আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবাস জীবনে - ৭ ( কুড ইউ প্লিজ স্টে ইনসাইড)

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

সেপ্টেম্বরের একটা লং উইকএন্ডের শুরু। শুক্রবার রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছি। হঠাৎ মনে পড়লো - তিনদিন সব বন্ধ থাকবে। যেহেতু ব্যাংক বন্ধ থাকবে - সুতরাং এটিএম মেসিনগুলোর টাকা শেষ হয়ে যাবে কালই আর রিফিল হবে না তিনদিন। তাই সতর্কতা হিসাবে টাকা উঠানোর জন্যে একটা মলের পাকিং লটে গাড়ী রেখে অপেক্ষাকৃত নির্জন একটা কোনার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

সেখানে একটা ব্যাংকের শাখা আছে - যার ভিতর দিকটায় তিনটা এটিএম মেশিন - সেখানে টাকা পাওয়া যাবে - অভিজ্ঞতা থেকে মোটামুটি নিম্চিত ছিলাম। ব্যাংকের সামনের দিকটায় বেশ আলো থাকলেও ভিতরের দিকটায় আলো কম। হয়তো কানাডার চলমান "গো গ্রীন" কর্মসূচীর অংশ হিসাবে ব্যাংক কিছু বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। আসলে ব্যাংক মেশিনগুলো যেখানে লাগানো আছে - সেই অংশটা ব্যাংকের মূল অংশের বাইরে - অনেকটা বারান্দা মতো বলা যায়। সেই অংশে প্রবেশের জন্যেও দরজার স্ক্যনারে ব্যাংক কার্ড স্ক্যান করলে পরিচয় নিশ্চিত হয়ার পর দরজার লক খুলে।

ব্যাংক কার্ডটা স্ক্যানারে ছোয়াতে যাবে - সেই সময় পাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ ভেসে আসলো - হাই! ভিতর থেকে মনের অজান্তেই মুখে এসে গেল -"মরজ্বালা" । প্রায় মধ্যরাত - পাশে তাকিয়ে দেখি একটা অল্পবয়সী মেয়ে - মনে হলো কোন স্টোর কাজ করে বাড়ী ফিরছে। জ্যাকেটের গলা দিয়ে ওর স্টোরের ইউনিফরমটা উঁকি দিচ্ছে। তা দেখে নিশ্চিত হলাম - কোন ঝামেলা নেই। কারন এই নির্জন জায়গায় যদি কোন হুকারের হাতে পড়ি তবে আর কিছু না হোক বিয়ারের পয়সার একটা বায়না থাকবেই।

কমপক্ষে একটা সিগারেটের জন্যে আবদার - না দিলে যে খুব একটা বিরক্ত করে তা না - তবে কেউ কিছু চাইলে না দেওয়াটা সমস্যা বটে। অনেকটা নিম্চিত হয়ে বললাম - হাই। কিন্তু কৌতুহলটা থেকেই গেল। হঠাৎ আলো আঁধারী থেকে এই মেয়ে কিভাবে উদয় হলো আর আমার কাছে কি চায়? মেয়েটা বললো - কুড ইউ প্লিজ হেল্প মি গেটিং সাম মানি ফ্রম দ্যা মেশিন। মনে মনে বললাম - এই আর এমন কি? মুখে বললাম - ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই।

ভিতরে ঢুকে একটা মেশিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি - আশা করছি মেয়েটা পাশের মেশিনে দিকে যাবে - কিন্তু সে আমার প্রায় গা ঘেষে আমার ব্যভহার করা মেশিনের পাশেই দাড়ালো। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে পাশের মেশিনের দিকে দেখিয়ে বললাম - "ঐ মেশিনটা ব্যবহার কর। " সে বললো - "আমি ভীত। " কথাটা বলেই এক কোনার দিকে আঙ্গুলী নির্দেশ করলো। দেখলাম একটা লোক সেই কোনায় কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে।

