ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটিতে প্রাণী আছে কি নেই- এ বিষয়টি এখনো বিজ্ঞানীরা জানাতে পারেননি। তবে গ্রহটির অধিক মাধ্যাকর্ষণ বল এবং সূর্যের প্রখর রেডিয়েশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গ্রহটিতে প্রাণী বেচে থাকা সম্ভব বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।
শুধু আবহাওয়া এবং অবস্থানের কারণেই নয়, গ্রহটিতে প্রাণী থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি, কারণ গ্লিস ৫৮১ নক্ষত্রটি কোনো নতুন নক্ষত্র নয়। নক্ষত্রটি গ্যালাক্সির অন্যতম প্রাচীন নক্ষত্র এবং বহু বছর ধরে এটি একই অবস্থায় আছে। অনেক বছর একই অবস্থানে থাকায় এখানে প্রাণীর উদ্ভব হয়ে থাকলে তা বেচে থাকার জন্য এবং গ্রহটির নিজস্ব পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কয়েক বিলিয়ন বছর সময় পেয়েছে।
এসব দিক বিবেচনায় মহাশূন্যে প্রাণী খোজার জন্য গ্রহটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী সেথ সসট্যাক বলেন, গ্লিস সিসটেম এখন রেডিও তরঙ্গ খোজার প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। অতীতে আমরা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য এটি পর্যবেক্ষণ করেছি। সে সময় কিছুই পাওয়া যায়নি। এখন অবশ্যই আবার নতুন করে সেখানে নজর দিতে হবে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২০২০ সালের মধ্যে মহাশূন্যে পৃথিবীর কক্ষপথে কমপক্ষে একটি টেলিস্কোপ বসানো সম্ভব হবে, যেটি সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোতে জীবনের সন্ধান করতে পারবে। গ্লিস ৫৮১সি গ্রহটিতে যদি অক্সিজেন বা মিথেন গ্যাস পাওয়া যায় তবে সেখানে প্রাণী বাস করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানী ড. ম্যালকম ফ্রিডলান্ড জানান, মহাশূন্যে প্রাণ খুজে বের করার ক্ষেত্রে গ্লিস ৫৮১সি গ্রহটি আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গ্রহটি যদি মাটির হয় তাহলে সম্ভবত এর পৃষ্ঠে তরল পানি আছে, যার অর্থ দাড়ায় এখানে প্রাণ থাকতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গ্রহটি আবিষ্কারের ফলে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, বাসযোগ্য এ ধরনের অনেক গ্রহ মহাশূন্যে আছে, যেগুলোতে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা আছে।
মহাশূন্যে শুধু আমাদের গ্যালাক্সিতেই ২০০ বিলিয়ন নক্ষত্র বা তারা আছে। অ্যাস্ট্রোনমার বা জ্যোতির্বিদরা বিশ্বাস করেন, এ ধরনের বহু তারাতেই গ্রহ আছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মহাশূন্যে গ্রহ খুজে বের করার মতো উন্নত মানের টেলিস্কোপ বা দুরবিন মানুষের হাতে নেই। এ ধরনের টেলিস্কোপ তৈরি করা হলে কয়েক বিলিয়ন পৃথিবীর মতো গ্রহ আবিষ্কার করার পথ খুলে যাবে।
সেথ সসট্যাক আরো বলেন, আমরা এখনো হুবহু পৃথিবীর মতো কিছু পাইনি।
তবে আমরা জানতে পেরেছি, মহাবিশ্বের মাঝে পৃথিবী কোনো অস্বাভাবিক গ্রহ নয়। কিন্তু এ ধরনের পৃথিবীগুলোই কি প্রাণের আদিভূমি? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনো আমরা এ বিষয়ে জানতে পারিনি। বিজ্ঞান আমাদের এ-ও জানাতে পারেনি যে, পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হলো কিভাবে। এ ধরনের গ্রহে থাকতে পারে ভয়ানক ক্ষতিকর সব ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু। কিছু গ্রহে থাকতে পারে আমাদের গ্রহের মতো গাছপালা এবং অসংখ্য প্রাণী।
অবশ্য সম্পূর্ণ ব্যাপারটিই এখনো মানুষের কাছে অস্পষ্ট।
এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন্সটিটিউট রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মহাবিশ্বের এ ধরনের প্রাণীর সিগনাল খুজে বেড়ায়। অবশ্য তারা এ গ্রহটি থেকে এখনো উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো সিগনাল খুজে পায়নি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, নতুন আবিষ্কৃত গ্লিস ৫৮১সি গ্রহটি পৃথিবী থেকে পরিষ্কার রেডিও সিগনাল গ্রহণের মতো কাছে অবস্থিত। এ গ্রহে যদি প্রাণী থেকে থাকে এবং তাদের টেকনলজি যদি আমাদের বর্তমান টেকনলজির পর্যায়ে থেকে থাকে তাহলে তারা আমাদের রেডিও সিগনাল ধরতে পারবে।
বিশেষ করে পৃথিবীর কিছু মিলিটারি ট্রান্সমিটার এতো শক্তিশালী যে, এগুলো তারা খুব সহজেই পেয়ে যাবে।
তবে তাদের কোনো রেডিও সিগনাল যদি আমরা পেয়ে যাই তাহলে কি হবে? ড. সোস্তাক জানান, এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি প্রটোকল তৈরি করা আছে। এ ধরনের সিগনাল পেলে এবং অন্য অবজারভেটরি থেকে তা কনফার্ম করা হলে তা ঘোষণা করা হবে। এলিয়েনদের এ ধরনের সিগনাল গোপন করা যাবে না।
সম্ভবত পৃথিবীর বাইরের উন্নত প্রাণীদের এ ধরনের সিগনাল খুজে পেতে কিছু সময় লাগবে।
কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, মহাবিশ্বে প্রাণী খুজে পাওয়ার খুব কাছে আমরা এসে গেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।