কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
প্রায় ছত্রিশ বছর গেলো...আজ পর্যন্ত কোন বাবা দিবসে আমার মনে হয় নাই বাপেরে শুভেচ্ছা জানাই...আজ পর্যন্ত কোনদিন মনে হয় নাই বাবা দিবসে বাপেরে স্মরণ কইরা আবেগ উথলাইয়া পরুক...আজতক কোন বাবা দিবসে ফুল কিনবার বাসনা হয় নাই আমার বা এককলম লিখনের...বাবা দিবস গুলি আমার যেমন যাওনের তেমনই যায়...আমি বিশ্বের তাবৎ মায়েগো প্রতি empathy অনুভব করি। মনে হয় পৃথিবীর পুরুষ বাপেরা যদি আমার বাপের মতোন হয় তাইলে তারা বেশ কষ্টেই আছে নিশ্চিত।
তরকারীতে লবন কম দেওয়া হইলে সেই দিন আমার শিক্ষয়িত্রী মায়ের খাওনের ইচ্ছা থাকতো না আর...ভাত সিদ্ধ বেশি বা কম হইলে মায়ের চোখের সকল বাষ্প জলবৎ নামতো ওষ্ঠ বাইয়া। আমি একবার এক কবিতার লাইন লেখছিলাম মনে পড়ে...
সাদা ভাত আর আমার মায়ের দ্রোহ
একসাথে ফুটে ওঠে জলে...
আমার মায়ের সময় কাটতো আমাগো মাঝেই...ব্যবসাজীবি বাপের বন্ধু বাৎসল্যের দায় মিটাইতে তারে অপেক্ষা করতে হইতো ভয়ে ভয়ে মাঝরাত অব্দি...আমার বাপের জিহ্বার স্বাদে যদি সেইদিন ভিন্নতা আসে!? শৈশব-কৈশোরে কোনদিন তারে দেখি নাই পারিবারিক কোন ক্রাইসিসে কোনরম ভূমিকা রাখতে সংসার সামলানের মতোন তুচ্ছ অ্যাকটিভিটি কেবল নারীগো কাম...পুরুষের উপার্জনই ব্রত...মায়ের শিক্ষয়িত্রি পেশা বিসর্জন দিতে হইছে তাই অকালে, বাপের আভিজাত্যের দায় মিটাইতে...ঘরের বউ চাকরী করলে নাকি তার আঁতে লাগে!
বাড়িতে যতো বই ছিলো সব মায়ের বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজজীবনে কেনা...আমরা একটা বই কিনা দিতে কইলে বাপের চোখ এড়াইয়া জমানো টাকা বাইর করতেন লুকানো জায়গা থেইকা...সারাদিনের ক্লান্ত সময়ের পর সবাইরে খাওয়ানো শেষ হইলে যখন আমার মা জীবনানন্দের কাব্যসংগ্রহ নিয়া বসতে চাইতেন...তখন আমার বাপের তৃষ্ণা পাইতো...জীবন দাসের চাইতে যে মুহাম্মদের জীবনী পড়নটা বেশি প্রয়োজনীয় তার ব্যখ্যা বিস্তৃতিতে যেনো মায়ের চোখ ধুসর পান্ডুলিপির মতোন ভাষা হারাইতো...নিস্পৃহতারে সেইথেকে আমি ভালোবাসিয়াছি...
বাবা দিবস গেলো গতো কাল, বাবা বিষয়ক রচনার সম্ভার দেইখা...পরিপার্শ্বে বাবাদের প্রতি ভালোবাসার বিচ্ছুরণ দেইখা আমার রীতিমতো ঈর্ষা হইতেছিলো...এইসব বাবা'রা কি অন্যরকম!? তারা কি নারী হিসাবে মায়েগো কখনো অবমাননা করে নাই? কে জানে আমার বাপের পুরুষত্ব চর্চার ইতিবৃত্তে যা থাকে তা হয়তো একান্ত তার...পৃথিবীর অন্য বাপেরা কি পুরুষ হয় না মায়েগো সাথে সম্পর্কের ধারণায়? কেবল আমার পুরুষ বাপ নারীত্বরে অধঃস্তন ভাবে হয়তো...নারী সন্তান তার চোখে সকল সময় একমাত্র পুরুষ সন্তানের চাইতে অধম বিনিয়োগ!
সমাজের আর কোথাও এই বৈষম্যের উদ্গীরণ নাই এইরম ভাবতেই মনে হয় বেশী ভালো লাগে...যদিও ভালো লাগার এই অহেতুক প্রবণতারে যুক্তিবোধের জালে এক্কেরেই ফেলতে পারি না...বাবা দিবসে তাই তাবৎ মায়েগো আবারো শ্রদ্ধা জানাই...ভালো থাকুন মায়েরা...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।