দেখলেই বুঝা যায় - হোমল্যাস। হয়তো সন্ধ্যা কোনভাবে কিছু টাকা যোগাড় করে পেটভরে বিয়ার পান করে বুঁদ হয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি বললাম - সমস্যা কি, ও তো ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা ম্লান হেসে বললো - আমি ওদের বিশ্বাস করি না। - কেন? - কারন সুন্দরী মেয়ে দেখলে যে কোন সময় ওরা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে - ওরা ক্ষুধার্থ।

এবার ভাল করে তাকালাম - মেয়েটা আসলেই খুবই সুন্দর। সাঁজগোজ দেখে বুঝা গেল - তার সৌন্দর্য্যের বিষয়ে সে ভাইল সচেতন। কর্মকান্ডে বুঝা গেল নিজের সুন্দর শরীরটাকে সুরক্ষা দিতে সে যথেষ্ঠ সতর্কও বটে। কথা বলতে বলতে বলতে আমার টাকা তোলা শেষ। এবার মেয়েটা এগিয়ে গেল আমার ব্যবহার করা এটিএমটার দিকে।

এমন ভাবে দাড়ালো যে আমি ঘুমন্ত লোকটাকে আড়াল করে রাখি। আর করুন সুরে বললো - "কুড ইউ প্লিজ স্টে ইনসাইড"। আমি কোন কথা বললাম না। দেখলাম মেয়েটার হাত কাঁপছে - আর বারবার বাটনগুলো টিপেই যাচ্ছে। বিচলিত হওয়ার কারনেই হয়তো পিন নাম্বার ভুল করছে।

আর আমি ভাবছি - মেয়েটা এতো ভয় পাচ্ছে কে, কানাডা তো এক অর্থে নারীস্থান। কানাডায় নারীরা সম্পূর্ন স্বাধীন - ক্ষেত্র বিশেষে আইন নারীদের প্রতি বেশী উদার। একজন মেয়ে শুধু ফোন করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা মাত্রই পুলিশ দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেয় - যেমন অভিযুক্ত পুরুষকে - সে হোক স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড - গ্রেফতার করা, পুরুষটিকে নারীটির নির্দিষ্ট সীমারেখায় আসতে না দেওয়া ইত্যাদি। এই মেয়েটা যদি শুধুমাত্র পুলিশকে একটা ফোন করে বলতো- ব্যাংক মেশিনের সামনে একটা লোক শুয়ে আছে আর সেই জন্যে সে ভয় পাচ্ছে - তাহলে দ্রুত পুলিশ আসতো - লোকটাকে সরিয়ে নিয়ে যেত আর মেয়েটাকে নিরাপদে বাড়ী ফিরে যেতে সহায়তা করতো। কিন্তু সেই মেয়েটা এই সব না করে আরেকজন পুরুষের জন্যে অপেক্ষা করছিলো - যাকে সে তুলনামুলক নিরাপদ মনে করতে পারে।

এইটা হয়তো শতবছরের চলমান অবস্থার কারনে বিবর্তিত নারীদের উদ্ভাবিত একটা কৌশল - যা তাদের পুরুষ শাসিত সমাজে তাদেরকে বাঁচতে সহায়তা করে। মেয়েটি একটা মুক্ত পরিবেশে এসেও শত বছরের ব্যবহূত এই কৌশলটিকে ভুলতে পারেনি । মেয়েটার টাকা উঠানো শেষ হবার সংগে সংগে একটা ধন্যবাদ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো বড় রাস্তার দিকে- হয়তো বাস ধরে বাসায় যাবে। হয়তো তুলনামুলক ভাবে নিরাপদ বিবেচিত পুরুষটার সীমানা থেকে দ্রুত নিজেকে সম্পূর্ন নিরাপদ করার জন্যে দ্রুত পায়ে হাঁটা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম - কানাডা আর বাংলাদেশ - সবই সমান - সব জায়গাই নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা নিজেদেরই ভাবতে হয় - ভাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।