আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাশূন্যে নতুন পৃথিবীর সন্ধান - ২

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
গ্লিস ৫৮১ নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে অন্যান্য নক্ষত্রের তুলনায় অত্যন্ত কাছে। লিবরা নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এ গ্রহটি পৃথিবী থেকে মাত্র ২০.৫ আলোকবর্ষ বা প্রায় ১২০ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে। অন্যান্য নক্ষত্রের তুলনায় নক্ষত্রটি এতো ছোট যে উন্নত মানের টেলিস্কোপ ছাড়া এটি দেখা যায় না। মহাশূন্যে টেলিস্কোপ দিয়ে ছোট গ্রহ খুজে বের করা বেশ কঠিন। কারণ গ্রহগুলো কোনো না কোনো নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে।

নক্ষত্রের আলোর তুলনায় গ্রহ থেকে প্রতিফলিত আলো খুবই কম হয়। ফলে নক্ষত্রের উজ্জ্বল আলোর পাশে এগুলো সাধারণত দেখা যায় না। এ কারণে এতোদিন পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাশূন্যে দেখা গেছে বৃহস্পতির মতো বড় গ্রহ, যেগুলোতে প্রাণী বসবাসের মতো অবস্থা নেই। নতুন আবিষ্কৃত গ্লিস ৫৮১সি গ্রহটি মহাশূন্যে আবিষ্কৃত অন্যান্য গ্রহের তুলনায় বেশ ছোট। আমাদের পৃথিবীর দুই মেরুর দূরত্ব প্রায় ৮,০০০ মাইল, যার তুলনায় নতুন গ্রহটির দুই মেরুর দূরত্ব ১২,০০০ মাইল খুব বেশি কিছু নয়।

গ্রহটির ভর পৃথিবী থেকে মাত্র পাঁচ গুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, গ্রহটির মাটিও পৃথিবীর মতো। গ্রহটির মাধ্যাকর্ষণ বল প্রাণী বসবাসের উপযোগী বায়ুমণ্ডল ধারণের জন্য যথেষ্ট। অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট-বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে প্রাণী বসবাসের জন্য কোন ধরনের আবহাওয়া উপযোগী তার একটি মডেল জোন তৈরি করেছেন। একে গোল্ডিলকস জোন বলা হয়।

প্রাণী বাস করার জন্য তরল পানি খুব প্রয়োজন। কোনো গ্রহের তাপমাত্রায় পানি বরফ হয়ে যায় এমন ঠাণ্ডা থাকলে অথবা পানি ফুটতে থাকে এমন গরম হলে সেখানে প্রাণী বাস করতে পারে না। আমাদের সৌরজগতে গোল্ডিলকস জোনে অবস্থিত গ্রহটি হচ্ছে পৃথিবী। সৌরজগতে পৃথিবীর কাছের দুটি গ্রহ হচ্ছে ভেনাস বা শুক্র এবং মার্স বা মঙ্গল। এর মধ্যে শুক্র গ্রহটি এতো গরম যে, সেখানে প্রাণী বাস করার অবস্থা নেই।

মঙ্গল গ্রহটি আবার অত্যন্ত ঠাণ্ডা। ফলে মঙ্গলেও প্রাণী বাস করতে পারে না। নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটি গোল্ডিলকস জোনের খুব কাছে অবস্থিত। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্রহটির সম্ভাব্য তাপমাত্রা হচ্ছে শূন্য থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় গ্রহটিতে পানির লেক, নদী ও সমুদ্র থাকা স্বাভাবিক বিজ্ঞানীরা এখনো পরিষ্কার করে বুঝতে পারছেন না যে, গ্রহটি কি দিয়ে তৈরি।

তবে এটি যদি পৃথিবীর মতো মাটি দিয়ে তৈরি হয় তাহলে এর ভূপৃষ্ঠ ভূমি অথবা ভূমি ও সমুদ্রের সমন্বয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যায়। এছাড়া বিজ্ঞানীরা অন্য একটি সম্ভাবনার কথাও জানাচ্ছেন। এ সম্ভাবনা অনুযায়ী গ্রহটি মহাশূন্যে ভাসমান বরফখণ্ড থেকে তৈরি হয়ে কোনোক্রমে নক্ষত্রটির গ্রহে পরিণত হয়েছে (মহাশূন্যে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে)। এভাবে সৃষ্টি হয়ে থাকলে সম্পূর্ণ গ্রহটি হচ্ছে বিশাল এক সমুদ্র। যেখানে দুই-একটা দ্বীপ বা সমুদ্রে ভাসমান বরফখণ্ড দেখা যায়।

সবদিক বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্রহটির ভূপৃষ্ঠের মাধ্যাকর্ষণ বল পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ এবং আবহাওয়া পৃথিবীর মতো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির সঙ্গে আমাদের পৃথিবীর ব্যাপক মিল থাকলেও নক্ষত্রটির সঙ্গে তেমন মিল নেই। গ্লিস ৫৮১ নক্ষত্রটি সূর্যের চেয়ে ছোট ও অনুজ্জ্বল। নক্ষত্রটির আকার আমাদের সূর্যের তিন ভাগের এক ভাগ এবং ৫০ ভাগ ঠাণ্ডা। গ্লিস ৫৮১ নক্ষত্রটির মোট তিনটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে।

গ্রহ তিনটি হচ্ছে (১) গ্লিস ৫৮১বি (নেপচুনের মতো), (২) গ্লিস ৫৮১সি (আলোচিত) এবং (৩) গ্লিস ৫৮১ডি। গ্লিস ৫৮১বি নামের গ্রহটি নক্ষত্রের সবচেয়ে কাছে এবং গ্লিস ৫৮১ডি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। তবে নামকরণে নক্ষত্র ও গ্রহ চিনতে কোনো ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য গ্লিজ ৫৮১এ নামটি বাদ দেয়া হয়েছে। এ গ্রহটি তার সূর্যকে প্রায় ছয় মিলিয়ন মাইল দূর থেকে প্রদক্ষিণ করে। আমাদের পৃথিবী অবশ্য এর তুলনায় অনেক দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে (প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল)।

আমাদের প্রায় ১৩ দিন সময়ে গ্রহটি তার সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ গ্রহটিতে বছর হয় মাত্র তের দিনে। গ্রহটি থেকে কাছে অবস্থানের কারণে এর সূর্যকে সেখানে অনেক বড় দেখা যাবে। বিশাল লাল আগুনের গোলার মতো সূর্যটি নিশ্চয়ই আমাদের পৃথিবী থেকে দেখা সূর্যের থেকে অনেকখানি আলাদা হবে।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.