানের সমালোচনায় মুখর , বিষয়টি আমি উপভোগ করি । উপভোগ করি এজন্য যে, সমালোচনার দরকার আছে । কোনো মানুষইয় সমালোচনার উর্ধ্বে নন । শফিক রেহমানেরে গোয়ার্তুমি আছে সেটাও ঠিক ।
তবে দুঃখ লাগে, সমালোচকরা নানারকম নীতিবাক্য কপচান,কিন্তু কখনই তারা বলেন না, বাংলাদেশের অন্য সম্পাদকদের সঙ্গে শফিক রেহমানের তফাৎটা কোথায় । তারা বলেন না, শফিক রেহমানের মতন করে তরুণদের কেউ স্বপ্ন দেখাতে পারেন না । উজ্জিবিত করতে পারেন না । প্রশ্ন আসতে পারে, স্বপ্ন কি ভেজে খাওয়া যায় ? উত্তর হলো, না । স্বপ্নকে ভেজে খাওয়া যায় না ।
তবে স্বপ্ন থাকলে স্বপ্নের বাস্তব রূপদান করা যায় । যদি সেরকম স্পৃহা থাকে ।
যাই হোক, যা বলছিলাম, ব্লগে এসে সেই রাত জাগার ভূত আবার আছর করলো । আমি সেইসব নিশাচর ব্লগারদের একজন যার বেশীর ভাগ পোস্ট-ই মধ্যরাতের । যার বেশীরভাগ পোস্ট-ই তাৎক্ষণিক ।
কম্পিউটারের সামনে বসে লেখা । যেমন এই দুইশতম বিশাল পোস্টটিও ।
বিবিধ :
ব্লগে সিরিয়াস লেখক অনেক, কিন্তু সিরিয়াস পাঠক কম এটা আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণ । অভিমতও বলতে পারেন । খুব সৌভাগ্যবান কিছু ব্লাগার আর পোস্ট ছাড়া
বেশীর ভাগ ভালো লেখাই খুব দ্রুত পাঠকের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় ।
এমনকি সেটা হতে পারে কোন মন্তব্য ছাড়াই । মনে পড়ে, একবার মোসতাকিম রাহী ভাই একটি গল্পের পোস্ট দিলেন । গি দ্যাঁ মোপাসার গল্পের অনুবাদ । তৃতীয় পৃষ্ঠায় গিয়ে সেটির দেখা পেলাম । একটিও মন্তব্য নেই ।
আক্ষেপ করে আমি প্রথম মন্তব্যটি দিলাম, এই বলে যে, এতো ভালো পোস্টের পাঠক এই ব্লগে কেন নেই ! এরপর সেই পোস্টটিতে প্রায় ৭০টির মতন মন্তব্য পড়েছিল যদ্দুর মনে পড়ে । দীর্ঘ লেখার পাঠকও অনেক কম । এই লেখা নিয়া তাই ভীত হইলাম !
আরিফ ভাইয়ের পোস্টে আমি ব্যান খেয়েছিলাম ব্লগের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ভুল বুঝাবুঝির শিকার হয়ে । আর আজ এতোদিন পর কেউ কেউ হয়তো আমাকেই অশ্লীল ব্লগার মনে করছেন । এতোদিনের ব্লগিং-এর অর্জন হয়তো এটুকুই ।
আমার দুঃখ নেই । ব্লগের ভার্চুয়াল রাজাকারদের ছাগল বলতে, তারা সারমেয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এটুকু বলতে আমার দ্বিধা নেই । এই দু'বছরে বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে তাদের স্পর্ধা কমতো দেখিনি । তাই তাদের সারমেয় সম্প্রদায় বলতে আমার মুখে আটকায় না । তাই তাদের বর্জ্যসম দুর্গন্ধযুক্ত গোলাম আযম, নিজামীর পা চাটা পোস্টের বিরুদ্ধে ফ্লাডিং করতে আমার কুন্ঠা হয়না ।
ব্লগাধিপতির লর্ড-এর মতন আচরণের শিকার দলবদ্ধ অথবা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যান হতেও তাই ভয় হয় না । সুযোগ পেলে, সেরকম পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি হয়, জানুয়ারী ২০০৮-এর মতো আরো একবার ফ্লাডিং করতে রাজি আছি ।
তবে, বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজকে এই সুযোগে আমি অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবো, কৃতজ্ঞতা জানাবো বাংলা ব্লগিং এর সুন্দর একটা সুযোগ করে দেবার জন্য ।
মৃত্যুর হাত থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে
২০০তম এই পোস্টটি হয়তো আর কখনই দেয়া হতো না । আর কখনই হয়তো ব্লগে নিশ্বাস ফেলা হতো না ।
ব্লগের ভার্চুয়াল জগতে নয়, বাস্তবের জগতের আর কোথাও হয়তো আমার পদচিহ্ন থাকতো না । এক নিমেষেই উড়ে গিয়ে আকাশের তারা হয়ে যেতে পারতাম । ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিক ভাবে বেচে গেছি । চারদিন আগে নিজে ড্রাইভ করছিলাম হাইওয়েতে । গাড়ীর স্পিডোমিটার তখান ১২০ এর ঘরে ।
রং সাইট থেকে অন্য একটা গাড়ী সাঁ করে পাশের রাস্তায় ওঠে গেল আমার একদম সামনে দিয়ে । ব্রেক কষতেই বিদ্যুৎ গতীতে আমার গাড়ি ঘুরে গেল । তেরচা হয়ে চল্লিশ হাতের মতো সামনে এগিয়ে গেলো গাড়ি । রোড ডিভাইডারে আঘাত করে , ডিভাইডারের উপর দিয়ে পাশের রাস্তায় গিয়ে পড়লো । বিপরীত দিক থেকে আসা যে কোন একটি গাড়ির তীব্র আঘাতই আমাকে তুলোর মতো উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারতো ।
কোন ভাগ্যে জানিনা, আমার থেকে ইঞ্চি তিনেক দূরে এসে গাড়ি গুলো থামলো । আঘাত থেকে বেঁচে গেলাম । প্রাণে বেঁচে গেলাম । আবার সব প্রিয়জনের , প্রিয় বন্ধুদের প্রাণের আড্ডায় শামিল হতে পারলাম । বিধাতার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।