আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থ উপদেষ্টার মূল্যতত্ত্ব, প্রান্তিক কৃষকের সক্ষমতা বনাম গণ গরিবীকরণের হালাল ফর্মূলা

munirshamim@gmail.com

ক. 'এটি শায়েস্তা খাঁর আমল নয়'-আমাদের ইতিহাস সচেতনতার প্রতি যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করেই মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, সে আমলের মতো জিনিষপত্রের দাম কম হবে সেরকম প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। মাননীয় উপদেষ্টার ইতিহাসের পাঠশালায় এ 'ঠিক-বেঠিক' সীমা রেখা নির্ধারণের মাধ্যমে আমাদের খুব ভাল করে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমাতে সরকারের কিছু করবার নেই। সুতরাং বাকী দিনগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আরও বাড়বে। বিশেষ করে আসন্ন রোজাকেন্দ্রীক মুনাফাখোরদের মূল্যসংযোজন প্রক্রিয়া দ্রব্যমূল্যের চলমান অসহনীয় ঘোড়াকে আরও লাগামহীন করবে। আর সে ঘোড়ার পিছে ছুটতে ছুটতে আমরা অসহায় জনগণের হাত ভাঙবে, পা ভাঙবে, মন ভাঙবে, সংসার ভাঙবে।

এ ভাঙনের তালিকায় যুক্ত হবে আরও কত কী! খ. কথা ছিল ভয়ানক সিডর ও বন্যার পরও যেহেতু ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে সেহেতু চালের দাম কমবে। রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকরা সে রকম ব্ক্তব্য দিয়ে আমাদের আশায় বুক বাঁধতে বলেছিলেন। আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে ছিলাম আর ভাব ছিলাম এ বুঝি চালের দাম হাতের নাগালে না হোক, কিছুটা হলেও কমে আসছে। আমার আশার তরী নিরন্তর চলতে থাকলো।

ছুটতে থাকলো। কিন্তু চালের দাম কমলো না। কমছে না। বরং প্রতিদিন বেড়ে চলছে। এ ক্রমাগত বাড়ার প্রবণতা আমাদের যখন বেঁচে থাকার ভাবনায় আতংকিত করে তুলছে ঠিক সে সময় আমরা পেলাম অর্থ উপদেষ্টার কাছ থেকে দাম বাড়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত একটি নয়া তত্ত্ব।

এ তত্ত্বে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কিত বহুল আলোচিত আড়তদার-মজুতদারদের ভূমিকাকে অস্বীকার করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার মতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাবের কারণে কৃষকের সক্ষমতা বেড়েছে। আর সে কারণে কৃষক নাকি ধান বাজারে বিক্রি না করে নিজের গোলায় মজুদ করে রেখেছেন। এতে বাজারে ধানের জোগান কমেছে। ফলশ্রুতিতে চালের দাম বাড়ছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ভোক্তার দিক থেকে এ পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, কৃষকের জন্য এটি সুসংবাদ। গ. চালের দাম বেশি। ভোক্তা হিসেবে এটি আমাদের জন্য শুধু দুঃসংবাদ নয়, আমাদের বেঁচে থাকার সাথে এটি সম্পর্কিত। তবু আমাদের জন্য এটি শান্তনা হতে পারতো, যদি সত্যি সত্যি উপদেষ্টার কথামতো চালের বাড়তি মূল্যের মুনাফা প্রান্তিক কৃষকের ঘরে যেত। সত্যি সত্যি কৃষকের সে সক্ষমতা তৈরি হতো।

আসলেই কি কৃষকের কোন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে? আমরা জানি না কোন গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিদিনের পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এটি প্রমাণিত যে, বড় বড় আড়তদারর ও মজুতদাররা এখনও সক্রিয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় একজন চাল ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুদ করার জন্য ব্যাংক থেকে একশো কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এটি একটি মাত্র উদাহরন। তাছাড়া বাজেট ও বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির পরামর্শে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার একদিনের মাথায় যেভাবে প্রতিটি জিনিষের দাম বেড়েছে তার সাথে উপদেষ্টার মূল্যতত্ত্ব ও কৃষকের সক্ষমতা তত্ত্ব কতখাখি মেলে কিংবা আদৌ মেলে কি না? নাকি বিভিন্ন স্তরে বিরাজমান সুশাসন, জবাবদিহীতার অভাব, মুক্তবাজারের নামে অসম ও বিকৃত বাজার ব্যবস্থা এবং অসম বিশ্বায়নের মাধ্যমে গণ গরিবীকরণের চলমান ফর্মূলাটাকে হালাল করার চেষ্টা এটি?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।