(কৃতজ্ঞতায়:রীতিমত লিয়া)
এটা ঠিক যে তখন তীব্র গরম পড়েছিল, রিক্সা না পেয়ে অনেকন হাটতে হাটতে বেশ কান্ত হয়ে পড়েছিলাম এবং রাস্তার যে পাশে আমি দাঁড়িয়েছিলাম তখন তার উল্টোদিকের বড় দোকানটির সাইনবোর্ডের নীচে ছোট্ট করে লেখা ছিল ‘সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত’ কথাগুলো। তবু যদি দোকানটির কাঁচের গ্লাস ভেদ করে ভেতরে সুন্দরী তিন সেলস গার্লকে না দেখতাম তবে হলফ করে বলতে পারি ঐ দোকানটিতে এটা সেটা দেখে কিছুক্ষণ এসির হিমেল ঠান্ডা বাতাসের লোভ আমি সামলে নিতে পারতাম ঠিকই।
দোকানে ঢুকতেই সেলস গার্লদের একজন তার মোহন ভুলানো রমনীয় হাসি হেসে আমাকে বলল, সুপ্রভাত স্যার, কী চাই স্যার?
চাই তো তোমার কাছ থেকে অনেক কিছুই কিন্তু চাইলেই যদি দিতে!
মনের কথা মনেই রেখে বল্লাম, থ্যাংক ইউ। আগে আমি ডিসপ্লেগুলো দেখি। পছন্দ হলে জানাবো।
ওকে স্যার। আপনি দেখুন।
ওটা ছিল একটা কাপড়ের দোকান। সারি সারি কাপড় ডিসপ্লেতে ঝুলানো। পুতুল ও আছে কয়েকটা।
ছেলে পুতুল, মেয়ে পুতুল। এসব পুতুলকে কি জানি বলে সেটা মনে করতে পারলাম না। তবে পুতুলগুলো যিনি বানিয়েছেন তার প্রশংসা করতেই হয়। কি নিখুঁত দেহের অধিকারী পুতুলগুলো! সেলস গার্লসরাও অবশ্য যথেষ্ট সুন্দরী এবং স্মার্ট। আমি কাপড় দেখার পাশাপাশি আঁড়চোখে তাদের দেখছিলাম।
আমি ছাড়া আর কোন ক্রেতা না থাকায় তারা চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল।
কাপড়টা পছন্দ হয়েছে স্যার? মেয়েদের একজনের এই প্রশ্নে ভাবনায় বিরতি দিতে হল।
কোন কাপড়টা?
ঐ যে.. যেটার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন?
ওহ! আচ্ছা। দেখি আমার সামনে একটা স্যুয়েটার টানানো।
এটাতো একটা স্যুয়েটার?
জ্বি স্যার।
মাঝে মাঝে ট্যুরিস্টরা আসে এদিকে ঘুরতে। তারা মাঝে মাঝে শীতের কাপড় খুঁজে। এখন গরমের সিজন হলেও তাই ওটা ডিসপ্লেতে রাখা।
ও আচ্ছা! আমি অন্য কাপড়ের দিকে দৃষ্টি দিলাম তাড়াতাড়ি!
স্যার, আপনাকে কিন্তু অনেক ভাল্লাগবে ওটা পরলে।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।
ভাল্লাগবে? আমাকে?
জ্বি স্যার। অনেক সুইট লাগবে।
মেয়েটির হাসিটা সত্যি সুইট। আর এমন করে আগে কেউ আমাকে বলেনি কথাগুলো। তাই তার কথাগুলোও আমার কাছে মিষ্টি লাগল।
দাম কতো এটার? দাম করতে তো কোন সমস্যা নেই। এতে বরং মেয়েটির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে।
মেয়েটি কাপড়টি হাতে নিয়ে কি যেন দেখল। দাম বেশী না স্যার। মাত্র এক হাজার দুইশ টাকা।
এক হাজার দুইশ টাকা আমার পকেটে আছে। কিন্তু আমি তো কিছু কেনার জন্য এখানে আসিনি। তাছাড়া গরমে স্যুয়েটার কেনার প্রশ্নই আসে না।
আমি অন্যমনস্ক হবার ভান করে হাটতে হাটতে দোকানটির অন্য কোনায় চলে গেলাম।
এবারে দ্বিতীয় সেলস গার্ল এগিয়ে আসল।
স্যার, কাপড়টা কিন্তু খুব ভাল স্যার । এটা পড়লে মোটেও শীত লাগবে না। আপনি নির্দ্ধিধায় এটা কিনতে পারেন।
মেয়েটির দিকে ভাল করে তাকালাম। নাছোড়বান্দা মেয়েটি দেখি ভয়াবহ সুন্দরী।
ঠিক যেন সূচিত্রা সেনের কার্বন কপি!
