ক্রো ওরফে কাউয়া আগামি কাল কোরবানীর ঈদ। মাস খানেক ধরে চুল দাড়ি কাটা হয় না। বাসায় আসার পর আব্বা হুজুর তো আল্টিমেটাম দিয়েই দিলেন,"নালায়েক, আজকে রাতে বাসায় আইসা যদি তোর মাথায় কাউয়ার বাসা দেখি তাইল,ঈদে গরুর বদলে তোরে কোরবানী দিমু। "বোঝেন অবস্থা! এই যখন আমার পারিবারিক অবস্থা, তখন সেলিম মারেচন্টের কুরবা হুয়া গানটা গাইতে গাইতে গেলাম একখান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেলুনে। সেলুনের নামটাও বড্ড এলিট।
এলিট হেয়ার স্টাইল। মেরিন অফিসার আমি। জাহাজে চাকরি করে কিছু টাকা পয়সা জমাইছি। এখন কি আর জাম গাছের নিচে বসে চুল কাটানো যায়? যাই হোক পকেটে ছিল ৬০০ টাকা। ঢুকে গেলাম সেলুনে।
আমতা আমতা করে বললাম ,চুল কাটাতে চাই। মুচকি একটা হাসি নরসুন্দর ভাইজান বললন, আসেন ভাই বসেন। আমি তো আতিথেয়তায় মুগ্ধ। আমার চুল কাটাতে কাটাতে বড় সুন্দর হাসি দিয়া নর সুন্দর ভাই বললেন ,ভাইজানের চুল গুলান তো সুন্দর,খালি মাথায় একটু খুশকি। আমি তো ভরা মজলিশে ইরাম কথা শুইন্যা লজ্জা পাইয়া গেলাম।
উনি বল্লেন,ভাই শ্যাম্পু করে দেই? আমি বললাম করেন। উনি শ্যাম্পু করলেন তিন টাকা দামের সানসিল্ক দিয়া। উনি বললেন ,ভাইজান চুল গুলা সিল্কি করবেন? আমি কিছু কইবার আগে উনি বল্লেন,ভাইজানের চেহারা টা জোস!চুলগুলা সিল্কী হইলে তো পেছনে
লাইন লাইগা যাইবো। আমি লজ্জা পেয়ে বল্লাম,করে ফেলেন সিল্কী। কি আছে জীবনে।
নরসুন্দর ভাইজান আমার মাথায় কি কি জানি লাগাইলো। লাগাইয়া আমারে শেভ করাইলো। তারপর আমার মাথা অতীব যত্নের সাথে ধোয়াইয়া দিলেন। তারপর আমারে বল্লেন,ভাই জান মুখে তো অনেক ব্ল্যাক হেড। ফেসিয়াল করান।
আমি আবার তেল খেয়ে তৈলাক্ত হয়ে বল্লাম,করেন।
উনি একেকবার একেকটা জিনিশ আনতে বাইরে যান ,আর আমি ঊকি মেরে কোন সার্ভিসের কত খরচ তা পরার চেষ্টা করি। উল্টা আয়নাতে সব কিছুই রহস্যময় মনে হয় আমার। মুখে নানাবিধ ক্রীম লাগাইলেন উনি। কতক্ষন আমার মুখের সামনে জলীয় বাষ্প ছারলেন।
আমি বুঝতে পারলাম না কিছুই। আমার মাথায় খালি কোরবানরি গরুখানার কথা মনে হইতাসিলো। তিন প্রকার ক্রীম লাগানোর পর উনি ক্ষ্যান্ত দিলেন। অতঃপর গোল্ড ফেসিয়াল করানোর পর,বলদ মাকা একখান লূক নিয়া বিল দিতে গেলাম। আবারো নরসুন্দর ভাই বড় সুন্দর হাসি দিয়া বলিলেন ৬৫০ টাকা।
আমার অবস্থা বুঝেন ?আমি হিসাব চাইলাম এত টাকা কেমনে হইলো? উনি কইলেন চুল কাটানোর টাকা আর শেভ করানোর টাকা এখনো ধরি নাই। সব মিলাইয়া ৭৫০ টাকা।
তৎক্ষণাৎ ফোন করলাম আমার জানের দোস্ত, লেঃ ইব্রাহীম কে। দোস্ত আইসা আমাকে উদ্ধার করলো। আর আমার কাহিনি শুনে হাসতে লাগলো।
আমাকে দেখে সবাই বলছিল,কিরে দোস্ত এমন বলদা লুক কেমনে হইলো তোর?
আমি জবাব না দিয়া কুরবা হুয়া গানটা গাইতে গাইতে বাসায় ফিরে আসলাম।
মোরাল অব দ্য স্টোরীঃ
সেলুনে গিয়া সাবধান। যেই কামে যাইবেন সেই কাম ই খালি করাইবেন। নরসুন্দরের সুন্দর কথায় ভুলিলে,আমার মত কুরবা হুয়া গাইতে হইব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।