আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা হতে পারা

নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .

সদ্য প্রসবের একটি সন্তান, মাত্র পৃথিবীর আলো দেখছে। শরীরের তখনও রক্তের ছোপ লেগে ছিল, নাড়িটা এই কিছুক্ষন হল কাটা হযেছে। ওকে পাওয়া যায় একটি হাসপাতালের বেডে কিন্তু ওর মাকে পাওয়া যায়নি। পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন একটি সন্তান। কে তার দায়িত্ব নেবে ? রেখে আসা হয় একটি অনাথ শিশু আশ্রমে।

যেখানেই সে বড় হচ্ছে। ঠিক সেভাবে বুঝে না উঠলেও যতটুকু বুঝতে পারে তার অন্যসব সঙ্গীর মত কেউ তাকে আদর করতে আসেনা, মায়ের মমতাই কেউ তাকে কোলে নেয়না, না চোখের জল মুছে দেয়, বাবার øেহে কখনো প্রশস্ত বুকে আশ্রয় হয়না এতটুকুন ছেলের। আজ আর কোন তার অভিমান নেই, আবদারে ফুপিয়ে কান্নার কোন অভিযোগও নেই। রাগ, ক্ষোভহীন একটি মানুষ হচ্ছে ও। প্রজেক্টের রিপোর্টের কাজে একবার ওখানে যাওয়া হয়েছিল।

সেবারই প্রথম, সেদিন সব বাচ্চাগুলোর মধ্য থেকে ঠিক ও আলাদা ছিল। বেশ কয়েকবারই গিয়েছি প্রতিবারই কাছে ছুটতে আসত, উপহার হিসেবে তো চকোলেকের বক্স থাকতই। কি জানি আমার সব লেখা আটকে যেত, কন্ঠে কোন ভাষা খুজে পেতাম না, তার চোখে দেখেছি জীবনের সরলতা, যে আকুলতা যেখানে চাওয়া - পাওয়ার সীমা এক করা অসম্ভব। ছলছলহীন চোখে তাকিয়ে থাকার অর্থ কি সে শুধু অতটুকুন ছেলেই বুঝত। আমি শুধু বুঝতাম কিছু হয়ত আমাকে পেতে চাইছে আর আমারও কিছু দেবার আছে।

অগ্রাহ্য করতে পারিনি তাইত সবাইকে অনুরোধ করে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসি। বড় করতে থাকি নিজের সন্তানের সব ভালবাসাটুকু দিয়েই। জীবনে আর বিয়ে করা হয়ে উঠেনি, তবুও অতৃপ্ত নই। আমার সন্তান এখন বাবা বলে, বাবা বলে ডাকতে শিখেছে। এখন আমি একজন সন্তানের পিতা, পিতৃত্বের গর্ব করে বলতে পারি আমারও একজন সন্তান আছে, যাকে আমি ভালবাসতে পারি, ভালবাসা দিতে পারি, সমস্ত অর্জন, শ্রেষ্ঠত্ব আমার সন্তানকে ঘিরে, সব কষ্টগুলোর মাঝেও সুখকে খুজি শুধু ওরই জন্য, সমস্ত বিষাদের মাঝেও আনন্দের পরশ পাবার চেষ্টা সেটাও আমার সন্তানেরই জন্য।

আমি তার দুধ মা’র কাছে যাই। তার পা ছুয়ে সালাম করে আসি। আমার আর আমার সন্তানের জন্য দোআ নিয়ে আসি। যার ভাগ্যে জোটেনি তার মায়ে বুকের দুধ, সেখানে রক্তের সম্পর্কহীন এই মানুষটি সেই মায়ের মমতাই দিয়েছে, এইতো মা, আমরা যে মা কে নিয়ে গর্ব করি এই তো সেই মা, সারাজীবনও নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও যার ঋণ শোধরাবার নয়। ছেলেকে তাই বুঝিয়ে দেই।

ওর কাছে কোন কাছে কিছুই গোপন করবনা, বড় হলে জানিয়ে দেব কি তার পরিচয়, কোথায় তার মা কিংবা বাবা। মিথ্যে নয় বরং সত্যের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে ওকে সাহসী করে তুলতে চাই। সে যেন গর্ব করে বলতে পারে তার এক দুধ মা আছে আর আছে এক বাবা। আজ অফিসে আসার সময় বলে “বাবা, তাড়াতাড়ি ফিরো কিন্তু, আজ পার্কে যাব” আমি তাড়াতাড়িই ফিরি আমার হাত ধরে ছুটে বেড়ায় পার্কের সবুজ মাঠে, অনাবিল এক আনন্দে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.