বল্লাম, কাপড়টা পছন্দ হয়েছে ঠিক। কিন্তু এখন তো গরম। শীতে কিনব।
এটা কি বলেন স্যার! এখন কিনে রেখে দিন। শীতে পড়বেন।
তাছাড়া শীতে তো এটার প্রাইস আরো বেড়ে যাবে।
মেয়েটির কঠিন যুক্তি!
তাই নাকি? আচ্ছা আমি অরেকটু দেখব।
আর দেখতে হবে না স্যার। আপনার তো স্যার নায়ক নায়ক চেহারা। এটা পড়লে একেবারে শাহরুখ খানের মতো লাগবে।
নায়ক নায়ক চেহারা! বলে কি! এখন পর্যন্ত কোন মেয়েকেই আমার দিকে দ্বিতীয়বার চোখ তুলে তাকাতে দেখিনি। আর এ মেয়েটা বলে কিনা আমি নায়কের মতো দেখতে!
স্যার, একবার পরে দেখেন না স্যার। ভাল না লাগলে কিনবেন না।
পরতে তো আসলেই কোন সমস্যা নাই। পরার পর ভাল লাগে নাই বলে রেখে দিব।
পরলাম। তিন তিনটা সুন্দরী মেয়ের সামনে কাপড়টা পরতে অনেক লজ্জা লাগল যদিও।
ক্যাশ কাউন্টারে বসা মেয়েটি এবার ডাকল। এদিকে আসুন স্যার। এখানে লুকিং গ্লাস আছে।
লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখতে তো কোন সমস্যা থাকার কথা না। গেলাম লুকিং গ্লাসের সামনে। তাকালাম নিজের দিকে। পেছন থেকে কাউন্টারের মেয়েটি বলল, দেখুন স্যার। কি চমৎকার লাগছে আপনাকে।
স্যার কি ব্যায়াম করেন?
ব্যায়াম! আয়নায় মেয়েটির দিকে তাকালাম। এওতো দেখি কম সুন্দরী না। চোখ দুটি যেন জীবনানন্দের পাখির নীড়ের মতো!
ব্যায়াম না করলে এতো সুন্দর ফিগার হয় কি করে স্যার? মেয়েটি আবার বলল।
বললাম, হ্যা একটু আধটু ব্যায়াম আমি করি বটে। হাটাহাটি আরকি!
তাই তো বলি স্যার।
হাটার উপর আর কোন ব্যায়াম আছে নাকি! স্যার, আমি বলি কি, কিনে নেন স্যুয়েটারটা। ভাল হবে।
ভাল হবে বলছেন?
অবশ্যই স্যার। আমার তিন তিনজন মেয়ের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে আপনাকে দেখে। ভাল হবে না তো কি হবে? দেখবেন, সবাই খুব প্রশংসা করবে।
কিন্তু শীত আসতে এখনো আরো ৫ মাস!
৫ মাস কোন সময় হল স্যার! লাভের জন্য মানুষ কতো কিছুই না করে। দেখেন না, শেয়ার বাজারে মানুষ ইনভেস্ট করে দু’বছর ধরে বসে আছে লাভ পাবার জন্য?
তাইতো! আমারই এক বন্ধু দু বছর আাগে ইনভেস্ট করেছিল লাখ টাকা। সেদিন বলছিল, এখন ছাড়লে ৫০ হাজার টাকা লস করতে হবে। লাভের জন্য আরো এক বছর ওয়েইট করতে রাজী। মেয়েটার তুলনা করার মতার প্রশংসা করতেই হয়!
বললাম, কিন্তু দামটা কি বেশী হয়ে যাচ্ছে না।
ওকে স্যার। এটা ফিক্সড প্রাইসের দোকান। তবু গরমের দিনে শীতের পোষাক কিনছেন বলে আপনাকে আমরা একশ টাকা অনার করছি, স্যার।
তিন জনই এখন আমাকে ঘিরে আছে। এই ঘেরাটোপ থেকে বেরুতে হবে আমাকে।
দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার। আর কোন কথা না বলে পকেট থেকে তিনটি পাঁচশ টাকা বের করে দিলাম। ক্যাশের মেয়েটি আমাকে চারটি একশ টাকা ফিরত দিল।
টাকাগুলো মানিব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বের হয়ে খেয়াল হল গায়ে তখনো স্যুয়েটারটি পরে আছি আমি। আরো খেয়াল করলাম, সারা শরীর আমার ঘেমে একাকার! অথচ দোকানটি ছিল কিনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।